শনিবার, এপ্রিল ২০

হুমায়ুন ফরীদি, আমার প্লে লিস্ট

0

স্টেজ, টেলিভিশন আর বিগ স্ক্রিন; ষাট বছরের জীবন হুমায়ুন ফরীদি তিন ফর্মে কাটিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবেই ফর্মগুলোর মধ্য দিয়ে গিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে স্টেজে তার অভিনয় দেখার সুযোগ হয়নি। বিভিন্নজনের লেখা ও স্মৃতিচারণায় জেনেছি সেসব। কিন্তু চোখে দেখা আর শোনা— দুটোই ভিন্ন ব্যাপার।

এজন্য ফরীদি অভিনীত পাঁচটা কাজ বেছে নিতে বললে, আমাকে ডিপেন্ড করতে হবে টেলিভিশন এবং বিগ স্ক্রিনের ওপর। আবার, আমার এটাও বিশ্বাস করতে ভালোলাগবে, ঢাকা থিয়েটারের ‘শকুন্তলা’ তার ডেব্যু নাটক।

Faridi


স্টেজে ‘শকুন্তলা’ দেখা একজন মানুষকে আমি চিনি। যাকে চিনি, তার বিচারবুদ্ধির ওপর আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। আমি জেনেছি, হুমায়ুন ফরিদীর প্রথম চরিত্র ছিল একটা তক্ষকের।

স্টেজে ‘শকুন্তলা’ দেখা একজন মানুষকে আমি চিনি। যাকে চিনি, তার বিচারবুদ্ধির ওপর আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। আমি জেনেছি, হুমায়ুন ফরিদীর প্রথম চরিত্র ছিল একটা তক্ষকের।

যারা টেলিভিশনের চেয়েও ছোটো স্ক্রিনে (সেলফোন, ট্যাব) ফরিদীর অভিনয় দেখেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। আমার জানার ইচ্ছে, টেলিভিশন আর বিগ স্ক্রিনে অভিনেতা ফরীদি যেই টেনশন ক্রিয়েট করতে পারতেন, এসব ছোটো স্ক্রিনে কি তা বোঝা যায়?

Faridi 2


ফরিদী অভিনীত নাটক, সিরিয়াল, টেলিফিল্ম এবং সিনেমা দেখা হয়েছে প্রচুর। সত্যি বলতে এত এত কাজের মধ্যে একটা প্লে লিস্ট করতে যাওয়া খুব মুশকিল। কিন্তু সেই কাজটিই আমি এবার করতে চাচ্ছি। জানিয়ে রাখি, এই তালিকা ব্যক্তিগত এবং এর মধ্যে স্বেচ্ছাচার আছে। জনরার দিক থেকে বোরিংও লাগতে পারে কারো কাছে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই স্যরি বলে রাখছি।

দ্বিতীয় জন

১৮ শ্রাবণ, এক গাড়ি দুর্ঘটনায় বাড়ির কর্তা তার পা হারায়। তারপর দশ বছর ধরে হুইলচেয়ারের জীবন। লোকটির স্ত্রীর মাথায় একটা সমস্যা দেখা দেয়। সে প্রায়ই দেখে, তার স্বামী চেয়ার ছেড়ে হাঁটাহাঁটি করে। তার সাথে কথা বলে। আচ্ছা, এই দ্বিতীয় জনটা কে?

বরাবরের মতই নিজের লেখা ছোটোগল্প বদলে ফেলে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নির্মাণ করেছিলেন ‘দ্বিতীয় জন’। নব্বই দশকের শেষের দিকে টেলিভিশনে যখন নাটকটি দেখানো হচ্ছিল, বাংলাদেশে তখন ভূতের গল্প বলা চ্যালেঞ্জের ব্যাপারই ছিল। কিন্তু সেই সময়, কম চ্যানেলের বাংলাদেশে তিনি করেছিলেন আট পর্বের ‘অদেখা ভুবন’ সিরিজ।

Ditiojon

দ্বিতীয় জন নাটকে হুমায়ুন ফরীদি ও সুবর্ণা মুস্তাফা


বলা যায়, অতিপ্রাকৃত গল্পের প্রতি তার আকর্ষণই ‘দ্বিতীয় জন’। প্যারালাল মিস্ট্রির এই গল্পে বাড়ির কর্তা ও তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফরীদি ও সুবর্ণা মুস্তাফা। ঘরের দুজন কাজের লোকসহ (অভিনয়ে সালেহ আহমেদ ও মায়া ঘোষ) চার চরিত্রের এই নাটকে ফরীদি প্রপস হিসেবে পেয়েছিলেন একটি হুইলচেয়ার।

‘না, না। আমি সমস্যা বিশারদ নই। আমি যা হয়েছি তার নাম ভেজিটেবল। আমার হাঁটার শক্তি নেই। মানুষ জেলখানায় বন্দী থাকে। আর আমি দশ বছর ধরে… এই হুইলচেয়ারে বন্দী হয়ে আছি’।

হুইলচেয়ারে বসেই ফরিদীর সংলাপ। এর মধ্যে থমকে যাওয়া থেকে শুরু করে চেয়ারের হাতলে বারি দেওয়া, কি করেন না তিনি? এতটুকু সংলাপে ফরীদি ঝুঁকে পরেন। তার কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়। তিনি হুইলচেয়ার ঘুরাতে থাকেন। তার অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয় মকসুদ জামিল মিন্টুর আবহসঙ্গীত। দৃশ্য জমে উঠতে থাকে।

হুইলচেয়ারে বসেই ফরিদীর সংলাপ। এর মধ্যে থমকে যাওয়া থেকে শুরু করে চেয়ারের হাতলে বারি দেওয়া, কি করেন না তিনি? এতটুকু সংলাপে ফরীদি ঝুঁকে পরেন। তার কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়। তিনি হুইলচেয়ার ঘুরাতে থাকেন। তার অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয় মকসুদ জামিল মিন্টুর আবহসঙ্গীত। দৃশ্য জমে উঠতে থাকে।

হুমায়ূন আহমেদের স্ক্রিনপ্লে, লার্জার দেন লাইফ সংলাপ, খালিদ মাহমুদ মিঠুর সিনেমাটোগ্রাফি, ফরীদি-সুবর্ণার কেমেস্ট্রি আর একটি হুইলচেয়ার; ‘দ্বিতীয় জন’ এমন একটি লাভ লেটার, যা কখনোই ডাকে ফেলা যায় না।

 

অনাথ বাবুর ভয়

সত্যজিৎ রায়ের লেখা প্রথম ভূতের গল্প ‘অনাথ বাবুর ভয়’। ১৯৬২ সালে ‘সন্দেশের’ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল গল্পটি।

গল্পের শুরুটা এমন—

‘অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত কমাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ, দু-একটা গল্পের প্লটও মাথায় ঘুরছিল, কিন্তু এত কাজের মধ্যে কি আর লেখার ফুরসত জোটে? তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে দশদিনের পাওয়া ছুটি আর দিস্তেখানেক কাগজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম’।

Faridi 5_1

অনাথ বাবুর ভয়-এ ফরীদির পনিটেল


২০০৯ সালে বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য গল্পটির নাট্যরূপ দিয়েছিলেন শফিকুর রহমান শান্তনু। টেলিফিল্মটি নির্মাণ করেছিলেন গোলাম সোহরাব দোদুল। রিংকন খানের সিনেমাটোগ্রাফি ও তানভীর আলম সজীবের নাটকীয় আবহ সঙ্গীত, ‘অনাথ বাবুর ভয়’ সত্যজিৎ রায়ের লেখা গল্পটির মডার্ন চিত্ররূপ।

টেলিফিল্মে উত্তম পুরুষকে পাওয়া যায় আনিসুর রহমান হিসেবে, যিনি একজন রিপোর্টার কাম লেখক, ছুটি কাটাতে যান বাইরে। যাত্রা পথে ট্রেন স্টেশনে তার দেখা হয় অনাথ বাবুর সঙ্গে। গল্পে নির্মাতা দোদুলের অনাথ বাবুই ফরীদি।

টেলিফিল্মে উত্তম পুরুষকে পাওয়া যায় আনিসুর রহমান হিসেবে, যিনি একজন রিপোর্টার কাম লেখক, ছুটি কাটাতে যান বাইরে। যাত্রা পথে ট্রেন স্টেশনে তার দেখা হয় অনাথ বাবুর সঙ্গে। গল্পে নির্মাতা দোদুলের অনাথ বাবুই ফরীদি। মাথার পেছনে ছোট্ট পনিটেল, ঘড়ি হাতে পায়ে কনভার্স। ট্রেনে অনাথ বাবুর ব্যাগ থেকে বের হয়ে আসে অ্যাডগার অ্যালেন পো’র বই। এরপর রিপোর্টার কাম লেখক আগ্রহ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে যান।

জানতে চান, আপনি বুঝি ভূতের বই খুব পছন্দ করেন?

: পড়ি আর কী।

আমি বেশ কিছু এই জাতীয় বই লিখেছি। কাটতি ভালো।

: আপনার কয়েকটা বই আমি পড়েছি।

কেমন লেগেছে?

: খারাপ না। তবে অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়েছে।

আপনার মনে হচ্ছে অনেক অভিজ্ঞতা?

: অনেক তরুণ লেখকই সমালোচনা সহ্য করতে পারে না।

 

কোনো কোনো সময় পুরো ফিকশন ভালোলাগতে হয় না। কোনো একটা সহজ দৃশ্য জিতে নেয় মন।

 

পালাবি কোথায়

ফরীদিকে মেইনস্ট্রিম সিনেমায় নিয়ে যান নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন। জীবদ্দশায় সেখানে যেসব মন্দ মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে ফরীদি খ্যাতি কুড়িয়েছেন, তার বেশিরভাগ একই আদলে গড়া। এসবের শুরু হয়েছিল খোকনের হাত ধরেই। খোকনের ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন ফরীদি। তাদের এই কম্বো হলিউডের মার্টিন স্করসেজি আর রবার্ট ডি নিরোর মতো নয়। তারপরেও খোকনকে নিয়েই যেন ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন ফরীদি। প্রযোজনা করেছিলেন ‘পালাবি কোথায়?’

Faridi 2_1

পালাবি কোথায়-এর একটি মুহূর্ত


১৯৯৭ সালের এই সিনেমাকে বলা যায় কমেডি কাল্ট। এটা মেরিটের দিক থেকে কুন্দন শাহ’র ‘জানে ভি দো ইয়ারো’ (১৯৮৩) নয়। কিন্তু রাজকুমার সান্তোষির ‘আন্দাজ আপনা আপনা’র (১৯৯৪) সমান। দুটো সিনেমার মধ্যে মিলও আছে একটা। দুটোই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অথচ শাবানা, চম্পা, সুবর্ণা মুস্তাফা ও বিশেষ চরিত্রে আফজাল হোসেন— বাংলাদেশের সে সময়কার টেলিভিশন ও বিগ স্ক্রিনের টপ আর্টিস্টদের কাস্ট করেছিলেন খোকন।

ফরীদিকে মেইনস্ট্রিম সিনেমায় নিয়ে যান নির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন। জীবদ্দশায় সেখানে যেসব মন্দ মানুষের চরিত্রে অভিনয় করে ফরীদি খ্যাতি কুড়িয়েছেন, তার বেশিরভাগ একই আদলে গড়া। এসবের শুরু হয়েছিল খোকনের হাত ধরেই।

‘পালাবি কোথায়’, মিড লাইফ ক্রাইসিসে ভোগা গার্মেন্টস ম্যানেজার হাওলাদারের গল্প, যার একজন সুন্দরী স্ত্রী রয়েছে। নারীদের ওপর আসক্তি রয়েছে হাওলাদারের। মাত্রাটা এত বেশি যে কর্মক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে তিনজন নারীর একটি দল গড়ে উঠে। গল্পে ম্যানেজার হাওলাদার সমাজের তিন জায়গা থেকে উঠে আসা দলটির কাছে পরাজিত হন। পুরুষত্বের চেহারা ভেঙে পড়ে।

খোকনের আনকন্ট্রোলড নির্দেশনা, কাজী মোরশেদের কাহিনি, হাসান আহমেদের (জনরা ধরতে না পারা) সিনেমাটোগ্রাফি, জিন্নাত হোসেনের সম্পাদনা, খলিলুর রহমানের মেকাপ কিংবা ম্যানেজার চরিত্রে ফরীদির ‘হ্যাপি গো লাকি’ মনোভাব, ‘পালাবি কোথায়’ দ্বিতীয়বার না করা একটা এক্সপেরিমেন্ট তো বটেই!

 

ব্যাচেলর

‘আমি তো ভাবতেই পারি না যে আমার ফ্ল্যাটের বারান্দায় একজন মহিলার পেটিকোট ঝুলছে। উফ, ডিসগাস্টিং’। ‘ব্যাচেলর’ (২০০৪) সিনেমার শুরুর দিকে ফরীদির সংলাপ। গল্পে ফরীদিকে পাওয়া যায় আবরার ভাই হিসেবে, যিনি নিজে ব্যাচেলর এবং ব্যাচেলরদের ফ্ল্যাট ভাড়া দেন।

Faridi 4_1

ব্যাচেলরের একটি দৃশ্য হুমায়ুন ফরীদি ও ইলোরা গওহর


চিরকুমার সংঘের সভাপতি আবরার ভাই। গ্রামে তার একটি লাইব্রেরি আছে এবং সিনেমা নিয়ে রয়েছে বিস্তর আকর্ষণ। নারীবর্জিত আবরার ভাই সাগরপাড়ে এক নারীকে সিনেমার গল্পের ন্যারেশন দিচ্ছেন। কিন্তু একপর্যায়ে তিনি নারীটিকে জড়িয়ে ধরেন।

নিজের ব্যবহারে চমকে যান মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগা আবরার ভাই। জায়গাটা দ্রুত ত্যাগ করেন তিনি। শুরু হয় এলোমেলো পথহাঁটা। জ্বর আসে তার। এর আগে ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠে আইয়ুব বাচ্চুর গিটার প্লেয়িং, বাংলা সিনেমায় সত্যি সত্যি একটা ব্লুজ রক। ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার উপরে পড়েছে’।

সং রাইটার মারজুক রাসেল, স্ক্রিনরাইটার আনিসুল হক এবং নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী— প্রত্যেকে যেন আবরার ভাইকে কেয়ার করেন। প্রধান চরিত্রে না থেকেও ফরীদি হয়ে উঠেন বাংলা সিনেমার ‘সিক্সটি নাইন’।

‘ব্যাচেলর’, নির্মাতা ফারুকীর ডেব্যু সিনেমা। এটা সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ (১৯৭০) নয়, কিন্তু রম-কমের ভেতর কঠিন বাড্ডি সিনেমা। সাইফুল ইসলাম বাদলের সিনেমাটোগ্রাফি, লিটনের ফ্ল্যাট, শহীদ কাদরীর কবিতার বিবিধ ব্যবহার, জেরিন চা আর এক সিনেমায় শাবনূর, জয়া আহসান ও অপি করিমের উপস্থিতি— বলা যায়, বাংলাদেশের সিনেমাকে খানিকটা বদলে দিয়েছিল ‘ব্যাচেলর’। বদলে দিয়েছিল ফরীদিকেও। শেষ পর্যন্ত ব্যাচেলর হয়েই মারা যান তিনি।

 

আহা

স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝরের ডেব্যু সিনেমা ‘আহা’ (২০০৭)। সম্ভবত একাডেমিক ইন্টারেস্ট থেকেই সিনেমার জন্য দশ কাঠা জমির ওপর তৈরি পুরনো একটি বাড়ির গল্প বেছে নেন তিনি। গল্পে বাড়িটির বয়স আনুমানিক একশো বছর এবং তার অবস্থান অবশ্যই পুরনো ঢাকায়। বিপত্নীক ও ধার্মিক মল্লিক সাহেবের বাড়িটির আশপাশে ছয়তলা-সাততলা বিল্ডিং গড়ে উঠতে শুরু করে। তিনিও পান অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স বানাবার অফার। একইসঙ্গে ঐতিহ্য রক্ষা আর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার প্রলোভন, তাকে ফেলে দেয় দ্বিধায়।

Faridi 1_1

আহা’র আন্ডারওয়্যার মোমেন্ট


এর মধ্যে তার একমাত্র মেয়ে রুবা ফিরে আসে আমেরিকা থেকে। স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে দেশে আসা রুবা পুরনো বাড়ির এঘর ওঘর ঘুরে বেড়ায়। উঠে আসে বাড়িটির সাথে তার সম্পর্ক। মেয়েবেলা। ফাহমিদা নবীর গান ‘লুকোচুরি, লুকোচুরি গল্প’। তারপর একদিন জানালায় চোখ রেখে আকাশ দেখার চেষ্টা করে রুবা। কিন্তু পাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় তিনি আবিষ্কার করে বসেন একটি হলুদ আন্ডারওয়্যার।

ড্রামার ঠিক মধ্যভাগে এই আন্ডারওয়্যার নিয়েই স্ক্রিনে আবির্ভূত হন ফরীদী। গল্পে তার চরিত্রের নাম কিসলু হাসান। চিরকুমার কিসলুর সঙ্গে রুবার বন্ধুত্ব তৈরি করে লাভ অ্যাঙ্গেল। যদিও ‘আহা’ লাভ স্টোরি নয়, এর প্রধান চরিত্র একটি পুরোনো বাড়ি। তবে সাত রঙের সাতটি আন্ডারওয়্যার মোমেন্ট থেকে ট্র্যাজিক পরিণতি পর্যন্ত ফরীদি কিসলুকে প্রেজেন্ট করেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘রেখো মা দাসেরে মনে’র মতো করেই।

ড্রামার ঠিক মধ্যভাগে এই আন্ডারওয়্যার নিয়েই স্ক্রিনে আবির্ভূত হন ফরীদী। গল্পে তার চরিত্রের নাম কিসলু হাসান। চিরকুমার কিসলুর সঙ্গে রুবার বন্ধুত্ব তৈরি করে লাভ অ্যাঙ্গেল। যদিও ‘আহা’ লাভ স্টোরি নয়, এর প্রধান চরিত্র একটি পুরোনো বাড়ি। তবে সাত রঙের সাতটি আন্ডারওয়্যার মোমেন্ট থেকে ট্র্যাজিক পরিণতি পর্যন্ত ফরীদি কিসলুকে প্রেজেন্ট করেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘রেখো মা দাসেরে মনে’র মতো করেই।

নির্মাতা নির্ঝরের স্ক্রিন রাইটিং-স্থাপত্যমন, সাইফুল ইসলাম বাদলের সিনেমাটোগ্রাফি, দেবজ্যোতি মিশ্রর মিউজিক এবং অর্ঘ্যকমল মিত্রের সম্পাদনা—‘আহা’ যেন তার নামকেই স্থায়িত্ব দেয়। একইসঙ্গে সাথী ইয়াসমিনের স্ক্রিন প্রেজেন্স, তারিক আনাম খানের আ–ারপ্লেয়িং, খালেদ খানের কমিক টাইমিং আর ফেরদৌসের চার্মের ভেতর সিনেমাটি যেন হয়ে ওঠে ক্রাইম ড্রামাও।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রেত

ষোড়শ শতাব্দীর দিকে ইউরোপে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে ডেভিলের প্রভুত্ব মেনে নিয়েছিল কিছু মানুষ। ডেভিলের কাছে তাদের বশ্যতা স্বীকার ও উপাসনা করার বিভিন্ন পদ্ধতিকে বলা হয় ব্ল্যাক ম্যাজিক। বাংলাদেশে এ বিষয়ে টানটান একটা উপন্যাস লিখেছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ‘প্রেত’ নামের সেই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে।

Faridi 3_1

প্রেত-এ জোয়ারদার চরিত্রে ফরীদি


তারও ৫-৬ বছর পর উপন্যাসটি অবলম্বনে একই নামে ১১ পর্বের সিরিয়াল নির্মাণ করেন আহীর আলম। একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছিল সিরিয়ালটি। এতে ফরীদি অভিনয় করেছিলেন তিনটি চরিত্রে। এর মধ্যে একটিতে আঁতেল, একটিতে সাধু এবং একটিতে জোয়ারদার হয়েছিলেন তিনি।

পেশায় (!) অ্যাস্ট্রোলোজার জোয়ারদার একজন প্রেতসাধক। গল্পের প্রধান চরিত্রকে লুসিফারের মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করেন জোয়ারদার। তারপর বদলে যায় প্রধান চরিত্রের জীবন। নির্মাতা আহীর আলমের ট্রিটমেন্ট, দেওয়ান শামসুর রকিবের নাট্যরূপ, কামরুল হাসান স্বাধীনের সিনেমাটোগ্রাফি, ফুয়াদ ইবনে রাব্বির আবহসংগীত, আহমেদ রুবেলের সঙ্গে একটুখানি রিচি সোলায়মান, অনবদ্য কুমকুম হাসান আর একটা প্রেতসভায় ফরীদির অভিনয়—‘প্রেত’ সবসময়ই বিশেষ কিছু হয়ে ওঠে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

কবি ও গদ্যকার। জন্ম ১০ নভেম্বর, ১৯৯৩। পড়েছেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ। একমাত্র প্রকাশিত বই ‘রাউলা’ (২০২০)।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।