রবিবার, মার্চ ১৬

আমার বই ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ : শাহেদ কায়েস

0

একুশে বইমেলা ২০২৫-এ প্রকাশিত হয়েছে আমার একটি কবিতার বই― ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’।

‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ আমার ষষ্ঠ কবিতার বই। বইটি প্রকাশ করেছে বৈভব প্রকাশনী, প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৩০০ টাকা, পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলায় ‘বৈভব’-এর স্টলে (স্টল নম্বর ৫৭৫—৫৭৬)। এর আগে ২০২৩ সালে চৈতন্য প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশশিত হয়েছিল, এবার হলো ‘বৈভব’ সংস্করণ।

Noirajjobadi-Haoya_Frontl-Cover-01

নৈরাজ্যবাদী হাওয়া | শাহেদ কায়েস | ধরন: কবিতা | প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত | প্রকাশক: বৈভব | মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা | বইটি সংগ্রহ করতে এখানে ক্লিক করুন

‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ বইয়ে ৫৬টি কবিতা আছে। যে প্রাত্যহিক জীবন-যাপন, প্রতি মুহূর্তের আমার যে যাপিত জীবন, কেবল উপরিতলের প্রাত্যহিক গতানুগতিক ভাসমান যে জীবন, তা থেকে বের হয়ে এসে জীবন-প্রশ্নের দিকে পৌঁছাবার যে তাগিদ নিজের মধ্যে অনুভব করি, সেই অনুভবই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে এই কবিতাগুলো। সময়কে ধরে, সময়োত্তীর্ণ একটা স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকে আমার কবিতায়। আমার লেখা আমার নিজের সঙ্গে নিজের, এবং একই সঙ্গে জগতের অন্য সকল বস্তু-প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে আমার ইন্টারেকশন। হ্যাঁ এটা সত্য যে, লেখালেখিতে শিল্প সৃষ্টির একটা বিষয় থাকে, যা এক সময় আমার মধ্যে প্রবল ছিল, তখন ‘শিল্পের জন্য শিল্প’, নাকি ‘জীবনের জন্য শিল্প’ এসব নিয়ে খুব ভাবতাম। এখন আমার মনে হয় বাস্তব ও কল্পনা, জীবন ও শিল্প কেউ কারো কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। জীবন মানেই লড়াই, এই পৃথিবীতে লড়াই করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। আমার কাছে লেখাটাও আমার লড়াইয়েরই একটি অংশ, অপ্রত্যক্ষ লড়াই।

আমার তিনজন কবিবন্ধুর ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’র পাঠ প্রতিক্রিয়া এখানে সংযুক্ত করছি।

“নৈরাজ্যবাদী হাওয়ায় আমাদের শাহেদ কায়েস দাঁড়ায়। তাঁর কবিতায়, প্রেম আছে, প্রলোভন আছে, দ্রোহ আছে, আছে বিদ্রোহ। আছে প্রত্যাখানের মর্ম। আছে অধর্মের ধর্মর কথা। যে কারণে সে বলতে চায় সহজিয়া প্রেমের কবিতা। শাহেদের হাতে আরও রচিত হয় ভেদ ও অভেদের মর্ম, হৃষিপাড়ার অন্তজনের কথা, নদীর বালু লুট হয়ে যাওয়ার বেদনার মর্মব্যথা। এছাড়া, শাহেদ কায়েস বিজ্ঞানের সুগভীর ছাত্র হওয়ায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও মহাকাশবিজ্ঞানের অনেক জটিল-কুটিল বিষয় তার কবিতার অনুষঙ্গ হয়েছে, হয়েছে সম্পর্কিত। জীবন-প্রকৃতি-বিজ্ঞান, পারস্পরিক এই সম্পর্কত্রয়ের স্নেহাস্পদ সংকলনের নাম প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সঙ্গে জীবনের সংঘর্ষ যে অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে, কবি শাহেদ কায়েসের কবিতা পড়লে তার স্পষ্ট আভাস আমরা পেয়ে যাব সহজেই। এটাও কবির বিশিষ্টতা। বিজ্ঞানমনস্ক শাহেদ তার পরিণত ব্যাপ্তিতে আমার কাছে শেষ পর্যন্ত দ্রোহী, রোমান্টিক এবং বৈরাগ্যের অবিমিশ্রণে এক উন্নততর যাত্রায় বিকশিত হন। এটা বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে জগতের এক মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, জীবনের নিভৃত সমর্পণ করেছিলেন বেহালার কাছে। শাহেদ কায়েসও অনেকটা তাই— বিজ্ঞানের সুগভীর অভিনিবেশী, কবিতায় আত্মমগ্ন— মুক্তি অন্বেষী।” —কবি আলফ্রেড খোকন

“শাহেদ কায়েসের জীবন-প্রবাহ ত্রিমাত্রিক আবহে জড়িয়ে গেছে। ফলে তার ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাও সে জীবন-প্রবাহকে এড়াতে পারেনি। ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থ পাঠে আমার মধ্যে অদ্ভুত একটা অনুরণন কাজ করেছে। পড়তে-পড়তে থেমেছি। আবার নতুন করে লাইনগুলো পড়েছি। ভুলে গেছি। আবার মনেও করেছি। পাঠে এটি কোনো সহজ পদ্ধতি নয়। বৈশ্বিক উল্লম্ফন আমাদের চেতন প্রবাহে যে নৈরাজ্য মেখে দিয়েছে, চেষ্টা করলেও তা আর এড়ানো সম্ভব নয়। ফলে শাহেদের ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো সহজ করে পাঠের উপায় নেই। সহজে-গরলে-জটিলে-কুটিলে মাখামাখি। এটিই বর্তমান জীবন-যাপনের একটি নমুনা। মানে আছে, আবার নেই। প্রেম আছে, আবার নেই। সারল্য আছে, আবার নেই। এভাবে শোক-বেদনা-মহামারি-মানুষের জন্য কাতরতা, প্রকৃতির জন্য ভালোবাসা-হাহাকার থেকেও নেই। কিংবা নেই, তবু আছে। এ কারণে ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো বিভিন্ন মানসিকতায় পাঠ আবশ্যক। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশেও।” —কবি কবির হুমায়ূন

“নব্বইয়ের শীর্ষ কবিদের অন্যতম শাহেদ কায়েস। তিনি জীবনকে পাঠ করেন অপ্রচল ধারায়। জুয়াড়ির মতো নিজেকে বাজি ধরেন আগ্রাসী বাস্তবতার টেবিলে। সত্তাকে চ্যালেঞ্জের মতো ছুঁড়ে দেন নৈরাজ্যবাদী হাওয়ার বিপরীতে। বিরুদ্ধ স্রোত ঠেলে এগিয়ে যাওয়াই যেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ। বস্তুত, শাহেদ কায়েসের ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ জীবন সংগ্রাম, বিচ্ছিন্নতাবোধ, বিপর্যয় এবং ভেতর-বাহিরের বিচিত্র বাস্তবতার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ। একই সঙ্গে জীবন ও জগতের আলো-আঁধারে মোড়ানো অপার রহস্যময়তা উন্মোচনেও প্রবৃত্ত।” —কবি অতনু তিয়াস

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

মূলত কবি। জন্ম ঢাকায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭০। পৈতৃক নিবাস, সোনারগাঁয়ের ললাটি গ্রামে। পড়াশুনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে, দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই; এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে, চোন্নাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘হিউম্যান রাইটস’ বিষয়ে মাস্টার্স। কবিতায় হাতেখড়ি নব্বই দশকের শুরুতে। থাকেন নিজ গ্রাম সোনারগাঁয়। পেশা ফ্রি-ল্যান্স গবেষক। তিনি একজন মুক্ত-চিন্তক, সংস্কৃতিকর্মী, কাজ করেন মানুষের অধিকার নিয়ে। শখ ভ্রমণ, সুযোগ পেলেই ঘুরে বেড়ান দেশ-বিদেশ। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘বাঁক ফেরার অভিজ্ঞতা’ (দোয়েল প্রকাশনী, ১৯৯৯) ‘চূড়ায় হারানো কণ্ঠ’ (মঙ্গলসন্ধ্যা, ২০০৩), ‘মায়াদ্বীপ’ (ঐতিহ্য, ২০১৫), ‘কৃষক ও কবির সেমিনার’ (অভিযান, ২০২০), ‘সহজিয়া প্রেমের কবিতা’ (অভিযান, ২০২১), ‘নৈরাজ্যবাদী হাওয়া’ (চৈতন্য, ২০২৩), ‘স্বনির্বাচিত কবিতা’ (ভাষাচিত্র, ২০২৩)। সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘মঙ্গলসন্ধ্যা প্রেমের কবিতা’ (ধ্রুবপদ, ২০১৭)। অন্যান্য গ্রন্থ: ‘এশিয়ার বারটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ (ইংরেজি গ্রন্থ, মে এইটিন মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, দক্ষিণ কোরিয়া, ২০১৫), ‘বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম স্মরণগ্রন্থ’ (ঐতিহ্য, একুশে বইমেলা, ২০২০)। পুরস্কার ও সম্মাননা: ‘চন্দ্রাবতী সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার’ (কবিতায়, ২০২১), শালুক সম্মাননা (২০১৯)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।