মঙ্গলবার, মার্চ ১৯

আমি শালা সিপাহী ছিলাম : আহমেদ খান হীরক

0

প্রস্তাবনা:
বিস্ময় এই যে, আমার দুই হাতের দুই ব্যাগে, এখন আছে দুই কোটি টাকা।

ব্যাপারটা অভাবনীয় নয়। এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বনেট থেকে ব্যাগদুটো বের করার পর, কেন কে জানে, নিজেকে খুব হালকা মনে হতে শুরু করল আমার। মনে হলো, রাস্তাটা তেজগাঁওয়ের ট্রাকে নাকগোঁজা কোনো রাস্তা না এটা, বরং, ওই যে কী একটা সিনেমায় দেখেছিলাম, যেখানে মঙ্গলে যাওয়ার জন্য মানুষকে ট্রেনিং দিচ্ছে, কোনো নিউটন নাই, শুধুই ভেসে চলা…রাস্তাটা যেন তেমনই এক আকর্ষণহীন…আমি একটা আপদমস্তক গ্যাসবেলুন হতে-হতে যেন হয়ে উঠতে পারছি না। কিন্তু যেকোনো মুহূর্তেই, আমি উড়ে যেতে পারি!

কী এক অদ্ভুত, ওড়াময়, এই সন্ধ্যা। আমার মতো কপর্দকশূন্য, প্রায় ভ্যাগাবন্ড প্রায় মধ্যবয়সী মানুষের কাছে দুই কোটি টাকা। এই টাকা আমার। এই টাকা আমাদের।

 

২.
শুভর সাথে আমার দেখা সাত মাস আগে, আট বছর পরে।

তার আগে আমি অনেক দিন বেকার ছিলাম। বেকারই ছিলাম আসলে জীবনভর। কিন্তু সে-সবের মধ্যে, ফাঁকে ও ফোকরে, কখনো কখনো কাজ-কামে জড়িয়ে যেতাম। প্রোডাকশনের কাজ। নাটক-সিনেমা বানানোর কাজ। কোনো টিমে আমি এডি তো কোনো টিমে রাইটার। এডি রাইটারের এমনিতে টিমে দাম নাই পাঁচ পয়সার। যা চলে সব নায়িকা, প্রোডিওসার আর ডিরেক্টরের। কিন্তু মাঝে মাঝে এইসব করে কিছু টাকা পাওয়া যেত, ফ্রি খাওয়া, কখনো কখনো থাকাও, আর কখনো কখনো শরীরও।

এরই মধ্যে চন্দ্রশঙ্খ সিনেমার নায়িকার সাথে আমার লটপট হয়ে গেল। সাধারণত লটপট হওয়া খুব কঠিন কিছু না এসবে। কিন্তু আমি যেহেতু এডি ছিলাম, ডিরেক্টর ও প্রোডিওসারকে ছাড়িয়ে প্রধান নায়িকার সাথে লপপট হওয়া টক অব দ্যা প্রোডাকশন এবং পরে টক অব দ্যা ইউনিয়ন হয়ে গেল।

এভাবেই কাটত সময়। ভালোই। কিন্তু এরই মধ্যে চন্দ্রশঙ্খ সিনেমার নায়িকার সাথে আমার লটপট হয়ে গেল। সাধারণত লটপট হওয়া খুব কঠিন কিছু না এসবে। কিন্তু আমি যেহেতু এডি ছিলাম, ডিরেক্টর ও প্রোডিওসারকে ছাড়িয়ে প্রধান নায়িকার সাথে লপপট হওয়া টক অব দ্যা প্রোডাকশন এবং পরে টক অব দ্যা ইউনিয়ন হয়ে গেল। গণি মিয়া ভালো ছেলে, তবে প্রোডিওসারও তো। আমাকে ডেকে ভরা ইউনিটের সামনে এমন একটা থাপ্পড় মারল কান ঝা ঝা করে উঠল বলা যায়। আমি দম ধরে তবু বসেই ছিলাম। পান খেয়েছি—মুখ লাল হবেই। অদূরেই পান বসেছিল। আমাকে থাপ্পড় খেতে দেখে বেচারা হেসেও উঠল। নার্ভাস হাসি। কিন্তু হাসি তো! মাথাতে বারুদ ছুটে গেল তখনই। আমিও ঘুরে থাপ্পড় বসালাম ভালো ছেলে গণি মিয়ার গালে। ব্যস, পুরা দেশ যেন উবুর হয়ে গেল। আমাকে প্রথমে সেট থেকে, তারপর ইউনিট থেকে, তারপর ইউনিয়ন থেকে, পারলে দেশ থেকে ওরা আমাকে বের করে দেয়। আমাকে ওরা মারতে মারতে মেরে ফেলে দেয়। গণি মিয়ার গালে হাত… গণি মিয়ার পয়সা আছে জানোস না বোক্সোদ?

তো, পয়সা যে একটা ফ্যাক্ট, এইটা পাগলেও বোঝে। আমি বুঝলাম পাগল হবার পরে।

পাওরুটি দিয়ে পাওরুটি খেয়ে ভাত দিয়ে ভাত খাওয়ার জন্য মন উতলা হয়ে উঠল। মনে হলো, গরম ভাতের সাথে যদি একটু ট্যাংরা মাছ পাওয়া যায় আমি আমার কলিজা ছিঁড়ে দিয়ে দেবো। খিদার কষ্ট যে এখনো এমন একই রকম সেটা বুঝে উঠতেই মাথাটা বনবন করতে থাকল। কিছু জিনিস কখনো বদলায় না আসলে… এর মধ্যে খিদাই বোধহয় প্রথম দিকের লাইনে থাকবে। আমি গভীর রাতে বের হতাম… হোটেলগুলোতে গিয়ে ঝোল দিয়ে ভাত খেতাম। ভাত ঠান্ডা… ঝোল ততোধিক শীতল। খেতে খেতে আমার শুধু গণি মিয়াকে মনে আসত… নায়িকার সাথে সে নিশ্চয়ই সি-ফুড ডি-ফুড ই-ফুড খাচ্ছে। আমি খাচ্ছি হাওয়া… মারা খাচ্ছি সব!

এরকম দুস্থ এক পরিস্থিতির মধ্যে শুভর সাথে আমার দেখা হয়ে গেল।

শুভর চোখ আগে বড়ো বড়ো ছিল। এখন মুখ ভরাট ও তেলতেলে হওয়ায় মুখে বসে গেছে সোফার কুশন। শুভকে চেনা যায় না। অথচ সেই বলল, আবির না, তোরে তো চেনাই যায় না! শুকায়া কাঠ হইয়া গেছোস! হিরোঞ্চি হইছোস? নাকি বাবা খাওয়া ধরছোস?

আমি বললাম, ভাত খাওয়ার টেকা নাই…বাবা খামু কি!

শুভ হাসল এবার অনেকক্ষণ। এ হাসিতে তাচ্ছিল্য হয়তো আছে, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে একটা ভরসাও আছে। ফলে শুভর গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কোনো কাজ থাকে না। শুভ সিগারেট টানে। অথচ শুয়োরে আমাকে একটা সিগারেটও অফার করে না। পুরনো বন্ধু আর যাই হোক, এমনটা হয় না। ওরা বন্ধুদের সাথে অন্তত খারাপ জিনিসগুলো শেয়ার করে। সিগারেট শেষ করে, গাড়িতে উঠে, শুভ খুব ভাবের সাথে একটা কার্ড বের করে দেয়। তারপর বলে, কাল আয়।

কিন্তু পয়সা না থাকার যে কত হ্যাপা তার কোনো ইয়ত্তা নাই। দশটার মিটিংয়ে তাই আটটার সময় বের হই। হাঁটি। কত যে হাঁটি। শীতের সকাল শ্রাবণ মাসের মতো হয়ে যায়। চুল ভিজে টুপটাপ হতে থাকে। আমাকে দেখে রিসিপশনিস্ট ঘৃণার চোখে তাকায়। আমি মনে মনে গালি দিই— শুয়োরের বাচ্চা!

শুভর অফিসে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না।

একে তো ননক্রিয়েটিভ লোক… ইঁট বানায়, সিমেন্ট গোলে, ম্যাচবাক্সের মতো বিল্ডিং তোলে আকাশে— কিন্তু পয়সা না থাকার যে কত হ্যাপা তার কোনো ইয়ত্তা নাই। দশটার মিটিংয়ে তাই আটটার সময় বের হই। হাঁটি। কত যে হাঁটি। শীতের সকাল শ্রাবণ মাসের মতো হয়ে যায়। চুল ভিজে টুপটাপ হতে থাকে। আমাকে দেখে রিসিপশনিস্ট ঘৃণার চোখে তাকায়। আমি মনে মনে গালি দিই— শুয়োরের বাচ্চা!

চাকরি একটা জুটেই যায়।

শুভর গাড়ির ড্রাইভার। আমি ড্রাইভিং জানি না এটা বলতে পারতাম জোর গলায়। কিন্তু ওই যে বলছি… পয়সা না থাকলে গলায় জোর থাকে না; কখনো কখনো গলাই থাকে না। ফলে, শুভ যখন বলে, ডাইভিং পারিস না?

আমি বলি, হুম।

শুভ বলে, আমার একজন বিশ্বস্ত লোক লাগবে। আমার সবগুলা ড্রাইভার তলে তলে আমার বউকে ইনফরমেশন দেয়। কই যাই, কার অ্যাপার্টমেন্টে, কার বিছানায়— সাওয়ার পোলারা সব বউরে বইলা দেয়!

‘আচ্ছা।’

‘এখন থেকে তুই থাকবি সাথে সাথে…তুই হবি আমার ডাইন হাত। চিন্তা করিস না, তোর ফায়দা করায়া দিমু…’

তা ফায়দা যে কম হলো কিছু তা কিন্তু না!একটা গাড়ি, একটা বন্ধু কিন্তু মনিব এবং তিনশ পয়ষট্টি দিনের নিশ্চয়তা।

বারে যাই, পার্টিতে যাই… শুভ আমাকে ড্রাইভার হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দেয়। তাতে আমার ভেতরে ভেতরে লাগে ঠিকই; কিন্তু বাইরে বাইরে জিভটা বের করে দিই। দাঁতটা খিঁচিয়ে রাখি। যার বেশি পয়সা থাকে তার সাথে আর যাই হোক কম পয়সার বন্ধুত্ব হয় না। ভালো করে দেখলেই বোঝা যায় ওখানেও আছে প্রভু-ভৃত্যের বিষমতা। তাহলে আমার কী? —আমার হইল পয়সা!

শুভ আমার বেতন ঠিক করেছিল মাসে তিরিশ হাজার। বেশিই কিন্তু। গণি মিয়ার ড্রাইভার পেত বিশ হাজার। তাছাড়া আমার তো কোনো অভিজ্ঞতাও নাই। এই তিরিশ হাজারের তিরিশই বলা যায় পকেটে থেকে যেত। খাওয়া-দাওয়া শুভর সাথে, কখনো কখনো থাকাটাও। সে নিজে জামা-কাপড় কিনতে ঢুকলে আমার জন্যও কিছু না কিছু কিনত। ওর একটা বউ ছাড়াও দুইটা বান্ধবী ছিল। ওদের সাথে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলে মদ খাওয়ানোর নাম করে আমাকে বকশিসও দিত। কখনো হাজার…কখনো কখনো দুই হাজারও।

আমি গ্যালাক্সিতে ঢুকে স্পিরনফ উড়িয়ে দিতাম। তারপর আধাঘণ্টা শুভর বংশকে গালাগাল করে ঘরে ফিরতাম। তাতে নেশা বেশি হতো, রাগও কমে যেত। সকালবেলা আবার গলায় ঢুকিয়ে নিতাম শুভ কামনার মালা।

 

৩.
দিন এভাবেই কেটে যেতে পারত। যেহেতু এভাবের চেয়ে ভালো কাটানোর কোনো উপায় আমার জানা ছিল না।

পকেটে পয়সা ছিল, চেহারায় জেল্লা ছিল, গাড়িও ছিল একটা সারাদিনের মতো নিজের কাছে। তবে মানুষের যে কী কী লাগে সেটা ঠিক মানুষই কি বোঝে! এসব থাকতে থাকতে কেমন যেন ক্লান্তি চলে আসতে শুরু করল। আর তখনই আমি আবিষ্কার করলাম রুবিনাকে।

রুবিনা, শুভর বউ।

সুন্দরী বউ, বলাই বাহুল্য। শুভ যে আমার শুধুই মনিব না, আমার বাল্যবন্ধুও…এটা আমি ভুলতে বসেছিলাম। কিন্তু রুবিনাকে আবিষ্কার করার পর আবার তা মনে এলো। এবং আসার পর মনে হলো বন্ধুর ভাগ্য এবং বউভাগ্যে আমার ঈর্ষা করা উচিত।

অথচ আমি ঈর্ষা করলাম না। আমি রুবিনাকে ভালোবেসে ফেললাম।

এ কথা ঠিক বোঝানো মুশকিল যে রুবিনাকে আমি কীভাবে ভালোবাসলাম! আর কেনই বা ভালোবাসলাম!

আমি শেষ ভালোবেসেছিলাম ক্লাস নাইনে। সোমা নামের একটা এইটের মেয়েকে। ছিপছিপে গড়ন ছিল তার। আলুথালু চুল। বাঁশের কঞ্চির মতো শরীর। পরে কতবার ভেবেছিলাম ওই শরীরকে ভালোবাসা যায় কীভাবে? কিন্তু ভালো তো আসলে বেসেইছিলাম!

তারপর, যত মেয়ে এসেছিল, জীবনে ও না-জীবনে তারা সবাই তাদের শরীর নিয়েই এসেছিল। তাদের সাথে কিছু দিনের যাপন… এবং কাউকে আপন না ভাবা। জানতাম তারা উড়ে যাবে, না হয় আমিই উড়ে যাব।

তারপর, যত মেয়ে এসেছিল, জীবনে ও না-জীবনে তারা সবাই তাদের শরীর নিয়েই এসেছিল। তাদের সাথে কিছু দিনের যাপন… এবং কাউকে আপন না ভাবা। জানতাম তারা উড়ে যাবে, না হয় আমিই উড়ে যাব। তাদের সাথে আমার ছিল জ্বর আর জ্বরভাঙার রিশতা।

কিন্তু রুবিনাকে দেখে আমার চকিতে সোমার কথাই মনে এলো। বড়ো বড়ো চোখ। আলুথালু চুল। আমাকে ড্রাইভারও বলল না… বলল, আবির, আপনার কথা আগে অনেকবার শুনেছি। শুভর সাথে ম্যাট্রিক দিয়েছিলেন, না?

আমি কোনোমতে বলি, হ্যাঁ।

রুবিনা বলে, শুভ আপনাকে দিয়ে তার গাড়ি চালায় কেন জানেন?

আমি মাথা নাড়ায়। রুবিনা হাসে। বলে, ও ভাবে আমি কিছুই জানি না। কিছুই জানতে পারি না।

আমি কিছু বলি না। শুধু তাকিয়ে থাকি রুবিনার দিকে। কী সুন্দর দেখতে! কী দারুণভাবে দাঁড়িয়ে থাকে!

এরপরই রুবিনা আমাকে ডাকে। মাঝে মাঝেই। প্রথমে আমি ভাবি সে শুভর খবর জানতে চায়। কিন্তু কয়েকবার তার কাছে যাওয়ার পর আমার মনে হয় শুভর ব্যাপারে আসলে তার কোনো আগ্রহই নেই। তাহলে কি আমার ব্যাপারে আগ্রহ? সেটিও ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। রুবিনা আমাকে বসিয়ে রেখে অনেক কথা বলে… কী যে সেইসব কথার প্রসঙ্গ আমি ধরতে পারি না। রুবিনা আমার দিকে তার হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, দেখেন তো… আমার হাতে কি মশা কামড়েছে?

আমি দেখি তার হাতে লাল লাল দাগ। মশারই হয়তো। রুবিনা আরও কাছে এসে হাত এগিয়ে দেয়। আমি হাত ধরি। মনে হয় আইসক্রিম। গলে যাচ্ছে। রুবিনা বলে, শুভকে আমি ডিভোর্স দিতে কতবার যে চেয়েছি। পারিনি।

আমি তাকিয়েই থাকি। হাতের ভেতর আইসক্রিম গলতে গলতে গড়িয়ে পড়ে যেতে থাকে।

রুবিনা বলে, ডিভোর্স দিলে আমি কিচ্ছু পাবো না ওর… যদি পেতাম… তাহলে কবেই ওকে ছেড়ে যেতাম!

‘কোথায়? কোথায় যেতেন?’

‘যে কোনো কোথাও। যেখানে অশুভ কিছু নেই।’

রুবিনা চলে যায়। আমার হাতে লেগে থাকে গলে যাওয়া আইস আর ক্রিম।

 

৪.
নতুন প্রোজেক্ট পাশের জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের বিশিষ্ট ব্যক্তির কাছে পাঠাতে হবে দুই কোটি টাকা। ক্যাশ।

আমি ড্রাইভার।

আমি বিশ্বস্ত।

আর এখানেই আমার গল্পটা শুরু হয়। শুভ আমাকে নিয়ে যখন বেড়িয়ে যাবে দুকোটির ব্যাগ নিয়ে, তখনই আমি রুবিনাকে ফোন দিই। দু কোটি হলে কি রুবিনা ছেড়ে যাবে শুভকে?

রুবিনা বলে, আমরা যেখানেই যাই না কেন… বেঁচে থাকলে… শুভ আমাদের ছাড়বে না!

আমি বুঝে যাই আমাকে কী করতে হবে।

 

৫.
কথা ছিল বেগুনবাড়ি থেকে হাতিরঝিলে ওঠার রাস্তাটার মাথায় রুবিনা অপেক্ষা করবে। তার গাড়ি নিয়ে। কিন্তু গাড়িটা নেই।

আমি শুভ ও তার গাড়ি ছেড়ে এসেছি। একটা খোলা রিকশায় এতগুলো টাকা নিয়ে এগিয়ে যেতে এখন আর নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই রাস্তাটা দ্রুত শেষ হওয়া দরকার। আমি রুবিনাকে ফোন দিই— কই আপনার গাড়ি?

রুবিনার খসখসে আওয়াজ— এখনো আপনি বলবা?

আমি হাসার চেষ্টা করি। বলি, কই তুই?

রুবিনা বলে, টার্ন নাও। তাহলেই দেখবে!

টার্ন নিতেই দেখি লালগাড়িটা। রুবিনার প্রিয় গাড়ি ছিল এটা। আমি একটু দূরেই রিকশা ছেড়ে দিই। দুইশ টাকার নোট দিয়ে দিই রিকশাওয়ালাকে। সে বলে, ভাংতি নাই!

আমি বলি, আমার কাছে কত টাকা আছে জানোস?

‘কত?’

‘দুই কোটি!’

রিকশাওয়ালা হেসে ওঠে। বলে, মনে মনে আমিও চাইর পাঁচ কুটি টাকা গুনি রোইজ!

আমি বলি, ভাংতি লাগব না…যা!

আমি এগিয়ে যেতেই দেখি গাড়ির পেছনের দরজা খুলে যায়। বনেটে ব্যাগ দুটো রেখে একটু দ্রুতই উঠে বসি ভেতরে। উঠতেই দেখি রুবিনা সামনে। আর পেছনে অন্য কেউ। কে… আমি তাকে চিনি না। একটা পুরুষ। দেখতে সুন্দর। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শুভ রহমানকে খুনের দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করা হলো!

আমি চকিতে রুবিনার দিকে তাকাই। রুবিনার মুখে মৃদু হাসি। বলে, আরমান, বনেটের ব্যাগ দুটো আপনার!

লোকটা হাসে শুধু। আমি কিছু বলি না। শুধু মনে হয় শুভর টুটি যখন চেপে ধরেছিলাম তখন ও বলেছিল, তুই রুবিনাকে চিনোস না… রুবিনাকে চিনোস না!

আমি শালা কাউকেই চিনি না, আমাকেও না! নাহলে বুঝতে পারতাম এ খেলায় আমি শুধু এক সিপাহী ছিলাম, পাশের সিপাহীটির মতোই।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৮ নভেম্বর ১৯৮১। দশ বছরের লেখালেখির জীবনে লিখছেন মূলত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। বর্তমানে কর্মরত একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে।

প্রকাশিত গ্রন্থ কবিতা :আত্মহননের পূর্বপাঠ (২০১০) রম্য সংকলন : যে কারণে আমি সাকিব আল হাসান হতে পারি নি (২০১৭) গল্প সংকলন : য পলায়তি স জীবতি (২০২০), সিলগালা মহল্লার ব্যালকনিরা (২০২১), কী একটা অবস্থা (২০২২)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।