সোমবার, ডিসেম্বর ২

আল-সাদ্দিক আল-রাদ্দির আরবি কবিতা || হিন্দি থেকে ভাষান্তর : অজিত দাশ

0
আল-সাদ্দিক আল-রাদ্দি

আল-সাদ্দিক আল-রাদ্দি

১৯৬৯ সালে সুদানের উমদুর্মান শহরে জন্ম নেওয়া আল-সাদ্দিক আল-রাদ্দি আরবি ভাষার শীর্ষস্থানীয় আফ্রিকান কবি। তাঁর কবিতাগুলোর বিস্তৃত কল্পনা আর সরলতার কারণে বিশ্বব্যাপী কবিতা প্রেমীদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সুদানের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং এর জটিল ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর কবিতার নিবিড় সংযোগ দেখা যায়। তিনি সুদানের আধ্যাত্মিক ও পৌরাণিক সাহিত্যের ঐতিহ্যের পুর্নর্মিলনের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর কবিতাগুলিতে কোমলতা, বিভেদ, দুঃখ, বেদনা, কল্পনার সৌন্দর্য এবং উপস্থাপনের ভঙ্গি পাঠকদের অবাক করে দেয়। তাঁর প্রকাশিত কবিতার বইগুলো হলো, সংগস অব সলিচ্যুড (১৯৯৯), দ্য সুলতানস ল্যাবিরন্থ (১৯৯৯) এবং দ্যা ফার রিচেস অফ দ্য স্ক্রীন (২০০৯)।


কিছুই না


পড়া শুরু করার আগে
কলম নিচে রাখ,
কালো কালির দিকে নজর দাও
কিভাবে সে নিজের ভেতর
ধরে রাখে কালির প্রস্রবণ
চোখ সংকুচিত করে
সরল রেখার হিসেব রেখে
দৃষ্টির বিস্তৃতি আর হাতের ছলকে জানো
আমাকে অথবা অন্য কাউকে দোষ দিও না
ভালই হতো যদি পড়ার আগে
অথবা রক্ত প্রবাহ বোঝার আগে
তুমি মৃত্যুর নিকটবর্তী হও!


স্বপ্ন


তুমি সবুজ রঙের
শরীর হতে পারতে
অথবা কোনো ভাষা
পাখার মতো নিজেকে
সঙ্গে নিয়ে ঘুরছি আমি

হয়ে যাও না আমার ভাষার প্রেরণা
যেন হতে পারি আমি
আমার যোগ্যদের কন্ঠস্বর
ওরা সকলেই নিশ্চুপ
অস্থির আর একলা
আমি স্পষ্ট দেখছি
তুমি সবুজ রঙের শরীর নও
বেচাকেনার কারবারে ওস্তাদ নও
না, গভীর কোনো বিচারবোধও নও
কবিতা তুমি ছিলেই
প্রলাপের অপেক্ষায় বসে
থাকা আমার স্মৃতি।


সহানুভূতি


যখনই তোমার নাম
কোথাও উচ্চারিত হতে দেখি
চমকে উঠি আমি!

তোমার রহস্যগুলোর পর্দা
একে একে বিলীণ হবে, এ আমি চাই না
ইচ্ছেগুলো তোমাকে আরও রঙ্গিন করে
দিয়েছে; তোমার চোখ মৃদুলতায় চমকাচ্ছে
কাউকে খুঁজতে গিয়ে কেঁপে উঠছে তোমার শরীর
তোমার জিকির আমার ভেতর চিরে দেয়
তাই দুপুরের এই তপ্ত রোদে
চলে এসেছি আমি, তোমার কাছে
সকালের গল্প শুনাতে
তুমি… তুমি…
তুমিই আমার একমাত্র ধর্ম!


প্রার্থণা


অন্ধকার আর অশ্রুর মাঝে
একটা শব্দ!
মাথা উঁচিয়ে
করি ষষ্ঠাঙ্গ প্রণাম,
তার দিব্য আহ্বানে
চমকে উঠে পান্না।


কবিতা


আমি ফেরেশতাদের দেখেছি
গাইতে থাকা পাখিদের হত্যা, ঘোড়া, সৈনিক
মৃত্যু শোক পালন করতে থাকা দুখি স্ত্রী
জড়পাথরের মতো পড়ে থাকা মৃত গাছ, ভয়ংকর চিৎকার আর
কান্নায় ভেঙ্গে পড়া নারীদের; রাস্তা, দৌড় প্রতিযোগী গাড়ি,
নৌকা আর, নির্দোষ বাচ্চাদের দেখেছি চোখের সামনে।
আমি বললাম, হে অন্তরীক্ষের প্রভু, এটাই তোমার পৃথিবী?
আমাকে কাদার মাটির কথা বলো, আগুণ, ধোয়া, ছায়া,
গন্ধের সত্যতা সম্পর্কে জানাও।
অথচ আমি তাঁর কাছে নিজের ঘর সম্পর্কে
কিছুই জানতে চাইলাম না।


লেখন


নিজেকে স্বেচ্ছায় এক টুকরো শূন্য পৃষ্ঠায় বন্দী করে
সেখানে এক নারীর জন্য ঘর বানালো সে
নিজের ভেতরের দুনিয়াকে অনাবৃত করে সেখানে
চমকাতে থাকা এমন কিছুর জন্য মরিয়া হয়ে
তৈরি করে সে যে ঘর, সে ঘর কখনো তার নিজের হয়নি।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৮৯ কুমিল্লায়। কবিতা, ছোটোগল্পের পাশাপাশি অনুবাদ করেন। এ পর্যন্ত দুটো অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ তে বেহুলাবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ওশোর গল্প’। ২০১৯ সালে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রজ্ঞাবীজ’। কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।  বর্তমানে হিন্দি সাহিত্যের অনুবাদ নিয়ে কাজ করছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।