রবিবার, ডিসেম্বর ১

রাসেল রায়হানের তিনটি কবিতা

0

ঘুঘু


পাখিদের মধ্যে তুমি ঘুঘু ভালোবাসতে। বলতে, কী মিহি তুষারদানা ছড়িয়ে থাকে!

পরের জন্মে তোমার বুকের মাঝে ঘুঘু হয়ে বসে থাকব। আর তোমাদের ভিটের কাছে উড়ে এসে বসতে বসতে মনে হবে, গেরস্তের বাড়ি ঘুঘু চড়া ভালো নয়।

পরজন্মেও আর তোমার কাছে আসা হবে না।

 


উষা


আর কি কখনো কোনো দিন
দীর্ঘস্থায়ী হবে উষা?
আবারও কি প্রিয় কোনো ক্ষত
তোমার হাতের শুশ্রূষা
পাবে? পদ্মের আড়াল থেকে
আর কোনো সাপ তাকাবে না।
সে আড়াল ঠেলে যে দাঁড়াবে,
তার মুখ প্রিয়—চিরচেনা।

সিন্দুক ভরা শুধু স্মৃতি,
খুলো না, যা কিছু হয় হোক।
তোমার ফিরিয়ে দেওয়া চিঠি,
ফুল আর ময়ূরপালক
এইবার যদি বের হয়?

পেছন পেছন ছুটে এসে
একটি বালক যদি ভোরে
দাঁড়ায় শরীরখানি ঘেঁষে—
এবারও কি পারবে ফেরাতে?

যেভাবে ফেরাতে রোজ—প্রায়ই
আর কি কখনো কোনো দিন
উষা হবে দীর্ঘস্থায়ী?


নিয়তি


তোমরা তবে জ্বালিয়ে বিরান করে দাও ফিলিস্তিনকে। একদিন যখন আর একটি মানুষও বেঁচে থাকবে না, তারও বহু বছর পরে দেখতে পাবে, সেখানে বেড়ে উঠেছে দীর্ঘ গাছের সারি, সামান্য হলুদ পাতা। বয়ে যাচ্ছে তোমাদের মায়ের সিঁথির মতো কোমল নদী, নুড়ি গড়িয়ে যাচ্ছে জলের ধাক্কায়, পাখির কলকাকলিতে ভরে উঠছে বনাঞ্চল, আর শোঁ শোঁ হাওয়া, আর অক্সিজেন…

আর দেখতে পাবে, সেখানে পানি খেতে এসেছে একটি হরিণশাবক, পেছনে চুপিচুপি একটি বাঘ। মনে রেখো, সেদিন একে বাঁচিয়ে রাখতে তুমিই শিং উঁচিয়ে ছুটে আসবে, কারণ এ শাবক তোমারই গর্ভজাত। জানতেও পারবে না, হরিণটি গতজন্মে তোমার গুলিতে নিহত হয়েছিল। পাখিগুলো উড়ে গিয়েছিল তোমার গুলির শব্দে।

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি ও কথাসাহিত্যিক। কবিতার বই চারটি। ‘সুখী ধনুর্বিদ’, ‘বিব্রত ময়ূর’, ‘তৃতীয় অশ্বারোহী’, ‘ইহুদির গজল’। উপন্যাস দুটি। ‘একচক্ষু হরিণীরা’ এবং ‘অমরাবতী’। বিব্রত ময়ূর পাণ্ডুলিপির জন্য মার্কিন গবেষক অধ্যাপক ক্লিন্টন বি সিলি ও প্রথমা প্রকাশনের যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত 'জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০১৫' অর্জন করেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।