মূলত কবিতাকে জানতে গিয়ে, কবিতার খোঁজ করতে করতেই কবিতার সঙ্গে জড়িয়ে যাই। লিটলম্যাগে নিয়মিত লিখতে লিখতেই আমার কাব্য-চর্চার শুরুটা হয়েছিল। কবিতার প্রতি ভালো লাগা থেকে লিটলম্যাগ ‘অরিত্র’ ‘অর্বাক’-এর সাথে জড়িত হওয়া। তখন থেকেই লেখালেখির শুরু।
জীবনের একটা সময়ে এসে মৃত্যু বিষয়টি আমাকে ভাবাতে শুরু করে। মৃত্যু আসলে কেমন? কেবল বেঁচে থাকাই তো সব নয়। মানুষের মৃত্যু ঠিক ততদিন পর্যন্ত ঘটে না, যতদিন সে অন্যের স্মৃতিতে আছে।
জীবনের একটা সময়ে এসে মৃত্যু বিষয়টি আমাকে ভাবাতে শুরু করে। মৃত্যু আসলে কেমন? কেবল বেঁচে থাকাই তো সব নয়। মানুষের মৃত্যু ঠিক ততদিন পর্যন্ত ঘটে না, যতদিন সে অন্যের স্মৃতিতে আছে। মানুষের এই না থাকা, স্মৃতিকাতরতা, যাপিত জীবনের প্রতি যাবতীয় ডিপ্রেশন, ট্রমা, ক্ষোভ, ক্ষুধা, প্রেমবোধ এসব চিন্তা থেকে একটা সিরিজ লেখার শুরু। মানুষ আসলে যত পরিনত হয়, সে তার আশপাশের সকল অনুভুতিকে যেন আরও তীব্রভাবে অনুভব করে। ‘মৃত্যু-স্মৃতি নিয়ে চা-আলাপ’ সিরিজটি লিখতে গিয়েই বইয়ের শিরোনাম করার কথাও ভাবনায় আসে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমার পিতাসম প্রিয় শিক্ষক নূর ইসলাম সাহেবকে। আমাদের মফস্সলের একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষক, তবে আমাদের কাছে অসাধারণ কেউ। যার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ছোটোবেলার একটা ট্রমা হয়ে বিঁধে আছে এখনও। হয়তো অবচেতন মনে কোথাও না কোথাও তিনি ছিলেন। এই স্মৃতি থেকে বের হওয়ার জন্য বইটা জরুরি ছিলো, আমার জন্য তো বটেই। এই কবিতাগুলো নিরীক্ষামূলক, প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুনভাবে, নতুন শব্দ ও মেটাফোর ব্যবহার করা হয়েছে। কবিতাগুলোর মাধ্যমে পাঠককে আমার যাপিত জীবনের যে জার্নি, সেটাই মূলত শোনাতে বা দেখাতে চাই।

মৃত্যু-স্মৃতি নিয়ে চা-আলাপ | চাঁদনী মাহরুবা | ধরন: কবিতা | প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত | প্রকাশক: বৈতরণী | মুদ্রিত মূল্য: ২২৫| বইটি সংগ্রহ করতে এখানে ক্লিক করুন
তবে কাব্যগ্রন্থ করা হবে, বা কাব্যগ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করব এমন সিদ্ধান্ত গতবছর পর্যন্ত ও নেয়া হয়নি। সর্বসাকুল্যে তখনও পনেরোটির মতো কবিতা লিখেছিলাম। দীর্ঘ ৩ বছর আমি রাইটার্স ব্লক কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না। অলসতা বা অনিহাও হয়তো ছিল। গত বইমেলায় অর্বাক লিটলম্যাগের সম্পাদক ও কবি দ্রাবিড় সৈকত ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয়৷ ওনার অনুপ্রেরণাতেই কবিতা চর্চার শুরু বা বলা যায়, ২০১৮ সালে প্রথম বই করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
তিনি বলেছিলেন, না লিখলে তো তুমি মরে যাবা। নিজের লেখার প্রতি সময় দাও। লেখক হিসেবে আমি কি মারা যাচ্ছি? এই ভাবনাটা আমাকে ভাবাতে শুরু করে। কবির মৃত্যও তো ঘটে। তাঁর কথাতেই নতুন করে কাজ করার একটা উদ্যোম বা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। পড়াশোনা শুরু করি, খুব দ্রুতই আরও কিছু কবিতা লিখে ফেলি। মোটামুটি বই করার মতো কবিতা জড়ো হয়ে যায়।
এরই মধ্যে বৈতরণীর সম্পাদক ও কবি তানিম কবির ভাইয়ের সাথে আলাপ হয়৷ উনি ৩ দশকের কবিদের কবিতা নিয়ে একটি সংকলন করেছিলেন ‘অদ্বিতীয়’ নামে। সেখানে আমার কিছু লেখা প্রকাশ করা হয়, সেই সুবাদে কবিতাগুলোর প্রতি ওনার ভালোলাগা ও বৈতরণী থেকে কাব্যগ্রন্থটি বের করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সম্পাদক হিসেবে উনি অত্যন্ত আন্তরিক। খুব লেগে থেকে আমাকে দিয়ে কাজটি করিয়েছেন।
সম্ভবত আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের দিকে, বেশকিছু কবিতা লেখার পর সেখান থেকে বাছাই করে ৪৮টি কবিতা দিয়ে আমার এই ‘মৃত্যু-স্মৃতি নিয়ে চা-আলাপ’ কাব্যগ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়।
বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজিব দত্ত। আমার কল্পনায় ঠিক যেমন ভেবেছিলাম, প্রচ্ছদটি যেন ঠিক তেমনই ছিল। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২২৫ টাকা। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বৈতরণীর ৪৫১ নাম্বার স্টলেও পাওয়া যাচ্ছে বইটি। এছাড়া দেশের অভিযাত বইবিপনী বিতানগুলোতেও পাওয়া যাবে আমার এই বই।

কবি। জন্ম ১৯৯২ সালের ২১ আগস্ট। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ, ‘এভাবে জল বাড়তে থাকলে আমি মিথ্যেবাদী হয়ে যাব’ (২০১৮), ‘মৃত্যুস্মৃতি নিয়ে চা-আলাপ’ (২০২৫)।