বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮

মিহিরা

0

উৎসর্গ –`তোমাকে গিরিধারী’*


‘শোন স্তব্ধতা
শোন শিরা ও প্রবাহ রক্তগান
মননে যোগীসঙ্গ করি
ভ্রমণে যোগীসঙ্গ করি
টের পাই রাত ও শান্তর ভিতর
আমার ভিতর
প্রবেশ করছে গোটা পৃথিবী’

(সে এক আশ্চর্য যুগ। একদিকে সংস্কৃতভাষী শাস্ত্রকাররা খানিকটা অভিমানে, খানিকটা বাধ্যতায় নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন অন্দরে, গোপন কুঠুরিতে, অন্যদিকে জেগে উঠছে নতুন নতুন ভাষা। মুসলিম শাসনকালে একধরনের ফিউশন তৈরি হচ্ছে। একটা ধাক্কা বাইরে থেকে আসছে, যার সবটাই খারাপ নয়। জেগে উঠছেন কবীর দাদু চৈতন্য এবং মীরাবাঈ। )

দ্বারকার মন্দিরে সন্ধ্যারতি শেষ। এক নারী গান গেয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো। প্রতিদিনের মতো মুগ্ধ সবাই শুনছে সেই গান, ভাবে বিভোর হয়ে যাচ্ছে। পাঁচজন মানুষ পাশাপাশি বসে আছে। বড়ো বড়ো প্রদীপের আলোয় উজ্জ্বল মন্দিরে সবার মুখ দেখা যায়। তাই পাঁচজন যে স্থানীয় নয়, তা শিশুরাও বলতে পারে। এরা অন্যদের মতোই তন্ময় হয়ে গান শুনছে। একসময় গান শেষ হয়, সবাই একে একে বিদায় নেয়। কিছু পরে সেই নারীও মন্দির থেকে বেরিয়ে তাঁর গৃহের পথ ধরেন। গৃহ? গৃহ বলতে যা বোঝায়, এ তা নয়। তাঁর গৃহ তো জগত জুড়ে। এ শুধু রাতটুকু চোখ বোজার আস্তানা। কিন্তু ইদানীং সেটুকুও হচ্ছে কই? একটি চিঠি এসে সব ওলটপালট করে দিল। এতদিন ঘর ছেড়েছেন, ভেবেছিলেন সব বন্ধন থেকে মুক্তি পেয়েছেন বুঝি। কিন্তু সুতো ছিঁড়ে গেলেও তার আঁশ থেকে যায়, তা বুঝলেন এতদিনে। ভেবেছিলেন তাঁর নিদ্রা জাগরণ সব দিয়ে দিয়েছেন তাঁর প্রাণ সর্বস্বকে। কিন্তু নিজেকে আবিষ্কার করে চমকে উঠেছেন মিহিরা। তাঁর মধ্যে এখনও সংসারের, ইহজগতের মায়ার আঁশ রয়ে গেছে!
তিনি গুনগুন করে গাইতে লাগলেন ‘প্যায়ার দর্শ দিজো তুম বিন রহন না যায়।’
জোরে গাইলে চম্পার ঘুম ভেঙে যাবে। তাই আস্তে আস্তে গান তিনি। রাত্রি গাঢ় হয়। তবু ঘুম আসে না তাঁর। পিঠে যেন কে উঠে বসে আছে, ছোট ছোট হাত দিয়ে গলা বেড় দিয়ে ধরেছে। কোমল, বড়ো কোমল স্পর্শ।

উদয়! উদয় এখানে কোথা থেকে আসবে? তাছাড়া উদয় এত ছোটই বা হবে কী করে?সে তো কতদিনের কথা তিনি চলে এসেছেন সব ছেড়ে। কীরকম মেঠাই খেতে ভালবাসত উদয়। ওর মা কারমেতনবাই যখন তখন পরামর্শ করতে আসত রাজ্য নিয়ে, উদা আর উদয় খেলা করত। উদয়কে বাঁচাবার সেই ভয়ঙ্কর রাত। ধাত্রী পান্নার সেই ফুলের মতো শিশুটির কথা ভাবলে আজো মন খারাপ হয়ে যায়। এইজন্যেই কি গিরিধারী ধরা দিয়েও ধরা দিচ্ছেন না? এইভাবে খেলা করছেন তাঁর সঙ্গে? গিরিধারী কি বলছেন এখন বাঁশি ছেড়ে অসি ধরার সময় এলো?
আজ কি করবেন তিনি? ওরা পেছন পেছন আসছে। মিহিরা দ্রুত পা চালাবেন ভাবেন, কিন্তু কী মনে করে ঘুরে দাঁড়ান।
‘কেমন আছেন?’
ওঁরা ভাবতে পারেননি মিহিরা ফিরে তাকাবেন। কিন্তু তাইই হয়। মিহিরা যে বরাবর জেনে এসেছে সমস্যার সামনা করতে হয়, পালাতে নেই। তিনি যে রাজপুত নারী। দরকার হলে তলোয়ার ধরতে পারেন। ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ার চালানো – এ তো ছোটবেলার শিক্ষা। মনে চলে যায় কত দূরে।

২.
ঐ তো পাশাপাশি দুটি ঘোড়া চালিয়ে চলেছেন জয়মল আর তিনি। ছোট্ট মেয়ে তখন। কিন্তু তখনি শিখে গেছেন ঘোড়ায় চড়া, তলোয়ারবাজি। আরও একটি জিনিস শিখেছেন, তন্ময় হয়ে পূজা করা। নাহ এ জিনিস শিখতে হয়নি তাঁকে। এ যেন তাঁর রক্তের মধ্যে ছিল। নইলে পাথরের একটা কালোকোলো মূর্তি, এক রাজপুতানীকে এত জাদু করে। কী দেখলেন তিনি ঐ মূর্তির মধ্যে? দেখলেন কি তাঁর গোটা দেশকে? দেশের অগণিত মানুষ, কালো গরিবগুর্বো, সমাজের একেবারে পায়ের তলায় থাকে যারা, তারাই কি ডাক পাঠাল ওর মধ্যে দিয়ে?

মনে পড়ে সেই মানুষটাকে খুব। সন্ত রুইদাস। পেশায় চর্মকার তিনি। একেবারে নিচের তলার মানুষ। সংসার ছেড়ে সন্ত হয়েছেন, খুঁজে চলেছেন মানুষ রতনকে। তিনি একবার এসেছিলেন মেরতায়। মীরা তখন তিন বছরের মেয়ে। সে দেখেছিল রুইদাসের কাছে এক অপূর্ব মূর্তি। গিরিধারীলালা। এক মুহূর্ত কাছছাড়া করেন না তাকে রুইদাস। মেরতার অতিথিশালায় কয়েকদিন থেকে আবার বেরিয়ে পড়েন একদিন। সাধু মানুষ, এঁরা কখনো এক জায়গায় স্থির হন না। এঁরা কেবলই চলতে থাকেন। তাইত বলে বহতা নদী আর রমতা সাধু।

সামান্য এক চর্মকার, সবাই ঘৃণা করে, জল-অচল তার। কীভাবে তার মনে এই টান এলো, সংসার ছেড়ে সে সাধু হয়ে গেল? মিহিরা ভেবে দেখে এই দেশে আর কোনো উপায় নেই জাতের ওপরে ওঠার। এক তুমি শক্তি দিয়ে উঠতে পারো, কিন্তু সে পথে বড়ো লোক ক্ষয়, রক্তপাত, মানুষের মনে তা চিরস্থায়ী রেখাপাত করে না। আর এই ভক্তির মার্গ। বড়ো শান্তি সেই পথে। শুধু শান্তি না, সম্মানও। যে মানুষরা কোথাও সম্মান পায় না, সবসময় নিচু হয়ে থাকে, তারা এই ভক্তির পথে এক, সবাই সমান। মিহিরা তো তার গানে তাদেরই জড়িয়ে নিতে চায়। যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, আমি তোমায় ছাড়ব না গিরিধারী। ওইটুকু মেয়ে, সে তো ছাড়তে চায়নি গিরিধারীকে। রুইদাস যখন চলে যাচ্ছে, বলেছিল ‘দিয়ে যাও। দিয়ে যাও গিরিধারীকে…’

সবাই বোঝাল অনেক ‘আরে পাগলি, এ কি পুতুল না খেলনা যে তোকে দিয়ে যাবে? এ তো দেওতা। দেওতাকে নিয়ে ঠাট্টা করে নাকি?’
মেয়ে তবু কাঁদে ‘আমার গিরিধারী চাই’, মেঝেতে আছাড়িপিছাড়ি দিয়ে কাঁদে। কেউ কাঠের খেলনা এনে দ্যায়, কেউ মেঠাই, কেউ নতুন ঘাগরী। মেঘ রঙ ঘাগরী আর ধানী রঙ চুনরী। কেউ হীরা জহরত বসানো সাত লহরী হার। মানাবে মিহিরাকে। মেয়ে কেঁদে বলে ‘চাই না আমার পুতুল, খেলনা, দামী হীরা জহরত, ঘাগরি। ওসব দিয়ে আমি কী করব? আমার গিরিধারীলালা চাই’
কাঁদতে কাঁদতে গলা শুকিয়ে যায়, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে মিহিরা, ঘুমিয়ে পড়ে শেষতক।
সন্ত রুইদাস ঘুমোচ্ছিল একটা চটিতে। হেঁটে হেঁটে শ্রান্ত হলে বিশ্রাম নেওয়া একটু। কিন্তু ঘুমের মাঝে এ কী! কে এসে দাঁড়াল সামনে? এ যে স্বয়ং গিরিধারীলালা! করুণ মুখে সে বলছে ‘মিহিরা বড়ো কাঁদছে। আমাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এসো। ’
অপূর্ব এক অনুভূতি নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে তার। না তো, গিরিধারীকে দিয়ে দিতে হবে বলে কোন কষ্ট হচ্ছে না তো তার। বরং বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল যেন।

রুইদাস ঘুম ভেঙে ছুটে যায় সেখানে, সেই ছোট্ট মেয়েটা যে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে,
দেউড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বলেন ‘ওকে ডাকো ওকে ডাকো, ওর কাছে আমার গিরিধারীকে রেখে যাব’
কি আশ্চর্য, সেই আলো না ফোটা ভোরে ছুটে আসে সেই মেয়ে, ছোট্ট ছোট্ট হাত বাড়িয়ে বলে দাও ওকে দাও, তারপর কোলে নিয়ে বিভোর হয়ে যায়। গুনগুন করে গান গায়।

৩.
বড়ো কষ্ট করে পাওয়া এই গিরিধারীকে। স্বামী সমাজ সংসার রাজ্যপাট সব ছাড়লেও একে তিনি ছাড়তে পারবেন না। কিন্তু এরা কেন এসেছে তার কাছে? সব সম্পর্ক তো চুকেবুকে গেছে কবেই।
‘আপনি ফিরে চলুন, রাজপুতানার বড়ো সঙ্কট। আপনি গিয়ে হাল না ধরলে সব ভেসে যাবে। উদয়ের খুব বিপদ।’
মিহিরা হাসেন ‘আমি যে সব ছেড়ে চলে এসেছি। ধন সম্পদ, নাম, সিংহাসন, শিরোপা, মোতিম মালা। আমি তো আর কারো চাচী নই, কারো স্ত্রী নই, কারো কন্যা নই, স্বামীর মৃত্যুর পর বাপের ঘরে ফিরেও তো দেখলাম, ওরা আমাকে আমার মতো গান গাইতে দেবে না। মন্দিরে বাইরের মানুষ আসতে দেবে না, আমার গিরিধারী ওখানে হাঁপিয়ে ওঠে। সে তো গজমতির মালা চায় না, সে চায় মাটির মানুষদের সঙ্গে ধুলোখেলা করতে।’
পুরোহিতরা তাকিয়ে থাকেন অবাক হয়ে। এসব কী ভাষায় কথা বলছেন মিহিরা তাঁরা বুঝতে পারেন না। তাহলে কি লোকের কথাই সত্যি, এঁর মাথা পুরো খারাপ হয়ে গেছে? বাবরি হয়ে গেছেন কূলবধূ? কত কথাই তো কানে আসে।
বদনাম তো একটা নয়, হাজারটা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন্দিরের দরজা বন্ধ করে একটা আওরত কী করে? মানছি সাধারণ আওরতদের মতো চুলা নিয়ে পড়ে থাকবে না, রোটি পাকাবে না, মির্চি মেলে দেবে না উঠোনে। কিন্তু রাজ্যপাট তো সামলাতে পারত। মেওয়ারে স্বামী গেল, মেরতায় ফিরে গিয়ে জপতপ করতে পারত, তেমন জপতপ যা পিতৃপুরুষরা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। শ্বশুরকুলের কুলদেবী দুর্গা বা কালীর পূজাই করত। সেটাই উচিত ছিল। যখন দেশাচার মেনে তুই স্বামীর চিতায় উঠলিই না। একজন সতী হলে তার পিতৃকুল শ্বশুরকুল তো বটেই গোটা গ্রাম, গোটা রাজ্য উদ্ধার হয়ে যায়। বিধবা আওরত সেসব কিছু না করে চলে এল বৃন্দাবন। রাজপুতানা থেকে বৃন্দাবন সোজা কথা? সেখানে সে কী করে?পুরুষের সঙ্গে বসে আলাপ আলোচনা গান, এ কি মেয়েমানুষের কাজ? বুর্জুগ লোকরা বলতে গেলে উত্তর দ্যায় মুখের ওপর –বৃন্দাবনে তো একজনই পুরুষ, সে আমার গিরিধারীলাল, বাকি সবাই আমার সখি। স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েমানুষের এত ঔদ্ধত্য কেউ সহ্য করেনি। কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হবে যমুনার জলে, রাধা হবার শখ ঘুচিয়ে দেওয়া হবে, এমনি ঠিক হল। কিন্তু বাবরি বটে, বোকা নয় এই আওরত। ঠিক টের পেয়ে গেল, নাকি ঐ সারাক্ষণের সঙ্গিনী চম্পা তাকে এনে দিল খবর? কে জানে! কিন্তু ঘাতক বাহিনী এসে দেখল খাঁচা শূন্য করে পাখি উড়ে গেছে। রাতের অন্ধকারে গিরিধারীকে বুকে করে চলে গেছে অজানা গন্তব্যে।
অজানা গন্তব্য মানে কি এই দ্বারকা? নাকি এর আগে অন্য কোথাও গেছিলেন ইনি? সে খবর কে জানে!

অন্ধকারে দাঁড়ানো পাঁচজনের মনে এরকম নানান ভাব খেলে যাচ্ছিল। এখানে এত দূর থেকে আসা কি বৃথা হল? এ কেমন মেয়েমানুষ যার মনে শ্বশুরকুল এমনকি পিতৃকুলের জন্যেও কোন মায়া নেই? এইজন্যেই বলে মেয়েমানুষের সন্তান না হলে সে কোন কাজে লাগে না। না ঘরকা না ঘাটকা হয়েই থাকে। থাকত নিজের একটা বাচ্চা, তার টানে টানে নিশ্চয় ফিরে যেত মেওয়ারে। একটা পাথরের মূর্তি নিয়ে এত আদিখ্যেতা করত না।
প্রধান পুরোহিত গলা ঝেড়ে এবার বেশ জোরের সঙ্গে বলে
‘কোন কথা শুনব না আমরা, আপনাকে ফিরতেই হবে। রাজ্য তো আপনারই, উদয় আপনার পরামর্শ মেনে চলবে। রাজপুতানার এই দুর্দিনে আপনি ছাড়া কে আছেন আমাদের?’
মিহিরার বুকের মধ্যে যেন গিরিধারী কথা বলে ওঠেন
‘এদের কথায় ভুলো না। আর মনে করো না এরা মাত্র পাঁচজন এসেছে। এদের সঙ্গে অস্ত্রধারী সৈন্য থাকা খুবই সম্ভব। মিস্টি কথায় কাজ না হলে এরা বলপ্রয়োগে তোমাকে নিয়ে যাবে। ’
‘কিন্তু কেন? আমি তো সাধারণ নারী এক। গিরিধারীলালকে ঘিরে আমার ছোট জগত। আমি তাঁকে ঘিরেই নাচি গাই আর কবিতা লিখি’
‘তোমার পেছনে মেওয়ারের জনতা আছে। তোমাকে সামনে রেখে উদয় নিজের সিংহাসন মজবুত করতে চায়। তুমি গেলে জনতা উদয়কে সমর্থন দেবে’

‘কী হল মহারানী? আপনি তৈরি হয়ে নিন। আজ রাতেই আমরা রওয়ানা দেব। কম দূরের পথ নাকি?’
এবার অনুরোধ নয়, স্পষ্ট আদেশের সুর।
মুহূর্তে মন স্থির করে নেন মিহিরা।
‘আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি গিরিধারীকে সামান্য কিছু খাইয়ে নি। অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে তো। ’
স্বস্তির হাসি খেলে যায় পাঁচজনের মুখে। এমনিতেই এই নারীকে অতীতে বিষ পাঠানো হয়েছে, সাপের কামড়ে বা জলে ডুবিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছে, আবার বলপ্রয়োগ করতে হলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হত না। এঁকে স্নেহের ফাঁদ পেতে নিয়ে যেতে হবে। মেয়েমানুষকে সংসারের লোভ দেখাও, ব্যস সে হাসিমুখে তোমার জন্যে জান দিয়ে দেবে।
‘নিশ্চয়। আপনি তৈরি হয়ে আসুন, আমরা অপেক্ষা করছি। ’
মিহিরা শান্ত পায়ে মন্দিরে প্রবেশ করেন আবার। গিরিধারীকে বুকে তুলে নেন, তাঁর ও গিরিধারীর সামান্য পোশাক, শুখনো খাবার নিয়ে নেন দ্রুত, একটি পত্র লিখে ফুলের সাজিতে রাখেন, সকালে চম্পা ফুল তুলতে এসে দেখবে, তখন সে পা চালিয়ে গেলে তাঁকে ধরেও ফেলতে পারে। কিন্তু এখন গৃহে গিয়ে খবর দিতে গেলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা। সব গুছিয়ে তিনি বিগ্রহের পেছন দিকের চোর-দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন। এই দরজার অস্তিত্ব কেউ জানে না। দেশ আক্রমণ হলে এই পথে পালানো যায় যাতে, তাই এই ব্যবস্থা। এদিকে একটি নির্জন বনপথ। এখান দিয়ে সমুদ্রে যাওয়া যায়। গিরিধারীকে নিয়ে জলে ঝাঁপ দিলে জীবনের সব জ্বালা জুড়োতে পারবেন, অন্য পথে শুনেছেন দিল্লি যাওয়া যায়। সেই দিল্লি, যেখান থেকে একবার সম্রাট বাবর সাহায্য পাঠিয়েছিলেন মুক্তামালা দিয়ে। চারদিকে ছিছি পড়ে গিয়েছিল, ঘরের আওরতকে মুসলমান বাদশা ভেট পাঠাচ্ছে! আসলে তা ছিল মেরতা রাজ্যের যুদ্ধের রসদ। এমনি টাকা পাঠালে জানাজানি হবে, তাই মোতির মালার ভেক। এখন সেখানে তার নাতি আকবর। সে নাকি সব ধর্মের মিলন ঘটাতে চায়।
মিহিরা বুঝতে পারেন না কোন দিকে যাবেন। চারদিকে নিকষ অন্ধকার। গোটা দেশটাই তো অন্ধকারে ডুবে আছে। তাকে ফেলে তিনি মুক্তি খুঁজবেন? তিনি না রাজপুতানী? মিহিরা পথের দিকে তাকান। পথই তাঁকে পথ দেখাবে।
অন্তহীন যাত্রা শুরু হয় রাধার অভিসারের মতো।

‘তোমাকে গিরিধারী’ কবিতা অনুবাদ রিমি দে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

তৃষ্ণা বসাক (জন্ম: অগস্ট ২৯, ১৯৭০) একজন ভারতীয় বাঙ্গালি লেখক। কবিতা, ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, শিশুসাহিত্য এবং কল্পবিজ্ঞান— সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ বিচরণ। তিনি মৈথিলী, মালয়ালম ও হিন্দি ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন। বর্তমানে কলকাতা ট্রান্সলেটর্স ফোরামের সচিব। সৃষ্টিশীল কর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। তৃষ্ণা থাকেন কলকাতায়। কবুিতা, গল্প, উপন্যাস, শিশুতোষ সাহিত্য সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা কুড়ির অধিক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।