১.
অসংখ্য বৃষ্টির হাহাকার
চতুর্দিকে পড়েছিল ধাতুফলকের শব্দ
যেখানে পাতাহীন দুর্গানগর, যেন নীল অতীতে সমুজ্জ্বল
মায়াবী আশ্বিনমাস ব্যাকুল বাতাসে—
শোনা যায় ভোর-মোরগের ডাক
এখন বর্ষা আসে দুপুরের দুয়ারে
স্রোত হয়, বিজলি চমকায়— দৃষ্টি পড়ে উপকূলে
কোনো দিন অন্ধতপবনে
আরও কিছু তরঙ্গ, ঝরে পাশাপাশি
এ যেন অন্য ঋতুর পর্ব
সামুদ্রিক শাসন থেকে চলে যায় বৃক্ষ ও মানুষের ধ্বনি
২.
পালিয়ে এসেছি উন্নত নদীর দেশ থেকে
যেখানে বৃষ্টির শেষ
ধূয়ে গেছে অতীতের প্রজাপতি শিকার
আরও দূরে উত্তপ্ত কোকিলের চৈত্রমাস নিয়ে
অথচ প্রতীক্ষা আজ আনারসের চোখে
ভেঙে যায় প্রবালের শব্দ—নিঃসঙ্গ রেণুর মতো
কতদূর এসে পৌঁছে গেছে নিঃসন্তান ফড়িঙের পা
আঁকাবাঁকা নক্ষত্র
ভিড়ের ভিতর স্রোতের নির্বাসন।
মনে হয় ভুল পথে নেমেছে ধূসর মেঘের সংঘাত
কিসে এতো নগ্নতা?
তবু উজান যৌবনে শোনা যায় একটি চিত্রাপাখির ডাক
৩.
অবলম্বন পেলে সরে যাবে লুকানো মহিষের স্বর
নিজের কাছে আজ কার্পূরের রাত
এই বন— ছাড়া-বাড়ির বন
সারি সারি নিপুণ সব বেদনা
শূন্যতার ক্লান্তি
যেন জেগে আছে বালকের কোমল পাথর
চর্তুদিকে, নগ্ন নারীর শরীর
কোনোদিন পাইনি তার ঘ্রাণময় সীমারেখা
তবে হে আমার সমবয়সী তরুণী
তোমার জুঁই ফুলের ব্যাসার্ধ নিয়ে ফুটে আছে ভাতের মঙ্গল
৪.
নদী থেকে আসে নিরিবিলি বৃষ্টিপাত
ছায়ার মতো অবিরাম কাঁটাতার
ক্ষণে ক্ষণে বিজলির মিছিল
হাওয়া থাকে দূরে, এই শীতপাখির মতো অদৃশ্যে
রাত্রি, বিস্তৃত রাত্রি
কে নেবে নাচের শূন্যতা
বহু প্রজাতির উত্তীর্ণ হিমবাহ
মনে হয় কোথাও টেনে ধরে বেহুলার গান
নিয়মের প্রতিভূতে মৃত আজ আপন ফুলের মোহনা
অথচ জন্মসুর—
নারকেল বন পার হয়ে গেছে রূপালি চিতার কর্মে
৫.
তবে কি শুধু অন্তিমের ফুল?
সে-যে এতোদিন হৃদয়ভান করে
জেগে উঠে মরণের উচ্ছ্বাসে
কেন দেখেছি অতীতের বিকীর্ণ শরীর
কাছে-দূরে সমর্পিত কিশোরীর উপকূলে
তবু সারারাত একটি বিজয়ী পাখি
পৌঁছে যায় হাড় ভাঙা জাহাজের চরে চরে
অবশিষ্ট বনের জীবন। সমীচীন জুতোর সুর
যা-কিছু পড়ে থাকে হারানো উপহারে
কিংবা ঝাঁপ ফেলানো দোকানের ডাকে
নেই কোনো মেঘেদের কচুবন
কোথায় চলেছে অনুধাবনের রেখাপাত—
এইসব শ্বাসকষ্টের রাত
যেন শোনা যায় শব ভাঙা হাতছানি
কবিতা চর্চা করেন। সম্পাদনা করেন ‘হারপুন’ নামের একটি সাহিত্য পত্রিকা।