অন্তর্মুখী
সম্পর্ক-মাদলে সেঁটে থাকে রং। নির্দিষ্ট দূরত্বে তা সুন্দরে সমুজ্জ্বল। যেখানে অপারগ সামাজিকীকরণের চাদর মুড়ি দিয়ে চলে অন্তর্মুখীর দল। আলো তাদের দেখে তো দেখে না! বর্ণচোরা জীবন, বর্ণহীন চলাচল। তবুও কর্তৃত্ব এসে তাদের পিষে রেখে যায়, ছিঁড়ে খায়, ঘাড় ধরে মাথা নুইয়ে রাখে। অথচ তারা খোলসাবৃত সরল জীবন চেয়েছিল!
ধানী-জীবন
মাটির ডাক—বীজতলা
থকথকে কাদায় বসে পড়া
বাতাস দোলে—তরুণ সবুজে
সালোকসংশ্লেষে মাঠ ভরে সোনা বানের ধানে
ক্ষেত ছাড়িয়ে উঠোন মাড়িয়ে থালা ভরে চলে যায় পেটে
যেমনটা ধানী-রং শাড়ি পরা নারীর জীবন!
পথ
মেঘ করা ওই আকাশ যেমন ডাকে
তেমনই ডাক নীল ঢেউ নোনতারও
জলের নিনাদ জলেই ডুবাই চলো
চপচপে মন ভিজিয়ে নিতে আরও।
এমনি এমন সময় চুরির ঘাটে
হলুদ পাপড়ি, সবুজ পাতার ঝাঁকে
ফেরার পথটা দীর্ঘ হলো এতই
রয়েই গেছি বাঁকা পথের বাঁকে।
বাঁচা
বলিরেখা, চোখের ভাঁজে
শরীর বইবার সময়টুকু
বেঁচে থাকার কারুকাজে
বাঁচলে ঠিক কতটুকু?
হয়তোবা মিনিট শতেক
নয়তো নিটোল একটা দুপুর
এই স্মৃতিরা গোটা কয়েক
সাঁতরেছি ওই একটা পুকুর।
এতটুকুই সুখের নাগাল
গোটা জীবন কাটলো বৃথাই
বাঁচা বলতে ওটুকুই তাল
হাত গলেছে সময়, চিতাই।
ছোট্ট পাওয়া, জিততে চাওয়া
ওইখানেতে বাঁচব আরও
চোখে লেগে তোমার যাওয়া
দূরত্বতেই থাকতে পারো।
প্রাপ্তির বোধ মিটিয়ে দেয়
তাদের কি আর মনে থাকে?
অপ্রাপ্তি তো ঘুম কেড়ে নেয়
বাঁচিয়ে রাখে দুঃখে তাকে।
বাঁচতে হলে অপেক্ষা চাই
থকথকে চাই চেনা ক্ষত
তড়পানো ধুকপুকে পাই
মৃতের আপন বাঁচা যত।
ঘরে ঘরহীন
জেনেছি যৌথচুক্তির দাম্পত্য সম্পর্কের শেষ মৌলিক
এরপর জীবন মূলত চুক্তির বহমানতা
উপার্জন-উৎপাদন আকর
বাকি যেটুকু তা কালক্রমে ঠুনকো, অনিত্য।
যৌথ ছাদের নামে ঘর; যৌথ বাধ্যবাধকতা
তার তরে পরাভূত প্রেম ক্রমশ পরাশ্রয়ী,
বাড়ে আলাদা অভিযোজন ব্যস্ততা
ঘর আর প্রেম পড়ে থাকে যে যার মতো
এদিকে ঘর টের পায় না
ঘরে থাকা দাম্পত্য যারপরনাই ঘরহীন!

জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৮০, চন্দ্রঘোনা। প্রকাশিত কবিতা গ্রন্থ ‘অ্যানিমোনের কাছাকাছি’।