শনিবার, জুলাই ২৭

নোংরা নোংরা বাতাস বহিছে ভবে ও অন্যান্য কবিতা : রুহুল মাহফুজ জয়

0

নোংরা নোংরা বাতাস বহিছে ভবে


কান্নার বেপারি ওহে! তোমার বোতলে ভরে নাও
সমুদ্রের সেই বউ, মৃত্যুর ধীবর
আর যত আছে বিষাদের পারাপার।

 

নীল সমুদ্রকে লাল দেখা চোখ দু’টি তুমি দিয়ো
……………………………..নাকো অন্ধ কোরে আর।
কত-শত ইলিয়াস
ফেলে দিলে অন্ধকারে, কূপে—
তারা ফিরে নাই অশ্রুবিভোর দেশের ফ্যাসিবাদে।
অথচ জ্যোতিকাবনে
ঠাট্টার অধিক খাট নড়ে, ন’তলার ফ্ল্যাটে ঢুকে
সুবিনয় মাছি আলুথালু ত্বকে পেয়ারার ঘ্রাণ
………………………..শুকাবার চিহ্ন রাখে।
কোমরের বাঁকে বিছা নাভির পাহারাদার হয়ে
আছে যেন সান্ধ্যঘুমে—
নীলাভ গোধূলি নেমে এসেছে মুখর স্তব্ধতায়।

 

রক্তিম দৃশ্যের জন্মে
লাজ খুলে যাবে ফের—অসতর্ক আলোর সংগীত
তুমি শুনতে পাবে অই হারানো চোখের মর্মরিত
আঙিনায়—দৃশ্য থেকে দৃশ্য বদলে নেবে সওদাগর—
বাণিজ্যের এই রীতি
শায়ার আগল থেকে শাড়ি খুলে নেবার ভঙ্গিমা—
জগতের চারিপাশে পোশাকীয় সেই কু-কৌতুক
…………………………………..ন্যাংটারূপে তালি দিচ্ছে।

 

অথচ বাণিজ্য শেষে
আমাদের কান্নাগুলি নুনের প্রতিমা হয়ে আছে।

 

**
অতটা সহজ ছিলো না পরাজয়ের কোলাহল
যতটা ধনুক হতে তীরের বিচ্ছেদে কাঁপে হাত—
হুট করে ফিরে এলে পাবক-স্পর্শের হিমজল
মরণ কুড়ায়ে মালা গেঁথে আমি কাঁদি সারারাত।

 

হেরে যেতে হয় বলে কতবার নিজেরই শব
আহার করেছি উৎসবের ভাণে, নাচের মুদ্রায়,
সে হিসাব ভুলে গেছি—শুধু নটীদের কলরব
টঙ্কারূপে ফিরে এসে আমারে জাগায় পুনরায়।

 

আমি তো খেলিতে নামি নাই এই মাংসের বাজারে,
মুখ থেকে মুখ খুলে বসি নাই সাজায়ে দোকান—
পানি খুঁজে কালাহারির হস্তিনাদলের মাঝারে
ঢুকে বয়ে আনি নাই হাজার মাইলের ক্লান্তগান—

 

তবু শালা সওদাগর, যুদ্ধসহিসের কারবারি
নগর-রাত্রিতে আমারেই ভাবিতেছে বেশ্যাবাড়ি।

 

**

থলথলা গোশতের ঢেউ নাচে
বার্কিং ডগের সুরে,
জগৎ ব্যাপিয়া চুদিয়া বেড়াও
ওয়াবিসাবি বন্ধু রে—
বিছানার তল থিকা বাড়ইলে
জাদুটোনা কবুতর,
ডানার অনেক ভাঙার ছিলো তো—
নিদে গেলে হাবা বর।

 

মাইন্ড ইয়োর গ্রেস সেনোরিটা
মাইন্ড ইয়োর ঠোঁট,
কথারা চুমুর চেয়ে গাঢ় লাল
বলে যদি রতিনোট।
মদিরা গোশতে খুনির চেহারা
এঁকে নিলে ভালো হয়,
প্রেমের অধিক সরল খুনের
রেসিপি জানে না ভয়।

 

গন্ধ পাও না পোড়া চামড়ার,
বিধুমুখর মরমী?
সাইলেন্ট কিলারের পাশে বেঁচে
আছে তো করুণ মমি।
ডুবো। ডুবে যাও মাতালের ভারে,
মাংসের হই-রই—
দুনিয়া চুদেই যাবে অহেতুক
তোমারে, পাবা না থই।


কবিকে ঘুমাতে দিয়ো না, সুপর্ণা


শীতকাল কী ঘুমায়? ঘুমায় এসে রাতের আলাপ শীতল-গীতল শরীরে, রিপুতাড়না খোলস পাল্টে সাপের চেহারায় গ্রীষ্মাব্দি অপেক্ষা করে—ঘাম ভাঙানোর কলকারখানায়?

এত বিবাহ ক্যানো বাজে!
এত রোশনাই ক্যানো ঝাড়বাতিতে!
এত শিশু ক্যানো লাথি মারে বইন, তোমাদের পেটে!

শীতকাল কী কেবলই তারকোভস্কির কুয়াশা, আবছা পূর্ব-ইউরোপ, গমখেতের পাশে বিহ্বল সকাল, ধীরে ওঠা সূর্যের সঙ্গে ঘুমভাঙা কিশোরীর অলস চোখ, টার্কির লেজে ঝুলে থাকা রক্তাভ ঊনিশশো চুয়াল্লিশ, জেলানের সিনেখামারে বেড়ে ওঠা ঠান্ডা চরিত্রগুলি?

গোসলখানা থেকে এত ধোঁয়া ক্যানো বের হয়!
এত চিকেন ক্যানো বেচা হয় বাজারে!
এত ক্যানো সর্দি-জ্বর, অ্যাসপিরিন, ক্যাফেইন,প্যারাসিটামল!

শীতকাল কী বন্ধ জানালার ওপাশে টিমটিমা বাতির অভিপ্রায়, ব্যতিচার ছেড়ে আসা কাঁপা-কাঁপা ফ্লুরোসেন্ট, গুলি খাওয়া খরগোশের আত্মা, ওলান শুকানো গাভীর ডিপ্রেশন, দুঃখী ম্যাপলপাতা, শুষ্ক ত্বকের ভ্যাজলিন?

শালের তলে এত ক্যানো কেঁপে-কেঁপে ওঠে হাত!
এত তীব্র ক্যানো জন্মনিরোধক বড়ির মৌসুম!
এত ক্যানো পিঠা-পায়েস, গোশত-রুটির জিব!

শীতের বাইরে জননের ঋতু যদি নাই—প্রেমিক কবিকে ঘুমাতে দিয়ো না, সুপর্ণা!


দেহপোকা


নিজস্ব দোজখ পেরিয়ে প্রেমিকের কাছে ফিরে আসে নবী আইয়ুবের দেহপোকা। তোমার বুকে বসে আছে চাকুর অহংকার, সূর্যরশ্মির বিপরীত আয়নার তেজ।

আহা ছুরি! আহা আয়না!

কাটার আগে ধারালো হবার লোভ প্রতিবিম্বে এসে ক্রমশঃ ঝাপসা প্রতিমার মুখ। তিরতির কম্পমান হারিকেনের ছায়ার নিচে শাদ্দাদের বেহেশত ভেঙে পড়ার শব্দ শুনি—আজরাইল ফেরেশতাও জানে, আমি কোন বেহেশতের দিকে যেতে যেতে পথ হারিয়েছিলাম।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম  ৩১ মার্চ, ১৯৮৪, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ। প্রকাশিত কবিতার বই : আত্মহত্যাপ্রবণ ক্ষুধাগুলো (২০১৬, ঐতিহ্য) কালো বরফের পিস্তল (২০১৮, জেব্রাক্রসিং) বিদ্যুতের প্রাথমিক ধারণা (২০১৯, তবুও প্রয়াস, ভারত), মান্দার ফুলের সখা (২০২১, ঢাকাপ্রকাশ)। প্রকাশিত গদ্যের বই : এ টু জেড বিশ্বকাপ (২০১৮, ঐতিহ্য)। সম্পাদিত গ্রন্থ : কূটালাপ (২০১৮, ঐতিহ্য)। এছাড়া কবি ফারাহ্ সাঈদের সঙ্গে তিনটি ব্রেইল বই সম্পাদনা করেছেন। শিল্প-সাহিত্যবিষয়ক ওয়েবজিন শিরিষের ডালপালা'র সম্পাদক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।