শনিবার, অক্টোবর ১২

হাসান আজিজুল হকের ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ : একটি গল্প একটি ইতিহাস :: রুমা মোদক

0

এমন গল্প তিনিই লিখতে পারেন। যে গল্পে ডকুমেন্টেশন আর ফিকশনের সুস্পষ্ট দেয়াল দৃশ্যমান হয়। অথচ কালের খাতায় এর চেয়ে ভালো ডকুমেন্টেশন আর লেখা হয় না। ইঙ্গিত, চরিত্র, সিম্বল কিংবা ভবিতব্য একটি আরেকটির সম্পুরক হয়ে শিল্পের দাবি পূরণ করে অথচ হয়ে থাকে সময়ের বিশ্বস্ত দলিল।

বলছি হাসান আজিজুল হকের ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ গল্পটির কথা। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব আর সামাজিক মূল্যবোধের অবনমন যেভাবে একটি পুরুষ আর নারী কিংবা একটি পরিবার প্রতীক হয়ে ওঠে একটি দেশের, একটি জাতির, একটি ইতিহাসের— সেই সত্যটিই হাসান আজিজুল হক স্পষ্ট করেছেন এই গল্পে।

বলছি হাসান আজিজুল হকের ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ গল্পটির কথা। রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব আর সামাজিক মূল্যবোধের অবনমন যেভাবে একটি পুরুষ আর নারী কিংবা একটি পরিবার প্রতীক হয়ে ওঠে একটি দেশের, একটি জাতির, একটি ইতিহাসের— সেই সত্যটিই হাসান আজিজুল হক স্পষ্ট করেছেন এই গল্পে।

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মামুন রশীদ। গল্পটির নাম বলে দেয়, মামুন রশীদ একজন ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’। তার জীবনে ১৯৮৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির তারিখটির অনিবার্যতা দিয়ে গল্পটির শুরু। নিবিষ্ট পাঠক ধারণা করতে পারেন, তারিখটি আগাম ইঙ্গিত দেয় হয়তোবা। একে ঘিরেই শাখা প্রশাখা মেলতে যাচ্ছে গল্পের বীজ। এই ৩ ফেব্রুয়ারি মামুন রশীদের ‘…চাকরির বিশ বছর পূর্ণ হয়েছে, তার বিয়ের আঠারো বছর এবং তার একমাত্র পুত্রসন্তান ষোলো বছরে পা দিয়েছে।’ মামুন রশীদ ধারণা করেন, তার জন্মও ঐ তারিখেই। কিন্তু গল্পকার এ পর্যায়ে পাঠককে একটু ধন্ধে ফেলেন, কারণ মামুন রশীদের পিতা তার জন্মতারিখটি নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। পঞ্চম সন্তানের জন্মতারিখটি তিনি লিপিবদ্ধ করেননি, যেভাবে অন্য চার সন্তানের তিথি, নক্ষত্র লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। অথচ এই পুত্রই স্বপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত। বাকি সব ‘গরু গাধার শামিল’ বলা যায়। লেখক পাবলিক সার্ভেন্ট মামুন রশীদের গল্পটি বলার জন্য যে কৌশল ব্যবহার করেন, আমরা আপাত ভেবে নেই, তিনি নেহায়েত এক পাবলিক সার্ভেন্টের যাপিত জীবনের কথাই বলবেন। তার সংকট কিংবা সম্ভাবনা, গড়ে ওঠা কিংবা ভেঙে পড়ার কথাই বলবেন। কিন্তু পড়তে পড়তে শেষাবধি আমরা বিমূঢ় বিস্ময়ে দেখি, এই মহৎ লেখক এক পাবলিক সার্ভেন্টের গল্প ফেঁদে কী অনিবার্য এক রাষ্ট্রীয় ভয়াবহতায় আমাদের নিক্ষেপ করেন। অবশ্য এই ভয়াবহতার ইঙ্গিত তিনি দেন বটে, কিন্তু তা ব্যক্তি পাবলিক সার্ভেন্ট অতিক্রম করে যখন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে আমরা তখন স্তব্ধতায় লেখকের অসীম ক্ষমতার অতলে হাবুডুবু খাই।

‘আজকের আকাশটা নিচু, ঠিক যেন ছাদের উপরেই নেমে এসেছে। সিসের মতো ময়লা ছাই রঙের আকাশ, রোদ নিভে গেছে সকাল থেকেই’ গল্পটির অনিবার্য গন্তব্যের ইশারা তিনি প্রকৃতির বর্ণনাতেও রেখে যান। এই রোদহীন টিপটিপ বৃষ্টির ভারী আকাশটার মতোই যে তার ঘরের আবহাওয়াও ভারী, এই পূর্বাভাস তিনি সুকৌশলে দিয়ে যান পাঠককে। যদিও পাঠক তখনো প্রেডিকশন করতে পারে না, ঘরের সেই ভারটা কিসের! ব্যক্তি মামুন রশীদেই পাঠক আটকা পড়ে থাকেন। অপেক্ষা করেন পাঠাভিজ্ঞতায় পাবলিক সার্ভেন্ট মামুন রশীদের জীবনের গলি ঘুপচি আবিষ্কারে।

এই যে সুসজ্জিত ড্রইংরুম তা এক উত্তুঙ্গু, লক্ষ্যহীন জাতির প্রতীকী সজ্জা। তাৎক্ষণিক এই ড্রইংরুমের সাজসজ্জার অন্তর্গত অর্থ আমাদের কাছে স্পষ্ট না হলেও, গল্পটি পুনর্পাঠে এই বিচিত্র সজ্জার ড্রইংরুমটি আমাদের কাছে একটি দিকভ্রান্ত জাতির মেটাফর হয়ে উঠে।

লেখকও বিভ্রান্ত করেন, কিংবা সুপরিকল্পিতভাবেই এগিয়ে যান, এ তাঁর ক্রাফট, স্বনির্বাচিত, সুচিন্তিত। পাঠককে তিনি নিয়ে যান মামুন রশীদের ড্রইংরুমে, ‘দোকানের মতো সাজানো’ ড্রইংরুম। যেখানে বহুজাতিক সংস্কৃতির অবস্থান। অর্থের বাহুল্যের ইঙ্গিত ইরানি কার্পেটে, ফোমআঁটা ডাবল সোফায়। চৈনিক সংস্কৃতি আর বাংলা সংস্কৃতিতে সহাবস্থান নেই, বরং ‘খটখটি, লটঘটি’ লেগে আছে। এই যে সুসজ্জিত ড্রইংরুম তা এক উত্তুঙ্গু, লক্ষ্যহীন জাতির প্রতীকী সজ্জা। তাৎক্ষণিক এই ড্রইংরুমের সাজসজ্জার অন্তর্গত অর্থ আমাদের কাছে স্পষ্ট না হলেও, গল্পটি পুনর্পাঠে এই বিচিত্র সজ্জার ড্রইংরুমটি আমাদের কাছে একটি দিকভ্রান্ত জাতির মেটাফর হয়ে উঠে। যেখানে এক হাতি সুড়ঙ্গ খুঁড়তে খুঁড়তে চলে যাচ্ছে অজানা আতঙ্কের ভবিতব্যের দিকে, যে অজানায় সওয়ার তার ষোল বছরের পুত্র মূলত প্রজন্মের মেটাফর।

সেই ড্রয়িংরুমটি আবার চারদিক থেকে আবদ্ধ। প্রথমে সুক্ষ্ম তারের পাল্লা, তারপর কাচের পাল্লা। সব আবার সোনা রঙের পর্দায় ঢাকা। নিচ্ছিদ্র সেই ড্রইংরুমে বাইরের কোনো আঁচ-তাপ লাগে না বটে, কিন্তু ভেতরটা তার কবরের মতো স্তব্ধ। বাইরে ‘অকূল উদ্দেশে’ কেঁদে যাওয়া হাওয়া ঘরে প্রবেশ করে না বটে, কৃত্রিমভাবে তা উপলব্ধির জন্য রয়েছে ‘রবি ঠাকুরের গানের রেকর্ড’। বাইরের ‘মাঠঘাট ঝেটিয়ে হাওয়া’ তো কোন ছার, ঘরে কৃত্রিম ভাবে ‘সমুদ্রের গভীর গর্জনকেও’ ডেকে আনা যায়।

এই যে ড্রইংরুম, নিচ্ছিদ্র, সুসজ্জিত, গল্পের অনেকখানি জুড়ে যার বর্ণনা, মহৎ গল্পকার হাসান আজিজুল হক মোটেই তা কেবল গল্পের খাতিরে ফাঁদেননি। বরং ব্যক্তি মামুন রশীদকে আশ্রয় করে তিনি যে রাষ্ট্রীয় সংকটের কথা বলবেন, তার একটা আগাম বার্তা পাঠককে দিয়ে রাখেন। যা হয়তো প্রায়শই প্রথম পাঠে পাঠকের কাছে অধরাই থেকে যায়।

গল্পটি এ পর্যায়ে বাঁক নেয়, প্রস্তুতি পর্ব সেরে যেন উদ্দিষ্ট গল্পে প্রবেশ করে। মামুন রশীদ তিনবার তার বউকে ডাকে। বউ আসে না। এখানে লেখক মামুন রশীদের যে চেয়ারটির বর্ণনা দেন লেখক, তার সূত্র ধরে উন্মোচিত হয় মামুন রশীদের যাপিত জীবনাচরণ, যেখানে সে আবিষ্কার করে একটি ‘সোনালি চুল’। এবং এই সোনালি চুল সাক্ষ্য দেয় মামুন রশীদের একাধিক নারীসঙ্গের। বহুগামিতা এখানে কেবল প্রবৃত্তিতেই সীমায়িত নয়, বরং একজন আমলার ভোগবিলাসী জীবনের সাক্ষ্য, যা পরবর্তীতে লেখক বলেন যে তার জীবন সাধারণের জীবন থেকে আলাদা।

নারীসঙ্গের অভিজ্ঞতায় মামুন রশীদের নারীকে দেখার পুরুষতান্ত্রিক ন্যারোটিভের গৎবাঁধা উপমায় আসে নারী শরীরের গন্ধ, সামন্ত দৃষ্টিতে নারীকে দেখার দৃষ্টি খুব অস্বাভাবিক লাগে না আমাদের নিত্য অভিজ্ঞতায়। প্রচলিত ভাবনার গণ্ডি ভাঙা পুরুষতান্ত্রিকতার ঊর্দ্ধে কোনো পুরুষ এখানে দুর্লভ। মামুন রশীদ সেই প্রচলিত স্রোতে ভাসা শ্যাঁওলাই হবেন, এ আর বিশেষ কী!

‘শুঁয়োপোকার মতো অন্ধ তারা। তাদের ঈর্ষা বড় ছোট জায়গায় ঘুরপাক খায়’। মামুনের মতো আকাশের রং দেখতে না পারার অক্ষমতা তার কাছে মেয়েদের ব্যর্থতা হিসাবেই পরিগণিত হয়। মেয়েদের জন্য যা হতে পারে শিক্ষা কিংবা রুচি কিংবা অস্তিত্বের প্রয়োজন, ভোগী মামুন রশীদের কাছে তা সংকীর্ণতা।

‘শুঁয়োপোকার মতো অন্ধ তারা। তাদের ঈর্ষা বড় ছোট জায়গায় ঘুরপাক খায়’। মামুনের মতো আকাশের রং দেখতে না পারার অক্ষমতা তার কাছে মেয়েদের ব্যর্থতা হিসাবেই পরিগণিত হয়। মেয়েদের জন্য যা হতে পারে শিক্ষা কিংবা রুচি কিংবা অস্তিত্বের প্রয়োজন, ভোগী মামুন রশীদের কাছে তা সংকীর্ণতা।

মেয়েদের এই ‘সংকীর্ণতা’র বিবেচনা কতোটা মামুন রশীদের উদার মুক্ত দৃষ্টিজাত, কতোটা নিজ অবস্থানের অনুগামী, লেখক তাঁর বলার কৌশলে স্পষ্টতই তা বলে দেন পাঠকের কাছে। যে পাঠক সুনিবিড় পাঠে যান, তার কাছে অনাবিস্কৃত থাকে না মামুন রশীদ মূলত যাকে সংকীর্ণতা ভাবছেন তা তারই চিন্তাজগতের সংকীর্ণতা। যদিও লেখক তখনো পাঠককে ইঙ্গিত ছাড়া সুস্পষ্ট কিছু বলেন না। সে ইঙ্গিত আরও সুনির্দিষ্ট হয় মামুন রশীদের বউয়ের চুলের বর্ণনায়। যেখানে এক গোছা সাদা চুল ‘খোলস ছেড়ে যাওয়া সাপের’ মতো, বউয়ের বিগত যৌবনের মেটাফর হয়ে আসে।

বউয়ের বয়সের প্রসঙ্গ আসতে আমরা পাঠক নড়েচড়ে বসি। ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ তার মাথায় ‘প্যাঁচকাটা স্ত্রুর মতো ছ্যাদা করে ভেতরে ঢুকতে থাকে।’ লেখক এই ফাঁকে পাবলিক সার্ভেন্টের অন্তর্গত নগ্নসত্যটি সটান বলে দেন, যা সত্য অথচ বিব্রতকর। ‘তোমাদের বলা হয় পাবলিক সার্ভেন্ট, আদতে তোমরাই জনগণের শাসক।’ কলোনিয়াল শাসকদের উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত এই ধারণা, আমলাতন্ত্রের মস্তিস্কে প্রোথিত, তাদের শাসিত জীবনাভিজ্ঞতা আমাদের বহুল পরিচিত। তারা ন্যাটিভদের কাছ থেকে নিজেদের দূরত্ব তৈরিতে চোস্ত ইংরেজি বলে। শাসিতদের কাছ থেকে তারা সম্পূর্ণ আলাদা। স্ক্রু দিয়ে প্যাঁচিয়ে ছ্যাদা করে তাদের মাথায় ঢুকানো হয় ‘সবসময় দাঁত কেলিয়ে ঘাড় চুলকে বিনয় দেখিয়ে পাবলিক সার্ভেন্ট কথাটা সব সময় চালিয়ে যাবে’।

তবে এই তালিম নেয়া পাবলিক সার্ভেন্টের ক্ষমতা আর অধিকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তারা উঁচুতে উঠবে, উঠবে। কিন্তু সবচেয়ে উঁচু চেয়ারটি তার কাছে ‘হিন্দুর গোমাংস কিংবা মুসলমানের শুয়োয়ের রক্ততূল্য’।

উঁচুতে উঠতে উঠতে মামুন রশীদ, একজন যথার্থ পাবলিক সার্ভেন্টের মতো সব গুণাবলী নিয়ে চেয়ারটির কাছাকাছি পৌঁছে যায়, দুয়েকবার বসে যাওয়ার মতো সুযোগও তৈরি হয়। কিন্তু সে ভুল করে না। তালিমের নির্দেশনা পালন করে সে। সে জানে ‘জীবনে সবচেয়ে ভালো করার নাম টিকে থাকা’।

ক্ষমতার নাক চোখ মুখ নেই বটে মামুন রশীদের কাছে তা কাগুজে বাঘ। পাবলিক সার্ভেন্টরাই তার চালিকা শক্তি। ‘সিংহাসনে যে বা যারাই বসে থাকুক, মামুন রশীদরা ক্ষমতার বাঁকে বাঁকে থাবা পেতে অপেক্ষা করছে’।কাজেই সিংহাসনে বসার মোহতাড়িত নয় সে মোটেই।

মামুন রশীদের বউ শায়লা, তিনবার ডাকার পরও যে ড্রইংরুমে চেয়ারের কাছে যায় না, চুরুট খুঁজতে খুঁজতে সে নিজেই বউয়ের কাছে যায়। পাঠক হিসাবে গভীর অনুসন্ধিৎসায় আমাদের তার অনুগামী না হয়ে উপায় থাকে না।

সেখানে পাঠকের জন্য অপেক্ষা করে থাকে চরমতম ধাক্কাটি, যে ধাক্কাটি দেওয়ার জন্য শুরু থেকেই পাঠককে প্রস্তুত করে যাচ্ছেন লেখক, তখনো তা আনপ্রেডিক্টবলই থেকে যায় পাঠকের কাছে। মামুন রশীদ যাকে বলছে ‘দুর্ঘটনা’, ডাকাত দল হামলা করে ধন সম্পদের সাথে গৃহকর্ত্রীর ইজ্জ্বত নিয়ে গেলে যেমন গৃহকর্তার নিরুপায় মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না, তেমন। কিন্তু শায়লা একে নেহায়েত ‘দুর্ঘটনা’ হিসাবে মানতে নারাজ। দীর্ঘ দাম্পত্যে দেবী লক্ষ্মী স্ত্রীর ভাবমূর্তি ভেঙে সে বলে, ‘অনেক ঘটনা আছে যা মানুষের জীবনে একবারই ঘটে। দুবার ঘটার কোন উপায়ই নেই। যেমন মানুষের জন্ম, মানুষের মৃত্যু। কবার মরতে পারো তুমি? অবশ্য তোমার মতো চামচিকে বেঁচে থাকে কবে যে মরবে?’

অভূতপূর্ব কৌশলে ব্যক্তি মামুন রশীদ একজন দক্ষ পাবলিক সার্ভেন্টের জীবনকে সুকৌশলে তিনি রিলেট করে দেন এক রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের সাথে।

মামুন রশীদের স্মৃতির পথ ধরে এবার আমরা যে ঘটনার দিকে আগাই, মামুন রশীদের ব্যক্তি জীবন থেকে এক রাষ্ট্রীয় সুরঙ্গে প্রবেশ করে, যেখানে শেষ মাথায় একটা আলোর সন্ধান হয়তো আছে, যখন সামরিক শাসক বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি দেশের যুবশক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে, যুবশক্তির উপর নির্ভর করতে’। অভূতপূর্ব কৌশলে ব্যক্তি মামুন রশীদ একজন দক্ষ পাবলিক সার্ভেন্টের জীবনকে সুকৌশলে তিনি রিলেট করে দেন এক রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের সাথে। ১৯৮৩ সালের একটি দিন, যেদিন গল্পটি শুরু হয় আমাদের নিমগ্নতায় তা কি করে সামরিক শাসকের চতুরতার সাক্ষী হয়ে ইতিহাস হয়ে উঠে! হয়ে উঠে এক দুর্বহ সময়ের দলিল!

তিয়াত্তরটি রাজনৈতিক দলের ঊর্দ্ধে এই যুবশক্তি হয়তো আশার স্থল হয়ে ক্ষীন আশা জাগিয়ে রাখে। কিন্তু গল্পের অন্তে আমরা মুখোমুখি হই এক অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার। সবসময় রাষ্ট্রীয় অনাচারের বলি হয় নির্দোষ নারী, আপনা মাঁসে হরিণা বৈরীর মতো এ এক অনিবার্য ট্রাজেডি। কিন্তু গল্পের যে মূল ইঙ্গিত, সম্ভাবনাময় যুবশক্তি, তাদের অবক্ষয়ের ফসল আজকের বাংলাদেশ, গভীর বিষাদে আমরা তা স্বীকার করতে বাধ্য হই। মহৎ লেখকেরা বুঝি এভাবেই ভবিতব্য বলে দিতে পারেন, বলে দেন।

‘কিন্তু সে কি হামাগুড়ি দিয়ে বসা কুকুরের মাংস খাওয়ার কোন দৃশ্য দেখেছিলো? জীবনে একটি বা দুটি সত্যের সামনে দাঁড়ানোর সাহস কারো নেই’।

সে সাহস আমাদের নেই বলে দেশ আজ ভীষণ দুর্বিপাকে নিমজ্জিত। হাসান আজিজুল হকের মতো লেখকরা তাঁদের অস্ত্র কলমের ব্যবহারে যা বলে যান অনেক আগেই, আমরাই তা থেকে কিছুই নিতে জানি না, সত্যের মুখোমুখি না হওয়া কাপুরুষই থেকে যাই।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

গল্পকার, নাট্যকার, মঞ্চাভিনেত্রী, শিক্ষক। বাংলাদেশ তার গল্পের আত্মা জুড়ে থাকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে আশা, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ, বেদনা ও বৈষম্যকে বিষয় করে তিনি গল্প লেখেন, যা একই সঙ্গে ডকুমেন্টেশন এবং শুধু ডকুমেন্টেশনই নয়, আখ্যান; কথাসাহিত্য। তার গল্পে জীবনের বাঁকবদল স্পষ্ট এবং অন্যদের থেকে আলাদা এক স্বর, যে-স্বর আমাদের আত্মা খমচে ধরে, বেদনাহত করে। সমকালীন বাংলাদেশ তার সমস্ত রকমের ঘা, রক্তপুঁজ নিয়ে উপস্থিত থাকে। ব্যবচ্ছেদের গল্পগুলি (২০১৫), প্রসঙ্গটি বিব্রতকর (২০১৬), গোল (২০১৮), সেলিব্রেটি অন্ধকারের রোশনাই (২০২০), নদীর নাম ভেড়ামোহনা (২০২০) তার উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত বই। মঞ্চ তার অদ্বিতীয় সত্ত্বা। গড়েছেন নাট্যদল- জীবন সংকেত নাট্যগোষ্ঠী। মঞ্চায়িত হয়- কমলাবতীর পালা, বিভাজন, জ্যোতি সংহিতা ইত্যাদি নাটক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।