বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮

ফজল হাসানের ধারাবাহিক ভ্রমণগদ্য : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-শেষ পর্ব

0

কলোসাই অব মেমনন বা মেমননের বিশাল মূর্তি


আগেই উল্লেখ করেছি যে, ভ্যালি অব দ্য কিংক্স এবং হাটসেপসুট মন্দির দেখার পর আমাদের ভ্রমণসূচিতে ছিল কলোসাই অব মেমনন বা মেমননের বিশাল মূর্তি দেখা। ভ্রমণসূচিতে অ্যালাবাস্টার শপে যাওয়ার কথা ছিল না। অথচ ট্যুর গাইড আমাদের সেখানে নিয়ে যায় এবং প্রায় দেড় ঘন্টা সময় অপচয় করে।


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-১ম পর্ব


যাহোক, অ্যালাবাস্টার দোকান থেকে বের হওয়ার পরে আমাদের হাতে খুব বেশি সময় ছিল না। তাই ট্যুর গাইড আমাদের সন্তুষ্টি এবং আশা পূরণ করার জন্য মেমননের বিশাল মূর্তি দেখার জন্য কাছাকাছি রাস্তার পাশে এক জায়গায় গাড়ি থামায় এবং মাত্র দশ মিনিট সময় বেঁধে দেয়। জায়গাটি প্রধান সড়কের পাশেই। গাড়ি থেকে সবাই নামেনি, কিন্তু ছবি তোলার জন্য আমি গাড়ি থেকে নেমেছিলাম এবং কিছু দূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াই।

চারপাশে খোলা জায়গা। তার মাঝে হাঁটুর ওপর হাত রাখার ভঙ্গিমায় বসে থাকা বিশাল দুটি মূর্তি।

দশ মিনিটের আগেই গাইড আমাদের ভদ্রোচিত ভাবে তাড়া দেয়। ইতোমধ্যে অনেকেই গাড়িতে ফিরে গেছে। ফেরার মুহূর্তে আমি ঝটপট ছবি তুলে গাড়িতে ফিরে আসি। অল্প সময়ের মধ্যেই গাড়ি চলতে শুরু করে।


EP-last_1

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তোলা কলোসাই অব মেমনন বা মেমননের বিশাল মূর্তি


দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে গাড়ি থামাতে পারেনি বলে গাইড ক্ষমা চেয়ে নিয়ে মূর্তি দুটি সম্পর্কে বলা শুরু করে। দুটি মূর্তিই প্রাচীন মিশরের অষ্টাদশ বাজবংশের ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপের (রাজত্বকাল: ১৩৮৭-১৩৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ), যা বিগত প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে (অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৫০ সাল থেকে) সেখানে রয়েছে। আমেনহোটেপের স্মৃতিসৌধের মন্দিরে প্রবেশের পথে পাহারা দেওয়ার জন্য মূর্তি দুটি নির্মান করা হয়েছিল। প্রতিটি মূর্তি আঠারো মিটার উঁচু এবং প্রতিটির ওজন সাতশো কুড়ি টন। সিংহাসনে বসা আমেনহোটেপের মূর্তির মাথায় ঐশ্বরিক কোবরা দ্বারা সুরক্ষিত। রাজার হাত হাঁটুর উপর প্রসারিত এবং তিনি মুখ উঁচু করে নীল নদের দিকে, অর্থাৎ পূর্বদিকে, তাকিয়ে আছেন। প্রতিটি মূর্তি সামনের অংশে আরও দুটি ছোট মূর্তি খোদাই করা রয়েছে, যা আমেনহোটেপের স্ত্রী টিয়ে এবং মা মুতেমউইকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা পুনর্জন্মের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়ে। দূর্ভাগ্য যে, দুটি মূর্তিই ভূমিকম্প এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তারা মিশরীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে আজো রয়ে গেছে।


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-২য় পর্ব


যাহোক, মূর্তি দুটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয় থাকা কিংবদন্তি রয়েছে। অতীতে ভোরবেলা সূর্যের রশ্মি মূর্তির উপর আলো পড়ার সময় এক ধরনের আর্তনাদে শব্দ শোনা যেত, যা ফারাও রাজা তার মাকে ডাকার শব্দ বলে ধারণা করা হত। তবে রোমানরা যখন ধ্বংসপ্রাপ্ত মূর্তি মেরামত করার চেষ্টা করেছিল, তখন থেকে সেই শব্দটি আর শোনা যায় না।

হঠাৎ বাইরের দিকে তাকিয়ে আমি লক্ষ্ করি, যে পথে দিয়ে গিয়েছিলাম, আমরা সেই পথে ফিরছি না। মিনিট কয়েক পরে ট্যুর গাইড আরবীতে বললো, যা পরে সিস্টার মাই আমাদের ইংরেজিতে তরজমা করেছে, তাহলো সময় বাঁচানোর জন্য সে শর্টকাট পথ নিয়েছি, অর্থাৎ আমাদেরকে ইঞ্জিত চালিত নৌকা করে নীলনদ পাড়ি দিতে হয়েছিল।


EP-last_2

নীলনদ পারাপারের জন্য ইঞ্জিন চালিত নৌকা


অবশ্য পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, সেই শর্টকাট পথ ধরে আমরা প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় বাঁচাতে পেরেছিলাম। কিন্তু তার পরেও ক্রুজ শিপে পৌঁছুতে আমাদের প্রায় এক ঘন্টা দেরি হয়েছিল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল, ক্রুজ শিপ সময় মতো ছাড়েনি। তবে নির্ধারিত সময়ের ঘন্টা দুয়েক পরে ছেড়েছিল।

লুক্সর পর্বের শেষে আমাদের ভ্রমণ সূচীতে ছিল নীল নদের নৌবিহার এবং আসওয়ানের বিখ্যাত আসওয়ান বাঁধ ও ফিলাই মন্দির পরিদর্শন।


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-৩য় পর্ব


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-৪র্থ পর্ব


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-৫ম পর্ব


আরও পড়ুন : বাইরে দূরে মিশর ঘুরে-৬ষ্ঠ পর্ব


শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

গল্পকার, ছড়াকার এবং অনুবাদক। লেখালেখির শুরু সত্তরের মাঝামাঝি। ঢাকার বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতায়, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং অনলাইন ম্যাগাজিনে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তার মৌলিক এবং অনুবাদ গল্প। এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে দুটি গল্পের সংকলন, চন্দ্রপুকুর (২০০৮) ও কতটা পথ পেরোলে তবে (২০১০)। এছাড়া, তার অনুবাদে আফগানিস্তানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৩), নির্বাচিত নোবেল বিজয়ীদের সেরা গল্প (২০১৩), ইরানের শ্রেষ্ঠ গল্প (২০১৪), চীনের শ্রেষ্ঠ গল্প ও নির্বাচিত ম্যান বুকার বিজয়ীদের সেরা গল্প ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।