শুক্রবার, মার্চ ২৯

কৌতুক : ধ্রুব এষ

0

Motif-01

সাইজ ব্যাপার না।

হাইট ব্যাপার না।

লুক ব্যাপার না।

কেবল কৌতুক বানাতে পারলেই হবে। কৌতুক বানাতে পারে এমন একজন মানুষকে বিয়ে করবে সে।

মেয়েটার নাম অরা, সে বলল।

তার ফাইলপত্র আমরা দেখেছি। বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার।

তার বয়স?

‘আমার বয়স? আমার বয়স ইউ নো এখন একুশ। তার বয়স বেয়াল্লিশ হতে পারে। তেষট্টি হলেও কুছ পরোটা নেহি, সব রোটি।’

‘চুরাশি হলে?’

‘তোমরা কি জোকার?’

‘হা হা হা! চুরাশি না আমাদের বয়সী সে। ঊনপঞ্চাশ প্লাস। আমাদের বন্ধু। ইউক্রেনে থাকে। তার সম্পর্কে একটা এনেকডোট বলি। দশ এগার বছর আগে একবার দেশে ফেরার কথা ছিল তার। আমরা অধীর ছিলাম তার জন্য। কারণ কেবল কৌতুক বানায় তা না, সম্মোহক সে—।’

‘তোমরা খুবই মনোটনাস। কিউআর কোডের মতো মনোটনাস। আচ্ছা তোমাদের বন্ধু সম্মোহনের পেন্ডুলাম। বিশ একুশ বছর আগে, এই রে তখন আমি মাত্র জন্মেছি, ব্যাপার না, সে কেন দেশে আসে নাই বলো?’

এই সময় তার রুসকি বন্ধু ওলগা তাকে জানায় যে মস্কোতে তার যে চাচা জারিপভ থাকেন, তিনি তার সংগ্রহের চার বস্তা কৌতুকের লিফলেট নিলামে তুলছেন। সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফ্লাইট ক্যানসেল করে খেপা। দণ্ডি দিয়ে টিকেটের টাকা উঠিয়ে নিলাম ডাকতে মস্কো উড়ে যায়।

‘কৌতুক।’

‘কী কৌতুক?’

‘কৌতুকের জন্য দেশে আসে নাই।’

‘হেঁয়ালি করো না!’

সত্যি। টিকিট কনফার্ম, ফ্লাইট কনফার্ম, এই সময় তার রুসকি বন্ধু ওলগা তাকে জানায় যে মস্কোতে তার যে চাচা জারিপভ থাকেন, তিনি তার সংগ্রহের চার বস্তা কৌতুকের লিফলেট নিলামে তুলছেন। সঙ্গে সঙ্গে দেশের ফ্লাইট ক্যানসেল করে খেপা। দণ্ডি দিয়ে টিকেটের টাকা উঠিয়ে নিলাম ডাকতে মস্কো উড়ে যায়। সাতাশ হাজার রুবল ডাক উঠেছিল চাচা জারিপভের চার বস্তা কৌতুকের।

‘সাতাশ হাজার রুবল দিয়ে সেই চার বস্তা কৌতুক কিনে নেয় তোমাদের বন্ধু?’

‘হ্যাঁ। পরে আর দেশে ফিরতে পারে নাই। টিকেটের টাকা জোগাড় করতে পারে নাই। কুড়ের বাদশাহ সে সেটাও কথা।’

‘সে কি ফেসবুকে আছে?’

‘এখন আর নাই।’

‘ইনস্টাগ্রামে?’

‘এখন আর নাই।’

‘না থাকুক। লাইক দিলাম। কৌতুক বানাতে পারে একজন মানুষ। কী দারুণ! আমি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনব। এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যাব। প্রপোজ করব ট্রানজিট লাউঞ্জেই, হে কৌতুক বানানেওয়ালে, উইল ইউ মেরি মি।’

‘সে আর দেশে ফিরবে না। তার গার্লফ্রেন্ডের গোনাগুনতি নাই।’

‘না থাকুক। আমি কি তার গার্লফ্রেন্ড নাকি? আমি তাকে বিয়ে করব।’

আমরা বাচ্চা অরাকে দেখলাম। বিপিডি আছে তার। কী রিয়েক্ট দেবে? উনিশ বছর বয়সে একবার, বিশ বছর বয়সে দুইবার বিয়ে করে তার অভিজ্ঞতা হয়েছে— কেউ কৌতুক বানাতে পারে না।

আমাদের বন্ধু কৌতুক বানাতে পারে।

অবশ্য কৌতুক এমন একটা ব্যাপার, মরা মানুষও বানাতে পারে দরকারে।—সেপিয়েন্সদের বানানো ইতিহাসে অজস্র বিকট নজির আছে এর। মরা শিশুও সমুদ্রের পাড়ে পড়ে থেকে কৌতুক বানাতে পারে সেপিয়েন্সদের জন্য।

এখন আমরা কি অরাকে বলব যে আমাদের বন্ধু, যে কৌতুক বানাতে পারে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আগে মরে গেছে সে।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

চিত্রশিল্পী, কথাসাহিত্যিক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।