মঙ্গলবার, জুন ১৭

বুমেরাং ও অন্যান্য কবিতা : বিপিন বিশ্বাস

0

Eid Motif

.

বিষাদের ঝর্ণাধারা


বিষাদের ঝরনাধারায় লুকিয়ে আছে
আনন্দের ঘন অরণ্য
মেঘের আড়ালে যেমন থাকে
সূর্যের স্নিগ্ধ হাসি।

স্মৃতির আলপনা এঁকে যাই
বিস্মৃতির সুড়ঙ্গ খুঁড়ে
জনজীবনের কোলাহল নির্জনে রেখে
অবগাহন করি মানস সরোবরে।

জীবনের গন্ধ খুঁজি
ভেজা মাটি গায়ে মেখে।

জন্মটাই বিষাদে পূর্ণ ছিল
মাটির সুধা পান করে
আনন্দে উদ্ভাসিত হলো
এক জীবনের কল্পকথা
গল্প হলো না
অন্যজীবন পাইলে পরে
বুঝব আনন্দের বেদনা।

বিষাদের ঝনরাধারায় অনেকেই সাক্ষী
গোপন করিনি কিছুই
নিজেকে সমর্পিত করেছি
নক্ষত্রের আনন্দলোকে
যেখানে শুয়ে আছে
না পাওয়ার ব্যথিত অনুভূতি।


বুমেরাং


খাঁচার পাখি চইলা গেলে
খাঁচা পড়ে থাকে
সেই খাঁচারে রাখবে না কেউ
ফেলে দিবে জলে।

কেন যে মানুষ পোষে পাখি,
কবে খুলবে তার জীবন আঁখি!

হাসছে জীবন মজায় মজায়
রঙিন ফানুস ওড়ে,
খাঁচা ভাঙা পাখির পালকে
শোকের মাতম পড়ে।


যাপনের আয়োজন


সন্ধ্যেটা,
ঘরেই কাটালি
এক ফালি আকাশ কিভাবে —
দিগন্তরেখায় হাসির রেশ রেখে যায়?
এতসব আয়োজন কর্পূরের মতো উবে যাবে
সকাল থেকে বিকেল ঢেকে থাকে সময়ের খোলসে।
তারপর, ভোরের-আকাশ, কুয়াশা ঘেরা সবুজ ভূমি
দেখিসনি তো কিছুই তুই —
অলস ঘুমের আদর যেন লেপ্টে থাকে অমন তুলতুলে গালে,
নিজের ভেতরে বেড়ে ওঠা জগৎ ছেড়ে,
মায়ার উঠোনে আয়।

যাপনের এতসব আয়োজন, অতিক্রম কর
চোখ দিয়ে, হৃদয় কিংবা অনুভূতি দিয়ে।
কেননা বিষণ্ণতা ক্রমশ অন্ধকারে
ছেয়ে যাবে ভীষণ সাধের জীবন।


বোধ


বাতাস ছুঁয়ে গল্প করে মনের আঁতুড়ঘরে
কেমন যাচ্ছে অষ্টপ্রহর শোনার ইচ্ছা রাখে

নিস্তব্ধতার দেয়াল ভেঙে জাগায় মনের আশা
উড়ুক্কু মনের স্থিতধী চেতনায় দোলে ময়ুর নাচের ভাষা।

শীতের সকালে শাদা তুলো ঝড় আসে,
বোধিবৃক্ষ তলে।


আত্মার ঐশ্বর্য


ধ্যানের চেতনায়
বোধিসত্ত্বের মোহনায়
ভেসে বেড়াচ্ছে অনন্ত আত্মার জলছবি।

কে কখন অবগাহন করে শুদ্ধতম মানুষ হয়ে অনন্তে মিলিবে
কালের প্রচ্ছায়া বসন্তের কোকিলের মতো মিহি সুরে গান গেয়ে সে কথাই বলে।

পৃথিবীর তাবৎ আনন্দ
সৃজন ও ধ্বংসের হাত ধরে নতুন কুঁড়ির মতো হেসে হেসে বলে আমি আছি তোমাদেরই মধ্যে
কেন খুঁজো না আমায় বিদ্যাসাগরে!

হৃদয় নৈবদ্যে সহজ মানুষ বসে আছে আসন গেড়ে
দেখছে জগতের খেলা
তাই তো জগত ডুবে আছে আনন্দের মেলায়।

আত্মার ঐশ্বর্য গুণ পথ দেখায় অন্ধকারে
না যেন ভুলি আমার আসল মানুষটারে।

প্রভু, তুমি আছো আমার হৃদয় মাজারে
স্বর্গীয় অনুভুতি নিয়ে বঙ্গীয় ব-দ্বীপে।

 

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

১৯৮০ সালের শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গণপদ্দী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। জাহাঙ্গীরনগর  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে প্রথম বেসরকারি কলেজ। এরপর সরকারি কলেজ শিক্ষকতা করেন। বর্তমানে পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা। ২০১৯ সালে বেরহয় প্রথম কবিতার বই ‘এক পয়সার সলতে জীবন’। ২০২০ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘অদৃশ্য খোলস’। দুটি বই-ই বৈভব প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। চাকরিসূত্রে বর্তমানে বরিশালে বসবাস করছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।