বুধবার, এপ্রিল ২৪

কুসুম কুঞ্জ মাঝে আওল ভুজঙ্গ

0

আনারসের মৌসুম শেষ হয়ে এলে মরিয়মের চোখ হতে অনেকটা দুঃখ ধার করে আমি আর হাসান শুরু করেছিলাম চিতার গভীরে মানুষগাছের চাষ। হাওয়ামহল হতে মৃতবায়ুর যাতায়াত— আর মরিয়মের অস্থির আঙুল বুনে দিল মানুষগাছের বাগান— মৃত্যুর মতন দ্রুত।

মরিয়ম বা আমরা কেউ জানি না কখন শেষ হবে মানুষ ফলের মৌসুম। এই না জানার মধ্যে ঈষৎ অন্ধকার ওড়ায় স্বর্ণঝরা ছাই আর শস্যকনা। আর আমরাও এই না জানার মধ্যেই ধ্যানমগ্ন গ্রানাইট এক। তবুও লুব্ধ যাপনে আমরা কেবল আশ্চর্যজনকভাবে বৃদ্ধ হয়ে যাই। আর একদম সাদা ইউনিফর্ম পরা চপল বকের দল উড়ে যায় মানুষগাছের মাথা হতে বর্শার শুলছন্দে আশাতীত মনোরম আধারের দিকে। এসব ধারালো সান্ধ্যকালীন দৃশ্য ভালো লাগে। দৃশ্যের গভীরেও থাকে শিহরিত গোধুলী আর বুনো মোষের দল। আমাদের এই উদ্যত অভিমান আর যত থেমে যাওয়া, চোখজ্বালা, কি নামে চেনে ওরা জানি না— তবুও, দৃশ্যের বনগুলো পুড়ে যায়। বৃক্ষচিতা নিভে গেলে বুনোমোষের ডাক শোনা যায় দৃশ্যের গভীর থেকে। রোজ সন্ধ্যায়।

আনারসের মৌসুম শেষ হয়ে এলে মরিয়মের চোখ থেকে অনেকটা দুঃখ ধার করে আমি শুরু করেছিলাম চিতার গভীরে মানুষগাছের চাষ। আর এখন এই বৈশাখী রাতে মানুষগাছের বাগানে আমি হাসান আর মরিয়ম জড়াজড়ি করে শুয়ে থাকি। কল্পনা করি— মানুষ গাছে ফুল ফুটেছে রাক্ষস রঙা আর ব্যাকুল সব পাতারা চিরদিন জেগে আছে বিভ্রম আলো হয়ে। ঠিক তখনই বিপুল দুঃখকাতরতা নিয়ে মরিয়মের শরীর হতে খসে পড়ে শাদাফুলের সুর। আমরা বুঝতে পারি এই বৈশাখ মাস মানুষগাছের কেউ না। নির্জন সব সব্ধ্যায় আমাদের শ্রম দিতে হবে আরো। তবে যদি মানুষগাছে বাসা বাঁধে আতস কাচের আগুন! আলিঙ্গন আর চুম্বনের আগে আমরা জুয়া খেলি নিয়মিত— অর্ধনগ্ন থাকি। বাজি হেরে কফিনগন্ধ নিয়ে ঢুকে পরি তার ঘুঙুরের মাঝে। আমাদের তুমুল সঙ্গম মাঝে নবজাত বাছুরের উল্লাসে আসে এক ধুম্রশাদা দৃশ্যঘর। উপবনের ছত্রাক ঘিরে সে দৃশ্যঘরে উল্লাস করে যৌনগন্ধী মহিষেরা সব! আনারসের মৌসুম শেষ হয়ে এলে মরিয়মের চোখ থেকে অনেকটা দুঃখ ধার করে আমি শুরু করেছিলাম চিতার গভীরে মানুষগাছের চাষ। আর আজ বছর দশেক বাদে মানুষগাছের বাগান হতে আমরা আয় করেছি অনেক রকম দুঃখ। যে বিপুল দুঃখ জমা রেখে মাটির বাকলে আমরা নতুন করে শুরু করতে পারি নরকের আধারে তরুণী হাসির চাষ। অথচ, এত বিপুল অর্থসমান দুঃখ দিয়েই মরিয়ম কিনতে চায় আরবিক এক ঘোড়া। তাকে আমি বা হাসান বোঝাতে পারি না। গতকাল স্বপ্নে এক বুনো টিয়ার গলা চেপে রক্ত বের করেছি আমি। আর বোঝাতে পারি না আমার বুকের ভিতর নিঝুম রোগের মতন জমে আছে রাগ।

তাকে আমি বোঝাতে পারি না কেননা আনারসের মৌসুম শেষ হয়ে এলে মরিয়মের চোখ থেকেই অনেকটা দুঃখ ধার করে নিয়ে আমি শুরু করেছিলাম চিতার গভীরে মানুষ গাছের চাষ আর মরিয়ম বুঝতে না চাওয়ায় তাকে আমরা মেরে ফেলি বা ফেলতে চাই, এই মেরে ফেলা থেকে যে দুঃখ জন্ম নেয় তার নাম নাসরিন সুলতানা। এখন আমাদের কোনো কাজ নেই, আমরা অকর্মার ঢেকি। আমি আর হাসান বেকার মানুষ। আমাদের কাজ নাই টাকা নাই। আমরা আন্দোলনে যাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি। রোজ দুপুরে রমনার সবুজ ঘাসে দুজনে ঘুমিয়ে থাকি। পাহারাদারের হুইসেল বা দ্বান্দিক দর্শনে আমাদের ঘুম ভেঙে গেলে ইস্কাটন রোডে গিয়ে বসে থাকি। হাসান বলে তার ঘুমের ভেতর ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে মেয়েদের শোবার ঘর ঘাস মাটি লতা পাতা—বস্তুত যৌনকাতরতা নয়— হতে পারে তা সাবানের জল বা আমার প্রাণে এসেছিল রবি ঠাকুরের গান। আমি বড়ো দীর্ঘ শীতের দিনে ঘুমের মাঝে তোমাদের পিঠে সাবান দিয়ে দিলাম আর গেয়ে শোনালাম আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। তোমাদের ঘুম ভেঙে গেলে নিমিষে উড়িয়ে আদর্শ ম্যাজিক আশ্রমে ফিরে যাও। আমি ঘুমের মাঝে চারদিন ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে মেয়েদের শোবার ঘরে দেখি যততত্র সরীসৃপ। তিনটি ছাগলছানা ডাকছে আর ডাকছে… বিমুঢ় বাতাস গা ছমছম। হে অন্তর্নীল নিঃসঙ্গতা, হে হাওয়ার তথৈ নাচ…আমি কিছু বলি না, হাসানের কথা শোনা শেষে বলি এভাবে আর কতদিন। বা, হাসানকে কিছুই বলি না। আমি ভাবতে থাকি হাজাররকম স্টাইলের প্রেমিকা আসলে কেমন হয় তা আমি শিখেছিলাম বন্ধুর প্রেমিকা দেখে। নিজের প্রেমিকা যে আসলে কখনোই পুরোপুরি প্রেমিকার মতন হয় না এ কথাটি আমি জানতাম না উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত। অন্যের প্রেমিকারাই কেবল সুন্দর হয়, চুপ করে কথা শোনে, হই হুল্লোড় করে, হারিয়ে যায়, গান গায়, ফিরে আসে, দেখা হয়, দেখা হয় না, বিয়ে হয়, বিয়ে হয় না, শুয়ে পড়ে, আবার শোয় না। আমি নিজে মনে বলে উঠি নাসরিন সুলতানা, গোপন বেদনা আমার, সে এত সুন্দর সান্ত্বনা দেয়— আমার ইচ্ছা করে হাসানের সাথে রমনায় আর না ঘুমিয়ে আমি তার সান্ত্বনার ভাষার মধ্যে ঢুকে ঘুমিয়ে পরি। শান্ত শিশুর মতন। কিন্তু সে জানালো— সান্ত্বনার ভাষা এক প্রকার ঘর। সেই ঘরের দুয়ার অবহেলার কাঠ দিয়া বানানো। আমি প্রায়ই ভাবি— অবহেলা গাছটা কোন বাগানে? প্রায়ই আরো ভাবি— একদিন তারে বলেই ফেলব— এইসব অবহেলা গাছের দুয়ার ভাঙতে টাইম লাগবে না আমার। অথচ, বলা হলো না। হাসানকে বলি, চলো এরপর আমরা কাহিল রাত দুপুর হতে বেরিয়ে চলে যাই ছোবলভয়ের দিকে। লাউডগা ছেয়ে থাকা ছোবলভয় তলে তামাকফুল হাতে নিয়ে একা একা বসে থাকি। ভুলেও ডাকব না কাউকে বুকের কাছেপিঠে। অকুলান ভয়ের নিশ্চুপ বিকেলে ঘুম এলে কাঁদব, কাঁদব, আর মাটি ছুয়ে ঘুমাব খুব।

হাসান বলে আমাদের বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে স্বপ্নজুড়ে সহজ ঘাতকের ন্যায় হানা দেবে যত মৌনমুখ দেবীর দল। আমরা তাদেরই কাছে অনায়াসে চেয়ে বসব— নখে নখে জুড়ে দাও তুমুল যৌনজীবন আর জল্লাদপনা সঙ্গম বাসনা বাঁশিরুপে ফেলে রাখো তরুনীদলের শিরায় শিরায়— যাপনচেতনায়। সুর হোক দরদের মতন— আর টপ টপ করে ঝরে পড়া এই ঘুমের ন্যায় বেদনাহত। এরপর আমরা সুন্দর ঘুমের বন থেকে বেরিয়ে কোথায় যে যেতে হবে তা ভুলে যাব। মনে করতে চেষ্টা করব বেচেঁ থাকার কারণসমুহ। আমরা থেকে অজস্র আমি হয়ে বহুরূপ মাংসাশী সময়ে ছড়িয়ে হারিয়ে যাব। বিনা কারণে জেগে আছি, বেঁচে আছি জেনে গিয়ে যে যার মতন অবাক তাকিয়ে থাকব অপরের একাকীত্বে। রাতের কন্ঠ বেয়ে দেহের মাঝে হবে অনেক প্রাণের নৈশসমাগম। আর এ পাড়ার যে মেয়েটি রোজ সন্ধ্যায় করে আধুনিক গানের রেওয়াজ— স্নায়ু অরণ্যে তার নগ্নতা ভেবে ভেবে আমরা সবাই মিলে আরো একবার ভীষণ একা হয়ে যাব নিয়মিত হস্তমৈথুনে…। আলস্য শাসন করছে আমাদের দিন ও রাত। কিছু মানুষ উলম্ব রেখার মতো। আপনি খেয়াল করলে দেখতে পারবেন সব খেলা এভাবে জমে উঠলে ভালোলাগে না বা আমাদের আয়ু ভেঙে শিকারে বেরিয়ে যায় পিতামহ। স্বপ্ন। স্বপ্নের মাঝে যবখেত। আমরা আঙুলে ঝংকার তুলছি। একটা দৃশ্য। এখন সম্বল নাসরিন সুলতানা নামের নারী বা আমার মা ফুলের ফসিল মাঝে কেঁপে ওঠে শীতে। আমি মীমাংসার আঁশ বেছে আলাদা করি মাতৃমুখ। চিরহরিৎ বনাঞ্চলে রুগ্ন গাছের মতন। আমার নাসরিন সুলতানা। পৃথিবীর প্রাচীন ক্ষতমুখে ছড়ানো রয়েছে তার নাভি। আমি। আমি আর হাসান দুজন মিলে একা হয়ে যাই। পুনরায় জেগে ওঠে স্বর। নাসরিন সুলতানা। আমারই ফেলে আসা বিগত পৃথিবী তোমাকে ভেবে আমি যেকোনো মেয়ের কাছে গিয়ে কেঁদে ফেলি… নাশপাতি বনে রেখে এসেছি যত গৃহযুদ্ধের ছায়া— যেন তা সব গমখেতের হাওয়া। আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো তুমি, তাতে কি কিছু আর যায় আসে আজকাল, সেসব নিয়ে আমি ভাবতে ভাবতে মদ খেয়েছি প্রচুর। কাঁধে করে নিজেকে নিয়ে গেছি শশ্মানের কলিজায়। হায় হায় তুমি আজও আমাকে ভালোবাসলে না! জীবনে এক মুহূর্তও এলে না! হায় হায় নাসরিন সুলতানা, প্রিয়তমা আমার, আমি তুমি কেউ কারো ব্যাক্তিগত নয়। জন্মান্তরের এক্সিডেন্টে শুয়ে আছি কেবল। বিলিভ মি বিচ, বিলিভ মি মাই লাভ! এক্সপ্রেরিয়েন্স এর বাইরে বিশ্বাস করার ক্ষমতাও আমাদের নেই। তাই, শান্ত হও। এবার দাহ করো নিজের মুখোশগুলি। শ্রাদ্ধ করো, নাশপতি বনের হাওয়ায় হাওয়ায় মিশিয়ে দাও তোমার আমার মাঝে দুলতে থাকা অনাগত সন্তান, অপার বিস্ময়, ঘামের কালারহীন শ্লেষ, মলয় বা হাসান বা উভয়ের ছাল-চামড়া হাত পা নাভী চোখ মুখ লিঙ্গ লম্বা লম্বা চুল…

হাসানকে আমি বা হাসান আমাকে বলতে থাকে— দুঃখ পাবেন না। দেখবেন, কোথাও থেকে একটা লেডি ডাক্তার এসে গলার স্টেথো কানে লাগিয়ে শুনে নেবে আমাদের সমস্ত বেঁচে থাকা। আমরা ফের স্বপ্ন দেখি। আমার পাগল হবার প্রেসক্রিপশন জুড়ে নাসরিন সুলতানা ভরতনাট্যম নাচে। সে নাচের তালে তালে একটার পর একটা ক্যালকুলাসের দফারফা করে নিউটন সাহেব এবার ছুরি চালাচ্ছে আপেলের গায়ে। মৃদু হাসি আমি, দেখি এই দৃশ্যের বাইরে অবিরাম অপেক্ষার উপহাস ভেঙে হাজার হাজার টুরিস্ট নারীরা সবাই হাওয়ায় হাওয়ায় কবিরাজির লিফলেট ওড়াচ্ছে… আমি আর হাসান তার জন্য চিঠি লিখি। আমাদের চিঠির প্রতিটি শব্দ মিলে যায়। আমরা লিখি— তুমি তো জানো না নাসরিন সুলতানা, বনেদী ভাব-সাব আমাদের নেই। ছোটোলোকের থেকেও কঠিন ছোটোলোক আমরা। শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের বই কিনতে ভালোলাগেনি কখনো। আমি বাজেয়াপ্ত ঘোড়াদের ঐতিহাসিক আড়াইচাল। আমার প্রেমিকাদের নাম আমি বাদে সবাই-ই মনে রেখেছে। অথচ আমারই মনে নেই। সেই আমি লিখতে বসলেও মানুষ আশা করে আমি জীবনের দিকে ক্রমাগত বিদ্রুপ ছুড়ে দেওয়া থামিয়ে শান্ত ধীর ভাষায় কিছু লিখে রেখে যাব। উফফফ! ফর্ম ভাঙার যে খেলা নিয়মিত খেলতে হয়, তা আমি জানি না। আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, নেশার পরে নেশা করে আমার লেখাকে সন্দেহ ভরা চোখে দেখি, হারামজাদা আবার এলিট ক্লাসের মতো হয়ে উঠলো কি না। আমার মন বিষিয়ে আছে। ঘর ছেড়েছি নয় বছর। নাসরিন সুলতানা, তাই এখনো কবিতা লিখতে সক্ষম। আবার ভাবি কিছুই লেখা হয়নি… আমি এসেছিলাম এমন অবচেতনার বিষ্ফোরণ থেকে যেখান থেকে কেউ কখনো আসে না। আমি যদি এখন পড়ে যাই আমি চলে যাব সেই বিষ্ফোরণের মাঝে ঘুমিয়ে থাকা বিষ্ফোরণের মুখোমুখি নৃত্যে… নাসরিন, নাসরিন, নাসরিন, ক্ষুধা আমাকে তীব্র অবসাদগ্রস্ত করে তোলে প্রতিবেলায়… নিজের স্মৃতিকে রিকাউন্ট করি আর তাস খেলি। দেখি, আমি তুমি কত কাছে চলে এসেছি। ছোটোলোকের সংসারে আমি তুমি কতদূরে চলে যাচ্ছি… একটা শুন্যতা, কালো অন্ধকার, স্নায়ুর মাঝে অবুঝ ভাষা, ও আমার নাসরিন সুলতানা… এসব কিছুই নাসরিন সুলতানা জানে না। বা, আমরা দেখতে লাগি হাওয়ার ঘর থেকে যৌন-জোকসের মতন শোনা যায় কোলাহল— মানুষের বিদ্রুপে আমি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাইনি। বরং হাসতে শিখেছি। চিন্তা আর গৃহত্যাগে তোমার প্রবল অনীহা। একটা শুন্যতা, সেক্সও প্রাচীন ততোধিক, তুমি আমি যেমন। ধুলোঝড় নেই, নিঝুম আবহাওয়া, জলের মিছিল জুড়ে কেবলই আকাঙ্ক্ষা। আমি এক চিরকালীন পিতা, নির্বান্ধব শিশু, সৃষ্টির তাড়নায় তোমার স্তন কামড়েছি বহুবার— সকালের আলোর হদিস পেয়ছি যতবার। আমি আমি আমি আমি বাদে কবিতাই লিখতে পারি না বলে বহুবার ভেবেছি শালা কবিতাই লিখব না। নাসরিন সুলতানা, গোপন বেদনা, বিষাক্ত ফলের স্বাদ, তবু বারবার জ্বালাপোড়া দশা বোঝাই মুখখানি আমাদের ডুবে যাচ্ছে তোমার পবিত্র ঋতুস্রাবে…সারসেরা জল খায় যেমন পুকুরের জলে…অন্তহীন…টিক টিক টিক টিক… আর এদিকে সত্যি মিথ্যার মাঝখানে, জন্ম মৃত্যুর মাঝখানে নাসরিন সুলতানা তার প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে স্ট্রাপলেস ব্রেশিয়ার কিনতে যায় নিউমার্কেটের দিকে। নাসরিন সুলতানা আর ফেরে না। ছাদে ছাদে লজ্জাভরে শুকাতে দেয়া ব্রেশিয়ারের মতন নাসরিন সুলতানা আরো হাজার বছর উড়তে থাকে…আমরা দুজনে, মানে আমি হাসান জানতে পারি এক হাজার সিড়ি পার হলেই নাসরিন সুলতানার সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে রোজ নিচে পরে যাই। পরে গেলে অন্যদের মতো আমাদেরও ব্যথা হয়। সেই ব্যথার মধ্যে দেখি নাসরিন সুলতানা তার প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছে। তাকে আমি আর হাসান দুজন মিলে ভালোবেসে ফেলি। অথচ চিনতে পারি না। সেও আমাদের চেনে না। আগামীকাল আমরা আবার সিড়ি থেকে পরে যাব। নাসরিন সুলতানা নামটা আমাদের মনে থাকবে। আমরা ভাবব কত সাইজের ব্রা বা কোন স্টাইলের ব্রা উপহার পেয়ে নাসরিন সুলতানা আমাদের না হয়ে অন্য কারো হয়ে যায়। বা, আমরা এসব ভাবব না ক্লান্ত মেষপালকের গল্প শেষ না হতেই নাসরিন সুলতানাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা। আমরা এখন ক্ষুধিত ভেড়ার দল নিয়ে ঘুরিফিরি চির ব্যথার প্রতীক সেজে। কেউ কেউ বা সবাই নাসরিন সুলতানার নিখোঁজ সংবাদ আমাদের দিতে না দিতেই দুজনের চোখেই নেমে আসে গাঢ়তর ঘুম… আমাদের ঘুমের মাঝে নাসরিন সুলতানার স্কুটার ছুটে যাচ্ছে বিজয়িনীর হাস্যমুখে, আমরা বুঝতে পারছি নাসরিন সুলতানা, থ্রিসামে প্রেম ভালবাসা নেই, হাসান আমার কাছে বা আমি হাসানের কাছে নাসরিন সুলতানার রুপ নিয়ে নেমে এসেছি খোদার বাগানে… যেখানে আমাদের নিঃশ্বাসের মতো বাদবাকি পাখিগুলো নেমে আসে বহুদিন আগে বহুদুর থেকে। আমি হাসানকে নাসরিন সুলতানা ভেবে বা হাসান আমাকে নাসরিন সুলতানা ভেবে বাচ্চা মেয়েদের মতন করে শরীরের সব কাপড়-চোপর খুলে ফেলে। ঠোঁট এগিয়ে যায়। পরাবাস্তব স্লো মোশন। যৌনতার মধ্য দিয়েই সত্যের অন্বেশন। কল্পনা বা নাসরিন সুলতানা বা দশ হাজার আয়না আমার আর হাসানের জীবনে নেমে আসে অকল্পনীয় অবাস্তব আর দূর্বোধ্যভাবে। আমরা আমাদের বাবা-মাকে উড়তে দেখছি… ও হাসান, ও নাসরিন, ও ভগবান, আদিম সত্য প্রাচীন শিকর থেকেই ডালপালা মেলছে। আমি আর হাসান দুজনের ক্ষুধা সেক্সুয়াল। আমি আর হাসান দুজন মিলে নাসরিন সুলতানাকে ভালোবাসি। আমি আর হাসান একে অপরকে ভালোবাসি। আমাদের শরীর মন পুড়ছে অনেক অনেক দুরের শহরে… হাসান আমাকে বা আমি হাসানকে বা আমরা দুজন নাসরিন সুলতানা পেয়েছি ভেবে গায়ে কাটা দেয়। আমাদের চালচলন যেন তদন্তে নেমেছে। আমি আর হাসান সেইসব তদন্তের বাতাস বাঁশিতে পুরে বাজাই আর চুমু খাই, চুমু খাই…

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

মূলত কবি। পাশাপাশি গল্প লেখেন ও চলচ্চিত্র নির্মান করেন। জন্ম  ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬ পিরোজপুরে। পড়ালেখা করেছেন বিএসসি ইন ইঞ্জনিয়ারিংয়ে। বর্তমানে ঢাকায় থাকেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।