শুক্রবার, আগস্ট ১

নির্বাচিত দশ কবিতা

0

অন্তরে যমজ


ধুলার সিংহাসন

 

একফোটা উঁশের সমুদ্র পার হইতে দিন চইলা যায়
বনজামের পাতায় বাতাসে গানের আসর
নিরাকের চানপশরে কখন শামিল হব!
তবু আশায় আশায়
কায়া ফেইলা ছায়ারে ধরতেছি মনে মনে
পার হইতে চাইতেছি চামড়া গোশতের দেয়াল।

নাকে হালখাতার গন্ধ নিয়া
এক রতি মুথাঘাস
তারেও সেজদা মানতেছি
মোকামের পথ ভাইবা,
তার নিচে ধুলার সিংহাসন।

যেখানে দরদের বোঁটা থাইকা ঝইড়া পড়ে
হৈলদা পাতা, মানুষের আফলা বাসনা
বখতিয়ার, গাজ্জালী, নিউটন।

 

 

পুরানা কাটার দাগ

 

তোমারে ভুইলা গেছি
অথবা ভুলি নাই

মাঝখানে কয়েকশ বছর যেন পার হয়া গেছে
ভুলেভালে
আমাদের, না কি একলা আমার!

এরমধ্যে তোমারে তো ভুইলাই গেছি—
হাত কিংবা পায়ের শুকনা কাটা দাগের মতন
বেদনাবিহীন!
সারাদিন মাঝে মইধ্যে চোখ যায়, মনে পড়ে
সারাদিন মাঝে মইধ্যে ভুইলা যাই।


খালি বাড়ি


আমরা বাড়ির বাইর হই
আষাইঢ়া পানির গড়ানের তাড়াহুড়াগুলি,
পিছনে ফেলায়া আসা বাড়ি
আমাদের চইলা আসা দেখে কতদূর।
তারপর মানুষের চলাচল শেষবার শেষ হওনের পর
আরো কিছুকাল বেফানা বাতাসের সাথে নড়েচড়ে
একটা আসল খালিবাড়ি হয়া উঠে।

চাল ও দেয়াল নোয় শূন্য ভিটার কাছে
ভাঙ্গনের ফাঁক দিয়া একদিন
ভিতরে ঢুইকা পড়ে কয়েকটা ন্যাংটা তারা।

চাইরদিকের সব শূন্যতা জঙলা হয়া উঠার পরে
আমরা একদিন ফিরত আসি।
আমাদের না-থাকাগুলারে দেখি
মুছা হইতেছে ধীরে
মটখিলা শিয়ালমুত্রীর জঙলার মুথাঘাসে।

তবু এই শূন্য বাতাস খালি জঙলারে আমরা
কেন ‘বাড়ি’ কয়া ডাকি!


দাদীর কুপি বাত্তি


আমরা কয়েকবার বাড়ি বদলাই
গ্রাম থাইকা জিলা শহরে যাই
জিলা শহর থাইকা বড় শহরে।
আমাদের শহর বড় হয় পথ বড় হয়
তবু একই আকারের দাদীর কুপিবাত্তিটা
সাথে নিয়া আসতে ভুলি না।

মাঝে মধ্যে আমি কান পাতি
যদি সে ফিরত পায় তার পুরানা ভাষার গান!
সোয়াশ বছর আগের কোন কুমারের হাতের আঙ্গুল
যদি বাজে তার মাটির কলিজায়!

মফস্বল শহরে আইসা বাত্তিটা কিছুদিন খাওয়ার ঘরের
তাকের এক কোনায় বইসা থাকে কাচুমাচু
কেমন একটা সাবঅলটার্ন সাবঅল্টার্ন ভাব!
সেই ভাব আরো বাড়ে বড় শহরে আসার পর
যেন সাথে আইসা বিরাট অন্যায় কইরা ফেলছে!
যদিও কোনদিন শক্ত হয় নাই
আমাদের নরম চোখ।

যতদিন আমার মা চলাফেরা করতে পারত ততদিন
দিনে একবার দাদীর কুপিটারে যত্নে মুছতো সে
মাঝে মাঝে কেরোসিন ঢালতো
নাইলে নাকি তিরাসে তার আত্মা শুকায়া
একদিন ফাইটা যাইতে পারে।

আমার মা এখন বিছানায়
আমি মাঝে মধ্যে মুছি দাদীর বাত্তিটারে
দুর্লভ কেরোসিন জোগাড় কইরা ঢালি
বছরে এক কি দুইবার, উপলক্ষের টানে।

মাঝে মধ্যে আমার ঘরে লেখক-শিল্পীরা আসে
জিগায়, বাত্তি এইখানে কেন, যাদুঘরের মাল!

বলি, এইটার আলোতে আমি পড়ি
ওরা হাসে, হাসতেই থাকে।

হাসুক!
আমি তো নিজের চোখরে জানি, অন্যের চোক্ষেরেও
সব আলোতে সব লেখা পড়া যায় না।

কোনো কোনো মন খারাপের দিন মনে চাইলে
আমি দাদীর কুপিটা জ্বালাই
একলা নিজেরে পড়ি তার অনচিনা আলোতে।


ঘুমের জন্য রোদন


নিজেরে শোয়াত রাইখা আমি উইঠা পড়ি
ঘুমের আকালের জঙলা ঘাসে
না ঘুমায়া তাকায়া থাকি কিছু ঘুমের দিকেই
যদি সে ধরা দেয় শেষ রাইতের দূরান্তের উঁশ।

উঁশের সওয়ারেরা দূর দিয়া ঘোরেফিরে,
যেন-বা বাঁশতলার জোনাকি
কতকটা জাহির হয়া বাতিনে গড়ায়
হয়তো থাকতেছে কোনো কুয়াশায় ধানের হাওড়ের নিয়ড়ে।

এই দেইখা আমি তো ভাবতেছি পাখি হইলে উইড়া গিয়া
……………………….. উঁশের ভিতরে ডুবতে পারতাম
কাতর অঘুমা চোখ নিয়া কিছুকাল থাকতাম অফুরন্ত ঘুমের অতলে।

পাখি না হইয়া কেন হইছি আমি পাখির পালক!
মাতৃপাখি যারে ছাইড়া যায় আনমনে নাডানাল ক্ষেতে।

ঘুম তারে দেখে দূর হতে
যেন ভাবে, ত্যাজের বেদনা নিয়া থাকুক সে কিছুকাল একা একা
পৃথিবীর আরো সব অ-ঘুমা মানুষের অবিরাম জাগ্নার ভিতরে।


একুশ শতকের দুই বাঙালির আলাপসালাপ


ধরেন যে, দুর্বায় চিত হইয়া শুইয়া আমি যখন দেখি নীল আসমান
আপনি কইলেন ‘দিকদিগন্তে শুভ্রনীলাকাশ’।
এই কথায় আমার আসমানে কালিঝুলি, রৈদ মনমরা
আর আপনে বিদ্যুতের খুঁটিত শুভ্রনীলাকাশ লটকায়া
ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ… কুড়ির শতক পার হয়্যা যান আজব বাজারের পথে
জঙলি ফুলের বাঁসে মাতাল বাংলা কথাডা কিন্তু আমার শুরুই হইল না।

আমার পায়ের নিচে মাটির উম, কার্তিকের বাঁস,
আপনি কইলেন ‘পদতলে মৃত্তিকর ওম্, শস্যের ঘ্রাণ’
যেই কথা আমার না, যেই কথায় বাঁস মায়া কিচ্ছু নাই
সেইসব কিতাবী কথা আমি শুনি আপনার জবানে।
শুনতে শুনতে আমি বিলপাড়, কাইমের রঙিন পাঁখ হারায়া ফেলি
ধানক্ষেত জঙলিফুল, রাখ্খোয়ালের আনমনা বিচ্ছেদী গান-
আহা এই বাংলাদেশ-আমি বেবাকই হারাই।

আর আপনি কিতাবে সওয়ার পার হয়্যা যান
এই বাংলাদেশের খাল-বিল-গাঙ, কচুয়া জমিন
আর কিতাবের দূর দেশে একখান ‘বাঙালি’ চোতা লটকায়া
‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো…’
অথচ আষাইঢ়্যা চান রাইতের নিশা কিবা
বাঁসমতি ধানের কথাডা আমার কওয়াই হইল না।


মন খারাপের আগে


মন খারাপের আগে
নিজেরই ভিতরে কিছু বাড়তেছি গুনগুন গান
দূরের অনচিনা সুর।
আমার মুখরা সময়রে কেউ তাড়ায়া নিয়া গেছে
এইখানে জমতেছে না-আসা সামনের কতক
বোবা কালা দিন,
আমারে ছাড়ায়া তাতে নামি দোনামোনা।

যেসব মুখের কাছে ছড়ায়া ছিটায়া বাঁচা
বিছরায়া দেখি তারা সরতেছে কেবল
যেন বস্তু থাইকা দৃশ্য সরতেছে তফাতে
মুছতেছে বস্তুর সীমানা।

মন খারাপের পরে
আমি যেই দৃশ্যের শরিক
সেইখানে সময় যেন বা এক দুঃখের গান
চাইরদিকে।

আমি সেই জনসমুদ্রে
একফোঁটা নামছাড়া অচিন বেদনা
নিজমনে ফুইটা আছি ধুতরার ফুল!


পোষাক কারখানার মেয়ে


তার হাতে লোহাগন্ধ— মেশিনের, সুঁইয়ের
দিনের রুটিনমত টালি খাতার অসহ্য ঘন্টাগুলি গোপনে গোপনে
খায়া গেছে তার পিঠের মান্ডুলা, উন্মুখ যৌবন।

সন্ধ্যায় ফিরন তার কবরের চেয়ে কিছু বড় স্বপ্নে
বস্তির দশ বাই দশ সার্কাসের ঘেরে

সে ফিরে অন্য কোনোখানে
একটা বাড়িরে হাঁটায়া নিয়া বসায় কোনো পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে
বানোয়াট উঠানে গোপনে কয় পাও গিয়া
কাঁঠালের গলাগলি হয় একটা আমের গাছ
তার উপরে সে আঁকে ভরা পুন্যির চান

তারপরে সে হাঁটে ঐ চানপশরে
খালি হাতে শুনে রিনিঝিনি চুড়ির গান
সে ফিরে পাকনা ধানছড়ার গন্ধের কাছে।

তবু রাতের ঘুমের মধ্যে কিবলামুখি মউতার লাশের মত
তার মুখ ঘুরে যায় পোষাক কারখানার দিকে।


রাইতের আগে


সন্ধ্যার তারাদের নিচে একটা গান বান্ধনের আগে ভাবি
দূরের তারার আভাস এইখানে থাকতে পারে
গতহওয়া রৈদের টকটকা রঙের মধ্যে
যাওয়া আসা করুক আগামী কাইল ও
তাহার পরের আরো যত দিন

হাতের কাছে জঙলার ঘাসফুল, কয়গোছা উজাউড়ির মৌজ
কিছুটা লাগলে ভালো
তোমার জানালায় আমরার না-ফোটা জোছনা
কতক উঠতেই পারে এইখানে রক্তিপুন্যির চানে
তাতে মোটামুটি একটা গড়পড়তা জীবন আঁকা যায়।

শেষে দেখি লেখছি নিজেরই কিছু ছায়া
তাতে আসরের ওয়াক্তের বিলাপই মূল রঙ
যেন লেখা হইছি আমি একটা দু:খের গান
সন্ধ্যার নিরাবেলি মনে!


আম্মা হাঁটতেছে নির্বানের দিকে


আমরা দুই শীত আগের কোন বিকাল আর
এই সন্ধ্যার মাঝের দূরত্বের দিকে তাকায়া থাকি
আমি আর আম্মা,
যখন এই বাড়ির চাইরদিকে হাঁটতো তার পাও
ঘাস ও মাটির সাথে অবিরমা কথা বলতে বলতে।

এখন তার পাওজোড়া চেয়ারের সামনে নিশ্চুপ
দুনিয়ার কত কত পথ হাঁইটা আসার পরে
আমি যার কতক দেখি কতক দেখি না

দুই জন চা খাইতে খাইতে দুই রকম কথা বলি
আমার মনে হয় বাড়িটা ঠিকঠাক করে
আরো চারাগাছ লাগানো দরকার
যাতে আগামী বসন্ত-বরষায় এবং
তারও পরের শীত-গ্রীস্ম-বরষায়
গাছপালার মাঝখানে জঙ্গুলে আমেজ কিছু থাকে
আমার উঠতি বয়সের চাইরোদিকে।
আম্মা অতীতে আকার পাওয়া কোন উঠতি সময়ের কথা বলে
যেখানে আমরা ভাইবোন কয়েকটি চারাগাছের আদলে
তার বাগানে প্রতিদিন একটু একটু বাড়ি।
আমরা এইমিসিল দুইরকম কথা কই দুইজনে
কথা আর ভাবনার মধ্যে একজন আরেকজনরে
অনবতর হারায়া ফেলতে থাকি।

দেখি আম্মা প্রতি দিন একটু একটু করে কমতেছে,
তার চামড়ায় ভাঁজ বাড়ে আর ভাঁজের ভিতর
বড় বড় দিনগুলা কুঁকড়ায়া একফোটা হয়্যা যাইতে থাকে
তার সেইসব উতলা দিন।

তার ক্লান্ত পাও জোড়া
চেয়ারের সামনে নিশ্চুপ দাঁড়ায়াই থাকে।
আমরা ভাই বোনেরা যেন নিজেদের সাথেই বলাবলি করি—
আগামী শীতে আম্মা আর বাঁচতে নাও পারে,
যেমন বলছিলাম এই শীতে আর তেমন হাঁটতে পারবে না;
যেন ভাবনার মধ্যে আম্মারে অন্য কোন সইন্ধ্যার ভিতর
ঠেইলা দিয়া আলাদা কইরা ফেলতে চাই আমরা।

আমি তার চামড়ার ভাঁজ, আড়ালের কুঁকড়ানো দিনে উঁকি দিতে
তার দিনের আলোতে গিয়া হাজির হই
সেইখানে আম্মা যেন একটা চলন্ত বটগাছ
আমরা ভাইবোন তার ছায়ায় ছায়ায় ঘুরতেছি।

আম্মা তাকায়া থাকে দূরের উঁশের দিকে
সইন্ধ্যার নি:স্বতায় সওয়ার হয়্যা তারা রওয়ানা হইছে
আমাদের কাল্পনিক বিল পাড় থাইকা,
বিকালের সরালির বেদম গানগুলি বিলপাড়ে লুকায়া রাইখ্যা
গাঁয়ের দিকে আসতেছে মওতা বাড়ির মহড়া নিয়া।
আম্মা তার লাঠিটার দিকে তাকায়
আমি হাত বাড়ায়া তারে দাঁড় করায়া দিই লাঠির উপর।

আমরা দুইজন হাঁটি
আম্মা ঘোলা চোখে তাকায় দূরের দিগন্তে
একখান লাঠির ভরসায় আমি তার হাত ছাইড়া
সবজি খেতে দাড়াই,
একটা লাউ কুঁড়ির সবুজ লাউ হয়ে উঠার
নিশ্চিত সম্ভাবনার সাথে যখন আমার বেশি মিল
দেখি আম্মা তার লাঠির উপর ভর দিয়া আস্তে আস্তে
বিলপাড়ের কুয়াশার দিকে হাঁটতেছে,
যেন নির্বানের দিকে।


গণঅভ্যুত্থানের পরে


গণ অভ্যুত্থানের পর আমরা
ফুলার রোডের নিরালা ফুটপাতে বসি
শহীদ মিনারের সিড়ি পার্কের বেঞ্চিতে বইসাই থাকি,
যেন কিছু একটা ঘটবে।

এইখানে আপাতত গুমঘর গুলিবৃষ্টি কাঁদানে গ্যাস নাই
চাপাতি হকিস্টিক বুটের আওয়াজ নাই।
তাই আমাদের গানগুলি যতেœ পকেটে রাখতেছি,
রাষ্ট্রমঞ্চে ভিনদেশি পুরাণের আখ্যান
আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেষ হইলে পরে
মনদিল ঢাইলা দিয়া দুএকটা গাইতে চাই
জনতার আসরে।

আমরা টুকটাক চিনা বাদাম খাই, মামার লাল চা খাই
ভাবি দুনিয়া বদলায়া গেছে, পুরানা দিন শেষ।

চাইরদিকে চিনা দৃশ্যগুলা আবার আঁকা হইতেছে চুপে
গলির কুকুর ফিরত, চাঅলা বসছে আগের ভাঙ্গা বেঞ্চিতে
কোনোখানে শানানো ক্ষুরের ফলায় রৈদ—
আমরা দেইখাও দেখি না।

ছোটবেলা আমাদের সব কথা শেষ হওয়ার পর
দাদীর কিস্সার কথা শুরু হইত
যেখানে রাক্ষসের মউতের পর
নিশ্চিত সুদিন আসবেই।
এইখানে দিন মাস
কেবল লম্বা হয় অজানা পথ থাইকা পথে,
তার জায়গায় জায়গায় ঝইরা গেছে
আমাদের সোনার ছেলেরা।

তখন কার্তিকের মনখারাপ আলোয়
জারুলের সবুজ পাতায় লালরঙা ছোপ দেইখা মনে পড়ে
দুনিয়াতে মাঝে মধ্যে গণঅভ্যুত্থান হয়
এবং প্রত্যেক গণঅভ্যুত্থানের পর
মানুষ আর মানুষের আশা একলগে
পার্কে শহীদ মিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতে বসে,
বইসাই থাকে—না-হাঁটা পথের দিকে
যেন কারো, কোনো কিছু ঘটবার অপেক্ষায়।

এইরকম বুকফাটা নিরবতার মধ্যে
অনন্ত অপেক্ষারও একটা অর্থ থাকার কথা,
আমরা হয়ত সেইটা পড়তে পারতেছি না!

 

নোট: লেখকের নিজস্ব বানানরীতি অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

ফয়েজ আলমের চিন্তার ধরন ও রোখ প্রচলিত সাহিত্য ধারা থেকে ভিন্ন। আমাদের মনোজগতে উপনিবেশি প্রভাব চিহ্নিতকরণ ও কাটিয়ে উঠার কৌশল রচনা করে এবং ব্যক্তি ও সমাজের উপর নানামুখি হেজেমনির রূপ ও উৎস চিনিয়ে দিয়ে তিনি আমাদেরকে স্বাধীন চিন্তার পথে এক ধাপ এগিয়ে দেন।

ফয়েজ আলম তার কবিতায় মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তাঁর কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দশের উপর।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।