রবিবার, নভেম্বর ১০

উড়ালপাখির মতো : সৈয়দ আফসার

0

সংসার


গন্তব্য এক হয় না আমাদের, মতের অবস্থা চৌচির।
নীরবতার আড়ি পরস্পর, কথার ভিতর থেকে কথা
টেনে নিতে তৎপর। কোনঠাসা সোফায় বসা আমার
জড়োসড়ো শরীর, পুজোর পাথর…

আমরা যেন দু-মেরুর বাঁধ। সে দিনে আলো ছড়ালে
আমি রাতে-পূর্ণিমার চাঁদ।

সব অধিকার যেন তার, অধীনতা, দায়ভার, কেবল আমার
তবুও ভালোবাসা—তবুও মায়া, পাশাপাশি থাকে সংসার।

সংসার, চির সুন্দর একটি মায়া ফুলের ঘ্রাণে ভরপুর।


মর্মরধ্বনি


জীবনের মানে খুঁজি না আমি, এই দুর্দিনে
তুমিহীনা ঐ চোখজোড়া কে ধরবে টেনে?
‘নিজেকে জানো’ সক্রেটিস গেলেন বলে
চিরকাল ক’টা বিরহক্ষণ আড়ালে খেলে

নিজের ভিতরে নিজে বলি—থেকো চুপচাপ
দিনেদিনে ছোটো হচ্ছে জীবনের যত পরিমাপ
ধরে রাখছো গোছা-গোছা স্বপ্ন স্মৃতি বেয়ে
দূরে যাবে, কতদূর যাবে একাকী পালিয়ে…

জীবনের মানে খুঁজি না আমি, এই দুর্দিনে
হারানো দিনের মর্মরধ্বনি আমাকে টানে


স্পর্শআঁচ


এই পৃথিবী থেকে একদিন মুছে যাবে—আমারও নাম
জীবনের অর্ধেক সময় পেরিয়ে গেল, মেটেনি মনস্কাম
মনোঘরে বাসনা জমে, তারার সঙ্গে জেগে থাকি রাত
সারাক্ষণ তুমি ভ্রান্ত এক ধারণায় বাড়িয়ে রাখলে হাত
স্মৃতির হাড়ে আমিও পুষে রাখি কথা, জীবনের ব্যর্থতা
গাঢ়রঙে মোড়ানো ব্যর্থ অভিমান, যেন দুঃখের গভীরতা
তোমার দিকে গড়িয়ে পড়ছি যেন, কথা না-শোনা কানে
অবশ করা এই দেহমনে, সদা একটা টান থাকে গোপনে

এই শীতে, হিমের একটুআধটু ঘ্রাণে, আমিও খুলে রাখি
দেহের বোতাম। মুহূর্তে ছড়াও কিছু স্পর্শ, বসে মুখোমুখি


বিশ্রাম


মনটা বিশ্রাম চায়। নিঃশব্দে। দীর্ঘ একটা ঘুমে
স্টবরিফল খেতে-খেতে জলের দিকে তাকিয়ে।
হররোজ বসে থাকতে মন চায় হাতে হাত রেখে।
ফুলবাগানের মিষ্টঘ্রাণ নিতে-নিতে একটা পাথরে
বসে। দুই চোখ ভরে কাচের জানালা দিয়ে বৃষ্টিমুখ
দেখতে-দেখতে। গাছে হেলান দিয়া ঠায় দাঁড়িয়ে
থাকি আমি, উড়ুহাওয়ায়। ধূসর একটা হাসি ধরে।

মনটা বিশ্রাম চায়। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে।
বারবার লাগাতার। যে কোনো ছুতোয়। এমন
ভাবরস দরকার। বাকি জীবনটা ওভাবে কেটে
গেলে মন্দ হবে না আমার


ইচ্ছে ও আমি


নির্জন একটা জায়গা দরকার আমার
ক’টা দিন একেলা থাকব আমি, নদীর
ধারে। একাকিত্বে। ছায়াদের আশপাশে
উড়ালপাখির মতো উড়ে উড়ে মনাকাশে
তাপে সবই তপ্ত হয় না পুষ্প-ভেজা-রসে
নিজ থেকেই দূরে থাকি দেহের বিশ্বাসে
জীবনে যাই ঘটুক, নয় সবই অস্বস্তিকর
একা আমি, নদী ও পথ, সঙ্গে হাওয়াঘর
তবু আমি পাখি হয়ে উড়ি দেহের পরতে
পরতে। ওই হাসিফুলের ঘ্রাণ ছুঁয়ে নিতে

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম সৈয়দ পুর, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ। গত দেড়দশকের বেশি সময় ধরে দেশের প্রতিনিধিত্ব পর্যায়ের সাহিত্যপত্রিকাগুলোতে লিখছেন, সমানতালে সক্রিয় আন্তর্জালিক বাংলা বর্ণমালা ভুবনেও, মূলত কবিতায় তার অভিনিবেশ ও অধিবাস। প্রায় দুইযুগ ধরে সম্পাদনা করেছেন পত্রিকা এক, কবিতাকেন্দ্রী, অর্কিড নামে। গদ্য লেখেন অনানুষ্ঠানিক, ব্লগস্পট ও ওয়েবপত্রগুলোতেই প্রধানত। গদ্যবই ১টি 'ব্লগাবলি' নামে। প্রকাশপ্রাপ্ত কবিতাবই এ-যাবৎ ৬টি।  ৩টি কবিতাবই যন্ত্রস্থ।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।