রবিবার, ডিসেম্বর ১

শিল্পী মাধবী পারেখের সাক্ষাৎকার : ভূমিকা ও ভাষান্তর : অজিত দাশ

0

Motif-01ভারতীয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে মাধবী পারেখ একটি সুপরিচিত নাম। যার শিল্পশৈলী গুজরাটি লোকশিল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত। তাঁর চিত্রকলায় বিভিন্ন আকৃতির উপস্থিতি, চলাচল— দর্শকদের মাঝে বরাবরই নতুন গল্প উপস্থাপন করে। শিশুদের মতো সহজ-সরল অদ্ভুদ কল্পনাশক্তির প্রকাশ তাঁর চিত্রকলার অন্যরকম এক শক্তি। মাধবীর ক্যানভাসে লক্ষ করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন রঙের রেখাবহুল বিস্তৃতি, বিষয়ানুসারে রঙের ব্যবহার, থিম, স্পষ্টভাবে সহজ-সরল এক ভাষা তৈরি করে যা আসলে মাধবী পারেখের প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশ।

মাধবী, যিনি একজন ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, সেই সময়ের বাস্তবতায় মাত্র ৯ বছর বয়সে বিয়ে করার পর তাঁর চিত্রশিল্পী স্বামী মনু পারেখের সঙ্গে নিজের স্বপ্নগুলিকে মিলিয়ে নিতে শুরু করেন। নিজের প্রথম কন্যা সন্তানকে গর্ভে নিয়ে স্বামী মনু পারেখের কাছে প্রথম ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে নিজের চেষ্টা আর শ্রমে আধুনিকতার সাথে লোকশিল্প আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে নিজের একটি নতুন চিত্র শৈলী গড়ে তোলেন। তাঁর স্বামী বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মনু পারেখ, মাধবী পারেখের এই বিকাশ ও সৃজনশীল পরিচয় তৈরিতে একজন শিক্ষক হিসেবে অবদান রেখেছেন সবসময়।


Madhvi Parekh

মাধবী পারেখ


কখনও কখনও শিল্পী হওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা যে একেবারে গৌণ মাধবী পারেখ তার স্পষ্ট উদাহরণ। কিছু সহজাত শিল্পী থাকেন যারা কোনো আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে একাডেমিক শিক্ষা না পেয়েও অল্প সময়ে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করে ফেলতে পারেন। দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত যা কিছু শিখছেন সেটার মধ্যে নিজের বেড়ে ওঠা, শৈশব, পরিবেশ, প্রকৃতি, জীবনের প্রাত্যহিক দেখা আর ভাবনাকে নিজের মতো করে এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন, ফলে সেটা একপর্যায়ে গিয়ে একটা নতুন রূপ, নতুন ফর্ম তৈরি করে। মাধবী পারেখও তাঁর শিল্পজীবনের অভিজ্ঞতায় সেই চেষ্টা, নতুনত্বকে রূপ দিয়েছেন। তিনি তেমনই একজন দক্ষ শিল্পী।

ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত হোক বা সংস্কৃতির সঙ্গেই সম্পর্কিত হোক না কেন ভারতীয় লোকশিল্পের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। তাঁর চিত্রকলায় রেখার আন্দোলন আছে, রঙের শক্তি আছে যা ঐতিহাসিক। ভারতীয় গ্রামীণ আদিবাসী অঞ্চলে নির্মিত অনন্য ভারতীয় লোকশিল্পের একটি সহজ-সরল ধারাবাহিকতা রয়েছে তাঁর কাজে।

মানুষের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুভূতি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের আনন্দময় জীবনের কামনা, পুরনো প্রজন্মের স্মৃতি ও নতুন জীবনের আকাঙ্ক্ষা। যে কারণে ভারতীয়রা তাদের পরিচয় নিয়ে বরাবর সতর্ক। ফলে পুনরাবৃত্তি হলেও তাদের মধ্যে সেগুলোর আবেদন হারিয়ে যায় না বরং নতুনভাবে তৈরি হয়। ভারতবর্ষের প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব লোকশিল্প রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের পটচিত্র, ওড়িশার বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে তৈরি করা চিত্রকলা, আসাম, বাংলায় শোলা দিয়ে বানানো কালীর প্রতিমূর্তি। হরিয়ানা, রাজস্থান, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশের গ্রামগুলিতে দীপাবলির মতো উৎসবে মাটির দেওয়ালে খোদাই করে ‘সাঁঝি’, ‘আহোই’ প্রভৃতি অলংকৃত চিত্র তৈরি করা হয়, বিহারের মধুবনী চিত্রকলা বিশ্ববিখ্যাত। রাজস্থানের পিচওয়াই ও ফাড়, মহারাষ্ট্রের বরলি চিত্রকর্ম এবং হায়দ্রাবাদের কলমকারি এই সবই ভারতের সমৃদ্ধ শিল্প ঐতিহ্য।

সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে, শিল্পের সৌন্দর্য এবং তাৎপর্য একমাত্র লোকশিল্প শৈলীতে উপলব্ধি করা যায়। যে শিল্পী সেই শিল্পকে উপলব্ধি করে তার সৃষ্টিকে মৌলিক রূপ দিতে সক্ষম তার শিল্প আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে আন্তর্জাতিক পরিচয় তৈরি করে। মাধবী পারেখ এমনই একজন সমসাময়িক চিত্রশিল্পী যিনি গুজরাটের লোকশিল্প শৈলীকে নতুন রূপ দিয়েছেন।


শিল্পী মাধবী পারেখের সাক্ষাৎকার
চণ্ডীগড় ললিতকলা একাডেমির ধারণকৃত


পারুল: চণ্ডীগড়ে আপনাকে স্বাগতম মাধবীজি। আপনি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করতে এসেছেন মনুজি’র সঙ্গে। একটা স্লাইড শো ও লেকচারে অংশগ্রহণ করবেন। কেমন লাগছে আপনার একসঙ্গে কাজ করা, ছাত্রদের শেখানো আর এটা কী রকম অভিজ্ঞতা…

মাধবী পারেখ: ঘরে তো আমাদের স্টুডিও আছে। থাকিও একসঙ্গে। মানে সবাইকে নিয়ে। ছাত্রদের নিয়ে। মনুকে এক্সাইট করে, আমাকে করে। একটা চমৎকার অ্যাটমোস্ফিয়ার। নতুন জায়গা, নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ গড়ে তোলা খুবই ভালো লাগে।

 

পারুল: আর ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টা কেমন লাগছে?

মাধবী পারেখ: খুব ভালো ছাত্র। সবাই বেস্ট পারফর্ম করে, কিউরিসিটিও আছে, আমি নতুন কিছু শিখতে পারব, জানতে পারব, নতুন টেকনিক আয়ত্ত করতে পারব। আমার সঙ্গে কাজ করার সময়ে আলাপ করতে থাকে। স্কেচবুক আমার সঙ্গে ছিল সেটা দেখাই ভালো লাগে।

 

পারুল: আপনি নিজের সম্পর্কে কিছু বলেন। আপনি কোনো আর্ট কলেজে যাননি। কোনো ফর্মাল ট্রেইনিং ছিল না আপনার। এত বছর ধরে আপনি কাজ করছেন এবং খুবই সুন্দর কাজ করছেন। চিত্রকর হিসেবে আপনার নিজের অভিজ্ঞতা… মনুজি’র কাছ থেকেও আপনি শিখেছেন…

মাধবী পারেখ: অনেক লম্বা গল্প (মৃদু হাসি দিয়ে) কোথা থেকে যে শুরু হয়েছে… আমরা আহমেদাবাদ থাকতাম পরিবারের সঙ্গে। তার চাকরি হয়ে যায় বোম্বেতে, (স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না) আমরা একটা ছোট্ট ঘরে থাকতাম। তিনি কাজে চলে যেতেন, ঘরে আমি সারা দিন একা, খালি বসে থাকা ভালো লাগত না, মানে বোরিং… কিছু না কিছু ঘরের কাজ কর নাহয় কারো সঙ্গে দেখা কর… আমি সকালে রান্না করে ফেলতাম। তিনি অফিসে চলে যেতেন আর আমি প্রতিদিন দাদর যেতাম। তারপর বিকেলে এসে আবার খাবার তৈরি করতাম। আমি প্রতিদিন ম্যারিন ড্রাইভে জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারি, তাজ আর্ট গ্যালারিতে শো দেখতে যেতাম। এমন করতে করতে এক বছর কেটে গেল, আমার পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। পরীক্ষার পর আমি প্রেগন্যান্ট হলাম তখন তো আরও ভালো লাগত না। কী করব, কী করব… তো আমি মনুজিকে বললাম আমার কিছু শেখা দরকার। তখন তিনি বললেন এই লাইন অনেকটা ধীরগতির এখানে অনেক পরিশ্রম আর স্ট্রাগল করতে হয়। তো এক সপ্তাহ পর তিনি আমাকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত এইসব আঁকা শিখাতে লাগলেন। তিন-চারবার পেপারে করার পর আমি বললাম এটাও তো বোরিং, রিপিট করতে হয় যদি… পরে তাকে জানাই… আর আমি তো গ্রামের। দিওয়ালির সময় রঙ্গোলি কর, তারপর বিয়ের সময় গনেশজি’কে বানানো হয়…ওয়াল পেইন্টিং… শুরুতে তো মন্দিরে দিওয়ালির সময়… আমাদের এ দিকে স্বামী নারায়ণ মন্দিরের পুরো ছাদে রামায়ণের দৃশ্য আঁকা ছিল। পুরো কাহিনি মানে রামায়ণ, মহাভারত। তখন ছোটো ছিলাম মাথা ওপরের দিকে তুলে পুরোটা দেখতাম। গ্রামে তো প্রতিটি পার্বণ আলাদা রকম হতো, দিওয়ালির দিন এক রকম, হোলির সময়ে আরেক রকম রং হতো… মানে রংময় পার্বণ। গ্রামে তো প্রতিটি ড্রেসই আপনার কাছে কালারফুল মনে হবে। রাজস্থানে গেলেও কালারফুল, গুজরাটেও কালারফুল। কেউ মরে গেলে তবে সাদা হয়, না হলে যেদিকে যাও শুধু কালার আর কালার। এখানে দিল্লি এসেই না সামারে হোয়াইট পড়তে হবে, এখানে সাদা পড়তে হবে এমন কিছু ছিল। আমি তো এভাবেই বড়ো হয়েছি। কুকুর ছিল, মহিষ ছিল। নানা রকম শব্দও শিখেছি। গ্রামের জীবনই আলাদা। গ্রামে চারটা বেজে গেলে মন্দিরের ঘণ্টা শোনা যাবে, ধুপ-আরতি দেওয়া হবে। মাখন বানানোর শব্দ শোনা যাবে।

 

পারুল: আপনি কোন গ্রামের মাধবীজি?

মাধবী পারেখ: আমি গুজরাটের… আনন্দ… যেখানে ‘আমুল’ (ডেইরি ফ্যাক্টরি) আমাদের গ্রামের আশেপাশের দুধ সেখানে আসত। আমাদের চোখের সামনেই সেটা তৈরি হয়েছে।

 

পারুল: আপনার মধ্যে কি শুরু থেকেই কোনো ইন্টারেস্ট ছিল?

মাধবী পারেখ: না না, কারণ আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। আমার চার বোন দুই ভাই। একটা বোনের মেয়ে। একজন উকিল ছিল আর একজন শিক্ষক। আমার শুরু থেকে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল। যেমন বোম্বে গিয়েছিলাম, মন্টেসরি স্কুলে গেলাম। মন্টেসরি স্কুলে বাচ্চাদেরকে যখন ডিজাইন শেখানো হচ্ছে কার্ডের মধ্যে রং করে করে সেটাও ভালো লাগছিল। আমার জন্য তো নতুন-নতুন ছিল। তারপর বিভিন্ন শব্দ ছোটো, বড়ো। একটা মেয়ে এ রকম করতে করতে (হাতে বৃত্ত আঁকার ইশারায়) পোর্টেইট বানালো তার মা অথবা কোনো একজন লেডিসের তো সে উলটা করে কাগজের পেছনে খোঁপা এঁকেছিল। বাচ্চাদের মধ্যে কেমন বুদ্ধি। তো আমি ঘরে ফিরে তাকে গল্প বলতাম, জানেন আজ এ রকম হয়েছে… তার কাছেও ভালো লাগত। এমন করতে করতে আমি পেইন্টিং শুরু করলাম, যেমন ট্রায়েঙ্গেল… সেটাতে ফর্ম হতে লাগল। ওপরে সার্কেলে ফেস হলো, স্কয়ারে বডি হলো, হাত হলো, ফর্ম হয়ে গেছে একদম… মজা পেতে শুরু করলাম। দেখি কিছু করতে হবে। আমার মেয়ে যখন জন্ম নিল তার আগ পর্যন্ত আমি করেছি। এরপর তাকে নিয়ে ইনভল্ভ হলাম। তিনিও দশমাস ধরে কোনো কাজ করেননি। পরে সে (মেয়ে) যখন স্কুলে যেতে শুরু করে তখন থেকে আবার কাজ শুরু করি। আনন্দ পেয়েছি এইসব করতে করতে।

 

পারুল: তো কবে থেকে শুরু করেছেন মাধবীজি?

মাধবী পারেখ: ১৯৬৪ থেকে আমি শুরু করেছি।

 

পারুল: কতটা কঠিন ছিল? নিজের স্বামীর কাছ থেকে ট্রেনিং নেওয়া, তারপর তার সঙ্গে কাজ করা, কারণ তিনি তো সেই সময়ে বেশ এস্টাব্লিশড হয়ে গিয়েছলেন… (উভয়ের হাসি)

মাধবী পারেখ: আমাকে বলত তুমি এইটা করো, আমি এসে দেখব। করতেই হতো যেভাবে এক্সপ্লেনেশন করে যেতেন।

 

পারুল: আপনি টেকনিক তার কাছ থেকে শিখেন, ফর্ম শিখেছেন…

মাধবী পারেখ: শুরুতে টেকনিক, ফর্ম সবকিছু শিখিয়ে দিতেন। কিছু দিনের মধ্যে… আমার মেমরি খুব ভালো ছিল। সব ঠিকমতো মনে থাকত।

 

পারুল: এরপর আপনি কি কিছু পড়তে শুরু করেছিলেন, আর্ট বিষয়ক?

মাধবী পারেখ: না, আমি কখনো পড়িনি। বই দেখেছি, ক্যাটালগ দেখেছি। আমার নিজের ক্যাটালগ পড়ার সময় পর্যন্ত থাকত না কারণ ঘরের কাজ, বাচ্চাকে পড়ানো… পড়া আমার কাছে জরুরি মনে হয়নি। আমি তাকে বলতাম, তুমি পড়, আমাকে পরে বলে দিলেই হবে।

 

পারুল: পেন্টিং কবে থেকে শুরু করেছেন? আপনি বলেছেন ৬৪ থেকে আপনি কাজ শুরু করেছিলেন… কী রকম করে?

মাধবী পারেখ: তখন সব ড্রয়িং পেপারে করতাম। তারপরে ডট করা শুরু করলাম, সেটা ফ্রেশ পেন দিয়ে করতাম। অনেক সময় লাগত ডটস করতে। ধীরে ধীরে জিরো, ওয়ান নাম্বারের ব্রাশ দিয়ে শুরু করি। অনেক মুশকিল হতো…

 

পারুল: কিছু দেখে করতেন নাকি মনুজি আপনাকে বলত কিছু তৈরি করে রাখতে…

মাধবী পারেখ: না তিনি সেটা কখনো করেননি।

 

পারুল: তো আইডিয়া কীভাবে আসত আপনার মনে?

মাধবী পারেখ: আইডিয়া তো… কিছু করো যেকোনো কাজই… তখন তো আমি ডট করতাম, তখন খুব ভালো লাগত। ডট দিয়ে বিভিন্ন ফিগার হতো একদম পপ আর্ট যে রকম হয় আর কি… তো ভালো লাগত। তখন ফিগার তৈরি করতে শুরু করলাম, হিউম্যান ফিগার না, অ্যাবস্ট্র্যাক্ট।

 

পারুল: তার মানে শুরু অ্যাবস্ট্রাক্ট দিয়ে করেছিলেন…

মাধবী পারেখ: ঠিক অ্যাবস্ট্রাক্ট-ও বলা যায় না, মানে রিয়েল কোনো ফিগার ছিল না…ওই যে ট্রায়েঙ্গেল, স্কয়ার দিয়ে শুরু করেছিলাম এরপর যেমনটা মনে এসেছে… ফ্রিহ্যান্ড…

 

পারুল: তো মিডিয়াম কি ব্যবহার করতেন?

মাধবী পারেখ: প্যাস্টেল… ওয়েল প্যাস্টেল…

 

পারুল: তখন কি আপনার মনে হলো এতটা শিখেছেন, অনেকটা কনফিডেন্স এসে গেছে… এখন আপনার কাজগুলো ডিসপ্লে করা যায়… আর সেই ফেস কেমন ছিল আপনি নিজেই একজন…

মাধবী পারেখ: দেখা যায়, যখনই কাজ করতাম, ড্রয়িং, তখন সবকিছু নতুন মনে হতো।

 

পারুল: কী রকম নতুনত্ব ছিল?

মাধবী পারেখ: সেটা আমি জানি না… (হাসি দিয়ে), লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে হবে। মানে নতুন ম্যাটেরিয়েল, নতুন ফর্ম, নতুন ফিগার, ব্রাইট কালার…

 

পারুল: যেটা আপনি আপনার গ্রামের সম্পর্কে বলেছিলেন?

মাধবী পারেখ: হ্যাঁ, হ্যাঁ সেটাই। স্কুলে যখন যেতাম সূর্য উঠত… সূর্যের প্রতিটি রশ্মির কালার, সাতরং দেখা যেত সে রকম চোখে পড়ত কখনো কখনো। ন্যাচার কতটা আর্টে ভরে আছে। কালার স্কিম। যেমন গাছ, খেতে যখন নতুন নতুন সবজি হতো তখন কেমন সুন্দর কালার দেখা যায়। আমাদের এখানে সরষে হতো না কখনো কখনো হতো গমের সঙ্গে। তখন ইয়েলো কালার, গ্রিন কালার খুবই ভালো লাগত দেখতে। ইয়েলো কালার আপনি পেন্টিং-এ নিয়ে এলেও কতটা সুন্দর লাগে। কখনো এক্সপেরিমেন্ট হতো, ভুলও হতো… কিন্তু এমব্রয়ডারির সময় যে কালার স্কিম হতো, ফ্লাওয়ার রেড, পাতা গ্রিন সেটাই আমি পেন্টিং-এ করে দেখেছি, আসলে দেখতে কেমন লাগে। কারণ আমার তো সে রকম নলেজ ছিল না , কোথায় কী রকম কম্বিনেশন হতে হবে…

 

পারুল: সেখান থেকে আপনি… এমব্রয়ডারি থেকে আপনার ক্যানভাসে নিয়ে এসেছেন… থিম কী ছিল আপনার কাজের?

মাধবী পারেখ: কোনো থিমটিম ছিল না। ফ্রি হ্যান্ডেই সব হতো। ধীরে ধীরে হতে লাগল। যখন রাবণ হলো, উৎসবের জন্য দুর্গা, কালী বানানো হলো। আমরা কলকাতা গিয়েছিলাম, তো সেখানে সরস্বতী পূজা, কালী পূজা আর দুর্গা পূজা সেই সময়ে ফেসটিভলের একটা অ্যাটমোস্ফিয়ার ছিল। ভালো লাগত, লোকেরাও খুশি হতো। বাঙালিরা তো উৎসবে ফুল তাদের ফর্মে থাকে, কেনাকাটা, শঙ্খ বাজানো, খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে… চার-পাঁচ দিন বেশ ভালো কাটে। হেঁটে… দেখতে যাও… প্রতিটা মহল্লায় একটা করে দুর্গা অথবা কালী পূজার সময় প্যান্ডেল হতো। বাঙালিরা খুব ভালো ছিল। কলকাতায় আপনি যদি বলেন আমার আর্টের সবচেয়ে এপ্রিসিয়েশন হয়েছে। অনেকেই বলে না, এটা এমন কেন, ওটা এমন কেন… এ রকম ছিল না। এটা ভালো হয়নি… এমনটা কখনো বলেনি। খুব সুন্দর, খুব সুন্দর হয়েছে এমনটাই বলতে থাকে। আমার প্রথম গ্রুপ শো হয়েছিল কলকাতাতেই।

 

পারুল: কলকাতাতে আপনার কি ইনফ্লুয়েন্স ছিল পেইন্টিয়ের?

মাধবী পারেখ: কলকাতাতে মনু পারেখ চাকরি করতেন। ট্রান্সফার হয়েছিলেন।

 

পারুল: মানে যে শহর ছিল, সেটাকে আপনি আপনার কাজের মধ্যে দিয়ে কেমন দেখেছিলেন? আপনার কি মনে হয় সেটার প্রভাব আপনার কাজে কিছুটা পড়েছিল?

মাধবী পারেখ: দুর্গা-কালী তো আমাকে সেখান থেকেই ইন্সপায়ার করেছিল। কত বড়ো বড়ো স্টেজ হতো। সেগুলো তো আমি ছোটো ছোটো করেছি। আমি দুইবার করেছিলাম। আজ থেকে চৌদ্দ-পনেরো বছর আগে আমি একটা সিরিজ বানিয়েছিলাম। এই চার-পাঁচ বছর আগেও একটা সিরিজ করেছিলাম।

 

পারুল: কী নাম ছিল সেই সিরিজের?

মাধবী পারেখ: না, মানে… দুর্গা-কালীর সিরিজ।

 

পারুল: আর সেটা আপনি আপনার ফোক-ফর্ম…

মাধবী পারেখ: হ্যাঁ, নিজের ইমেইজ থেকেই বানিয়েছি। প্রথম সিরিজটা ছিল… কিন্তু দ্বিতীয় সিরিজটা… তত দিনে আমি ফিগার করতে করতে প্র্যাকটিসটাও ভালো হয়ে যায়।

 

পারুল: যখন আপনি শুরু করেছিলেন পেইন্টিং এবং এখন পর্যন্ত… আপনার নিজের কাজের অন্তর কী বলে মনে হয়? প্রত্যেকভাবেই যেমন সেটা টিম হলে, কালার হলে, ফর্ম হলে…

মাধবী পারেখ: পরিশ্রম করলে প্রতিটি ক্ষেত্রে, ধীরে ধীরে সেখানে একটা প্রগ্রেসিভ বিষয় তৈরি হয়। আমি বিন্দু আর দুয়েকটা লাইন, ট্রায়েঙ্গেল, সার্কেল দিয়ে শুরু করেছিলাম। ধীরে ধীরে ফর্ম, কালার। ওয়েলে করেছি, ফটো কালার, ওয়াটার কালারে করেছি, অর্পিতা আমাকে টেকনিক শিখেয়েছিল… তারপর আমরা চারজনে শো করেছিলাম, অর্পিতা, নিলীমা, নলিনী আর আমি। ভুপাল, বোম্বে, দিল্লি, সম্ভবত মাদ্রাজে আর বেঙ্গলেও করেছিলাম। চারজনের খুব ভালো, ওয়াটার কালারেই হয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে নিজেরা একক কাজ করা শুরু করলাম।

 

পারুল: আজকাল কী করছেন মাধবীজি?

মাধবী পারেখ: ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জেসাস ক্রাইস্টের একটা সিরিজ নিয়ে কাজ করছি। আমরা বিদেশে… প্রতিবছর পপুলার প্রকাশন যেটা আছে…আমাদের তুর্কি নিয়ে গেছে, চায়না নিয়ে গেছে… মানে পুরো যে আমরা ঘুরেছি তারাই আমাদের নিয়ে গেছে। পুরো বিদেশ ঘুরিয়েছে… আমরা রাশিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে বড়ো বড়ো চার্চ দেখেছি। বাইরে অনেক দেশে… আমাদের এখানে যেমন মন্দির আছে সেখানে বড়ো বড়ো সুন্দর চার্চ আছে—দেখলে একদম শান্তি লাগবে। সেখানে জেসাসের আলাদা আলাদা ফর্ম… বাইরের দিকে কিছু লেখা পড়লে [স্থাপত্য বিষয়ে, সেটার ইন্সটলেশন, ইতিহাস] সেটা সম্পর্কে কিছু জানা যায়… ছোটোবেলা আমাদের বন্ধু, শিক্ষকদের মুখে যা শুনেছি সেটা বাস্তবে দেখা হচ্ছে… তো এক দিন কোথায় গিয়েছিলাম… নাম ভুলে গেছি… চার্চ থেকে বাইরে এসে… হিটলারের লড়াই যেখানে হয়েছিল… নাম ভুলে গেছি সেটার… ওই সময়ে ষাট বছরের যে মহিলা ছিল… চার দশ বছরের যখন বাচ্চা ছিল তখনো সেগুলো দেখিয়েছে… হিটলারের লড়াইয়ে তো অনেক… পুরো একটা ট্রেন… সবার ইন্টারভিউ প্রতিটি জায়গায়… দেখলে দেখা যাবে পেইন্টিনও ইন্টারভিউ । একটা মেয়ে লুকিয়ে গিয়েছিল যখন মারতে এসেছিল। সেই মেয়েটা যখন ষাট বছরের হয়ে গেল তখন তাকে বাস্তবে দেখলাম। বাইরে আসার পর কিছু বাচ্চার আওয়াজ এসেছিল তখন সামনে একটা লাইভ শো দেখেছিলাম… কেমন হিউম্যান বিয়িং এর জীবন হয়ে গেল… তখন আমি আবার দেখলাম জিসাস ক্রাইস্ট শান্ত বসে আছে। তখন আমি তাকে [মনুজি’কে] বললাম আমাকে এইটা বানাতে হবে। সেটার আইকনও ভালো ছিল, মানে একটা ফর্ম…তখন বলল হ্যাঁ, ঠিকাছে করব। নলিনী আমাকে রিভার্স পেইন্টিং-এ শিখিয়েছে টেকনিক কী, কী কী করতে হবে। তো শুরুটা জিসাস ক্রাইস্টের রিভার্স পেন্টিং দিয়ে শুরু… পরে মাঝে ফর্ম চলে আসত।

 

পারুল: জেসাস ক্রাইস্টের এই সিরিজে কী কী ছিল? আর সেটার ফিলোসফিটা আসলে কী?

মাধবী পারেখ: ফিলোসফি তো তেমন কিছু না। আমার কাছে ফর্ম ভালো লেগেছে। দ্য লাস্ট সাফার… আমার তো জানাই ছিল না লাস্ট সাফার এর অর্থ কী। সাফার মানে তো যেমন গুজরাটিতে মুসাফিরি। তো আমার কামওয়ালি সে খ্রিষ্টান ছিল, সে আমাকে বলল লাস্ট সাফার মানে রাতে যখন সবাই মিলে খাবার খেতে বসে একসঙ্গে কথাবার্তা বলে। তো কেউ একবার এসেছিল তো বলল, ১২ জন শিষ্য ছিল তার মধ্যে জেসাস এবং এই ১২ জন শিষ্য থেকে কেউ একজন যিশুকে মারার পরিকল্পনায় ছিল। আমি পরে জানতে পেরেছি। যখন একটা প্যারাগ্রাফ পড়েছিলাম তখন বুঝতে পেরেছি যে, সবার এক্সপ্রেশন আলাদা আলাদা ছিল। যে আমি না, আমি না… প্রত্যেকে এক রকম হাত নেড়ে…

 

পারুল: তাহলে সেটা একটা ইন্সপিরেশন ছিল আপনার কাজে… এখনো করছেন…

মাধবী পারেখ: এখন করছি না। কিছুটা তো ক্লান্তি লাগেই… আমার (স্পষ্ট না…) লোক পোর্ট্রেট টিম বানিয়েছে সেখানে আরও নতুন কিছু করার ছিল কারণ গ্যালারিতে শো ছিল তো সেখানে নতুন কিছু ইন্ট্রোডাকশন দরকার…

 

পারুল: তা ছাড়াও যে ফোক আর্ট, ফর্মস সেগুলোর যে মটিফ, কাজের… সেগুলোও কি আপনার কাজে ভিন্নমাত্রায় এসেছে?

মাধবী পারেখ: শুরুতে প্রচুর ছিল। আপনি যেমন বলেছেন তেমনটাই ছিল। এরপর ধীরে ধীরে সেগুলো হ্রাস পায়। ফিগার হতে লাগল তারপর ডিসট্যান্স… খেতের মধ্য দিয়ে রাস্তায় আসতাম যেতাম সেগুলো তো ছিল যেমন স্পেস… বাচ্চাও বড়ো হয়ে গেল। সাইকোলজিও পরিবর্তন হলো। স্ত্রী একটা শক্তি, সেখানে যা কিছু সহায়, তা করার ছিল। বাচ্চাকেও বড়ো করেছি যেভাবে… গুরু ভালো ছিল আমার… স্ট্রিকট তো ছিলই… কিন্তু ভালো ছিল। এখনো সফর করছি…

 

পারুল: জি… আপনি মনুজি’র কাজকে সহযোগিতা করেন আর তিনি আপনার কাজে…

মাধবী পারেখ: জানি না ঠিক… দুজন তো একসঙ্গেই থাকি… জরুরি হলে তো সেটা পূরণ করি।

 

পারুল: কিন্তু আপনাদের স্টূডিও আলাদা আলাদা…

মাধবী পারেখ: সাথে থাকাও উচিত না। মানে ডিস্টার্ব হয় না…

 

পারুল: আপনার কাছে সবেচেয়ে বেশি কী মনে হয়… যারা এখনকার সময়ের আর্টিস্ট… নতুন কাজ হচ্ছে… বাইরে নিউইয়র্কে…

মাধবী পারেখ: এ বিষয়ে আমার কোনো নলেজ নেই… নিজের হাতে কাজ করলে তাতে খুব আনন্দ লাগে… আমিও তো ব্রাশেই করতাম… আজকাল তো কম্পিউটার (স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না)… ভালো… সেটাকেও এড বলা যায়… যার যেমন মনে আসে সেটা করবে এটাই ভালো…

 

পারুল: আর আপনার জন্য পেইন্টিং সবচেয়ে বেশি…

মাধবী পারেখ: আমার জন্য তো পেইন্টিং… ফটো কালার… ব্রাশ দিয়ে করলে… কম্পিউটারে যেটা করে সেটা আমার ভালো লাগে না… মানে বুঝতে পারি না…

 

পারুল: আজকালের জীবনে যেটা দেখা যায়… খুব দ্রুত গতিতে চল…

মাধবী পারেখ: সেটা তো আমার মধ্যে নেই। আমি গ্রামের লোক। আরাম করে বসে কথা বলার, কাজ করার লোক।

 

পারুল: সেটাই আপনার কাজে দেখা যায়…

মাধবী পারেখ: এক নম্বর হতে হবে এমন নয়… পরিশ্রম করে কাজ করি… তেমনটাই…

 

পারুল: আর এমন কোনো থিম অথবা সাবজেক্ট আছে কি না যা অনেক বছর ধরে হয়তো আপনার মাথায় ঘুরছে যেটাকে ক্যানভাসে প্রকাশ করতে চাইছেন…

মাধবী পারেখ: ক্যানভাসে তো আমি স্কাল্পচারও করেছি। ছয়-সাত পিস করছি। বোম্বাই এয়ারপোর্টে যে রাজেশ্বরী বানানো হচ্ছে সেখানে আমি একটা ‘খটোলা’ও বানিয়েছিলাম।

 

পারুল: সে বিষয়ে যদি কিছু বলেন… কেমন ছিল…

মাধবী পারেখ: ‘খটোলার’ মানে হলো… আগের দিনে হতো না… মরে যাওয়ার পর ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে যেত… তো সেটার নাম দিয়েছিলাম আমি ‘খটোলা’। মানে উড়ে যাচ্ছে। [উত্তর ভারতের লোকগল্পে ব্যবহৃত শব্দ ‘খটোলা’। যার অর্থ আকাশযান]

 

পারুল: তার মানে খুব ডিফারেন্ট মাধ্যম পেইন্টিং আর স্কাল্পচার?

মাধবী পারেখ: অনেক মুশকিলের কাজ… ভালো লাগত। টুকরি… তারপর ড্রাফট করতে হয়… তারপর ব্রাশ… ধীরে ধীরে… একটু করো তারপর … আমি কতগুলো টুকরি ব্যবহার করেছি… আমি ত্রিশ বত্রিশটার মতো টুকরি নিয়েছি… সব একসঙ্গে করে তারপর বানানো হয়েছিল…

 

পারুল: তো আপনি সবসময়ই কিছু না কিছু শিখতে থাকেন?

মাধবী পারেখ: আমাকে নতুন কিছু শিখতে… আমি খিচুড়ি খেয়ে বোরিং…অথবা ডাল, চাল সবসময় খেয়ে বোরিং লাগবে সবার… চেঞ্জ ইট স্টেয়ারিং… এটা ভালো লাগে… নতুন নতুন কিছু করতে, শিখতে… টিভিতে দেখো, নতুন কোনো খাবার বানাও… অথবা কারো কাছে শুনে…

 

পারুল: জি… এক্সিবিশনে যাচ্ছেন, আর্ট শো দেখেন…

মাধবী পারেখ: সেটাও সবসময়ই করে থাকি। এখন সিজন শুরু হয়েছে দিনে কখনো দু তিনটা শো থাকে… দেখি…

 

পারুল: আজকাল নতুন… ভুপেনের ওপর করছেন…পোর্ট্রেট…

মাধবী পারেখ: হ্যাঁ দুই তিনটা করেছি। একটা তো আমার কাছ থেকে নিয়ে গেল। এরপর আমার কাছে ভুপেনই… ভুপেন আছে। [ভারতীয় সুপরিচিত চিত্রকর ভুপেন খখর]

 

পারুল: আর কিছু কি বলতে চান তরুণ আর্টিস্টদের জন্য… স্টুডেন্টদের জন্য…

মাধবী পারেখ:: পরিশ্রম করো। পরিশ্রম সবার আগে… হৃদয় দিয়ে… ফল ওপরওয়ালা দেখবে…

 

পারুল: আপনার কি কখনো হয়েছে, আপনি কখনো কলেজে যাননি সে জন্য কোনো প্রভাব পড়ছে…

মাধবী পারেখ: শুরু শুরুতে লাগত… টেকনিক্যালি যখন কিছু বুঝতে পারি না তো তাকে জিজ্ঞেস করতে হয়… কালার হবে… কী হবে… একবার আমার মেয়েটা ছোটো ছিল তখন… ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে কাজ করছি… ট্রেইনের গোল চক্কর করতেছি তো তার হাত লেগে যায় এখন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে সেটাকে পুনরায় কীভাবে ফিরিয়ে আনব। আমি তখন বেচারিকে মেরেছি। তারপর সে কান্না করল, আমিও কান্না করলাম। তো তিনি অফিস থেকে আসলেন… জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে, বললাম এভাবে গোল গোল করার সময় বাচ্চার হাত লেগে গেছে… তো তিনি বললেন ঠিকাছে কিছুই হবে না, আমি করে দেবো…তো তিনিও একটা লাগিয়েছিলেন… পরে সেই পেন্টিংটা আমরা আসলে কাউকে দেইনি।

 

পারুল: আদারওয়াইজ আপনাকে এমন কিছু মনে হয়নি…

মাধবী পারেখ: না, মনু পারেখের মতো স্বামী হলে মনে হবে না। উনি কখনো বলেন, আমাকে কেউ হেল্প করে না… আমি কনফিউজ হলে যখন বলি… তখন বলে তোমার তো আমি আছি… আমি বলি, আমার তো এতেই শান্তি…

 

পারুল: আপনি এ পর্যন্ত এসেছেন… আপনি শুধু পরিশ্রম…

মাধবী পারেখ: এই ব্যাপারে উনার কথাই মনে আসবে…

 

পারুল: আর আপনার পরিশ্রম… আপনার সংকল্প…

মাধবী পারেখ: হ্যাঁ পরিশ্রম… আমি তো পেইন্টিং করে রেখে দিতাম, কিছুই করতাম না। ফ্রেমও কী হবে, কেমন হবে… কখনো দুজন মিলে করি… প্রাইজ, টাইজ কিছুই জানতাম না।

 

পারুল: আপনাকে পেইন্টিং কি দেয়? সবচেয়ে বেশি খুশি…

মাধবী পারেখ: দিনে কিছু করেছি এমন তো মনে হয়। স্কেচ, ড্রয়িং এরপর…দিন খারাপ যায়নি।

 

পারুল: আপনি ডেইলি কাজ করেন?

মাধবী পারেখ: হ্যাঁ, ডেইলি… যখন শো থাকে তখন অনেক বেশি নাহলে, দুই ঘণ্টা, দেড় ঘণ্টা… যখনই সময় পাই। এখন তো বয়স হয়ে গেছে… একটু করলেই এরপর বসে থাকি কিছুক্ষণ… তারপর আবার শুরু করি… কারণ পিঠে স্পন্ডালাইসিস অনেক বছর ধরে।

পারুল: ঠিকাছে মাধবীজি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৮৯ কুমিল্লায়। কবিতা, ছোটোগল্পের পাশাপাশি অনুবাদ করেন। এ পর্যন্ত দুটো অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ তে বেহুলাবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ওশোর গল্প’। ২০১৯ সালে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রজ্ঞাবীজ’। কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।  বর্তমানে হিন্দি সাহিত্যের অনুবাদ নিয়ে কাজ করছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।