শুক্রবার, জুলাই ২৬

রাগরাগিণী ও অন্যান্য কবিতা : শৈবাল নূর

0

রাগরাগিণী


তোমাকে পড়ায় মনে—সেই সব শূন্যতা যা
আগলে রেখেছি তার চরম দ্যোতনাগুলো
একবার দেখে এসে ওই মুখের প্রতিমা
শুধু শুধু মনে হয় ফিরে আসা ভুল হলো—

সেখানেই যাই খুঁজি চিত্তের নিগূঢ় বিভা
এমন কেন যে হয়, পারি না বিরুদ্ধে যেতে
আর যত রাত নামে, উজ্জ্বল বিবর্ণ তারা
আমার ভাষারা জানে সংকট কেমন তাতে—

ভাসাভাসা জীবন কি চেয়েছে শুধুই প্রেম?
এভাবেই মৃত-চোখ ঝাপসা কাচের মতো
কালো জলের যমুনা যদি পায় নদী-ধর্ম
হৃদয়ের নিরাময় তুমি, কামনার ক্ষত—

তুমি প্রাণবায়ু—যেন ঢেউ ছলছল চাঁদ
সব পেয়ে ফের চোখ জানে কাটে না বিষাদ—


কৃশ


নৈশবৃষ্টির পর—যে থকথকে পথ
তা আমার হৃদয়

গান বিভোর মাতাল, হেঁটে চলেছি
তোমার গমনে

স্মৃতিরা ভেজা পাতায় ঝরে
মুখে ছাট দেয়

 

ছায়াগাছ পেড়িয়ে
আগুন মন, এবার তো শান্ত হও

প্রশাসনিক ভবনের অন্ধ-আলোয়
ঘুমন্ত কুকুরগুলো দেখে—


বিলোপ



আমার
সুপেয় স্নায়ু
শীতল হাওয়ায়
নীল আসমানে কি
শুভ্রডানার পাখি ওড়ে
গোপনীয়তার গূঢ় ছল করে
অজ্ঞাত যে কোনো সময়ে ধরে
ভাসছে ঐ পতাকা খচিত জাহাজ
তার পাটাতনে ঢেউয়ে ঢুলঢুল সাগর
যেন সমবেত নৃত্যের মহড়া, বাঁকা বাঁকা
এই নীল জলের হৃদয় ফেটে লাফিয়ে ওঠে
অতিকায়, অতিক্ষুদ্র সব মাছ আর মৎস্যজাত
সূর্য নেমে আসে আর ত্বকের মতো জলে করে খেলা
যেন অসংখ্য কাচের টুকরো আলোর বিপরীতে
রাতের অথৈ নিরবতা নিশ্বাসের মতন যদি
ধরে রাখে জলের অবয়ব আর মধুরতা
তবে পথহারা পাখির ডাক— হবে কি
প্রতিধ্বনিময়? ঠিক, ঢেউগুলো যে
সেতুর মতো নিচ্ছে পার করে
পৃথিবীর দূরতম ক্লান্তিদের
আলো ঝলমলে চাঁদ
নেমে আসে ধীর
চোখের মতো
কলঙ্কে


চূর্ণারশি


১.

ঝুপড়ি চা-দোকানে
বৃষ্টির সন্ধ্যায় আমাদের আশ্রয় হয়েছিল
আজ সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি…
একা ঘরে মৃদু বাতাসে মোমের আলো শুধু কাঁপছে—

 

২.

শীতের চাঁদ রাতে
নেশাগ্রস্ত আমার মেজো ভাই
হৃদয় শান্ত করতে ঢুকে ছিল ধর্মীয় মাহফিলে
বক্তার ক্রুদ্ধ অস্থিরতা দেখে
মিটিমিটি হেসে চলে গেছে কবরভিটার দিকে

 

৩.

 

৬০ উর্ধ আমার বাবা
প্রেমের আস্থা হারিয়েছেন
শুকিয়ে যাওয়া নদী খনন হলো, তবু
আমি—সমস্ত যৌবনের বিশ্বাস দিয়েও
তাঁকে আর আয়নাধারণা বোঝাতে
পারছি না—


আত্মী


নিখুঁত ছায়ায় যদি ঢেকে যায় আলো
আলো কি আমার রুপ, নাকি তা করুণা?
পাতার গোপন থেকে তূর্ণ চমকালো—
দেহ কেন ধরে রাখে জীবনের সীমা!

উদরে বইছি যাকে, ক্ষুধা নাকি কাম?
স্নায়ু থেকে ঝরে গেছে স্মৃতির বাদল
পাথর জেনেও যাকে করেছি প্রণাম
জানি না কোথায় ফোঁটে নিজের আদল!

বায়ু সেবনের মতো ঢুকে যাও দেহে
মুকুরের ছায়া ভেঙে মন প্রতিমায়
ক্ষুধার তাড়না পোষা শরীর প্রবাহে
যেভাবে ছড়িয়ে আছি, নিজও মাঝে নাই

ছুড়ে কেন দিয়েছিলে—হৃদয় বাগ্বিধি?
যেন আমি আমাকেই তোমা হয়ে চিনি—

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবিতা লেখেন মূলত; পাশাপাশি গদ্য লিখতে চেষ্টা করেন। প্রকাশিত বই: যামিনী ও মরমী ধনুক ( কবিতা)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।