রবিবার, ডিসেম্বর ১

দিলারা হাফিজের ভ্রমণগদ্য : মায়ান সভ্যতার দেশে

0

Motif-01উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণে স্থিত মেক্সিকো সিটি মায়ান সভ্যতার আদি পীঠস্থান। বলা যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক পিরামিডের নিদর্শনে আনন্দ-বিধুর। তিলপা মেক্সিকান রাজ্যের রাজধানী শহর হলো মেক্সিকো সিটি। মেক্সিকোর ৩২টি রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর এটি। এর চারপাশ জুড়ে প্রশান্ত মহাসাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর ও অতলান্তিক মহাসাগরের মায়াময় আহ্বান। পৃথিবীর তিনটি ভাষার অন্যতম একটি স্প্যানিশ সরকারি ভাষা হিসেবে এখানে বর্তমান। মুদ্রার নাম পেসো। ধর্মীয়ভাবে খ্রিষ্টান ৮৮%, নাস্তিক ১০% অন্যান্য ২%। সময়টা ছিল আমার অবসরের কাল; অর্থাৎ ২০১৫ সাল। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের জন্য অভিন্ন আমাদেরকে কানাডার টরন্টো শহরে বেড়াতে নিয়ে গেল। ওন্টারিও প্রভিন্সের বাঙালি প্রধান টরন্টো সিটির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ছাড়াও কানাডার রাজধানী অটোয়া সিটি এবং কানাডার সবচেয়ে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সিটি মন্ট্রিলে নিয়ে গিয়েছিল উইক্যান্ডের ছুটিতে।


দিলারা হাফিজ

মেক্সিকোর ক্যানকুনে ক্যারেবিয়ান সমুদ্রের ধারে কবি পরিবার


সন্তানদের সান্নিধ্যলাভে—বহু বর্ণিল প্রজাপতির মতো ঘুরে-ফিরে, স্টারবাক্স কফিশপে বসে কফি ও ক্রোঁসো খেতে খেতে কোন ফাঁকে যে দুমাস কেটে গেল! এলো নভেম্বর। এ মাসের ২০ তারিখ ছিল আমার জন্মদিন। সন্তানেরা খুব করে মনে রাখে মা-বাবার জন্মদিন এবং বিবাহবার্ষিকীর তারিখ ও দিন-ক্ষণগুলো।

২০০৪ সালে অভিন্ন টরন্টোর স্যুলিখ বিজনেস স্কুলে পড়তে আসবার পর থেকে—এসব বিশেষ দিনে উপস্থিত থাকতে পারেনি বটে, কিন্তু টরন্টো থেকে নিয়মিত আমাদের বিশেষ দিনগুলোকে স্মরণ করে কার্ড, কেক, ফুল পাঠিয়ে দিত ঢাকার ঠিকানায়। এ বছর আমাদের কাছে পেয়ে অত্যন্ত আড়ম্বর করে আমার জন্মদিন পালন করে আমাদের দুজনকেই আনন্দে হত-বিহ্বল করেছিল ওরা দুজন মিলে।

আসলে সিএন টাওয়ার এমনই একটি দর্শনীয় স্থান যে, যেখানে ডলার হিসেব করলে দেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। ১৯৯৬ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স আমেরিকান সোসাইটি দ্বারা বিশ্ব আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ঘোষণা করেছে এই সিএন টাওয়ারকে।

১৯৭৬ সালে নির্মিত ১৪৭ তলা বিশিষ্ট কানাডা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার (সিএনটাওয়ার) টরন্টো সিটির অন্যতম দর্শনীয় স্থানের একটি। এই টাওয়ারের ১৪৫ তলায় প্রতিষ্ঠিত একমাত্র রেস্টুরেন্টে রাতের ডিনারসহ কেক কেটে জন্মোৎসব পালন করাল অব্যয়-তুলি। মুহূ্র্তেই অব্যয়ের পকেট থেকে প্রায় ৮০০ ডলার পালিয়ে গেল যেন। আসলে সিএন টাওয়ার এমনই একটি দর্শনীয় স্থান যে, যেখানে ডলার হিসেব করলে দেখাটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। ১৯৯৬ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স আমেরিকান সোসাইটি দ্বারা বিশ্ব আধুনিক সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি ঘোষণা করেছে এই সিএন টাওয়ারকে। ২০১০ সালে বুর্জ খলিফা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার হিসেবেপরিচিত ছিল। সেখানেই সন্তানেরা আমাকে জন্মদিনে এমন সারপ্রাইস দিল যে, আনন্দে আমি প্রায় বাকরুদ্ধ। কিন্তু মনে পড়ছিল আবুল হাসানের ‘নিঃসঙ্গতা’ কবিতার তিনটি পঙ্‌ক্তি—মনে পড়ছিল বারবার।

 

‘অতটুকু চায়নি বালিকা!
অত শোভা, অত স্বাধীনতা!
চেয়েছিল আরও কিছু কম’

 

তবু এমত মোহনীয়, গর্জিয়াস উৎসব যেন আমার ডানায় ওড়বার শক্তি এনে দিল বিস্ময়কররূপে। ১নং ওয়ান ইয়াঙের পঁচিশ তলার বাসায় ফেরার পরে অভিন্ন এক জোড়া হীরের কানফুল পরিয়ে দিয়ে চমকে দিল আরও এক দফা। এমনকি রাতেই রফিক আজাদকে অভিন্ন জানাল—বাবা, মায়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তোমাদের মেক্সিকোর ক্যানকুনে একদম সমুদ্র ঘেঁষে আইবেরওস্টার নামের একটি অভিজাত রিসোর্টে নিয়ে যাব।


দিলারা হাফিজ

মৃতদের স্মরণে আয়োজিত ‘ডে অফ দ্য ডেড’ অনুষ্ঠানে


অল্প হেঁটেই যেন তুমি ক্যারিবিয়ান সমুদ্রের জল ছুঁতে পারো। ওখান থেকে ১২০ মাইল দূরে মায়ান সভ্যতার আদি পীঠস্থান এবং সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্যতম ‘চিচেন ইতজা’ (Chechen itza) আমরা যেতে পারব অনায়াসে। তাই হলো ৫ দিনের এই প্রোগ্রামে আমরা চিচেন ইতজা দেখেছিলাম অনেকটা সময় নিয়ে। দীর্ঘ হাঁটাহাঁটিতে কবির অনীহা ছিল বলে দুই পুত্র মিলে গেট থেকে তাদের বাবাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে, অপরজন মাথার ওপরে বর্ষাতি ধরে—ঠেলে ঠেলে নিয়ে ঘুরিয়েছে চিচেন ইতজার মনুমেন্টের চার দিকে। পরে একটা স্যুভেনীর শপ থেকে মায়ান ভাষার অক্ষরে রফিক আজাদের নাম লিখে—লকেটটি সোনার একটা চেইনে ভরে পিতারগলায় ঝুলিয়ে দিল অভিন্ন।


দিলারা হাফিজ

চিচেন ইৎজার পাশে কবি রফিক আজাদ পুত্র অভিন্ন আজাদ অব্যয় আজাদ এবং কবি স্ত্রী কবি দিলারা হাফিজ


সেদিনের গাইড ভদ্রলোক কবিকে খুব সম্মান করে একটা মুখোশ উপহার দিয়েছিল। এদিন রফিক আজাদ হাসিমুখে দারুণ এনজয় করেছিল প্রত্যেকটি ইভেন্ট। একটা সময় কবি ক্লান্ত হয়ে বলেছিলেন, আহা বাবা দশটি বছর আগে যদি তুমি এসব দেখাতে, তাহলে বড়ো আনন্দ হতো। লিখতেও পারতাম কিছু। কিন্তু এখন তো শরীরই চলে না ঠিকমতো। চিচেন ইতজা মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে আধুনিক যুগের রিসোর্ট শহর হিসেবে বিশেষভাবে খ্যাত ও পরিচিত। চিচেন ইতজা (chichen itza) নামটি মায়ান সভ্যতার “ইতজার কূপের মুখ” থেকে এসেছে এবং এটি একটি মায়ান ভাষার শব্দ।

অন্য দিকে, ইতজা হলো মায়ানদের একটি নৃগোষ্ঠী, যারা ইউকাটান উপদ্বীপের উত্তর অংশে মায়া সভ্যতার বিকাশের সময় ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেছিল। মেক্সিকোর ক্যানকুনের প্রথম যাত্রায় কবি রফিক আজাদ, আমি এবং আমাদের দুই সন্তান অভিন্ন অব্যয় মিলে চারজন। এই সুখময় ভ্রমণ ছিল আমাদের দু’জনের জীবনের পারিবারিক স্বর্গসময়।

অভিন্নের উদ্যোগেই মূলত ২০১২ সালে আমাদের ইউরোপ ভ্রমণ এবং ২০১৫ মেক্সিকো ভ্রমণ সম্ভব হয়েছিল। নইলে তৃতীয় বিশ্বের মতো একটি গরিব দেশের কবি-সাহিত্যিক-শিক্ষক হিসেবে এই ভ্রমণ আমরা চিন্তাও করতে পারিনি। ঘুরে ফিরে সোনালি এই অতীতের অসামান্য রঙিন সময়ের স্মৃতিগাথাই যেন বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে।


দিলারা হাফিজ

মায়ের কোলে বসেই অহমসোনার পিরামিড দর্শন…


২০১৬ সালের ১২ মার্চের পরে থেকে বোধ হয় বর্তমানের চেয়ে অতীতেই বাস করি দিনের বেশিরভাগ সময়। দ্বিতীয় বারের মতো মেক্সিকো ভ্রমণ সম্ভব করে তুলেছে আমাদের ছোটো পুত্র অব্যয় ও বউমা ফারজানা আজাদ তুলি। এক কথায় অহমসোনা এবং তার মা-বাবার একান্ত ইচ্ছে, উৎসাহে ও উদ্যোগে আবারও মেক্সিকো সিটির অন্দর-বাইর দেখতে পেলাম। ২৫ অক্টোবর ২০১৯ সালের ভোর সকাল।

যাত্রার সূচনালোকেই অহমসোনার আনন্দ তৎপরতা আমাদের মন কেড়ে নিচ্ছিল।

সব কাজে সেই যেন অগ্রগামী এক ব্যস্ত শিশু গাইড। লাগেজ গোছানো থেকে শুরু করে সারা পথ লাগেজ বহন করেছে সে। পঁচিশ দিনের চেহারার সঙ্গে ১৫ মাসের শিশুর চেহারা মিলছে না বলে ইমেগ্রেশন অফিসার তার পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছিল বারবার। কারো সাহায্য ছাড়া দিদিমার লাগেজ ঠেলতে ঠেলতে প্লেনের দরজা পর্যন্ত এনেছে। মেক্সিকো এয়ারপোর্টে নেমেও সে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে তার সফরসঙ্গীদের সুবিধা দিতে। দীর্ঘ লাইন সরছে না বলে তার আগে দাঁড়ানো যাত্রীর ব্যাগ বাঙালি কায়দায় ওভারটেক করে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল সে। যে দেশেই জন্ম ও বাস করুক বাঙালির রক্ত যেন কথা বলে।


দিলারা হাফিজ

আইবেস্টার রিসোর্টসে সকালের ব্রেকফাস্ট সপরিবারে


এ যাত্রায় খোদ মেক্সিকো সিটির একটি অভিজাত এলাকায় থাকা এবং দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে অব্যয়-তুলি। আমাদের গুলশান বনানীর মতো অভিজাত এক এলাকায় লা কন্ডেসা নামের একটি বাড়ির তৃতীয় তলায় বিশাল বড়ো একটি ফ্লোরে ইয়ার বিএনবি করেছিল তুলি। ২৬ অক্টাবরের পুরো দিনটি কাটালাম লা কন্ডেসা, মেক্সিকো বস্কে দে চ্যাপুলটেপেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেক্সিক্যান সূর্যোদয়ের দেখা পেলাম। শুরুতেই বলেছি, প্রথম এসেছিলাম মেক্সিকোর ক্যানকুনে, সমুদ্রশাসিত বিচ প্রধান সিটিতে। এবার খোদ মেক্সিকো সিটি উপভোগ করতে। হাঁটতে হাঁটতে এখানকার বিখ্যাত ফিশ টাকোর একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে চিংড়ি মাছের দারুণ সুস্বাদু টাকো দিয়ে ব্রাঞ্চ করলাম প্রথম দিনেই।

অতঃপর সেখান থেকে উবারে করে গেলাম ‘বস্কে দে চ্যাপুলটেপেক’। স্প্যানিশ ভাষার বস্ক মানে ফরেস্ট বা বনভূমি। গ্রেটার মেক্সিকো সিটির অন্যতম ফুসফুস এটি। মেক্সিকো উপত্যকার অক্সিজেনের খনি হলো এর ঘন সবুজ গাছপালা ও বৃক্ষাদি। বলা হয়ে থাকে পশ্চিমা গোলার্ধের শহর উদ্যানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান একটি উদ্যান, যার ভূমির পরিমাণ ১৬৯৫ একর জমি। উপনেবেশিক আমলে এই উদ্যানের মধ্যেই চ্যাপুলটেপেক ক্যাসল তৈরি হয়েছিল যা পরবর্তী সময়ে মেক্সিক্যান রাষ্ট্র প্রধানদের সরকারি আবাসে পরিণত হয়েছিল। স্প্যানিশ ভাষায় ‘কাস্টিলো দে চ্যাপুলটেপেক’ প্রসাদটি নির্মিত হয়েছিল চ্যাপুলটেপেক পাহাড়ের শীর্ষদেশে। চ্যাপুলটেপেক নামটিও এসেছে ‘নাহুয়াতল’ শব্দ ‘চাপুলটেপ্যাক’ শব্দ থেকে যার অর্থ ‘তৃণমূলের পাহাড়’।

বিভিন্ন সময়ে সম্রাজ্ঞীদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ছাড়াও তাদের ব্যবহৃত অলংকারের গোটা কয়েক ছবি তুলে, বৃষ্টির তাণ্ডবে ভিজে গৃহে ফিরতে ফিরতে ৭টা বেজে গেল। এখানেও ঢাকার মতো জ্যাম, বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। মানুষগুলোও দেখতে প্রায় বাঙালিদের মতো। গাত্রবরণ বাদামি এবং উচ্চতায়ও বাঙালি হাইটের কাছাকাছি।

আজকের সারাবেলা এই চ্যাপুলটেপেক উদ্যানেই কেটেছে আমাদের। ক্যাসেল ছাড়াও নানা আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে গোটা পাহাড়টিকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটক ছাড়াও মেক্সিকোর সব শ্রেণির মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ল এই উদ্যানে। পাঁচটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় ক্যাসেলের গেট, কাজেই তাড়াহুড়ো করে দেখে নিতে হলো হাতে সময় কম ছিল বলে। বিভিন্ন সময়ে সম্রাজ্ঞীদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ছাড়াও তাদের ব্যবহৃত অলংকারের গোটা কয়েক ছবি তুলে, বৃষ্টির তাণ্ডবে ভিজে গৃহে ফিরতে ফিরতে ৭টা বেজে গেল। এখানেও ঢাকার মতো জ্যাম, বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। মানুষগুলোও দেখতে প্রায় বাঙালিদের মতো। গাত্রবরণ বাদামি এবং উচ্চতায়ও বাঙালি হাইটের কাছাকাছি। ২৭ অক্টোবরে গেলাম মেক্সিকোর তেওতিহুয়াকান সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট দেখতে। তিওতিহুয়াকান অবস্থিত পাশাপাশি দুটো, পিরামিড—১) অব দ্য সান ২) পিরামিট অব দ্য মুন ডে অব দ্য ডেথ পালন উপলক্ষ্যে পরিবারের মৃত ব্যক্তিদের ওয়েলকাম করে। এই উপলক্ষ্যে মেক্সিক্যানরা নভেম্বরের ১ও ২ তারিখে এই উৎসব পালন করে। ফলত, রাজধানী মেক্সিকো সিটির সর্বাধিক জনপ্রিয় প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট তেওতিহুয়াকান সিটি। আমাদের বাসস্থান লা কন্ডেসা রোডের বাড়ি থেকে ৯ কি. মিটার দূরের বাস স্টেশনে উবারে পৌঁছুতে সময় লেগে গেল ২০ মিনিটের বেশি। কখনো কখনো মেক্সিকোর জ্যাম বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দেয় বটে। বাস স্টপেজ থেকে ঘণ্টা খানেকের বাস জার্নি। ৫০ কি. মিটার দূরত্বের পথ। কিছু আগে পরে টরন্টো থেকে আগত অব্যয়ের দুই বন্ধু প্রীতম ও আনিক সস্ত্রীক, একাকী জাহেদসহ তিন পরিবারের দশজন সদস্য সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে মিলিত হয়েছিলাম নর্থ সেন্ট্রাল বাস স্টেশনে। এই দশজনের মধ্যে আমাদের অহমসোনা অন্যতম একজন বটে। আমাদের সকলেরই উদ্দেশ্য সর্বাগ্রে তেওতিহুয়াকানের পিরামিড পরিদর্শনের ইচ্ছে পূরণ। বাসস্টেশন বলাই বাহুল্য আমাদের দেশের এয়ারপোর্টতুল্য। চমৎকার সিস্টেমেটিক।


দিলারা হাফিজ

হুইল চেয়ারে বসে কবি রফিক আজাদ—গাইডের মুখে মায়ান সভ্যতা ও চিচেন ইৎজার সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা শুনছেন


বাস স্টেশনে নেমেই জাহেদ, আনিক আর ফাইজাকে পেলাম। প্রীতম আর নাজিবা একটু পরে এলো। নাজিবা চিপস্ কিনে নাশতা সারল, আমি, তুলি আর তুলির মা রোকেয়া আপা বিচিত্র ধরনের ডিম পোস দিয়ে নাশতা শেষ করে দ্রুত বাসে চেপে বসলাম। বাসে যেতে যেতেই লক্ষ করলাম পুরো মেক্সিকো শহরটি উঁচু নিচু নানা ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ সবুজ পাহাড়ে পাহাড়ে বেস্টিত। আর সেই সব অধিকাংশ পাহাড়ের গায়ে গায়ে বাড়ি ঘর একটার পরে একটা উঠে গেছে পাহাড়ের চূড়ার দিকে। দূর থেকে মনে হচ্ছে একটা বাড়ির ঘাড়ে যেন চেপে বসে আছে অপর বাড়িটি। এই সব পাহাড়ি বাড়িতে পৌঁছুতে রাস্তাগুলো কেমন হয়, সেটি আর এ যাত্রায় জানা হলো না। সেই অজানার রহস্য রয়ে গেল মনে। রাস্তাও চমৎকার সাজানো গোছানো, প্রায়ই দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে আমাদের চির পরিচিত গাঁদা, জবা আর ফণীমনসার ঝোঁপ। নোপালেস ক্যাকটাস ওরা সবজি হিসেবে খায়। আমাদের দেশে এর নাম ফণীমনসা। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ব্যবহৃত ফণীমনসার কথা। পাহাড়ি ঢালের তালে তালে চলছিল গাড়ি। দু’পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হলো দ্রুতই পৌঁছে গেলাম আকাঙ্ক্ষিত পিরামিড স্থলে। জাহেদ সঙ্গে এনেছে বাংলাদেশের পতাকা। পিরামিডের চূড়ায় উঠে ওরা উড়িয়ে দিল লাল সবুজ প্রিয় পতাকা। আমি রোকেয়া আপা আর অব্যয় রয়ে গেলাম পিরামিডের পাদদেশে। অহমসোনাকে দেখভালের জন্যে। আমি আর রোকেয়া আপা ভরসাবিহীন ব্যথিত পায়ের অধিকারী, কাজেই চূড়ায় ওঠা আমাদের দু’জনার জন্যে দুরাশা বটে। পিরামিডে পৌঁছানো অবধি পুরো রাস্তাটি ছোটো ছোটো সাদাকালো কাঁকর দিয়ে কার্পেটের মতো বিছানো। কথা নেই বার্তা নেই অহমসোনার দারুণ পছন্দ হয়ে গেল সে সব কাঁকর, পথের মধ্যে বসে পড়ল এবং ঘণ্টা দুয়েক সেসব কাঁকর ছুঁয়ে ছেনে খেলায় ব্যস্ত রইল। কাজেই তাকে আমরা দু’জন সামলাতে পারব না ভেবে অব্যয় রয়ে গেল সন্তানের আনন্দ দেখতেই।

সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ব্যবহৃত ফণীমনসার কথা। পাহাড়ি ঢালের তালে তালে চলছিল গাড়ি। দু’পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হলো দ্রুতই পৌঁছে গেলাম আকাঙ্ক্ষিত পিরামিড স্থলে। জাহেদ সঙ্গে এনেছে বাংলাদেশের পতাকা।

পাশাপাশি দুটো পিরামিড। একটার চূড়া থেকে ওরা নেমে এলে অপরটি দেখতে সবাই মিলে হাঁটতে শুরু করলাম। এবারও আমরা পিরামিডের পাদদেশে থাকার আনন্দেই বিভোর। অনেক ঘোরা হয়েছে, এবার আহারের পালা। সবাই ক্ষুধার্থ। গাইড আগেই জানিয়ে দিয়েছিল পিরামিডের পেছনেই স্যুভেনির কেনার দোকানপাট এবং খাবার দোকান রয়েছে। সেখানেই আহার করতে হবে আমাদের। আবারও খানিকটা হেঁটে গুহার তলদেশে গিয়ে সবাই মিলে দুপুরের আহার করলাম। বিখ্যাত রেস্তোরাঁ ‘লা গ্রুটা’য় বসে। সকল পর্যটকেরাই এখানে আহার করে থাকে, এ জন্যে ভিড় লেগেই আছে। দশজনের নাম লিখিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরে তবে আমাদের ডাক পড়ল। এই প্রথম এমন চমৎকার অভিজ্ঞতায় মেক্সিক্যান খাবার খেলাম, যেখানে প্রথম স্বাদ নিলাম ফণীমনসার পাতার সালাদ ও সেদ্ধপাতা বিফের সঙ্গে। স্প্যানিশ উচ্চারণে বলা হয় তেওতিওয়া’কান। মেক্সিকোর প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম প্রধান মেসোমেরিকান শহর যা একটি উপ-উপত্যকায় অবস্থিত। নাম তার মেক্সিকো উপত্যকা, যা আধুনিক মেক্সিকো সিটির উত্তর-পূর্বে ৪০ কিলোমিটার অর্থাৎ ২৫ মাইল ব্যেপে অবস্থিত।


4

“‘ডে অফ দ্য ডেড’ উৎসবে লেখক। পেছনে পরিবারের মৃত ব্যক্তিদের ছবি সাজানো রয়েছে। মেক্সিক্যানবাসী মনে করে এই দিন মৃতেরা পৃথিবীতে ঘুরতে আসে


প্রাক-কলম্বিয়ার আমেরিকাতে নির্মিত বেশিরভাগ স্থাপত্যের ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য মেসোয়ামেরিকান পিরামিডগুলির অন্যতম সাইট হিসেবে পরিচিত এটি। যত দূর জানা যায়, সম্ভবত প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধে, তেওতিহুয়াকান প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম শহর ছিল, যার জনসংখ্যা ছিল ১২৫, ০০০ বা তারও বেশি, এটিকে কমপক্ষে ষষ্ঠ-বৃহত্তম হিসেবে গড়ে তুলেছে যুগে যুগে বিশ্বের অন্যতম শহর হিসেবে। তেওতিহুয়াকানের পতনের পরে প্রায় ১১৫০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি মধ্য মেক্সিকো তুলার টলটেকের আধিপত্য ছিল। শহরটি 8 বর্গ মাইল জুড়ে; উপত্যকার মোট জনসংখ্যার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ তেওতিহুয়াকানে বাস করেছিল। পিরামিডগুলি ছাড়াও তেওতিহুয়াকান জটিল, বহু-পরিবার আবাসিক যৌগগুলি, অ্যাভিনিউ অব দ্য ডেড এবং এর স্পন্দিত মুরালগুলির জন্যও নৃতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্তভাবে, তেওতিহুয়াকান সূক্ষ্ম obsidian সরঞ্জামগুলি রফতানি করে যা মেসোমেরিকাজুড়ে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় যে এই শহরটি প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১০০ অব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, দীর্ঘ সময় ব্যেপে এর বড়ো বড়ো স্মৃতিস্তম্ভগুলো অবিরত নির্মাণাধীন ছিল। শহরটি সম্ভবত খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পেরেছিল। তেওতিহুয়াকান প্রথম শতাব্দীতে মেক্সিকো হাইল্যান্ডে ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে শুরু হয়েছিল। এটি প্রাক-কলম্বিয়ান আমেরিকার বৃহত্তম ও জনবহুল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল যদিও তেওতিহুয়াকান কোনো রাজ্য সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল কি না তা বিতর্কের বিষয় হলেও মেসোমেরিকাজুড়ে এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত; তেওতিহুয়াকানো উপস্থিতির প্রমাণ ভেরাক্রুজ এবং মায়া অঞ্চলে অসংখ্য সাইটে দেখা যায়। তেওতিহুয়াকানের বাসিন্দাদের জাতিগত বিতর্কের বিষয়। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন নাহুয়া, অটোমি বা টোটোনাক নৃগোষ্ঠী। বিদ্বানরা বলে থাকেন যে, তেওতিহুয়াকান বহু-জাতিগত অঞ্চল। তেওতিহুয়াকান শহর ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি মেক্সিকো সিটির উত্তর-পূর্বে প্রায় মেক্সিকো রাজ্যের সান জুয়ান তেওতিহুয়াকেন পৌরসভাতে অবস্থিত। সাইটটি মোট ৮৮ বর্গ কিলোমিটার (৩২ বর্গ মাইল) আয়তন এবং ১৯৮১ সালে ইউনেস্কোর একটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে এই অ্যাজটেক জনগোষ্ঠীর হাতে নির্মিত বিশাল জলপরিবহণ ব্যবস্থার শেষ অবশেষ জোসিমিল্কোর বিখ্যাত দীর্ঘ খাল। বিশেষভাবে চাষাবাদের কাজের জন্যে এবং পুরো মেক্সিকো সিটিতে পানি সরবরাহের জন্যে বিশাল একটি খাল খনন করেছিল তারা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্প্যানিশরা এসে এই খালের অনেকটাই বন্ধ করে দেয়।

এটি মেক্সিকোতে সর্বাধিক পরিদর্শন করা প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট, যা ২০১৭ সালে ৪১৮৫০১৭ দর্শনার্থী পেয়েছে। অক্টোবরের ৩০ তারিখে সচিমিল্কো সিটি ভ্রমণেও আমাদের নেতা পৌত্র অহমসোনা। তার মর্জিমাফিক এবং তার নেতৃত্বেই যত আমাদের ঘোরাফেরা সচিমিল্কো সিটির আনাচে-কানাচে। মূল সিটিতে আমাদের বাসস্থান লা-কন্ডেসা থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরের এই শহরটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেসের অন্যতম একটি। যদিও মেক্সিকোর মায়ান সভ্যতার আদি পীঠস্থান ‘চিচেন ইতজা’ এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্যতম প্রধান তালিকার শীর্ষে অবস্থান করে। চারদিক ঘিরে নয়নাভিরাম পাহাড়ে বেষ্টিত মেক্সিকো ভূখণ্ডের মূল আদিবাসী ছিল ‘অ্যাজটেক’ জনগোষ্ঠী। ভারতবর্ষের আদিবাসী অনার্যদের মতোই শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে ছিল তারা। তবে এই অ্যাজটেক জনগোষ্ঠীর হাতে নির্মিত বিশাল জলপরিবহণ ব্যবস্থার শেষ অবশেষ জোসিমিল্কোর বিখ্যাত দীর্ঘ খাল। বিশেষভাবে চাষাবাদের কাজের জন্যে এবং পুরো মেক্সিকো সিটিতে পানি সরবরাহের জন্যে বিশাল একটি খাল খনন করেছিল তারা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্প্যানিশরা এসে এই খালের অনেকটাই বন্ধ করে দেয়। কেননা, ভারতবর্ষে আর্যদের মতোই স্প্যানিশরাও শিক্ষা দীক্ষা এবং কৃষিকাজের জন্যে উন্নত কৌশল নিয়ে এসে দখল করে নিয়েছিল এ দেশের সবকিছু। কিন্তু এখনো জোসিমিল্কোর সেই স্মৃতিবাহী খাল পর্যটকদের জন্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্পট। নৌকার মতো রঙিন গন্ডোলা ঘণ্টা চুক্তিতে ভাড়া করে পর্যটকেরা বদ্ধ জলের ওপর ভেসে বেড়ায় স্মৃতিকাতর হয়ে। মনের অজান্তেই হয়তো অ্যাজটেকদের জন্যে একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস আকাশ কাঁপিয়ে মিশে যায় খালের সবুজাভ জলের সঙ্গে। অব্যয় তুলির বন্ধু ও বন্ধু স্ত্রীরা মিলে দশজনের একটা গ্রুপ আনিক-ফাইজা দম্পতি, প্রীতম-নাজিবা দম্পতি, অব্যয়-তুলি দম্পতি এবং একাকী জাহেদ আমাদের চট্টগ্রামের সন্তান। অহমসোনা এবং অহমের সফর সঙ্গী তার দিদিমা, নানিমা—এই তোহাতে গোনা দশজন। আমরা এই গন্ডোলা ভ্রমণে অপরিসীম আনন্দ পেলাম আজ। ঘণ্টা প্রতি ৩০০ পেসো হিসেবে ২ ঘণ্টা ভ্রমণে আমরা ডলআইল্যান্ড পর্যন্ত ঘুরে, অতঃপর ফিরে এসেছি ঘাটে, ৭০০/ পেসোর বিনিময়ে।


5

পেছনে বিশাল পিরামিডের সমুখে ভাগে লেখকের পুত্র খান অব্যয় আজাদ


ডল আইল্যান্ডের গাছে গাছে অসংখ্য ডল ঝুলে আছে। কারণ কী? জিজ্ঞেস করতেই জানলাম তার পেছনের এক বিয়োগান্তক কাহিনি। ২০০১ সালের দিকে এই খালের জলে ডুবে মারা গিয়েছিল একটি মেয়ে। দুদিন পরে মেয়েটির লাশ যখন উদ্ধার হলো তখন দেখা গেল মেয়েটির একটা হাত একটা ডল আঁকড়ে ধরে আছে। স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস এই পুতুলের মধ্যে তার আত্মা বাস করছে। সেই বিশ্বাস থেকে অসংখ্য পুতুল গাছের ডালে ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডল আইল্যান্ড পর্যন্তই ঘুরে দেখাই গন্ডোলার মাঝির সঙ্গে চুক্তি ছিল আমাদের। চাইলে কেউ ৪/৫ ঘণ্টাও ভাসতে পারে জলে, আহার-বিহারসহ। এই দুই ঘণ্টার জলযানে ভ্রমণের সময় আপনি খাদ্য থেকে শুরু করে যেকোনো দ্রব্যাদি কিনতে পারবেন নৌকায় বসেই। আমাদের দেশের বেদে নৌকার মতো হরেক রকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে অপরাপর নজরকাড়া রঙিন গন্ডোলা ভেসে চলেছে পাশাপাশি। আপনি আগ্রহ প্রকাশ করলেই ‘দোকানি গন্ডোলা’ নিঃশব্দে এসে দাঁড়াবে আপনার নৌকা ঘেঁষে। তখন দরদাম করে কিনতে পারবেন যা চাইবেন তাই। এ দেশের জনগণের প্রধান খাদ্য ভুট্টা পোড়া। বিশেষভাবে ওদের হাতে বোনা চাদর, উলেন পোশাক, ফুলের মুকুট, পুতুল এবং নানা রঙের বাহারি চিপস পাওয়া যায় ভাসমান এই গন্ডোলা বাজারে। পর্যটন বাণিজ্য সর্বত্রই প্রায় একই নিয়মে চলে বলে মনে হলো। তবে ঘাটে নামলেও আছে অসংখ্য দোকান, সেখানে কেনাকাটা করছে মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা। চলছে অবাধ বিকিকিনি বাণিজ্য। অপর একটি নৌকায় দেখা গেল মরিয়াচি ব্যান্ডদল সুসজ্জিত বাদকবৃন্দ, আপনি চাইলে আপনার জন্যে গেয়ে দেবে গান, স্প্যানিশ ভাষায় অথবা যদি শুনতে চান ইংরেজি ভাষায়। তবে গান প্রতি ১০০ পেসো গুনতে হবে। অব্যয় ও তার বন্ধুরা মিলে তিনটি গান শুনে ৩০০ পেসো এবং তাদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্যে আরও ১০০ পেসো বকশিশ হিসেবে গচ্চা দিয়ে এলো আনন্দের সঙ্গেই। আমাদের গ্রুপের জাহেদ কেবল বুকের ভেতর নয়, প্রকাশ্যে হাতে হাতে বহন করে বাংলাদেশ।


6

উৎসবের মেক্সিক্যান খাবার


বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা মানে তার দেশপ্রেমকে সঙ্গে নিয়ে সে ভ্রমণে বেরোয় বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের পতাকা সজ্জিত গন্ডোলাটি যখন আমাদের বহন করে চলেছে তখন বুকের ভেতর অন্য রকম এক সুখানুভূতির পরশ পেলাম যেন আমরা সকলেই। অবাক বিস্ময়ে দেখেছে অপরাপর গন্ডোলার পর্যটকেরা। কী যে ভালো লাগল! সেই পতাকা বহন করল আমাদের অহমসোনাও। যেখানেই যাই না কেন, যত সুন্দর আর ঐশ্বর্যে পূর্ণ থাকুক উন্নত দেশের এই পৃথিবী। তবু মনে হয় আমার দেশই সেরা। যখন আমার দেশের জবা, গাঁদা, বাগানবিলাসকে দেখি, আমার দিকেই চেয়ে আছে অপলক, তখন চেনা সুখে অচেনা আনন্দে নেচে ওঠে মন। ২৫ অক্টোবর থেকে ৩রা নভেম্বর আট দিনের এই ভ্রমণে মেক্সিকো সিটিকে যতটুকু সম্ভব দেখেছি তাদের বাহ্যিক দিক। স্প্যানিশ ভাষার হাই-হ্যালো টুকুই শুধু রপ্ত করতে পেরেছিলাম। যেমন—কমো এসআস—কেমন আছো? মোসোস গ্রাসিআস—অনেক ধন্যবাদ। সালুদ বা সালুদস্ মানে চিয়ার্স। প্রকৃত সত্য হলো যে, কোনো জাতিকে এবং তাদের শিল্প-সাহিত্যকে গভীরভাবে জানতে হলে তাদের ভাষাটি জানা খুব জরুরি। দশ বছর আগে এই ভ্রমণ সম্ভব হলে হয়তো স্প্যানিশ ভাষাটি ইতোমধ্যে শিখেই ফেলতাম আনন্দ সহযোগে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

১৯৫৫ সালের ২০ নভেম্বর মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা বখশী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, মা রহিমা হাফিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বি. এ অনার্স ও এম এ করেছেন। ৩৭ বছর শিক্ষকতা জীবনে সরকারি কুমুদিনী কলেজ, ইডেন কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় ছাড়াও মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান হিসেবে চাকুরি থেকে অবসরে যান। অধ্যাপনার পাশাপাশি দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণে বিটিভির বহুল প্রচারিত ও জননন্দিত গণশিক্ষামূলক অনুষ্ঠান “সবার জন্যে শিক্ষা” গবেষণা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছেন ২২ বছর। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশু। নিজ অঞ্চলের পশ্চাৎপদ শিশুদের প্রতিভা বিকাশ ও সার্বিক উন্নয়নে গড়ে তুলেছেন ‘মানিকগঞ্জ শিশুফোরাম’। ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি এই ফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। মার্কিন কবি ক্যারোলাইন রাইট ও ভারতীয় বহুভাষাবিদ পণ্ডিত শ্যাম সিং শশী নারী অধিকার সম্পর্কিত তাঁর অনেক কবিতার অনুবাদ করেছেন। ১৯৮৩ সালে কবিতার জন্যে লা ফর্তিনা সম্মাননাসহ সাহিত্যকীর্তি জন্য অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বিশের অধিক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।