শনিবার, অক্টোবর ১২

পাগল গণিতজ্ঞের কবিতা : উদয়ন বাজপেয়ি | হিন্দি থেকে ভাষান্তর : অজিত দাশ

0

Udayan Vajpeyiউদয়ন বাজপেয়ির জন্ম ৪ জানুয়ারি ১৯৬০ সালে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাগর শহরে। হিন্দি সাহিত্যের বিভিন্ন ধারায় সক্রিয় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব এবং চিন্তাবিদ হিসেবে পাঠকমহলে তিনি সমাদৃত। পেশায় ভূপাল গান্ধি মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘কুছ বাক্য’, ‘পাগল গণিতজ্ঞ কি কবিতাঁয়ে’ এবং ‘কেবল কুছ বাক্য’ । গল্পগ্রন্থ ‘সুদেশনা’, ‘দূর দেশ কি গন্ধ’ এবং ‘সাতওয়া বাটন’। ‘চরখে পর বরত’, ‘জনগড় কলম’ ও ‘পতঝর কে পাও কি মেহেন্দি’ প্রবন্ধ আর ভ্রমণ বিষয়ক বই। কবিতা ও গল্প ছাড়াও তিনি নাটক ও চিত্রনাট্যও লিখেছেন। সুপরিচিত পরিচালক কে.এন পানিক্কার ও রতন থিয়াম এর ওপর দুটি বই লিখেছেন। চলচ্চিত্রকার মনি কৌলের সঙ্গে তাঁর কথোপকোথন ‘অভেদ আকাশ’ এবং ঐতিহাসিক ধর্মপালের সঙ্গে কথোপকোথন ‘মতি, স্মৃতি অর প্রজ্ঞা’ ইতোমধ্যে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন অক্টাভিও পাজ, বোর্হেস, চেখভ সহ সুপরিচিত সাহিত্যিকদের রচরা। তাঁর অনুবাদে সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে জাপানী কবি সুনতারো তানিকাবার কবিতা সংকলন,‘মটম্যায়লি স্মৃতি মে প্রশান্ত সমুদ্র’ শিরোনামে।

এ পর্যন্ত তিনি অনেক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে হিন্দি সাহিত্যের বিশিষ্ট পত্রিকা ‘সমাস’। এমনকি প্রখ্যাত সাহিত্যিক ‘শ্রীকান্ত ভার্মা সঞ্চিতা’ সম্পাদনার কৃতিত্বও রয়েছে তাঁর।

উদয়ন বাজপেয়ির কবিতা প্রধান ভারতীয় ভাষার পাশাপাশি বিদেশি ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। অংশগ্রহণ করেছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে। সাহিত্য কৃতিত্বের জন্য তিনি কৃষ্ণ বলদেব বৈদ্য পুরস্কার এবং রাজা ফাউন্ডেশন পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।


পাগল গণিতজ্ঞের কবিতা


১.
ছেড়ে আসিনি তো
আমার কম্পমান আঙ্গুলের চিহ্ন
তোমার বুকে?

কোথাও থেকে যায়নি তো
আমার অশ্রুর লবণ
তোমার হাতের তালুতে?

হঠাৎ উপচে পড়েনি তো
আমার আগ্রহের প্রতিবিম্ব
তোমার চোখে?

 

২.
সংখ্যার উপর ছড়িয়ে থাকার পরও
তোমার শরীর বিলীন হয়ে যায় না

তুমি আমাকে, তোমার শরীরের
প্রতি টুকরো থেকে
এমনভাবে দেখ
যেমন সেদিন যাবার বেলায়
দেখেছিলে

 

৩.
শব্দ কি ডুবে যায়
দুঃখের নিস্পন্দতায়?

শরীর কি বিলীন হয়ে যায়
দেহের ভাঁজে আটকে থাকা অশ্রুতে?

এইতো, আমার শেষ চিৎকার কোথায় গেল?
তারপর বহুবর্ণে ঘুরপাক খেয়ে
এখন ঝরে পড়ে ক্রমশ
প্রতিটি কোষ থেকে, আঙ্গুলের ডগা থেকে
ওষ্ঠের বুদবুদ থেকে।

 

৪.
সন্ধ্যার আকাশে আমি
কিসের খোঁজ করি?
হয়তো নীড় ফেরত কোনো পাখির ডাক
তোমার ঢেউ খেলা শাড়ির আচঁলের
প্রান্ত হয়ে যেতে পারে

অস্তগামী সূর্যের দিকে মুখ করে
কেন দাঁড়িয়ে থাকি?
হয়তো ডুবে যাওয়া আলো এসে
তোমার মুখের শেষ হাসির
আকার নিয়ে নেবে কখনো

কিন্তু কখন?
আমার হাতে অযথা
ঝুলন্ত ছাতা আছে জেনেও
চুপ করে থাকে

 

৫.
না হয় মেনে নিয়েছি
এই আকাশ কেবল এক টুকরো শূন্যতা
আর পাখিরা সেখানে সংখ্যা
না হয় মেনে নিয়েছি
এই বেঁচে থাকাই একটা প্রশ্ন
তবু কেউ তো আছে
যে জট ছাড়াতে পারে
কেউ তো আছে!

 

৬.
কখনো কি আমায় দেখেছিলে তুমি
নাকি তোমার চলে যাওয়া
কেবল আমার দিকে ফিরে তাকায়

এই উঁচুনিচু জমিনের ওপর
প্রতিটি বিন্দুর সারি কেমন
আলাদা-আলাদা কোণে পড়ে

সে তো তোমার নীল আঁচল ছিল
নাকি তুমি সেখানে ছিলে না বলে
ভেবেছি হয়তো কোনো উড়ন্ত সমতল?

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৮৯ কুমিল্লায়। কবিতা, ছোটোগল্পের পাশাপাশি অনুবাদ করেন। এ পর্যন্ত দুটো অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ তে বেহুলাবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘ওশোর গল্প’। ২০১৯ সালে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রজ্ঞাবীজ’। কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পড়াশোনা করে বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।  বর্তমানে হিন্দি সাহিত্যের অনুবাদ নিয়ে কাজ করছেন।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।