শুক্রবার, অক্টোবর ৪

নির্বাচিত দশ কবিতা : সৈয়দ তারিক

0

অনুষঙ্গ


কড়িকাঠে দোলে পাকানো দড়ি
………………..মটকানো ঘাড়
…………………………….ঠান্ডা শরীর

রেললাইন ডাকে
……………খণ্ড শরীর
…………………রক্তের স্রোত
……………………….চর্বিমাখা

নাইট্রাজিপাম
……………ধারালো ছুরি
…………………দাউ দাউ জ্বলা
……………………….আগুন আগুন

মরফিন
…….আহ্ মরফিন
……………..আহ্ মরফিন
……………………আহ্ নিমজ্জন

ভূতুড়ে চাঁদের ছড়ানো কাফন
……………গোরস্থানের অন্ধকার
…………………….শীতল ঘুম
…………………………..নদীর অতল গভীর জল

রেললাইন ডাকে
………….কড়িকাঠে দড়ি
…………………..রেললাইন ডাকে
…………………………স্টেনলেস ছুরি
………………………………..রেললাইন ডাকে
…………………………………………সিডেটিভ বড়ি

শাদা জ্যোৎস্নায়
………….ছড়ানো কাফন
…………………..ভূতুড়ে চাঁদের
…………………………….হিংস্র ইশারা

রেললাইন ডাকে
………হেরোইন ঘুম
………………রেললাইন ডাকে
……………………..এনড্রিন ঘুম
………………………/……..রেললাইন ডাকে
……………………………///……..সায়ানাইড ঘুম

রেল-রেললাইন
………রেল-রেললাইন
………………রেল-রেললাইন।


দি স্যাটানিক ভার্সেস


আমার কলম নিয়ে শয়তান পদাবলি লেখে
দেখে বেশ আনন্দ পেলাম,
‘কিন্তু বাছা’, বলি তাকে, ‘মনে করে চুকিয়ো কালির পুরো দাম।’

এ-কথা শুনে সে হো হো হেসে উঠে টেপে এক চোখ,
তারপর শূন্যে মিলে যায় :
আমার স্বাক্ষর দেখি কাগজের পাতায় পাতায়।


অপ্রকাশের ভার


অবিকল আমার মতো একজন লোকে
বলেছিল যেসব কথা, বলে নি আসলে;
সুগোপন দৃশ্য ছিল তার দুই চোখে
চোখ দুটো অন্ধ হলো সব ফাঁস হলে।

আসলে হয় নি প্রকাশ, তবু প্রত্যেকে
ভেবেছে বুঝে ফেলেছে সংকেতলিপি,
আজও তো বুঝল না কেউ, এই ক্ষোভ থেকে
একটু ঢেলেই দ্রুত এঁটে দিই ছিপি।


প্রণতি


আমি ছিলাম মগ্ন আঁধারের বস্তুপিণ্ড;
তুমি আমাকে তুলে আনলে আলোয়
আর সঞ্চার করলে প্রাণ :
প্রভু, তোমাকে প্রণাম।

আমি ছিলাম আমাতে লিপ্ত অহর্ণিশ,
অথচ আমার ছিলাম না আমি;
আমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছ তুমি :
প্রভু, তোমাকে প্রণাম।

চিরকাল আকুলতা ছিল প্রেমের জন্য,
অথচ কেটেছে দিন নিষ্করুণ অপ্রেমে;
প্রণয়ের যৌবরাজ্যে আজ আমার অভিষেক :
প্রভু, তোমাকে প্রণাম।


অগ্নিশুদ্ধি


পুড়ে যায় রোম নীরোর বাঁশির শব্দ বাতাসে ভাসে,
সীমাহীন দূরে শুধু চেয়ে রয় আকাশে অরুন্ধতী;
কতটা পুড়লে বিশুদ্ধ হয় বলতে কি তুমি পারো?
ও আগুন, তুমি প্রসন্ন হও ইব্রাহিমের প্রতি।

কোষের দেয়াল পুড়ে পুড়ে যায় কেন্দ্রীণ ওঠে কেঁপে,
স্নায়ুর শিকলে পড়ে টান, বুঝি নামছে জীবনে যতি;
কতটা পুড়লে বিশুদ্ধ হয় বলতে কি তুমি পারো?
ও আগুন, তুমি প্রসন্ন হও ইব্রাহিমের প্রতি।


তুমি অলকায় নাই


রমনা পার্কে ফুটেছে এখন প্রথম কদম ফুল
প্রথম নেমেছে ঢল;
চোখে-জমে-ওঠা মেঘ গলে গিয়ে
ঝরল দু ফোটা জল।

জুড়িয়ে গিয়েছে পেয়ালার কফি
সিগারেট পুড়ে ছাই,
আষাঢ়ের আজ প্রথম দিবস—
তুমি অলকায় নাই।


অপর


এটা আমি নই, এটা সৈয়দ তারিক,
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি;
সে হাঁটে নগরে আর নগরের অনেক আড়ালে
আমি তার বয়ে যাওয়া দেখি।

সৈয়দ তারিক এটা নয়—
শূন্যতা ধরেছে আকার;
আমি তার হয়ে ওঠা দেখি
নিভে যাওয়া দেখি আমি তার।


গুগল


গুগলের হাত ধরে ছুটে চলি আন্তর্জালে,
কাকে যেন খুঁজে ফিরি সার্চ ইঞ্জিনে;
সে আমাকে চেনে নাকি? সাইবার স্পেসে
পারব কি নিতে তাকে চিনে?

কাকে আমি খুঁজে ফিরি? সে আমাকে খোঁজে?
আছে সে কি সামাজিকতায়?
ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, আরও অজস্র ডোমেইন…
গুগল, দোহাই, বলো সে আছে কোথায়?


পরিচালক


আমাকে নামিয়ে দিয়ে নাম ভূমিকায়
ঠোঁটে ঠোঁট মিলছে যখন
ঘোষণা করেন তিনি : কাট্।

আমিও ভুলেই যাই— প্রায়শই ভুলে থাকি— আছি অভিনয়ে;
ভুলি : পরিচালনায় রয়েছেন তিনি;
নায়িকার হাত ধরে চোখে চোখ রেখে মনে হয় :
জন্মান্তর হতে তাকে আমি চিনি।

তারও চোখে জ্বলে প্রেম, তারও ঠোঁটে অবিকল হাসি;
ভুলে যায় সংলাপ পাঠ;
মেঘের ওপার হতে গম্ভীর বজ্রের স্বরে
চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি : কাট্।


যখন আমাকে হত্যা করা হয়


যখন হত্যা করা হয়, তখন অমরতা হয়।

কাফন ঝকমক করে ওঠে রঙধনুর বর্ণিল বিভায়।

নিন্দাগুলো হয়ে ওঠে মেঘমল্লার, যা কফিনের উপরে অবিরল অমৃত বর্ষণ করে।

সমাধিপাথরে ভেসে ওঠে ঝলমলে চেহারা।

শোকের ক্রন্দনগুলো আনন্দস্তোত্র হয়ে যায়।

যখন আমাকে হত্যা করা হয়, আমি তখন আমিহীন অনন্ত অপর হয়ে যাই।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১০ আগস্ট, ১৯৬৩; ঢাকা। পেশা : মুক্ত। প্রকাশিত বই : কবিতা— ‘ছুরি হাতে অশ্ব ছুটে যায়’ [নিত্য প্রকাশ, ১৯৯৬] ‘মগ্ন তখন মোরাকাবায়’ [মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৯] ‘নাচে দরবেশ মাস্ত্ হালে’ [সাঁকোবাড়ি প্রকাশন, ২০১১] ‘আমার ফকিরি’ [সুফিবাদ প্রকাশনালয়, ২০১১] ‘ঊনসন্ন্যাসী’ [ঐতিহ্য, ২০১৫] ‘আত্মায় ছিল তৃষ্ণা’ [বৈভব, ২০১৯] ‘ছুরি হাতে অশ্ব ছুটে যায়’ (বর্ধিত সংস্করণ) [উড়কি, ২০১৯], ‘আমার ফকিরি’ (বর্ধিত সংস্করণ) [বৈভব, ২০২১]। প্রবন্ধ— ‘সাহিত্যের আলাপ’ [বাঙ্গালা গবেষণা, ২০২০], ‘সুফিবাদ ও সাহিত্যের মোহনা’ [বাঙ্গালা গবেষণা, ২০২১]।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।