শুক্রবার, নভেম্বর ১৫

মোহর : আহমেদ খান হীরক

0

Eid Motifসিঁড়িঘাটে এক সময় পয়সা পাওয়া যেত; সে আমাদের নিজের চোখে দেখা—বন্যার পানি নেমে গেলে ঘাটজুড়ে বেশ কিছুটা জায়গায় আমরাই প্যাক ঠেলে নেমে গেছি—বেশিরভাগ বৃটিশ আমলের পয়সা, মাঝে মাঝে আরও কিছু পুরনো; খুব যে বেশি দামি তা না—কিন্তু তাই বলে মোহর, তাও আবার মানুষের পেটে, এ গালগল্প কে বিশ্বাস করে?

কিন্তু পুরো রহনপুর এটা বিশ্বাস করে বসে আছে।

ছিলাম নিপেলের চায়ের দোকানে। মাত্র একটা গোল্ডলিফ জ্বালিয়েছি। রফিক তার দোকান থেকে হন্তদন্ত হয়ে আসে—খবর শুনছোজি ভাই?

নিপেলের দোকান খবরের উৎস বটে। এখানে কোন ঘাটে বোয়াল পাওয়া গেল আর কোন বাড়ির মেয়ে গেল উচ্ছন্নে তা একাকার খবর হয়ে আসে। তাই অত ভাবান্তর হয় না। কিন্তু রফিকের উত্তেজনা রোখে কে?

নিপেলের দোকান খবরের উৎস বটে। এখানে কোন ঘাটে বোয়াল পাওয়া গেল আর কোন বাড়ির মেয়ে গেল উচ্ছন্নে তা একাকার খবর হয়ে আসে। তাই অত ভাবান্তর হয় না। কিন্তু রফিকের উত্তেজনা রোখে কে?

‘রাবু আপাকে মনে আছেজি?’

‘থাকবে না ফের! কী হয়েছে তার?’

রফিকের গলা নেমে যায় খাদে। এতটাই যে, আমার মুখের ওপর বসে থাকার পরও তার কথা আমারই কান পর্যন্ত পৌঁছে না। বলে, তার প্যাটে মোহরের গাছজি!

গাঁজা রফিক খায় না বলেই জানি। কিন্তু এ কথা শোনার পর খুব করে সন্দেহ হয়। তার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়েও থাকি। কোনো ঘোর নেই অবশ্য! তবে এও তো সত্য, যা সে বলছে, ঘোরে না পেলে, তা কেউ বলতে পারে না। আমি বলি, কী কহছিস কিছু হিসাব আছেবে, নাকি শালা তামুক টাইনা সারা-রা-রা!

‘জানতুন বিশ্বাস করব্যা না! তুমরা পড়ালিখা শিখা একটু বেশিই আঁতেল হইয়া গেছ বাল! ঘটনা না জাইনাই খালি ফালাফালি করো। কী দিয়া কী হইছে শুনবা তো আগে, নাকি?’

এসব শোনার টাইম আছে নাকি—এ কথা বলতে গিয়েও বলতে পারি না। ঢাকা থেকে চাকরি খুইয়ে এলাকায় এসে বসে আছি। টাকা-পয়সা, মান-সম্মান সবই গেছে; থাকার বলতে এখন শুধু সময়টাই আছে আমার কাছে। অঢেল। কিন্তু তাই বলে কি রূপকথা শুনে দিন কাটাতে হবে? মাসও তো আর এমন কোনো আষাঢ় না! আমি উঠেই যাই। বলি, পরে শুনব বে। এখুন কাজ আছে ম্যালা!

রফিক বিড়বিড়ায়—কাজ না তুমার বাল আছে!

 

২.
সজনে ডাঁটার সাথে আলু-টমাটো। খেতে খুবই আরাম। আম্মা তুলে দিতে দিতে চাপাস্বরে বলে, শুনছিস কিছু নাকি বাজারে?

ডাঁটা চিবাই জি-ভরে। বলি, কীসের ব্যাপারে?

আম্মা অবাক—রাবুর বিষয়ে কিছু শুনিস নাই ত্যাহলে?

মফস্বলের মানুষদের এই এক সমস্যা। যখন যা ধরে, তার সবটাই ধরে। ছাড়াছাড়ির নামটাও নেয় না। আমি বলি, প্যাটে তার মোহরের গাছ হয়ে গেছে এটাই তো?

‌’এমনি এমনি হয়েছে নাকি? মোহর খায়া নিছিলো যে আগে একবার।’

‘তা মোহর ক্যান খায়াছিল এটাও শুন্যা লিতা? সেগুলাও কহ্যা বেড়াতা!’

শুনি নাই ফের! জাদু দেখ্যাতে গেছিলো ভালো মানুষের বেটিটা। বাপ তো তার পাগলা এখন… বাপের মন ভুলাইতে গিয়া…মোহর নিয়া জাদু দেখানি ধরছিল। হুহ, জাদু কি আর অতই সস্তা নাকি তুই-ই কহা তো! হাতের মোহর লুকাইতে ধরছে মুখে…আর তখনই টুপ কইরা… ঢোক গিলা নিছে। বুঝতে পারছিস না? ঢোক কি আর কাহরুর কথা শুনে নাকি? ব্যস! আর য্যাবে কুণ্ঠে? টুপ কইরা প্যাটে গেছে না?

‘শুনি নাই ফের! জাদু দেখ্যাতে গেছিলো ভালো মানুষের বেটিটা। বাপ তো তার পাগলা এখন… বাপের মন ভুলাইতে গিয়া…মোহর নিয়া জাদু দেখানি ধরছিল। হুহ, জাদু কি আর অতই সস্তা নাকি তুই-ই কহা তো! হাতের মোহর লুকাইতে ধরছে মুখে…আর তখনই টুপ কইরা… ঢোক গিলা নিছে। বুঝতে পারছিস না? ঢোক কি আর কাহরুর কথা শুনে নাকি? ব্যস! আর য্যাবে কুণ্ঠে? টুপ কইরা প্যাটে গেছে না?’

‘তারপর সেইখানে গাছ হয়া গেছে?’

‘হইব না? নারীর প্যাটে বীজ পড়লে গাছ হইতে কতক্ষণ!’

আম্মার দিকে থম মেরে তাকিয়ে থাকি। এই মানুষটা ছোটবেলায় আমাকে ‘নিমন্ত্রণ’ কবিতা শুনিয়ে ঘুম পাড়াত।… তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে…

হায়রে! আম্মা এবার ঈর্ষা ছড়ায় কণ্ঠে—সেই গাছ বড়ো হয়া গেছে এখন। ন্যাহলে কি আর মোহর দেওয়া শুরু করে? সোনার মোহর! যা তা কথা নাকি! বালিশের নিচে মোহর পাওয়া যাইচ্ছে যে রোজ…! একটা না দুইটা না…প্রত্যেক দিন তিনটা করে। একেকটা মোহরের ওজন কত জানিস?

শুনতে এইসব ভালো লাগে না আমার। কোথায় যেন প্রচ্ছন্ন একটা খোঁটাও তো আছে। চাকরি হারিয়ে বাড়িতে বসে আছি—যেখানে রাবু আপা প্রতিদিন তিনটা করে সোনার মোহর পাচ্ছে। তা পেট থেকে বালিশের নিচে কীভাবে যাচ্ছে মোহরগুলো?

আম্মা বলতে পারে না। রফিকও পারে না। তবে রফিক শোনাতেও ছাড়ে না। বলে, এইগুলা বিজ্ঞান দিয়া ভাবলে কি হ্যবে নাকি…যে এক্স ইকুয়াল বাল…আর ওয়াই ইকুয়াল ছাল! দুনিয়া হ্যলো বিজ্ঞানের বাহিরের জিনিস। দুনিয়া আনিছে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান আনে নাই দুনিয়া কোনো!

 

৩.
পাড়টা এদিকের ভাঙা।

পুনর্ভবার রাগ গত বছরেও তিন বিঘা খানেক নিয়ে গেছে। তার ওপর বাড়িটা মোটামুটি ঝুলছে। আগে এরকম পায়খানা দেখা যেত। ঝুলন্ত। চারটা বাঁশের ফ্রেমের সাথে ছেড়াফাটা চট মেলে দেওয়া। প্রায় একই রকমের ঝুলে থাকার অভ্যাস নিয়ে তিনটা ঘর যেকোনো সময় নদীর ওপর পড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তারই একটা ঘরের ভেতর বসে আছে রাবু আপা। আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই; কিন্তু দৃষ্টি বহুত দূরে। জানলা দিয়ে নদী, নদী দিয়ে ওপাড়ের বাগান বা বাগান থেকে আরও কোনো দূরে। মুখে অবশ্য চিলতে হাসি, রোদের মতো।

‘চা খ্যাবা নাকি?’

‘না না। এমনিতেই আসলাম।’

‘চা খাও। সিলেটের ভালো চা পাতা আছে ঘরে।’

‘না না, চা খাই না তো তেমন।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। না খাইলে না। অনেক দিন আসো না এদিকে, অ্যাজ আসলা যে?’

‘এই তো, এমনিই আসছি। ঘুরতে ঘুরতে এমনিই চলা আনু আসলে।’

‘তুমি যে হামাকে ভালোবাসতা এটা কিন্তু হামি বুঝতে পারতুন।’

যখন আমি হাফপ্যান্ট রাবু আপা তখন গার্লস হাই স্কুল। নীল জামা শাদা ওড়না। ওড়নাটা যেন পাখি। এই উড়ল কি এই উড়ল না! আর মুখটা এমন সুন্দর! একটা নায়িকা ছিল না কাজল… তার মতো। আমি তার পিছে পিছে তুঝে দেখা তো এ জানা সানম… কিন্তু তা আর কদ্দিন! ফুলপ্যান্ট ধরলাম কি কোনো এক অজয় দেবগান রাবু আপাকে বিয়ে করে নিয়ে গেল কই জানি!

কান এইবার লাল আমার। যখন আমি হাফপ্যান্ট রাবু আপা তখন গার্লস হাই স্কুল। নীল জামা শাদা ওড়না। ওড়নাটা যেন পাখি। এই উড়ল কি এই উড়ল না! আর মুখটা এমন সুন্দর! একটা নায়িকা ছিল না কাজল… তার মতো। আমি তার পিছে পিছে তুঝে দেখা তো এ জানা সানম… কিন্তু তা আর কদ্দিন! ফুলপ্যান্ট ধরলাম কি কোনো এক অজয় দেবগান রাবু আপাকে বিয়ে করে নিয়ে গেল কই জানি! সেখানে তো প্রায় এগার বছর। তারপর অজয় দেবগান নতুন একটা বিয়ে করল, রাবু আপাকে ফেলে গেল এই ঝুলন্ত পায়খানায়।

আমার চোরাচাহনি শেষ হয় না। রাবু আপা উঠে বলে, মোহরের খোঁজ নিতে আসছোজি, না?

কিছু বলি না। তাকিয়ে থাকি রাবু আপার বালিশের দিকে। মনে হতে থাকে ওইটা উল্টালেই হয়তো মোহর দেখা যাবে। হাফপ্যান্ট আমার মনোবাঞ্ঝা রাবু আপা যেমন বুঝতে পারত, এখনও দেখছি তাই পারে। বালিশটা উল্টে দেয়। নাহ, সেখানে কোনো মোহর নেই। আমি হাসি। রাবু আপাও হাসে। বলে, মানুষজনে গুজব দিছেজি! হামার বাপটা তাতে খুব খুশিও হইছে অবশ্য। পাগলা হ্যয়া গেছে তো। প্রত্যেক দিন কহে…দে, মোহর দে তো রাবু, মোহরগুলা দে! হামি তখন সিগারেটের খাপের রাং দিয়া পয়সা মুড়ায়া দিই, সেই পয়সা সে বাজারে নিয়া যায়.. আর হাতের মুঠায় চাইপা ধরে কহে মোহর মোহর… সোনার মোহর! কেমনটা লাগে, কহ তো জি?

আমি কিছু বলি না। রাবু আপা আবার বলে, চা খাইবা নাকি কহ?

উঠে যাই। বেরিয়ে দেখি রাবু আপার বাপ বারান্দায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে—মিহি সুরে গান ধরেছে—

মাতাল হয়ে রই রে বন্ধু মাতাল হয়ে রই!
পঙ্ক দেহ বুকে নেবে গো এমন স্বজন কই!

এই লোক আগে জবর গানের আসর বসাত। এই বাড়িতেই। রাতের বেলা হ্যাজাক বাতি জ্বালিয়ে জমত ভীষণ আসর। গান চলত, সুর ভাসত, পুনর্ভবা কাঁপত… কিন্তু হঠাৎ করেই নিয়ম জারি হলো—এলাকায় আর গানের আসর বসানো যাবে না! গান খারাপ, আসর খারাপ। বেচারার পেটে লাথই পড়ল। গান ছাড়া শিল্পী আর কিছু পারে নাকি? হ্যাজাক বাতির তেলেশমাতি ফুরিয়ে গেল। আসরের আয়-ইনকামও নাই হয়ে গেল। মরার ওপর খাড়ার ঘা… রাবু আপাকে ফেলে গেল অজয় দেবগান। সেই দুঃখেই কিনা কে জানে লোকটা পাগল হলো রাতারাতি। আমি তার মুঠোর দিকে খেয়াল করলাম ভালো করে। কোনো মোহর নাই। দরজায় তখনও রাবু আপা দাঁড়ানো। আমি তাকাতেই শুধু হাসলো! হাসিটা এখনো ওই তুঝে দেখা তো এ জানা সানাম হয়ে আছে, আশ্চর্য!

 

৪.
কিন্তু মোহর পাওয়া গেল।

রাবু আপার বাপের হাতেই পাওয়া গেল। গুজবের প্রায় সতের দিনের মাথায়। আমরা তখন এসব ভুলতে বসেছি। মাসুমদের বাড়ির নিচে দুইমুখো গোখরা পাওয়া নিয়ে পুরো রহনপুর তখন উত্তেজিত। এরই মধ্যে রাবু আপার বাপ এক কাপ চা খেতে চেয়ে না পেয়ে, লুঙ্গির কোচর থেকে তেড়েফুঁড়ে একটা মোহর বের করে ফেলল। প্রথমে তা নিপেলের হাতে, তারপর তা রফিকের, তারপর আমার হাতে লাগল। সোনা বটে…! ভাদু বলল, খাঁটি সোনা!

ভাদুর বাপের সোনার দোকান প্রায় সাতাশ বছরের। ভাদু যদি লোহাকেও সোনা বলে আমাদের আপত্তি থাকে না; আর এইখানে তো সে সোনাকেই সোনা বলছে! আমাদের বুকের রক্ত ছলকে উঠল!

সারাটা দিন আমরা ওই মোহর নিয়ে বসে থাকলাম। শব্দহীন, ভাষাহীন। রাতে রফিক তাড়ি খেল, আমাকেও খাওয়াল। এমনিতেই গরম। সারা শরীর নিমিষেই পেচ্ছাব হয়ে উঠল। মুতের গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই…

আমার সাথে অবশ্য রফিক আছে। বলল, এইবার বিজ্ঞান ঢুকছে না তোমার গুহ্যদ্বারে! এই মোহর কই থেইকা আসে মিয়া? রাবু আপার প্যাট থেইকা! ক্যামনে আসে? গাছ হইছে বইলা! ওই বাড়ি আর বাড়ি থাকব না, প্রাসাদ হইব ওইখানে! ওই বাড়ির মুখে মুতি! রাবুর মুখে মুতি—

আমার সাথে অবশ্য রফিক আছে। বলল, এইবার বিজ্ঞান ঢুকছে না তোমার গুহ্যদ্বারে! এই মোহর কই থেইকা আসে মিয়া? রাবু আপার প্যাট থেইকা! ক্যামনে আসে? গাছ হইছে বইলা! ওই বাড়ি আর বাড়ি থাকব না, প্রাসাদ হইব ওইখানে! ওই বাড়ির মুখে মুতি! রাবুর মুখে মুতি—

রফিক ছড়ছড় করে পেশাব করা ধরল। রাবু আপা যে আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মিথ্যা বলেছিল এটা আমাকে জ্বালিয়ে দিতে থাকল! জিপার খুলে আমিও ঘোষণা দিই… হামিও মুতি…

 

৫.
মরা চাঁদ আকাশে আছে, তাতে কী! আমরা কেউই আমাদের চেহারা দেখতে পাচ্ছি না। এবং যে কাজ আমরা এখন করতে যাচ্ছি, তাতে কেউ কারো চেহারা যে দেখতে চাই, তাও না!

প্রথম কথাটা ভাদুই বলে ওঠে। কণ্ঠে তার সংশয়—এইটা কি ঠিক হ্যবেজি ভাই?

রফিকের মধ্যে মাতলামি বেশি। বলে, ওই গল্পটা শুনোস নাই?

‘কোনটা?’

‘ওই যে…’

আমরা সবাই গল্পটা শুনতে আগ্রহী হয়ে উঠি। কিন্তু রফিক কোনো গল্প আর বলে না। আমি বলি, রাজহাঁসেরটা? এক কৃষকের ছিল এক রাজহাঁস?

হঠাৎই কী হয় রফিক আর ভাদু খুব করে হাসতে শুরু করে। এবং আমিও। কেন হাসছি বুঝতে পারি না যদিও। কিন্তু আমরা ততক্ষণে রাবু আপার ঝুলন্ত বাড়িটাতে পৌঁছে গেছি। ঘর উদাম খোলা। রাবু আপা তার চৌকির ওপর শুয়ে। ঘুমিয়ে। গরমের জন্যই বসন স্খলিত। আমরা তিনজন তার দিকে তাকিয়ে থাকি। এই শরীরের ভেতর একটা গাছ আছে। মোহরের। সোনার মোহর।

শুরুটা রফিক করে। দুই হাত চেপে ধরে রাবু আপার। ভাদু ধরে দুই পা। আমার মুখ ধরার কথা—যেন চিল্লানি দিতে না পারে! কিন্তু ধরতে পারি না। শরীরটা টলে যায়। রাবু আপা চোখ খুলে তাকায়; এবং বিস্ময়ের ব্যাপার কোনো চিৎকার করে না সে। শুধু বলে, আনছো, মোহর আনছো তোমরা?

আমরা পরস্পরের দিকে তাকাই। রাবু আপার পেটটা খোলা। ওখানে একটা গাছ আছে। গাছের ভেতর মোহর ধরে। সোনার মোহর। আমরা বলি, টাকা আছে, এইবার সেগুলা মোহর হয়্যা য্যাবে! কী, য্যাবে না?

আমরা পরস্পরের দিকে তাকাই। রাবু আপার পেটটা খোলা। ওখানে একটা গাছ আছে। গাছের ভেতর মোহর ধরে। সোনার মোহর। আমরা বলি, টাকা আছে, এইবার সেগুলা মোহর হয়্যা য্যাবে! কী, য্যাবে না?

বাতাস শুরু হয়। কপাটে এসে আঘাত করে গুমড়াতে থাকে। নিচের পুনর্ভবাও যেন ফুঁসে উঠতে শুরু করে অজগরের মতো। আমাদের ঝুলন্ত ঘরটা দুলতে শুরু করে। জাপটে ধরতেই রাবু আপার শরীরের ভেতর থেকে সোনালি রঙের লতানো গাছ বেরিয়ে আসতে থাকে। ছড়িয়ে যেতে থাকে বিছনাময়। বিছানা থেকে ঘর, ঘর থেকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে আরও ওপরে… ছাদ থেকে আরও ওপরে আকাশের দিকে। আমরা দেখি, থোকায় থোকায় মোহর ধরে আছে সেইসব লতার ভেতর। লতাগুলো নুয়ে যাচ্ছে মোহরের ভারে। আমাদের চতুর্পাশ সোনালি হয়ে উঠতে থাকে। আর দশদিক থেকে আসতে থাকে ঝনঝন শব্দ।… ক্রমাগত সেই শব্দ বাড়তে থাকে… বাড়তেই থাকে। জগত বিদীর্ণ করে… ঝনঝন…ঝনঝন…ঝনঝন… ঝনঝন!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৮ নভেম্বর ১৯৮১। দশ বছরের লেখালেখির জীবনে লিখছেন মূলত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। বর্তমানে কর্মরত একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে।

প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা :আত্মহননের পূর্বপাঠ (২০১০) রম্য সংকলন : যে কারণে আমি সাকিব আল হাসান হতে পারি নি (২০১৭) গল্প সংকলন : য পলায়তি স জীবতি (২০২০), সিলগালা মহল্লার ব্যালকনিরা (২০২১), কী একটা অবস্থা (২০২২)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।