বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫

মামাতো বোনের জন্য কবিতা : রিদওয়ান নোমানী

0

সুমাইয়া


সুমাইয়া ওড়ার কৌশল আত্মস্থ করার গুঞ্জনে ডানা মেললে, আমরা উনার পেখমের প্রশংসা করতাম। উনি প্রস্তরযুগের পাখিদের স্বাধীনতা চাইতেন। আমরা সেই স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে যাপনের উপযুক্ত খাঁচা বানাতাম। সুমাইয়া রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী দূরত্বকে অস্বীকার করলে, আমরা ডানা পরখের বাহানায় আফসোস করতাম। উনি আফসোসের শিকল ভাঙার জন্যে তড়পাতেন। আখেরে উনি তড়পাতে তড়পাতে মারা গেলে, কোনোপ্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই কবর দিলাম কয়েকজন মিলে। চল্লিশ কদম অতিক্রমের পর উনার কবর অভিমুখে অসংখ্য পাখি উড়তে দেখলাম। আমাদের অভিজ্ঞতাকে কর্ষণ করার আগেই কবর হতে এক আশ্চর্য পাখি মিলিয়ে গেল অন্য পাখিদের সাথে। তারপর আমরা আর কিছুই দেখলাম না। দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে যে যার বাড়িতে চলে গেলাম।


প্রফেটের পুকুরে


বায়েজিদ একটা মাছ : আমি ওর সাথে সমতলে সাঁতার কাটতাম। সাঁতারের নাম করে আঁকিবুঁকি করতাম প্রচ্ছন্ন জমিনে। কৌশলের বক্রতায় আনন্দ লুকালে, প্রফেট ইব্রাহিম পুকুর নিয়ে জানাতেন সুন্দরের আহ্বান। প্রথম প্রথম আমরা তা আমলে না নিয়ে, নিজেদের পেঁচাতে চাইতাম রহস্যজালে। আমি রহস্যজালে ঢের পেঁচালেও, বায়েজিদ ভেতরের মৎস্য সত্তা নিয়ে সাড়া দেয় প্রফেটের আহ্বানে। সেদিন থেকে বায়েজিদ উজ্জ্বল মাছ হয়ে সাঁতার কাটে প্রফেটের পুকুরে।


মামাতো বোনের জন্য কবিতা

[ হামিদা অথৈকে ]


শ্রাবণের একদিনে ভেজা চোখে তুই তাকালি
শূন্য কিংবা থাইয়ের দক্ষিণ কোণে।
তোর চুল আর থুঁতনি বেয়ে ঝরে পড়ছে শ্রান্ত যমুনা।

ছোটো একটা খাল চতুর্দিকে সারি সারি
কেওড়াগাছ আর আমি বসে আছি
তীরবর্তী রেন্ট্রিগাছের ছায়ায়।
সিগ্রেটের ধোঁয়ায়
মিশে যাচ্ছে শ্রাবণের ভেজা দুপুর।

আজকে তোর জন্মদিন…
এক চিলতে নরম রোদ্দুরের হাসিতে
কেঁপে উঠছে তোর চঞ্চল ঠোঁট,
টলোমলো শ্রাবণী চাউনি।

সন্ধ্যে হলে অনেকেই অনেক কিছু দেবে
কেউ একজন দেবে লুকিয়ে সবার অগোচরে।
এসব পুরনো অভিজ্ঞতা!

পড়ার টেবিলে হাত রেখে, সোফায় বসে
জন্মদিনের ব্যস্ততায় হয়তো মনেও পড়বে না
ঠিক এখানেই বসে থাকত সঞ্চয়িতা হাতে
এক উড়নচণ্ডী কবি।
এখানে বসেই সশব্দে অনর্গল কবিতা পড়ত
সকাল, সন্ধ্যে কিংবা উত্তপ্ত দুপুরে…

কুয়াশার মায়াজালে সূর্য ঢোকে
জীবনের মায়াজালে ঢোকে আজরাঈল।

পরিত্যক্ত বারান্দায়
বিস্মৃত বিকেল, এক সময় সূর্য ডুবে যায়।
কারণ ডুবে যাওয়াই পৃথিবীর একমাত্র ভালোবাসা…


গেভারার টুপি


আর্নেস্তো গেভারা, আপনার টুপি পরে আমেরিকা আমার উপনিবেশিত অন্তরে ঢুকে গেছে।

রে আর্নেস্তো, আপনার টুপি এখন সাম্রাজ্যবাদের দখলে!

আপনার ছবি সংবলিত টিশার্ট জড়ায়ে
তরুণ তুর্কিরা সত্যি আমেরিকা হয়ে যাচ্ছে।

আপনার মুক্তির জন্য মিলাদ মাহফিল
আশ্চর্য, সেখানেও এক দোসর এ জালেম
লাব্বাইক ফের লাব্বাইক জেকের তুলে
আমেরিকার বাক্সেবন্দি আপনাকে তাওয়াফ করছে।


সিলেবাসের বাইরে


জৈষ্ঠ্যমাসে নাইওর আইলেই মা-দাদী ঝগড়া করতেন।

আমি সিলেবাসের বাইরে গিয়া আঁকতাম মুখস্ত গ্রাম..

এখন জৈষ্ঠ্য আসে ঠিকই, মগর
নাইওরের অভাবে দাদী রাত-বিরাইতে
চাঁদ মাপেন। ঝগড়া করেন না!

আর গোপন অসুখে মা বুনেন— পাতার জায়নামাজ।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯ শে মার্চ ২০০১। বুড়িগঙ্গার তীরে (কেরানীগঞ্জের মহুরীপট্টিতে) বেড়ে ওঠা। সম্পাদিত কাগজ : 'হারগুঁজি' ও 'জনযোগ'। প্রকাশিত কবিতার বই: 'অন্যহাতের স্বর' (বইমেলা ২০১৮)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।