শুক্রবার, মার্চ ২৯

কিলিং অথবা লাভ-মেশিন : অপূর্ব সাহা

0

৫৭ টা খুন করেছি। মামলা হয়েছে মাত্র দুটো, তাও লোক দেখানো।

খুন আমার পেশা। মানুষ খুন করতে মন্দ লাগে না। ইন ফ্যাক্ট, এনজয় করি। কলেজ জীবনে ডাবল মার্ডার করে লাইমলাইটে চলে আসি। পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতির রাঘববোয়ালেরা আমাকে প্যাট্রোনাইজ করে আর আমি একটা কিলিং মেশিনে পরিণত হই।

অন্য কাজ কিছু পারি না, করিও না। যে যাই বলুক, হাতের কাজ আমার নিখুঁত। পেশার সাথে আমি— ওই যে কী বলে— আপসহীন।

করোনাকাল চলছে। রোগবালাই নিয়ে আমি যথেষ্ট সচেতন। বিধিনিষেধ পাই টু পাই মেনে চলি। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হই না। 

মুখে মাস্ক থাকায় নতুন করে মুখোশ পরার দরকার হলো না। ঢাকার উপকণ্ঠে ঝটিকা একটা বাগানবাড়ির দেয়াল টপকালাম। গানপয়েন্টে দারোয়ানের হাত-পা-মুখ নিষ্ক্রিয় করে সোজা দোতলায় চলে এলাম। এ বাড়ির পুরো ব্লুপ্রিন্ট আমার মগজে গাঁথা আছে।

এখন মধ্যরাত। মুখে মাস্ক থাকায় নতুন করে মুখোশ পরার দরকার হলো না। ঢাকার উপকণ্ঠে ঝটিকা একটা বাগানবাড়ির দেয়াল টপকালাম। গানপয়েন্টে দারোয়ানের হাত-পা-মুখ নিষ্ক্রিয় করে সোজা দোতলায় চলে এলাম। এ বাড়ির পুরো ব্লুপ্রিন্ট আমার মগজে গাঁথা আছে। 

নির্দিষ্ট ঘরের দরজায় নক করলাম। ভেতরে কোনো সাড়া নেই। বেশ কয়েকবার নক করলাম। সাড়া নেই। খটকা লাগল। একটু ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। আলো জ্বলছে। মোলায়েম আলোয় একটা ধবধবে বিছানায় শুয়ে আছেন মিসেস কবির। দেখেই বুঝলাম, মৃত। কোনো মানে হয়? মৃত মানুষকে আমি খুন করি না।

 বডি চেক করলাম। খুব পাওয়ারফুল একটা পয়জন নিয়েছেন। সাদা মাখনের মতো ত্বকের এখানে সেখানে নীলচে হয়ে আছে। ডান হাতে একটা চিরকুট মুঠো করে ধরা। দ্রুত চোখ বোলালাম।

‘মি. আততায়ী, আমি জানতাম তুমি আসবে। কবির তোমাকে ৫ লাখ টাকায় ভাড়া করেছে। আমার ইন্টেলিজেন্সও যথেষ্ট শক্তিশালী। যাহোক, নিজেই নিজেকে খতম করে দিলাম।

শোন ভাই, আমার স্বামী মানে জনাব কবিরের অভিযোগ সত্য। আনিস আলমগীরের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। ও আমার অক্সিজেন। তোমরা যেটা জানো না, তা হচ্ছে কবির একটা পারভার্ট। রাতের পর রাত সে এই বাগান বাড়িতে পুরুষ প্রস্টিটিউট এনে আমারই সামনে, ডিজায়ার মেটাত। এইসব কথা লিখতে ঘেন্না করছে আমার।

শোন ভাই, আমার স্বামী মানে জনাব কবিরের অভিযোগ সত্য। আনিস আলমগীরের সাথে আমার সম্পর্ক আছে। ও আমার অক্সিজেন। তোমরা যেটা জানো না, তা হচ্ছে কবির একটা পারভার্ট। রাতের পর রাত সে এই বাগান বাড়িতে পুরুষ প্রস্টিটিউট এনে আমারই সামনে, ডিজায়ার মেটাত। এইসব কথা লিখতে ঘেন্না করছে আমার। থুঃ!

আনিসকেও খুন করবে ও। ওই জানোয়ারটার পরবর্তী টার্গেট আনিস। প্লিজ, তুমি আমার একটা কাজ করে দাও ভাই। আমার মাথার পাশের স্যুটকেসে ১০ লাখ টাকা রাখা আছে। তোমার চার্জ। ডাবল দিয়েছি। কবিরকে খুন করে দাও। আমি চাই আনিস বেঁচে থাকুক। আর আনিস বেঁচে থাকলে পৃথিবীতে ভালোবাসা বেঁচে থাকবে।’

আমি টাকা গুনে স্যুটকেস বুঝে নিলাম। ডিল ফাইনাল।

আমার পরবর্তী টার্গেট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, আমার প্রধান পেট্রোনাইজাদের মধ্যে অন্যতম মি. কবির । 

পেট্রোনাইজার যাবে। পেট্রোনাইজার আসবে। আমার তাতে কিছু আসবে-যাবে না।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

গদ্যে-পদ্যে সমান বিচরণ। পেশায় উন্নয়ন কর্মী। ২০০২ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গল্প সংকলন ‘হ্রেষাধ্বনি ও অন্যান্য কণ্ঠস্বর’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ। উল্লেখযােগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে ‘স্পর্শপুরাণ’ (উপন্যাস), ‘বিহঙ্গ হত্যার পূর্বাপর’ (উপন্যাস), ‘কুহেলিবৃত্তান্ত’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘হৃৎপিণ্ড ভরতি ভেজা পলল’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘রংছুট কোয়েলের বিষণ্নতা’ (কাব্যগ্রন্থ) উল্লেখযোগ্য। সাহিত্যের পথ-পরিক্রমায় তার সম্বল স্বকৃত ভাষাশৈলী। শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞান করেন। শব্দ-সংঘাত সৃষ্টি করে তা থেকে বিচ্ছুরিত বিভার ভেতর খুঁজে ফেরেন শিল্পের অন্তর্গূঢ় রহস্য। জন্ম সদ্য স্বাধীন দেশের মাটিতে, যশোর জেলায়।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।