সোমবার, ডিসেম্বর ২

কুকুর জন্ম : মুম রহমান

0

ডাস্টবিনে থাকতাম আমি। খাওয়ার কষ্টটা তেমন ছিল না। কতো লোক কতো কী ফেলে যেত! সব খাওয়ার উপযুক্ত নয়, তবু কুড়িয়ে-বাড়িয়ে যা পাওয়া যেত আমার ছোট্ট পেট ভরে যেত। আর কখনোবা একটু হাড় কি মাংস পেয়ে গেল তো মহাভোজ হতো।

অবশ্য মাঝে মাঝে ঝামেলাও হতো। অন্য ধাড়ি কুকুরেরা এলে মারামারি-কাড়াকাড়ি লেগে যেত। বড়ো কুকুরগুলো মারামারি আর কাড়াকাড়িতে ওস্তাদ। একবার তো এক মহা কেলেঙ্কারি হয়ে গেল। কোত্থেকে একটা মরা মানুষ পাওয়া গেল। আস্ত মানুষ না, হাত-পা-মাথা ছাড়া একটা মাংসল শরীর। সেই নিয়ে ধাড়ি কুকুরগুলোর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ছিঃ, খাবার নিয়ে লড়াই, তা-ও আবার মানুষের মাংস নিয়ে, ভাবতেই এখনও আমার গা গুলিয়ে যায়। কিন্তু কুকুর বলে কথা, পাঁচ-সাত মদ্দা মিলে কী যে মারামারি! আর মাদিগুলো নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেবল কাউ-কাউ আর ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল।

ছিঃ, খাবার নিয়ে লড়াই, তা-ও আবার মানুষের মাংস নিয়ে, ভাবতেই এখনও আমার গা গুলিয়ে যায়। কিন্তু কুকুর বলে কথা, পাঁচ-সাত মদ্দা মিলে কী যে মারামারি! আর মাদিগুলো নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেবল কাউ-কাউ আর ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল।

সে এক ভয়াবহ হুলস্থুল! কয়েক মিনিটের মধ্যে মানুষের ভিড় জমে গেল, কেউ ইট ছুঁড়ে মারে, তো কেউ লাঠি দিয়ে তাড়া দেয়। তবু মদ্দাগুলোর তেজ কমে না। এরপর এলো পুলিশ, মানুষের মধ্যে পুলিশগুলো বড়োই ভয়ংকর, তারা লাঠি পেটানোতে ওস্তাদ। পুলিশের বাড়িতে কুকুরগুলো এবার পালাতে লাগল। কিন্তু একটা মাদী ক্ষেপে গিয়ে এক পুলিশকে কামড়ে দিল। আর যায় কোথায়! পুলিশকে কামড়ানো কী সোজা কথা! সব পুলিশ মিলে এবার গুলি ছুঁড়ে দিল। মিউনিসিপ্যালটি থেকে চলে এলো কুকুর মারা গাড়ি। চিমটা দিয়ে ধরে ইনজেকশন দিয়ে গাড়িতে করে কোথায় যে নিয়ে গেল কুকুরগুলোকে আর কেউ বলতে পারল না! আমি তো ছোটো ছিলাম, আর এক কোণায় পড়ে ছিলাম, তাই সে যাত্রায় বেঁচে গেলাম। কিন্তু সেই যে ডাস্টবিন ছাড়লাম আর ওমুখো হইনি কখনো।

ডাস্টবিন ছেড়ে আমি ঠাঁই নিলাম রেলস্টেশনে। সেখানে বড়ো মজা। কতো রং-বেরঙের জিনিস আর মানুষ। একটু পরপরই হুইসেল দিয়ে নতুন নতুন ট্রেন আসে আর যায়, সেই সব ট্রেন ভর্তি কতো মানুষ, তাদের হাতে হাতে কতো খাবার। কেউ পাউরুটির টুকরা ফেলে দেয় তো কারো টিফিন বাটি থেকে ভাত ফেলে দেয় রেললাইনের ধারে। আমার কুকুর জন্মে দেখেছি, মানুষ যত খায়, তার চেয়ে ফেলে অনেক বেশি।

যাহোক, স্টেশনে আরও তিনটা কুকুর ছিল। অন্য কোনো কুকুরকে তারা ভিড়তে দিত না। আমি ছোটো বলে আমাকে তারা কিছু বলেওনি। সত্যি বলতে কি, আমার সঙ্গে তাদের খাতিরই হয়ে গেল। আমি তাদেরকে ভাগ না-দিয়ে কিছুই খেতাম না। আমি নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াই। ফেলে দেওয়া পাউরুটি, বিস্কুট খাই। এই সময়ই দেখা হলো আমার মনিবের সঙ্গে। আহা, বেচারা, মানুষ না, ফেরেশতা! আমাকে দেখে কী যে মায়া হলো তার, একেবারে বাসায় নিয়ে এলেন কোলে করে। তার বউ তো ক্ষেপে আগুন। মনিব মিউ মিউ করে বলে, লক্ষ্মীটি, আমি একে পুষবো, দেখো কী সুন্দর সাদা’র উপরে কালো ছোপ! মনিবের বউ ঝামটা দিয়ে বলে, লজ্জা করে না, এই ধাড়ি বয়সে কুকুর পুষবে, ছিঃ, তাও যদি বিদেশি কুকুর হতো, রাস্তার একটা কুকুর!

আমার এক জীবনে এইটুকু দেখেছি, যে ঢঙ্গি মেয়েছেলেগুলো কুকুর পছন্দ করে না, তাদের পছন্দ স্বার্থপর বিড়াল। দুয়েকটা মেয়ে কুকুর পছন্দ করলেও সেটা হতে হবে বিড়ালের মতো তুলতুলা বিদেশি কুকুর! আরে, বিদেশি কুকুরের মধ্যে কি তেমন মায়া-মহব্বত আছে! ওরা জানেটা কী! কী পারি না আমরা! দুবেলা ওই বিদেশি কুকুরের মতো একটু খাতির যত্ন করলেই দেখিয়ে দিতাম দেশি কুকুরের ক্ষমতা।

আমার এক জীবনে এইটুকু দেখেছি, যে ঢঙ্গি মেয়েছেলেগুলো কুকুর পছন্দ করে না, তাদের পছন্দ স্বার্থপর বিড়াল। দুয়েকটা মেয়ে কুকুর পছন্দ করলেও সেটা হতে হবে বিড়ালের মতো তুলতুলা বিদেশি কুকুর! আরে, বিদেশি কুকুরের মধ্যে কি তেমন মায়া-মহব্বত আছে! ওরা জানেটা কী!

যাক, অন্য কথায় চলে গিয়েছিলাম। বয়স হয়েছে তো! কোত্থেকে কোথায় চলে যাই! কিছু মনে করবেন না। যে কথা বলছিলাম, শেষপর্যন্ত আমার ঠাঁই হলো, ঘরের বাইরে। মনিব আমার নাম রাখলেন হিটলার। মনিবের বউ আমার নামটা পছন্দ করলেন। বিদেশি নাম বলে কথা। তবে আমি পরে নানা আলোচনায় বুঝেছি, হিটলার নামে এক ভয়াবহ বদ লোক ছিল। এমন এক বদ লোকের নামে আমার নাম কেন রাখা হলো কে জানে! তবে মনিব আমাকে খুব আদর করতেন, ফলে নাম নিয়ে দুঃখটা আর রইল না। কুকুরের নামে আর কী আসে যায়! সৃষ্টকর্তা আমাকে অনেক সুখ দিলেন। আমি নিয়মিত খেতে পাই, থাকার জন্যে একটা জায়গা আছে আমার, কুকুর জন্মে আর কী লাগে!

কিন্তু একটানা সুখ বোধহয় কোনো কুকুরের জীবনেই সয় না। মনিবের বউটা কিছুতেই আমাকে দেখতে পারত না, সব সময় দূর দূর করত। তার আবার অন্য এক লোকের সাথে সম্পর্ক ছিল। মনিব বেড়িয়ে গেলেই সেই লোকটা আসত। আমি লোকটাকে দেখলেই অনেক ঘেউ ঘেউ করতাম। মনিবের বউ তাতে আমার উপর আরও খেপত। একদিন তো গরম পানি ঢেলে দিয়েছিল আমার গায়ে, ভাগ্যিস আমি সরে গিয়েছিলাম। আরেকদিন বাগানের ধারে ওই লোকটা আর মনিবের বউকে দেখলাম জড়াজড়ি করছে। আমাকে দেখে মনিবের বউয়ের সে কি রাগ, কুত্তা, হারামজাদা কুত্তা, মনিবের মতো খালি ছোক ছোক করার অভ্যাস তোর! আর লোকটা একটা বড়ো ইট ছুঁড়ে মারল। আমার সামনের একটা পা বোধহয় ভেঙেই গেল। তারা দুজনে মিলে আমাকে তেড়ে মারতে এলো। আমি বুঝলাম, আজ এদের মাথায় খুন চেপেছে। নিজের জান আর মান নিয়ে আমি পালিয়ে গেলাম।

মনিবের বউটা কিছুতেই আমাকে দেখতে পারত না, সব সময় দূর দূর করত। তার আবার অন্য এক লোকের সাথে সম্পর্ক ছিল। মনিব বেড়িয়ে গেলেই সেই লোকটা আসত। আমি লোকটাকে দেখলেই অনেক ঘেউ ঘেউ করতাম। মনিবের বউ তাতে আমার উপর আরও খেপত।

একদিক দিয়ে ভালোই হলো, আবার আমি স্বাধীনতা পেলাম। যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াও, কোনো অসুবিধা নেই। কেবল সামনের বাম পা-টা থেকে থেকে ব্যথা করত। মাঝে মাঝেই আমি আনমনা হয়ে যাই, বেচারা মনিবটার কথা ভাবি। ইচ্ছে করে, ছুটে গিয়ে মনিবের বউ আর ওই লোকটাকে কামড়ে আসি। কিন্তু আমি জানি কাউকে কামড়ানো ঠিক না, এতে নিজেরও ক্ষতি হয়। মানুষকে কামড়ালে কুকুরেরও অসুখ হয়। একদিন উদাস মনে রেললাইনে হাঁটছি, কখন কীভাবে বুঝতে পারিনি, হুইসেল না বাজিয়ে একটা ট্রেন এলো। তারপরই আমার পা-টা কাটা গেল। একদিক থেকে ভালোই হলো, ভাঙা পা-টা চিরতরে আমাকে ছেড়ে গেল। কিন্তু এখন নিজের কাছেই আমার নিজেকে হাস্যকর লাগে। তিনপায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলি। ছোটো বাচ্চারা আমাকে দেখলে ঢিল ছুঁড়ে মারে। মানুষের বাচ্চাগুলো ভারী পাজী হয়। এমনকি অন্য কুকুরগুলোও আমাকে খুব একটা পাত্তা দেয় না। তিন ঠ্যাংয়ের কুকুরের কীইবা মূল্য আছে!

স্টেশনের এক কোণায় শুয়ে-বসে দিন পার করতে লাগলাম আমি। এর-ওর লাথি খেয়ে মুখ বুজে থাকি। তিন ঠ্যাংয়ের কুকুরকে মানুষও পছন্দ করে না, কুকুরও না। স্রেফ উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে আছি আমি। এমন সময় একদিন খুঁজতে খুঁজতে মনিব আমাকে পেয়ে গেল। তার চোখে পানি, কী রে হিটলার, এ কি অবস্থা হয়েছে তোর, পা-টা কাটা গেল কীভাবে! আহারে, বাড়ি চল্। কিন্তু আমি ফিরে যেতে চাই না। মনিবের বউ আমাকে আবার অপমান করবে, মারবে, তাড়া করবে। মালিক হয়তো আমার মনের কথা বুঝতে পারে। সে বলে, তুই চল, কেউ তোকে কিচ্ছু বলবে না। চল না, আমাকে ছেড়ে তুই থাকতে পারবি, ও হিটলার, চল্। আমার চোখে পানি এসে গেল। আমি কুঁই কুঁই করে তার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম।

ঘরে ফিরে এলাম আমি। কী আশ্চর্য, মনিবের বউ আমার সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করল না। বরং দিনে দিনে সে আমাকে ভালো চোখে দেখতে লাগল। আর খালি বাড়িতে আগের সেই লোকটিও আসে না। মনিবের বউ একা একাই এ ঘর সে ঘর ঘুরে বেড়ায়। কেমন শান্ত আর বিষণ্ন হয়ে গেছে সে। মনিবের বউয়ের জন্যে আমার মায়া বাড়তে থাকে। সে-ও কিছু হলেই আমার দিকে তাকিয়ে বলত, আহা বেচারা অবোধ জীব! কৃতজ্ঞতায় আমার চোখ ভিজে যেত। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যতদিন বেঁচে থাকব এই তিন পায়েই তাদের সেবা করব।

তবে কুকুররাও সব প্রতিজ্ঞা রাখতে পারে না। আমি তাদেরকে ছেড়ে চলে গেলাম। একদিন এক কুকুরীর সঙ্গে আমার দেখা। কী তার টানা চোখ, দারুণ মোহনীয় লেজ, আর প্রতিটি পায়ে পায়ে তার মুগ্ধতা জড়ানো। আমি সেই মুগ্ধতায় মজে গেলাম, আমি কুকুরীর প্রেমে পড়ে গেলাম। তবে আমি প্রেমে পড়লে কী হবে সে আমাকে পাত্তাই দিতে চায় না। কেনই বা দেবে, তিন ঠ্যাংয়ে একটা কুকুরকে অমন মোহনীয় কুকুরী কি ভালোবাসতে পারে। তবু আমি হাল ছাড়ি না। পিছে পিছে ঘুরতেই থাকি। কোথাও একটা হাড় পেলে ওর জন্যে জমিয়ে রাখি। ওকে খুশি করতেই আমার প্রাণান্ত চেষ্টা। একদিন ল্যাম্পপোস্টে ইয়ে করার সময় ও আমাকে দেখে ফেলল। তাতে খুব লজ্জা পেলাম আমি। ইচ্ছে হলো, ট্রেনের নিচে গলা পেতে দেই। ভালবাসার জন্যে সত্যিই ট্রেনের নিচে চলে যেতে পারি আমি।

হয়তো আমার এই অনুভূতিটা সে টের পেয়েছিল। ঈশ্বরের ইচ্ছায় একদিন সে ফিরে তাকাল আমার দিকে। আমার তিন ঠ্যাংয়ের জীবনটার প্রতি মায়া হলো তার। প্রেম হয়ে গেল আমাদের। আমরা দুজনে এক স্মৃতি সৌধের পিছনে লিভ টুগেদার করতে লাগলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে আসল ঘটনা জানতে পারলাম। কুকুরীর চেহারা ভালো হলেও চরিত্র ভালো না। সে আমার আগে আরও অনেক কুকুরের সঙ্গেই লিভ টুগেদার করেছে। শুধু তাই না, এখনও আমাকে লুকিয়ে অন্য কুকুরের সাথে মিলিত হয় সে। রাগে-দুঃখে-ক্ষোভে তাকে ছেঁড়ে এলাম আমি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনায় মাথা নিচু করে আবার পুরনো মনিবের ঘরে ফিরে এলাম আমি। মনিব বললেন, কি রে হিটলার কোথায় ছিলি এতোদিন? মনিবের বউ বললেন, এমন শুকিয়ে গেছিস কেন, আহা বেচারা!

আমি ব্যথায়-লজ্জায়-অপমানে চুপ করে থাকতাম। সারারাত কুঁই কুঁই করে কাঁদতাম। কিছুই ভালো লাগত না আমার। কিন্তু মনিব আর তার বউ খুব যত্ন করল আমার। তারা মনে করেছিল, আমার কোনো রোগ হয়েছে। কি জানি প্রেম কোনো রোগ কি না? কিন্ত ভাগ্যের নির্মম ছোবলের মতো সত্যি সত্যি অসুস্থ হয়ে পড়লাম আমি।

অভিশাপের মতো আমার শরীরে দেখা দিল সেই রোগ। গায়ের সব লোম পড়ে গেল আমার। শ্রবণ শক্তি কমে গেল, ঘ্রাণ শক্তি কমে গেল, দেখার চোখও ঝাপসা হয়ে গেল। এমনকি দাঁতগুলোও এতো দূর্বল হয়ে গেল যে একটা হাঁড়ও চিবুতে পারি না। দুয়েকটা দাঁত পড়ে গেল। কিছু খেতেও ভালো লাগে না আমার। মনিবরা খুব উদ্বিগ্ন হলেন আমাকে নিয়ে। তারা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। একদিন, দুদিন করে মাঝে মাঝে আমাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়, কী সব ওষুধ দেওয়া হয়, কিন্তু শরীর ভালো হয় না আমার।

একদিন বসার ঘরে মনিব আর মনিবের বউ কথা বলতে লাগল। দুজনেরই মন খারাপ। আমি তাদের কথা শুনে ফেললাম।
— তুমিই বলো, এখন কী করবে?
— বুঝতে পারছি না, বেচারা এতো অসুস্থ। এ অবস্থায় কী করি ওকে নিয়ে। ডাক্তারকে আবার জিজ্ঞেস করবে?
— ডাক্তার তো সেই একই কথা বলে, এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, ওকে মরতেই হবে।
— আহা বেচারা!
— কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপারটা হলো ক্রমশ পাগল হয়ে যাবে ও। রোগটা যতো ছড়াবে ততো ওর পাগলামি বাড়বে। সে সময় প্রায় এগিয়ে এসেছে। এখন ও পাগল হয়ে গেলে যাকে তাকে কামড়াতে পারে…
— আমাদের তো আর কামড়াবে না?
— তারও কোনো ঠিক নেই।
— তাহলে?

আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। বুঝলাম, আমি ওদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছি। বুঝলাম, আমার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে, মরে যাব আমি, পাগল হয়ে মরব। কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ নেই আমার। সব কুকুরকেই মরতে হয়। তবু ওরা কেমন করে ভাবল, ওদেরকে কামড়াবো আমি! ডাক্তার কী করে বুঝল, মনিবকে কামড়াবো আমি! তাই কী হয় কোনোদিন! যত নিকৃষ্ট কুকুরই হই আমি, যত পাগলই হই আমি তাদেরকে কি কামড়াতে পারি! তাছাড়া, আমার দাঁতই তো নেই।

বুঝলাম, আমি ওদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে গেছি। বুঝলাম, আমার দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে, মরে যাব আমি, পাগল হয়ে মরব। কিন্তু তাতে কোনো দুঃখ নেই আমার। সব কুকুরকেই মরতে হয়। তবু ওরা কেমন করে ভাবল, ওদেরকে কামড়াবো আমি!

তবু, যাই হোক আমি তাদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হবো না। আমি মনিবের বাসা ছাড়লাম। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের সেবা করা আমার হলো না। এবার আর বাসা ছেঁড়ে স্টেশনে আসিনি আমি, জানি, সেখানে গেলে মনিব আমাকে খুঁজে বের করবে। আমি ফিরে এসেছি এই ডাস্টবিনে, আমার শৈশবের পুরনো ডাস্টবিনে। নোংরা, ঘেঁয়ো, অসুস্থ কুকুরের মরার জন্যে এ চেয়ে ভালো জায়গা আর কীইবা হতে পারে!

মরব আমি। কিন্তু একটাই প্রার্থনা, আমার মনিবেরা ভালো থাকুক। কুকুর হিসেবে এর বেশি আর কীইবা চাইতে পারি আমি!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

মুম রহমান একজন লেখক। সার্বক্ষণিক এবং সর্বঅর্থে লেখক। যা করেন লেখালেখির জন্য করেন। গল্প, নাটক, কবিতা, অনুবাদ, বিজ্ঞাপণের চিত্রনাট্য, রেডিও-টিভি নাটক, সিনেমার চিত্রনাট্য, প্রেমপত্র-- সব কিছুকেই তিনি লেখালেখির অংশ মনে করেন। রান্নার রেসিপি থেকে চিন্তাশীল প্রবন্ধ সবখানেই তিনি লেখক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।