শনিবার, নভেম্বর ৯

মানুষরতন: কেবলই মায়ার খেলা : লাবণী মণ্ডল

0

‘মানুষ রতন কর হে যতন, যারে তোমার প্রাণে চায়…’

সভ্যতা বহুদূর এগিয়েছে। মানুষের চিন্তাচেতনা বিকশিত হয়েছে। গুহামুক্ত হয়ে মানুষ আজ লোকালয়ে। প্রতিনিয়ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নানান পরিবর্তন ঘটছে। প্রেম-ভালোবাসা-আবেগ-অনুভূতিতেও এসেছে ভিন্নতা। মানুষ যখন লিখতে পারত না, মুখে মুখে বলে গেছে—‘মানুষ রতনে’র কথা। এরপর মানুষ যখন লিখতে শিখল, তখন থেকেই লিখে যাচ্ছে প্রেমের গল্প, উপন্যাস। পৃথিবীতে মানুষ তার কথাগুলো বলার জন্য আকুল হয়ে থাকে। মানুষ তার গল্প লেখনির মধ্য দিয়ে প্রকাশ ঘটায়। তখনই তৈরি হয় উপন্যাস। যতদিন পৃথিবী থাকবে, ততদিন প্রেমের গল্প-উপন্যাস থাকবে। লাইলি-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনি তো সেই অমর প্রেমেরই উপাখ্যান, আজও যা মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

সর্বকালের সেরা দশটি উপন্যাসের তালিকা করলে, অন্তত পাঁচটি প্রেমের উপন্যাস থাকবে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক তালিকায় দেখা গেছে, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ দশটি উপন্যাসের মধ্যে একেবারে প্রথম দিকে রয়েছে—ভ্লাদিমির নবোকভের ‘ললিতা’, গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘মাদাম বোভারি’, ডিএইচ লরেন্সের ‘লেডি চ্যাটার্লিস লাভার’, জেন অস্টেনের ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস’, লিও তলস্তয়ের ‘আনা কারেনিনা’, বরিস পাস্তেরনাকের ‘ডক্টর জিভাগো’ ইত্যাদি।

বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের মধ্যে—‘কপালকুণ্ডলা’, ‘চোখের বালি’, ‘শেষের কবিতা’, ‘শ্রীকান্ত’, ‘দেবদাস’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, ‘কবি’, ‘শবনম’, ‘ন হন্যতে’, ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’, ‘নবনী’। সবই তো প্রেমের উপন্যাস।

 

Manusratan

মানুষরতন | মুম রহমান | ধরন: উপন্যাস | প্রচ্ছদ: আজহার ফরহাদ | প্রকাশক: বেঙ্গলবুকস | মুদ্রিত মূল্য: ৩৬০ টাকা

২.
‘মানুষরতন’ কথাসাহিত্যিক মুম রহমানের লেখা উপন্যাস। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এমন একটি উপন্যাস তিনি লিখে শেষ করেছেন। বারবার নাম পরিবর্তন করেছেন। নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। প্রেমের উপন্যাস। মানবপ্রেম। মায়াবোধ। প্রতিটি মানুষের ভেতরে জমানো কথা থাকে, দুঃখ জমাট বেঁধে পাথর হয়ে যায়—এই পাথর নামানো যায় কথামালাকে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে। সাহিত্যিকরা ঠিক সে কাজটাই সুনিপুণভাবে করেন। মুম রহমান লিখেছেন—মানুষ রতনের কথা। কিন্তু তা পড়ে আমার মনে হচ্ছে, এ তো আমার যাপিত জীবনকে লেখা হয়েছে, হয়তো আমার ভেতরই খুঁজে ফিরেছে মানুষ রতনের চরিত্র। এখানে সবচেয়ে বড়ো সার্থকতা এটাই পাঠককে সম্পৃক্ত করতে পারা।

মূল চরিত্র রতন। স্বচ্ছল, সামর্থ্যবান এক তরুণের চরিত্র। ঘর ছাড়ার গল্প। জাগতিক মোহকে ছেড়ে মানুষ রতনের পেছনে ছুটে চলার তাড়না। ‘বিয়ে’ নামক শব্দের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলার আগেই ঘর ছাড়ে রতন। জগত-সংসারকে দেখতে চায়।

গ্রাম। মানুষ। গ্রামের প্রকৃতি, মানুষের চিন্তার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। মানুষের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে আত্মিক সম্পর্ক। গ্রামের মানুষ তাকে এক সময় পীর-আউলিয়া ভাবতে শুরু করে। কিন্তু রতন তা হতে চায়নি, রতন চেয়েছে মানুষরতন হতে…।

সূর্যের হাসির সঙ্গে দুষ্টু শিশুর তুলনা করা। রোদের খেলা। জানালার গ্রিলে রোদ এসে হেসে যায়। আলোর খেলা, আকস্মিকতা বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক দেখিয়েছেন—‘…ডিমের কুসুমের মতো আলোকে খুঁটে খাচ্ছে তার খরখরে কর্কশ তুণ্ড। আর একটু নিবিষ্ট চেষ্টা করলেই অনুভব করা যায় কাকের কর্কশ চিৎকারে ছিন্ন হতে থাকে ঢাকা শহরের বুকে জমে থাকা নিশির শিশির।…’

রতন ছন্নছাড়া এক মানুষ। উসকোখুসকো তরুণ। উনত্রিশ বছরের তেজোদীপ্ত তরুণ। যার চোখজুড়ে স্বপ্ন। নিঃসঙ্গ কামরায় তার বাস। বইয়ের সঙ্গেই জগতের সকল বিলাসিতা গড়ে উঠে। প্রাণপ্রকৃতি নিয়ে ভাবে। নিজের জগতে তার বাস। যেখানে বই, ফুল, গাছ রয়েছে। তাদের সঙ্গে একান্তে কাটে সময়।

সূর্যের হাসির সঙ্গে দুষ্টু শিশুর তুলনা করা। রোদের খেলা। জানালার গ্রিলে রোদ এসে হেসে যায়। আলোর খেলা, আকস্মিকতা বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক দেখিয়েছেন—‘…ডিমের কুসুমের মতো আলোকে খুঁটে খাচ্ছে তার খরখরে কর্কশ তুণ্ড। আর একটু নিবিষ্ট চেষ্টা করলেই অনুভব করা যায় কাকের কর্কশ চিৎকারে ছিন্ন হতে থাকে ঢাকা শহরের বুকে জমে থাকা নিশির শিশির।…’

রতনের এমন বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাবার মনে খেদ রয়েছে। মা রতনের বৈশিষ্ট্য নিয়ে মোটেও নাখোশ নয়। মা ফরিদা পুত্রের ছোট্ট ঘরের দৃশ্যপট আঁকে। মাটির ফুলদানি, প্রত্ন ফসিল, আড় বাঁশি, কৃষকের মাথাল, হুক্কা, শিশুর নাটাই, লাটিম, গুলাই, ঘুড়ি, কাঠের পুরোনো পুতলা আর ঘরজুড়ে পুস্তকাদি। মেঝেতে, সেলফে, বিছানায় সর্বত্র বই আর বই। ফরিদার পুত্রের এমন পাগলামি দেখে ভালো বৈ খারাপ লাগে না।

মা ফরিদা পুত্রের ঘরে এক চিঠির সন্ধান পান। যেখানে বিয়ে নামক শব্দে না জড়িয়ে উদাসী হওয়ার কথা রয়েছে। মা-বাবা দুজনই হতাশ হয়ে পড়েন। বাঙালি বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য সন্তানের কোনোকিছু ঘটলে একে-অপরকে দোষারোপ করা, এখানেও লেখক সেটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।

রতনের নতুন জীবন শুরু। যে জীবন পথ সন্ধানের। পথিকের পথ খুঁজে বেড়ায়। যে পথে সঙ্গী হয় হাজারও জটিলতা। তবে রতন সরলতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নেন। রতন গল্প শোনায়। পথিকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রতন একের পর এক গল্প বলে যায়। মানুষের গল্প, রাজা-মহাশয়ের গল্প। পথিকের গল্প ভালো লাগে। গল্পবলার ধরন পথিককে আকৃষ্ট করে। রতন এ কাজটি পারে, মানুষকে জয় করা।

 

৩.
রতন প্রতিনিয়ত বাবার ছুটে চলা নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করত। একটা মানুষ কেন, কিসের মোহে ছোটে? প্রশ্ন জাগত, নিজের কাছে, সমাজের কাছে। যে কারণে মুক্ত বিহঙ্গে পাখা ছেড়ে ঘুরে বেড়ানোর পথ খুঁজে নিয়েছিল। এক অদৃশ্য সুতোর টানে জড়িয়ে থাকতে চায়নি। যে টান থেকে ছুটতে পারা সত্যিই কষ্টের। রতন চলছে। চলার পথে বেসুরো গলায় গান ধরে—

‘কে তোমার আর যাবে সাথে
কোথায় রবে এ ভাই ও বন্ধু
পড়বি যেদিন কালের হাতে…’

‘আনমনা ঢেউয়ের হাততালিতে ছোট্ট নৌকাখানি জলের উপর পাহাড়ি দুহিতার মতো এক্কাদোক্কা খেলে। জলের উপর রৌদ্রের চিকচিক যেন বালিকার হাসি, হেসে কুটিকুটি। হঠাৎ বৈঠা সেই জলের কাতুকুতু বাড়িয়ে দেয়। এই নৌকা আর নদীখানি একান্ত নিজের মনে হয় রতনের…।’

নৌকায় হেলেদুলে চলা। নদীর সঙ্গে একাত্মতা। এসবই রতনের নতুন। তবে সহজেই নিজের করে নেওয়ার যে সহজ প্রবণতা রয়েছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এ নদী তার অথবা নিজেকেই সে নদী মনে করে। ছোট্ট নৌকা। রতন সে নৌকার একাই যাত্রী। পারাপারের তাড়া নেই। যা রয়েছে দৃশ্যপটকে আঁকা। কত রং। দুপাশ ঘিরে সবুজে ঘেরা। নদীর ঢেউ। নানা জাতের পাখির উড়ে বেড়ানো দৃশ্য অবলোকন করা। লেখক যেভাবে বর্ণনা টেনেছেন, তাতে মনে হবে ওখানেই বসে আছি। নিজেকে ওই অবস্থায় ভাবা যায়। বই থেকে—‘…পাড়ের কাশবনজুড়ে মাছরাঙা আর ফিঙের মাতামাতি। সেখানে সবুজ, সাদা, কালো, নীল, বেগুনি, লাল, হলুদ রঙেরা উড়ে বেড়ায় সতত। অকস্মাৎ ইঞ্জিন নৌকার ভটভটানিতে তারা উড়ে যায় দূরে। পাখিরা ঠিকই জানে কী করে যন্ত্র সভ্যতার নমুনা থেকে পৃথক থাকতে হয়।

জলের মৃদু কোলাহল আর বাতাসের ঝিরঝিরে বাতাসে বসে এসব দৃশ্যপট আঁকছে। রতনের মন বাউল মন। যে মন দুলে ওঠে জলের অতলে। রতন হয়তো মনে মনে হাছন রাজার গান গাইছে—

‘ছাড় ছাড় হাছন রাজা এ ভবের আশা
প্রাণ বন্ধের চরণ তলে, কর নিজ বাসা রে।’

মাঝির সঙ্গে সখ্যতা। মাঝির আমন্ত্রণ তার পরানকে আকৃষ্ট করে। পরানের গহীনে এক অদ্ভুত মায়া তৈরি হয়। রতন ফিরে যায়। সুর্য অস্ত যায়। মাঝি ভাবতে থাকে, ‘এখন মানুষরতন খুঁজে এ ভব-সংসারে কেউ?’ উপন্যাসের পৃষ্ঠা এগুচ্ছে। প্লটের ভিত শক্ত হচ্ছে। নড়বড়ে হয়নি। অহেতুক বাক্যচয়ন নেই। চরিত্রের মারপ্যাঁচে আটকে দেওয়ার প্রবণতা নেই। যা রয়েছে মানুষরতনকে বুঝিয়ে তোলার তীব্র প্রেরণা। মানুষের ভেতরকে চিনতে পারার চেষ্টা। যে চেষ্টায় মত্ত থাকে রতন, হয়তো লেখক মুম রহমান নিজেই রতনরূপে কাউকে হাজির করেছেন!

গতি এগোনোর সঙ্গে আমিও এগুচ্ছি। পরিচয় হচ্ছি মনা বাউল, পারভীনের সঙ্গে। পারভীনের হাতে তৈরি গরম গরম ভাপা, পুলির গন্ধের সঙ্গে পথ হাঁটছি। চৈত্রের শেষ পর্বের ফাল্গুনের রঙে সাজছে ‘মানুষরতন’ উপন্যাস। পাতা ঝরার শব্দ। মেহগনি গাছের মাথায় কচি লাল-খয়েরি শিশু পাতাদের আগমন। পাখিদের আনাগোনা। বাতাসে সুঘ্রাণ। কুয়াশা ভেদ করে শীতের উঁকি এসব দৃশ্যপট এঁকেছে ঔপন্যাসিক মুম রহমান।

মনা বাউল-পথিকদের গ্রামে রতনের আগমন রহস্যমানবের মতো ছিল। ঠাঁই হয়েছিল গ্রামে কোনো এক মুন্সি পরিবারে। মানুষের মনে দ্বিধা ছিল। রতন সেগুলো সবই জয় করে হয়ে যায় ‘মানুষরতন’। ধীরে ধীরে মানুষের মনে তার ঠাঁই হয়, পীর-আউলিয়ারূপে।

রতন, পথিক, মনা বাউল, মতিন, পারভীন এসবই চরিত্র। যে চরিত্রের ভেতর গ্রাম রয়েছে। বাংলার সংস্কৃতি রয়েছে। দোতরা। বাতাসের সঙ্গে দোতরা তারের সুরের বেতাল হয়ে যাওয়া। এর ফাঁকে পরাণ মাঝি গল্পে মেতে উঠে। বাউলদের মন উদাস হয়। তার জন্য আলাদা দীক্ষা লাগে না। বাউল দর্শনই দীক্ষা। মনা বাউলের গেয়ে ওঠা—

‘ডাক দেখি রে ডাকার মতো।
ডাকতে ডাকতে ডাক ফুরাবে
প্রাণ জুড়াবে হলে রত।
ডাকিস না তায় ফাঁকা স্বরে,
ডাক দেখি রে প্রাণ ভরে,
রইতে কি সে পারবে দূরে,
দেখবি রে তাঁর দয়া কত।…’

একদিন রতন ফিরে যায় বাবা-মায়ের কাছে। যাওয়ার পূর্বে লিখে দীর্ঘ চিঠি। যে চিঠি গ্রামের প্রতিটি মানুষকে কষ্ট দেয়। কেঁদে ওঠে মনা বাউলের উদাস মন। কী বিস্ময়কর! কী অদ্ভুতভাবে এ চলে যাওয়া বলে, তারা একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদে মন খুলে। তবে কেউ রতনকে দোষারোপ করতে পারে না। ইতিমধ্যে গ্রামে একটা সম্প্রীতি গড়ে তুলেছে। একে-অপরের পাশে দাঁড়াবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

তিনি সংসারের মোহকে উপেক্ষা করে মায়াকে আগলে ধরেছেন। যে মায়া পিতার সঙ্গে সন্তানের। মাতার সঙ্গে সন্তানের। মায়াই তো সংসার সাজায়। এত সৃষ্টি, এত আয়োজন, গাছপালা, নদী, সাগর, পাহাড়, পর্বত, ফুল, ফল, পাখি, মাটি, আগুন সবই মানুষের জন্য। মাটির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে না উঠলে, সে তো মায়া হয় না। লেখক এ মেসেজটিকে শক্তভাবে দিতে চেয়েছেন।

লেখক এখানে শেষ পর্যন্ত সংসার ধর্মের মায়াকে উপেক্ষা করেননি। তিনি সংসারের মোহকে উপেক্ষা করে মায়াকে আগলে ধরেছেন। যে মায়া পিতার সঙ্গে সন্তানের। মাতার সঙ্গে সন্তানের। মায়াই তো সংসার সাজায়। এত সৃষ্টি, এত আয়োজন, গাছপালা, নদী, সাগর, পাহাড়, পর্বত, ফুল, ফল, পাখি, মাটি, আগুন সবই মানুষের জন্য। মাটির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে না উঠলে, সে তো মায়া হয় না। লেখক এ মেসেজটিকে শক্তভাবে দিতে চেয়েছেন।

রতন ফিরে যায়। কলিংবেল টিপে। যে বাবা-মা অপেক্ষার প্রহর গুনত। তারা এবার দরজা খুলতে ভয় পায় বা শঙ্কাবোধ করে। তাদের সেই শঙ্কা, ভয় সব কাটিয়ে মায়ায় আটকে যাওয়ার যে দৃশ্যপট ঔপন্যাসিক মুম রহমান এঁকেছেন তা সত্যিই শরীর হিম করার মতো। মন নরম হয়ে যাওয়ার মতো আকুল অনুভূতি।

 

৪.
সাহিত্যের অন্যতম একটি ক্ষেত্র উপন্যাস, যা জীবনেরই আলেখ্য। সমাজে ব্যক্তি মানুষের জীবনের নানা সংকট, ঘাত–প্রতিঘাত, আবেগ–উৎকণ্ঠা, ভালো-মন্দ উপজীব্য হয়ে উঠে গল্পের মধ্য দিয়ে। যেখানে থাকে সমাজচিত্র। প্রতিটি মানুষের জীবনই এক একটি গল্প। ‘মানুষরতন’ উপন্যাসে লেখক জীবনের আলেখ্যই সাজিয়েছেন। যে সাহিত্যের গুরুত্ব এ সমাজে অনস্বীকার্য। মানুষের মনোজগতকে আকৃষ্ট করা। প্রকৃতিকেন্দ্রিক, প্রেমবিষয়ক, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং জীবনসংগ্রামে ভরপুর এই উপন্যাসটি সুফী দর্শনে বিশ্বাসী কিংবা সর্বোপরি মানুষের প্রেমে যারা মত্ত থাকতে চায়; তাদের পড়া উচিত। প্রাণ-প্রকৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যকে গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারা সত্যিই জটিল কাজ, তবে মুম রহমান তার দর্শনগত চিন্তাশক্তি দিয়ে সেটি খুব সুচারুভাবেই করতে পেরেছেন। গল্পকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হতে হয় অল্প কথায় লক্ষ্য স্থির বা বক্তব্য ঠিক রেখে পাঠকের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা। তাহলে গল্পের সূচনা এবং সমাপ্তির ইতিহাস গুলিয়ে ফেলতে পারবে না পাঠকসমাজ। ‘মানুষরতন’ উপন্যাসে মুম রহমান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ কাজটি সুনিপুণভাবে করেছেন।

প্রতিটি শব্দের ভেতর দরদ রয়েছে। শব্দচয়নে রয়েছে পরিপক্বতার পরিচয়। বাক্যগঠন, শব্দচয়ন এবং বর্ণনাশৈলী চমৎকার। এক টানে পড়ে ফেলা যায়, কারণ ভারিক্কিতে ভরপুর নেই। পাণ্ডিত্যের বোঝা চাপানো নেই। যেন জীবনকে এক ঝলক পাঠ করে ফেলা। যে জীবন আমার-আপনার প্রত্যেকের। যে জীবনের পথগুলো এতটা মসৃণ নয়।

শেষটা তিনি এঁকেছেন—‘রতন বাবার হাতটা ধরে ফেলে, হয়তো এই প্রথম সে তার বাবার হাত ধরে। হাত ধরে বলে, বাবা একটু অপেক্ষা করো। হাত মুখ ধুয়ে আসি। আমিও তোমার সাথে বাজারে যাবো।…’

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

তাঁর জন্ম টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। সবুজের মাঝে বেড়ে ওঠা এই লেখক ভালোবাসেন প্রাণ-প্রকৃতি ও মানুষের গল্প বলতে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন প্রকাশনাশিল্পে। তিনি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে সাহিত্য ও বই আলোচনা এবং প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে থাকেন। ইতিমধ্যে যৌথ সম্পাদনায় তাঁর পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।