দাহক
তোমার শৈশবে হারানো নদীটি
আমার নেত্র সহোদর
হারানো নূপুর হাতে দূরের দ্রাঘিমা ধরে
ক্ষণ বসন্ত আর অবদমন নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম আমি
দিকে দিকে মৃত্যু দেখে, আয়ু ভেবে কাকে জড়ালে?
আমি কি মৃত্তিকার মতো ভালবাসাতে পারিনি?
সহজ গানের ঢঙে
হৃদয়কে রুপান্তরিত করেছি মাতৃত্বে
ছুঁয়ে দেখো —
প্রেমিক মূলত কবর, একটুকরো জান্নাত
গোঁড়া
প্রতিবিম্বের কাছাকাছি দাঁড়ালে
অন্তর্গত আঁধারের গায়ে ফুটে ওঠে কিছু প্রশ্নগুল্ম
আমার ভাষাজ্ঞান ও শব্দকৌশলের ছোরা দিয়ে
প্রশ্নগুলোকে কতল করতে যাই
কিন্তু কেন!
যদি উত্তরগুলো হাইড্রা ড্রাগনের মতো
নতুন জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়!
তাই ‘বিশ্বাস’ শব্দের চাকু নিয়ে
বসে থাকি মিথের অন্ধকারে
দেখো— এই একটি খঞ্জর দিয়ে
আমি হত্যা করে চলেছি সমস্ত সত্যের শরীর
ইতিকথা
নির্ঘুম প্রেমিক মাঝরাতে তোমার দারস্থ নারী
তাকে ঘুম দাও, প্রেম, শুশ্রূষা দেহের অনুকূলে—
বহু আরোপিত জ্ঞান, হতাশা, দ্বান্দ্বিক সোসাইটি
পোশাক, কথন আর নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে— দেখো
অচেনা পথের মতো ক্লান্ত সে তীব্র বাঁচার ভয়ে
আগত এ ধোঁয়া সংশয়ে তুমি দাও তাকে ফুঁকে
বাউল গানের মতো আদিগন্ত শস্য ও জলের
প্রণয়। কেন না তার দুচোখে নীলাভ ক্লেশ ছাপ
ক্রমশ এ দাগ কোনো পুরোনো কূপের মিথ হবে
জল ছেটালেই, মৃত সৈন্য আবার দৌড়াবে যুদ্ধে—
প্রবাহ
রে অলকা —
কোন দূরে রেখে এসেছো সে অতীত ঝরোকা
মাঝে বয়ে গেছে কত কত প্রাণ ও বন্ধুধরণা
বার্তাবাহী বাতাসের গায়ে ছেড়ে দাও কার গান!
বাঁশপাতার শরীরে জেগেছে কি তার অনুরাগী সুর?
আমি বাড়ি ফিরে ভাবি তোমাকে, তুমি কি কোনো গৃহ?
দরজা ভেজিয়ে কাঁদো বৃষ্টি, দু-চোখে উড়ছে
মৃত-মেঘ
আহার ছিটিয়ে দাও, পাখি বন্দির কৃতকৌশলে
আমি কাটি গলা আর তুমি রক্ত ধুয়ে দাও জলে
তিলকনগর ৩
তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, আমি একা জেগে থাকি
আর কে যেন এ মহারাত্রির ভেতর
মোহন বাঁশির সুর ধরে রাখে
দূরাগত স্মৃতি তখন আমাকে সঙ্গ দেয়
মনে পড়ে অতীত আলস্য
ঘুমকাতুর সকাল
তুমি একা একা বৃষ্টিদিনে
এসেছিলে ক্লাসে
তন্দ্রালস্যে আমি আসিনি সেদিন
অভিমানে বৃষ্টি থামেনি তবুও
ফোনবার্তা পেয়ে ভিজে ভিজে গিয়ে দেখি
মিশকালো মেঘ তুমি
বজ্ররেণু ঝরছে দু-চোখ
দাহ নিয়ে চলে গেলে, আমায় দহনে রেখে
আজ এতোদিন পর, তোমার শহরে
তুমি ঘুমিয়েছ একা
আর আমি স্মৃতির ভেতরে সারাটি রাত
চুপিচুপি হাসি, প্রেমে মরে যাই—
কবিতা লেখেন মূলত; পাশাপাশি গদ্য লিখতে চেষ্টা করেন। প্রকাশিত বই: যামিনী ও মরমী ধনুক ( কবিতা)।