শনিবার, জুলাই ২৭

মানুষ ও অন্যান্য কবিতা : মনদীপ ঘরাই

0

মানুষ


মানুষ—
ক্যালেন্ডারের পাতার মতো পুরোনো হয় রোজ
শার্টের কলারের চেয়ে নোংরা যে হয়,
কে রাখে তার খোঁজ?
আগুন পেলে মোমের চেয়ে সহজে যায় গলে,
সিগারেটের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি জ্বলে।
পথের চেয়ে মানুষ জানি অনেক বেশি হারায়;
তবুও আবার ফিরে এসে হাতটা ঠিকই বাড়ায়;
আহা মানুষ!
দাবার গুটির মতো
চালে চালে সীমাবদ্ধ ;
হাত-পা বাঁধা মানুষ।


পাখির মতো পাখি


আমি পাখির মতো ভয়ে ডালে বসি;
মানুষ এলেই; উড়ে যাই অন্য কোনো ডালে।
আমি পাখির মতো অল্পে-স্বল্পে খুশি;
আমার এক চিলতে শষ্য মাখা গালে।

আমি পাখির মতো ডানা নিয়ে আছি।
উড়তে পারি; কারো হাত ধরতে পারি না।
আমি পাখির মতো পালক বুকে বাঁচি
ঝড়-বাদলে কষ্ট পোহাই, কিন্তু হারি না।

আমি ‘পাখির মতো পাখি’ হয়ে গেছি।
‘মানুষের মতো মানুষ’ হতে পারিনি বলে।


বেঁচে আছি তো?


প্রশ্ন কেন করো?
পোশাকে পোশাকে বদলেই তো যাচ্ছি রোজ।
রংয়ের আস্তরে কিনছি নতুন চেহারা।
সবুজ ঘাসে ঢাকছি চামড়ার কুৎসিত ভাঁজ।
তাতেও নাকি বিশেষ লাভ হয়নি।
দামি সুগন্ধির ঘ্রানের ভেতরেও
তোমরা লাশের গন্ধ টের পাও।
জানি বলেই বলছি;
তোমরা লাশের গন্ধ খুব ভালোভাবে চেনো।
শুধু শরীর নিয়ে বেঁচে থাকা যায়নি কখনো।
মরতে হয়েছে, গলতে হয়েছে,
মাটির সাথ মিশে যাওয়ার গল্প বলতে হয়েছে।
বেঁচে থাকতে হলে হৃদপিণ্ডকে নড়তে হতো।
বেঁচে থাকতে হলে—
ইচ্ছে আর স্বপ্নগুলোকে লড়তে হতো।
বেঁচে থেকেও একবার…দু’বার…তিনবার…
মরতে হতো।


চেহারা


চেহারা?
চেহারা বালিঘড়ি।
হাতের মুঠোয় ফসকে গেলেও,
মনের মুঠোয় ধরি।
চেহারা নিছক মুখোশ;
যাকে যেমন চাই, ঠিক তেমনি দেখাই।
চেহারা তোমার নাই?
চেহারা ছাড়া মানুষ হয় নাকি?
সবার চেহারা নগদ জানি,
তোমার চেহারা বাকি।


বিশ্বাস


যেদিন তুমি কাচের একটা গ্লাস ভেঙেছিলে নিজ হাতে,
সেদিনই ভেঙেছিলে বিশ্বাস।
গ্লাসটা জোড়া লাগেনি।
টুকরোগুলো কুড়িয়ে ফেলে দিতে হয়েছিল ডাস্টবিনে।
জোড়া লাগেনি বিশ্বাসও।
বিশ্বাসের ভাঙ্গা টুকরোগুলো ফেলে দিতে পারিনি।
অসাবধানে হাত-পা কাটছে ওগুলোতে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

নেশায় লেখক, পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। বর্তমানে বাঁচা একজন মানুষ তিনি। এ পর্যন্ত তিন চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কবিতায় মন আর ছোটোগল্পে অন্তর ডুবিয়েছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।