০১.
মাথায়, অন্ধকারের দিকচিহ্ন নিয়ে ব্যাপ্ত পাখিদল। একটা জোকার হাসে মেঘের মতোই বিস্তৃত। ওকে কিছু পাউডার দাও, আর সামান্য ডেকোরেশন। লোকের আনন্দ হবে। আনন্দই তো ওদের কাছে সব। এই আনন্দ ওদের শব। যাবতীয় মস্তিষ্ক-বিকৃত অলংকার— আনন্দের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে হাহাকার। তার পেছনে গ্রাম, মাহফিল। মোমবাতি উঁবু হয়ে জমেছে স্থির। স্বপ্নের পাশে একটা ছটফটে শহর, একাকী দ্বীপের মতো চঞ্চল। যেন ডুবে যাচ্ছে ব্যাকুলনদীর জলে।
০২.
বন্দুক বাজিও না রাসকেল, শব্দদূষণ হয়। বাস্তুশাস্ত্রে জাগে রংধনুর ঘোড়া, শব্দ উড়িয়ে আসে। সারিবদ্ধ পাহাড়ের নিচে বৃদ্ধ গুলসারি, একা শুয়ে আছে। তার ঘুমের ভেতর, স্বপ্নে, জন্ম নিচ্ছে ফুল। কিছু পথচিহ্ন জেগে আছে অচেনা ফুলের শরীরে। অজস্র আলাপের পাশে ভিন্ন ভঙ্গিমায় যেন আটকে আছে তামাম দুনিয়া। গড়িয়ে যাচ্ছে দুপুর, আরো কিছুদূর, নষ্ট ঘড়ির কাছে। অপেক্ষার কিনারে দাঁড়িয়ে, খাবার নষ্ট হলো সব। তোমারও আহার হলো না।
০৩.
অসংখ্য দুপুরের কথা বলা যেতে পারে, অগণিত মেঘেদের নাম। নির্ঘুম রাতের গল্প বলা যেতে পারে, অথবা দূরের কোনো গ্রাম। কোন গল্পে সূর্য অস্ত যাবে, ভেবে তুমি ছুঁড়ে দাও জৈষ্ঠের রোদ। আহত ফুলের পাশে গেঁথে রাখো শিশুদের হাসি। সকলই দরকারি, কেবল মানুষ অহেতুক। বিচিত্র বেদনা পুশ করছে খেলাচ্ছলে। কাঁদছে অক্টোপাস, প্রসাধনহীন চোখে। মঙ্গলের ভূমির মতো, শোকবার্তা হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভালোবাসা। প্রচণ্ড প্রেমের কথা বলা যেতে পারে, কাঠফাটা রোদে ক্রিকেটের মাঠ। ভাঙা রেডিয়োতে ছড়িয়ে পড়ে সন্ধ্যা, এক বিরাট গরু-ছাগলের হাট।
০৪.
দগ্ধ হচ্ছে বন, আর তুমি ডুবে যাচ্ছ। এ কেমন ঋতু! তীর্থবনে— কৃষকের মৃত্যু ফুটে আছে রক্তিম কাঁটায়। ধ্বনিহীন, শোকবার্তার কাছে দৈব অনুরোধ, অনির্বাণ প্রেমিকার মতো জড়িয়ে দাও ফসলের খেতে। যা কিছু উজ্জল মোড়কে, ঘ্রাণযুক্ত স্মৃতির পোশাক, খুলে, নগ্ন করে দাও। ঋতুর পাশে নদী। বালু তোলার শব্দ। কৃষকের সমাধিতে রোপন করো দূরাগত ফসলের ঘ্রাণ। তারপর যথারীতি কান্নার দিকে যাও। নিজস্ব চোখের কাছে হাত পেতে ডাকো মেঘমল্লার, বর্ষার মৌসুম।
০৫.
বসন্তের কোকিলটা গেল কই? সময়ের প্রতি সে ব্যাপক শ্রদ্ধাশীল। পিরিয়ড ফুরাইলে তার যথাতথা ডাকাডাকি নাই। অদেখা বাগানের কোলঘেঁষে, আমি বিরক্ত বহুৎ, দেখি এপ্রিলের ঝড়! আগুনের সামান্য পুঁজি, অথচ অনেক সিগারেট। —চলে যাও শৌখিন শিকারীর সাথে, যদি কিছু বন্দোবস্ত হয় মৎস্যশিকারের। অথবা বাদ্যযন্ত্র আনো। সে-ও খানিক কাজ। ঝুমঝুমিয়ে আনন্দযজ্ঞ করো। একদিকে মন্দিরার কাম, অন্যদিকে ভীষণ উচ্ছাস। দমকা হাওয়া নেই। অনুশোচনায় ডুবে যাচ্ছে কোকিলের গান।

জন্ম ৩০ ডিসেম্বর; বাঙলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলায়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সম্পাদনা করছেন শিল্প-সাহিত্যের অন্যতর লিটল ম্যাগাজিন ‘বিন্দু’। কবিতা, প্রবন্ধ ছাড়াও তিনি লিখেছেন নতুন ধরনের আখ্যানধর্মী গদ্য৷ সাম্য রাইয়ানকে নিয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ‘তারারা’ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ‘মনমানচিত্র’, ভারতের ‘এবং পত্রিকা’ তাকে নিয়ে বিশেষ একক সংখ্যা ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন ‘নিসর্গ’ বিশেষ মূল্যায়ন (ক্রোড়পত্র) প্রকাশ করেছে৷ ভারতের নব্বই দশকের কবি সুবীর সরকার সাম্য রাইয়ান প্রসঙ্গে ‘সাম্যপুরাণ’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ: সুবিমল মিশ্র প্রসঙ্গে কতিপয় নোট [গদ্য, ২০১৪]; বিগত রাইফেলের প্রতি সমবেদনা [কবিতা, ২০১৫]; মার্কস যদি জানতেন [কবিতা, ২০১৮]; হলুদ পাহাড় [কবিতা, ২০১৯]; চোখের ভেতরে হামিং বার্ড [কবিতা, ২০২০]; লোকাল ট্রেনের জার্নাল [গদ্য, ২০২১]; লিখিত রাত্রি [কবিতা, ২০২২] ও হালকা রোদের দুপুর [কবিতা, ২০২৩]; জলের অপেরা [কবিতা, ২০২৪]; সকল প্রশংসা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের [উপন্যাস, ২০২৫]৷ সম্পাদিত গ্রন্থ: উৎপলকুমার বসু [নির্বাচিত রচনা ও পর্যালোচনা, ২০২২]; জন্মশতবর্ষে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ [পর্যালোচনামূলক প্রবন্ধ সংকলন, ২০২৩]; শম্ভু রক্ষিত: পাঠ ও বিবেচনা [নির্বাচিত রচনা ও পর্যালোচনা, ২০২৫]।