মঙ্গলবার, মার্চ ১৯

কতিপয় ঝড়ের আকার

0

Startজীবন সবসময়ই প্যারাডক্স; ভূমি আর বৃক্ষের সমকোণ অসুখ। ছায়া আর শরীরের নিত্যতা নিয়ে পাতার মিনার ভেঙে ঝড়কে বলা—একা হলে বনে এসে নলখাগড়ার বন। ইতঃপূর্বে আমি জেনেছি স্যানিটারিয়াম শুয়ে আছে দু’হাতের ইশারায়, তার জানলায় ওপারের হলুদ পাখিরা আরও হলুদ হয়ে গেলে আমি রঙতুলি ফেলে তার ভিতর শুতে যাই। আমাকে গ্রাস করে না অন্ধকার—তরল হয়ে ঢুকে পড়ে চোখের গর্তে। চারদেয়ালের ডানায় সঞ্চার করি আমার রক্তের সবটুকু প্রাণ…


আমাদের বাড়ির একটি ঘরে রং আর ঝড় অঝোরে ঝরে। কেননা পাখির মতো তাদেরও দেহের ভিতর রক্ত এবং হাড়ের ভিতর মজ্জা আছে। শুধু একটা জিনিশ নাই তাদের, তাদের ডানা নেই। তারা ডানা দেখতে গিয়েছিল। তথাকথিত মনের ডানা অবশ্য আছে, তা দিয়ে ধূলি আর কাদায় হোঁচট খাওয়া ছাড়া কিছু করা যায় না।


ধনেশের ঠোঁটে জেগে থাকে দুপুরের সুর। তুমি তুলে নিও ওষ্ঠাধরে জেগে জেগে, জেগে জেগে…। আমি বাতাস কুড়িয়ে এনে সাজিয়ে দেবো ঝড়, তোমার অরণ্যে। তার আগে জেনো, শুধু একবার ধনেশ হবো। হলুদ চঞ্চুতে শুষে নেব যমুনার দীঘলদেহের রেখা। মিনার্ভা এসে ভুল করে গেল এলোমেলো। আমি তখন পম্পেই। ভিসুভিয়াস আমাকে ডেকে বলল, শুদ্ধ হ!


আমার স্মৃতিতে ছিল ঝড়ের স্পর্শ, বৃষ্টির আগে যে ঝড় এসে রাঙিয়ে দিয়েছিল ধূলির অরণ্য। তুমিও ছিলে না, আমি একাই পান করেছি অন্ধকার দিবসের সকাতর কুয়াশা। বুকের একপাশে ঝড়-বিজলি আর বৃষ্টি ছিল। আর পাশে যে তুমি ছিলে তা বলতে পারি না। শূন্যতার অন্যনাম যদি তুমি, তবে ছিলে।


শূন্যতা অবিনাশী সুর হয়ে পরিব্যাপ্ত করে আছে আমার সমস্ত সকল। আমি একটা নিঝুম পাগলের গানে পরিণত হচ্ছি ক্রমশ। একদিন চক্রমন হয়ে ঝড় হবো তোমাদের পৃথিবীর এপার ওপার। সবার অন্ধকার থাকে না, অথবা অন্ধকার প্রিয় নয়। তাই সবাই কবিতা পড়তে পারে না, কবিতা পড়ার জন্য চোখের ভিতর সমুদ্র এবং বুকের ভিতর আদিগন্ত ধূ ধূ প্রান্তর লাগে। একদা হনুমান সূর্যকে কমলা ভেবে খেতে গিয়েছিল। পথিমধ্যে দণ্ডকারণ্যে কার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার? অনাহূত আমি এসে ফুরিয়ে গেলাম। অঙ্কুর কেউ নেই আমাদের পাড়ায় সবাই ফুল আর ফল হয়ে খাদ্য আর শোভা হয়ে গেছে।


আমার পাঁজর খুলে বুনে দাও হিজিবিজি গোলপাতার বন, আমি মাওয়ালির ঘরের জীর্ণছাউনি হবো কোনোদিন শীত আর চৈত্রে, ফিরে যাব শেষে মধু আর মাধবীর কাছে… তুমিই আমার ঝড় আমার অবিনাশী সুন্দর; আর আমি তো নতজানু অরণ্য সমুদ্র বন্দর। আসো আমাকে বিনষ্ট করো আমূল উন্মূল, এই জন্মান্ধচোখে ঘষে দাও জোনাকবকুল।


ঝাঁপতাল বাজে তার বুকের ভিতর। দুইহাতে দুইটি দেয়াল সে ঠেলে ধরে আছে। বিপ্রতীপ চাপ হয় না চাঁপাবন। একদিন সে বৃষ্টিতে ভিজেছিল বলে নিজের দংশনে নিজেই রাঙিয়েছে ওষ্ঠাধর। প্রতিবার বৃষ্টিতে সে রঙিন ওষ্ঠাধরে ছোঁয়ায় শব্দের বিষ। কবিতার উচ্চারণে থামে না উচ্চকিত কামনার ঝড়। আহা, মিষ্টি ভালোবাসাতে মুক্তি নেই এবং যানযট সপ্তবহর! যদিও আমি তার জন্যে হাঁটার শব্দ শুনি না, নদী নীরব হিশেবে ফুল মূলের নিচে নেচেছি এবং এইসব বিভিন্ন মেয়াদে পরিবর্তন করা হয়। দুইটি ফানুস উড়ে গিয়ে বসে একটি ঘুড্ডিগাছে। গাছের একটি কনিষ্ঠডালে যে পাখিটি বেঁধেছে ঘর—তার কাছে সিঁদুর নেই। তাই সিঁথিপথে ক্ষুর চালিয়েছে গ্রামের সবচেয়ে মায়াবী নাপিত। নাম মধু পারামানিক। এইটা নরসুন্দরের গ্রাম। আমের বাগানে চৈত্র চিরদিন। পাখিটি ভাবে স্বপ্ন আর বর্তমানের কথা।


গাভীনক্ষেতের পাশঘেঁষে গরুটা দাঁড়ায়। স্ফিত তার সঘন ওলান—দুগ্ধস্রাবে ভাসে সমস্তদিন আর রাতের বিভেদ। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তে শাদা সব লাল। সবুজকে খায় শাদা, শাদাকে লাল। কেউ কারো জন্যে থাকে না। সে ঝড় নয়—ঝড়ের বাহন। তাকে বলেছি সবুজের বুকে লাল—এ শুধু পতাকায় মানায়, যেহেতু ওটা ইতিহাস। আর তারপর স্তব্ধ সকল আকাশ।


তোমার সঙ্গে দেখা হয়। একটি পাতা ফিরিয়ে দিই। পাতাটা কে দিল কবে! ঝড় দিয়েছিল বুঝি কোনোদিন ছিন্ন বৈভবে। এই গ্রামে থাকি শহরশেষে, এই শহরে থাকি গ্রাম শেষে। ওগো দিন, তুমি সন্ধ্যার পর আমাকে নামিয়ে দিও অজানিত পথের ধারে।

১০
ঝড়কে ঘূর্ণি মনে করলে মানে পছন্দ হলেই কেবল প্রকাশ করা যাবে। এটা ভুল না হলে পাল্টে দেয়া যাবে। আর সংশ্লেষে যেহেতু কিছু ভোগের সঙ্গে অভোগ যাচ্ছে তাহলে কয়েকটা মাছের অলংকরণ ভালো দেখাবে না। মানে মাছের পাশাপাশি কাঁটা বেখাপ্পা লাগবে না। নৌকোখানি টানাজলে লেখা হয় তাই শুরুতে একটি মাঝি কিংবা বৈঠা দিলে হয়তো দেখতে ভালো লাগে। নদীভিন্ন সেটা ভালো লাগার কথা না। আর নদীর সঙ্গে আমি কোনো শ্যাওলা দেয়ার পক্ষে না। দিলে চোখ ওইদিকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলত স্রোতের প্রতি মনোযোগ নষ্ট হয়।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

  • মূলত লেখেন ও আঁকেন। জন্ম : ২৪ আগস্ট ১৯৮১, চকরিয়া, কক্সবাজার, বাঙলাদেশ। পড়াশোনা : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৮টি।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।