রবিবার, অক্টোবর ১৩

শমীক সেন-এর দশটি কবিতা

0

ন হন্যতে

দুঃখের ছবি দেখবো না আর
এই না দেখার হাত ধরে
বেড়াতে যাবো পাহাড় সমুদ্র পরজন্ম।

বিপ্লবের ঘুম ভাঙলে প্রতিক্রিয়ার জন্ম হয়।
বন্দুকের অভিমান জমা দেবো বাজারের কাছে।

ধারদেনা আছে যত, কড়া নাড়তে নাড়তে
মরে যাবে দরজার ওপারে।

শুধু আমাকে কাঁধে নিয়ে যাবে যারা
তাদের পায়ে ফুটে যাবে পেরেক।

একটি পেরেক যেটুকু রক্তপাত ঘটাতে পারে
ততটুকুই স্বপ্নদোষ ছড়াবে না- জন্মানো ঘুমের ভিতর।

যাপনচিত্র

শুভেচ্ছা বিলি করতে করতে জীবন ফুরিয়ে গেলো
হাওয়াকে বলেছি ভালো থেকো
চারাগাছকে বলেছি ছায়া হয়ে ওঠো দুঃখের রোদে
পথকে বলেছি সোজা আর চরিত্রবান হও।
আমার সব শুভেচ্ছা মাছের মত জালে ধরা পড়ে গেছে
টুকরো করবে বলে আঁশবঁটি পেতে রেখেছে সংসার।
অথচ মাছের পেটে কত দীর্ঘশ্বাস ডিম হয়ে ফুটে ছিল
এই তথ্য না জেনেই
তুমি কান্নার বারান্দা ধরে হেঁটে গেলে তারাদের শূন্যে, একা একা!

জাদুবাস্তবতা

নতুন কোন বইয়ের ভাঁজে
বিকেলবেলার বৃষ্টি এলে
দুচোখ তখন মগ্নকিশোর
ঢেউয়ের শিরে,
ঢেউ ভেঙে যায় চন্দ্রগ্রহণ
আর্শিতে রোদ স্বচ্ছবসন
ঋণখেলাপী চাষীর মতন
যাচ্ছে ছিঁড়ে।

ছিন্ন মেঘের দলের কাছে
না শোধা ঋণ থমকে আছে
অসম্ভবে
তোমার আমার পথচলাদের
রোদপোহানোর কাল আছে ঢের
চাইলে হবে।

বয়স

বয়স যত বাড়ে, নামে ভুল হয়ে যায় তত।

যে লোকটাকে ছেলেবেলা থেকে দাশুকাকা বলে চিনি
তাকে হঠাৎ যাজ্ঞবল্ক্য ডেকে ফেলি!

সাড়া পাই না, তাতেও ভাঙে না ভুল,
মনে হয় ঐ নামটাই
সবচেয়ে মানিয়েছে পাগলাকে।

বাবার ছবির উপর খেলা করে যে আলো
তাকে বিকেল ডেকে উঠি
আর অমনি নিবে আসতে থাকে মন

একটা খরগোশ শুধু ঘাসের উপর লুটোপুটি খায়।

বয়স হচ্ছে তো,
খরগোশটাকে ভুল করে
অভিমান ডেকে ফেলি তাই!

এতদিনকার ঠিক জানাগুলো
একটা একটা করে
মিথ্যে হয়ে যেতে থাকে প্রতিদিন!

বাক্যরচনা

বহুদূর শব্দটি দিয়ে বাক্যরচনা করছে আমার ছেলে,
এখনো আমার খুব কাছে বসে আছে।

এই তার দূরে যাওয়া শুরু,
এই আমার কাছে আসতে চাওয়াও।

আমি যত কাছে যাবো
তত দূরে সরে যাবে সে।

বহুদূর থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের সুর।

বাক্যরচনার শেষে শব্দেরা চলে যায় বহুদূর…

আগুন

টবে রাখা চারাগাছের পাতার উপর
বিকেল বসে আছে।

কতদূর থেকে কতদিন পরে এলো এই বিকেল
আমি দেখতে পেলাম তাই,
আলো হয়ে উঠে এ বাতাস
প্রজাপতি এঁকে দিলো।

প্রজাপতির পাখায় পাখায়
যে আগুন জ্বলে ওঠে
সে আমার ছোট হয়ে যাওয়া জামা!

লকডাউনে আমার আত্মীয়রা

তিলোত্তমাদির বাড়ির ছাদে কাঠঠোকরার ডাকের ভিতর
রোদ পড়ে আসা দিন বসে আছে।
তার আর কোথাও যাবার নেই।
উত্তর থেকে আসা মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উড়ে গেলে
চাঁদের কান্না শিউলি হয়ে ফুটে ওঠে।
কবিতার খাতা শ্বাসকষ্টে
সারারাত এপাশ ওপাশ করে,
ঘুম দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, অসহায় ।
গভীর লকডাউন আমাদের ভিতরে বাইরে!

রাণাদার সাইকেল জীবনানন্দর ছবি পিঠে নিয়ে
মহীনের ঘোড়াগুলির কাছে চলে গেছে।
রাণাদা দুবেলা তাই ইনহেলার নেয়
সাইকেলের ঘন্টি বেজে ওঠে শ্বাসের আঘাতে,
মাকে ফোন করার জন্য মোবাইল হাতে নেয়,
নম্বরটা মুছে গেছে কবে কীভাবে।
আনলক হয়ে গেছে আমাদের ভিতরে বাহিরে!

পুরুলিয়া দিয়ে কলকাতা ঘিরে ফেলা যাবে না কখনো,
তাহলে হয়তো থ্রি জি, ফোর জি, হাঁ জি
হাসির আওয়াজে যেতো মুছে
ফিরে আসতো সবকটি চড়ুই।
নন্দিনী রোদের মতো পাহাড়ে পাহাড়ে যায় নেচে
লকডাউন, আনলক পেরিয়ে পৃথিবী রঞ্জন হয়ে হাসে।

ভালো আছি

যা নেই তার না থাকা নিয়ে ভালো থাকি।
এইভাবে বারবার ভালো থাকা
না থাকার কাছে
ফিরে ফিরে আসে।

পিঁপড়ের মতো খায় খুঁটে খুঁটে
যতটুকু চিনি আছে
না থাকার শ্বাসে প্রশ্বাসে।

এই বাড়ি অভিশপ্ত!
না থাকার হাওয়ায় হাওয়ায়
এখানে আটকে গেছে
জলের হাসি কান্না সব।

যে মেঘে বৃষ্টি নেই
সেই মেঘ যেন এ জীবন।

প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত

বিকেল প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত হয়ে এলো !

ফেসবুক বেলুনের মতো ফেটে গেলো
ছড়িয়ে পড়লো লজেন্স আর ভিড় সরে গেলো দূরে।
যা কিছু কুড়োনো যায়, মানুষ তাকেই বাসে ভালো।

আমাকে মাড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো নেশার পৃথিবী,
আমি খেলার বাইরে পড়ে থাকার মানে বুঝবো বলে
ক্ষমা দিয়ে নেবাই সব মোহ।

বিকেল প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত হয়ে উঠে দরজা ভেজিয়ে দিলো, ধীরে।

রহস্য

ঘুমের ভিতরে কেউ ফিসফিস করে বলে গেলো, আমার ভিতরে না কি লেখা আছে। যেভাবে আমার ভিতরে রক্ত, শ্লেষ্মা, দুশ্চিন্তা, লোভ ইত্যাদি আছে তেমন না কি লেখাও আছে। এই থাকার চারপাশে জল থইথই করে। জলের মনখারাপ মাছের সাঁতার হয়ে ভেসে ওঠে মনের উপর। আমি বুঝতে পারি যে চোখগুলি পাহারা দেয় রাজকন্যার ঘুম সেগুলি গানের শ্বাস লেগে ঘাসের মতন বুজে গেছে। এই বুজে যাওয়ার ভিতর আমার সব ফুরিয়ে যাওয়ারা ডিসেম্বর মাস হয়ে আছে। আমি যখন মনের খোসা ছাড়াতে পারবো তখনই কমলালেবুর করুণ হাসি হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আয়ুর রোদ্দুরহীন বারান্দায়!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি। থাকেন দমদম ক্যান্টনমেন্ট, কলকাতায়।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।