বিমুখে
এখানে মৃ্ত্যুরা সরব
আমরা নীরব, ভালোবেসে।
সভ্যতাও একদিন নক্ষত্রের মতো ডুবে
আর আমরা পরস্পর অস্তিত্বকামী
অরণ্য, নদী, উপত্যকা, পাহাড় ঘুরে
সভ্যতা বিমুখে…
অসভ্য হই
অভেদ হই
ভেদ হই
সংখ্যায় বেড়ে যাই!
খিস্তি-কাব্য
রণসঙ্গমে বর্ম খুলে রেখে তুমি হাতে তুলে নাও আল মাহমুদ ও আরো কিছু কবি, শীৎকার নয় বরং
প্রলাপের মতো চলতে থাকে সোনালী কাবিন-জলবেশ্যা—
কবি! তুমি কাব্যের মতো… দেহের বদলে শুধু দেহই দিতে চাও, আর আমি চাই এর চেয়ে অধিক কিছু;
সুললিত পদ্য ছেড়ে চলে আসো এইখানে
এক হাঁড়ি মহুয়াজল গিলে বের করে আনো
থলের বিড়াল, এবার একরাশ খিস্তি-কাব্য হোক
কবি আমার! সংকোচের আধখানা হৃদয়
ভিজায়ে রাখো চুম্বনরসে,
মারিয়াম ফুল প্রসারিত হোক অলিন্দ-নিলয়
ক্রীতদাস কিংবা প্রেমিক কেন? তুমি—
বিদ্রোহানলে এসো, যাতে একটি শারারায়
জ্বলে ওঠে নাভি-নিতম্ব-পদ্মদাম।
কবি! অনেক ডেকেছো ‘প্রিয়তমা’ বলে
এবার মহুয়ার রস গিলে খিস্তি-কাব্য ছাড়ো—
ডেকে যাও মাগী-মধু নামে!
স্বপ্নাদ্য
১
প্রবল ঝড়ে নৌকোয় তুমি আমি
বুকের ওপর জোনাকের আশ্রয়,
হাতের মুঠোয় একটিকে রেখেছিলে
আরেকটিতে আঁধার ঝুলছিল;
জোছনায় সবকিছু দুলছিল
দুলছিল নাভির মতো ফুল,
তুমি এসে আমাকেই ঢেকে দিতে
খুলে নিলে নিজস্ব নির্মোক।
২.
শীতেরা চাদর পরে থাকে
খুলে দাও নাভির বহ্নিকোণ;
তাকে তাকে জলপাই এর আচার
ক্যাবিনেটে হরিণরঙা মদ,
হাত রাখো এইখানে তুমি স্যাম
এইখানে বরফ ঢাকা রাত;
আতার মতো একটি নরম ফল
হাতের মুঠোয় আলতো চাপে চাপে
আঙুলেতে দুভাগ হয়ে এলে
ভগ্নাংশ অসীমে পুরে নিয়ো।
অনতিক্রমণ
যতবার ভুলে যেতে চেয়েছি
শরীরের সমস্ত সুড়ঙ্গপথে এসে গেছো,
যেন পাতাল রেল
সিটি বাজিয়ে ইঞ্জিন সমেত ঢুকে পড়ছে গাড়ি;
আমি তোমাকে ভুলে যেতে চাই
ছেড়ে যেতে চাই
অথচ আমার বন্দরে লেগে আছে তোমার সবুজ জলযান কয়েকশো নোঙর সমেত
আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চেয়েছি কতবার!
উড়ে গেছি বিষণ্ন ড্রোনের মতো মেঘ কেটে কেটে,
শেষে জান্তব ডানা জেনে গেছে
তুমিই অনতিক্রম্য,
তুমি আকাশ!
স্পর্শন
তোমাকে আমি পথের মাঝখানে ছোঁবো,
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে
সারসের মতো তুলে নেবো আধখোলা ঠোঁটের ঝিনুক;
তোমাকে ছুঁয়ে দেবো মাছবাজারে
তুমি চোখ-পেট-কানকো ছুঁয়ে রুপোলি ইলিশ…
আর আমি পুচ্ছ বাঁকায়ে পায়ে ভর করে
ঝাঁপ দেবো থলের ভিতর।
তোমাকে জলে ছুঁয়ে দেবো ডুবসাঁতার
নখাগ্র থেকে চুল প্যাঁচাবো আপাদমস্তক,
তোমাকে আমি পথের মাঝখানে ছোঁবো
নেশাতুর যুবক সন্তর্পণে ছোঁয় যেমন
কিশোরীর লাল চোলি…স্ফিত ডুমুরের ফল,
কুয়াশা যেমন ছুঁয়ে রাখে মৃত হেলেঞ্চার বুক
যেমন করে অবরোহণে মধ্যমা ছোঁয় নিষাদ!
ঠিক তেমন করে
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে
কাদাখোঁচা পাখির মতো খুলে খাবো পিঠ
তোমাকে আমি পথের মাঝখানে ছোঁবো!

মুন্সীগঞ্জে জন্ম (১৯ জুলাই, ১৯৮২ সালে), মুন্সীগঞ্জেই বেড়ে ওঠা। পড়াশুনা শেষ করেছি জাহাঙ্গীরনগর থেকে।
জলের জাতক— এইজন্য ভালোবাসি বেদে- জীবন, নৌকার সংসার।
ভীষণ কল্পনাপ্রবণ আমি। বাস্তবের মুখোমুখি হতে পারিনা, সবসময় ড্রিমি স্টেটে থাকি। আমার মনে হয়, এই পৃথিবীর সমান্তরালে অন্য একটা পৃথিবী আছে— অন্য একটা সংসার আছে আমার। সেখানে আমার আরও বাচ্চাকাচ্চা আছে। সেই উঠানের সংসারে শিশুরা আমাকে ঘিরে বসে আছে আর আমি তাদের পাতে কাউনের ক্ষীর ঢেলে দিচ্ছি।
শুনতে অবাক লাগলেও এগুলো সত্যি। ভ্রম আর বাস্তবের মাঝামাঝি আমি। নিজেকে একটা চলমান জরায়ু মনে হয়। কখনো আবার নিজেকে দোচালা ঘরের মতো লাগে যেখানে প্রেমিক উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে তার অগণন সন্তান সমেত।
প্রকাশিত বই তিনটি। ঊনসপ্ততি (কবিতা), দ্বৈপ (কবিতা), দ্বিতয় (মেটা-ফিকশন)।