শুক্রবার, অক্টোবর ৪

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে : মোশতাক আহমদ

0

ঈদের আগের রাতে রশিদ কমান্ডারের নেতৃত্বে পুরো পাকিস্তানি দলটিকে খতম করার পর বারুদ আর জলকাদার গন্ধ মেখে— ১৪ জন সহযোদ্ধা নিয়ে— সবার পিঠে অস্ত্র বাঁধা— একটা শান্ত লোকালয়ে ঢুকলেন। পুকুরে হাত মুখ ধুয়ে সকালে ঈদের জামাত পড়বেন।

বাড়ির ভিতর থেকে এক দাদিমা বেরিয়ে এলেন একটা সুগন্ধি সাবান হাতে করে। সেকালে ঘরে ঘরে রোজ রোজ সুগন্ধি সাবান মিলত না, হাটে বাজারেও না। ঈদে-পার্বনে এই সাবান মিলত।

—বুড়িমা, তোমার নাতি-নাতনিরা এই সাবান দিয়ে ঈদের গোসল করবে নিশ্চয়ই।

—না বাবারা, তোমরা গোসল করো। দ্যাশ স্বাধীন হইলে ওরা রোজ রোজ সুগন্ধি সাবান দিয়ে গোসল করতে পারবে!

গোসলের পর রশিদ কমান্ডার নীরবে শপথ নিয়ে বাচ্চাদের বাবাদের সাথে করে, গোল টুপি মাথায় ছেলে শিশুদের হাত ধরে— দলেবলে ঈদের জামাতে গেলেন। এরপর সেমাইয়ের পালা। শিশুদের জন্য দুধ সেমাই রাঁধা হয়েছিল।

দাদিমা সেই সেমাই মুক্তিযোদ্ধাদের পাতে তুলে দিলেন। আবার আগের মতোই আপত্তি। আবার আগের মতোই উত্তর, তোমরা দ্যাশ স্বাধীন করলে আমার নাতি-নাতনিরা প্রতিদিনই দুধ সেমাই খেতে পারবে!

দাদিমা বুঝেছিলেন স্বাধীনতার অর্থ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’।

[মোহাম্মদ ইকবালের মুখে শোনা মুক্তিযোদ্ধা রশিদ কমান্ডারের গল্প]

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৪ জানুয়ারি ১৯৬৮। মূলত কবি। আটটি কবিতার বই ছাড়াও লিখেছেন ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিপাঠের বই। পেশাগত জীবনে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। প্রকাশিত কবিতার বই : সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট, আমার আনন্দ বাক্যে, পঁচিশ বছর বয়স, মেঘপুরাণ, ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি, বুকপকেটে পাথরকুচি, ডুবোজাহাজের ডানা, অন্ধ ঝরোকায় সখার শিথানে । গল্পের বই : স্বপ্ন মায়া কিংবা মতিভ্রমের গল্প।প্রবন্ধ : তিন ভুবনের যাত্রী । স্মৃতিপাঠ : অক্ষরবন্দি জীবন। স্বনির্বাচিত কবিতা (প্রকাশিতব্য) : পদ্যাবধি । স্মৃতিকথা (প্রকাশিতব্য): গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গল্প : পাবলিক হেলথের প্রথম পাঠ । ডকুফিকশন (প্রকাশিতব্য) : ঝিনুক নীরবে সহো

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।