মঙ্গলবার, মার্চ ১৯

ওরহান পামুকের গদ্য : সহজাত লেখক : অনুবাদ : আলী রেজা পিয়াল

0

Motif-01আমি ত্রিশ বছর ধরে লেখালেখি করছি এই কথাটা আমি এত বছর ধরে বলছি যে এখন এই কথাটাকে সত্যি বলেই ধরে নেওয়া যায়। সমস্যা হচ্ছে আমি এখন লেখালেখির ৩১তম বছরে প্রবেশ করে ফেলেছি, তাও আমার মানুষকে এটা বলতেই ভালো লাগে যে আমি আমার জীবনের ত্রিশটি বছর উপন্যাস লিখে ব্যয় করেছি। কথাটা যদিও পুরোপুরি সত্যি না। কারণ আমি প্রবন্ধ, সমালোচনা, ইস্তাম্বুলের রাজনীতি নিয়ে আমার মতামত, বক্তব্য এসবও লিখি ফাঁকে ফাঁকে। তাও কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে যে আমার আসল পেশা কী? কোন জিনিসটা আমার জীবনের চালিকাশক্তি? তখন আমি উত্তর দেই যে উপন্যাস লেখা। আমার থেকে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত লেখক আছেন যারা আমার থেকেও বেশি সময় ধরে লেখালেখি করছেন। অনেকে আছেন যারা প্রায় ৫০ বছর ধরে লেখালেখি করছেন কিন্তু ব্যাপারটা কখনো তেমন উচ্চবাচ্য করেননি। এদের মধ্যে তলস্তয়, দস্তোয়েভস্কি, থমাস মান এঁদের লেখা যতই পড়ি মন ভরে না, আবার পড়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। তাহলে আমি কেন আমার লেখালেখির ৩০ বছর পূর্তি নিয়ে এত আড়ম্বর শুরু করে দিলাম? এর কারণ স্বভাবজাত কারণে লেখালেখি, বিশেষ করে উপন্যাস লেখা নিয়ে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে।

যেকোনো একটা সাহিত্যের বই নিয়ে তার দুই এক পাতা চিবিয়ে না খেলে আমার দিনটা কেমন যেন পানসে হয়ে যায়। ব্যাপারটা একটা রোগের মতো হয়ে গেছে এখন, তাই ওষুধ হিসেবে কয়েক পৃষ্ঠা সাহিত্য পড়ে ফেললে আমার দিন ভালো যায়। ছোটোবেলায় শুনেছিলাম ডায়াবেটিক রোগীদের প্রতিদিন ইঞ্জেকশন দিতে হয়। শুনে খুব খারাপ লেগেছিল তাদের জন্য। মনে হয়েছিল এ কেমন অর্ধমৃতের মতো জীবন। এখন আমার দৈনিক সাহিত্যের ইঞ্জেকশন নিতে হয়। সে হিসেবে সাহিত্য আমাকে অর্ধমৃত বানিয়ে রেখেছে এ দাবি করলে খুব একটা ভুল হবে না। বিশেষ করে যখন নতুন লেখক ছিলাম তখন আমার মনে হতো সবাই আমাকে দেখলেই বুঝে ফেলত যে এই লেখক দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন অর্ধমৃত এক লোক। আমি মাঝে মাঝে নিজেকে সান্ত্বনা দেই এই বলে যে আমি হয়তো পুরোপুরিই মৃত আর সাহিত্য আমাকে আস্তে আস্তে জীবন দিচ্ছে। তাই সাহিত্যকে আমার দৈনিক পথ্য বলা যেতে পারে। আর দৈনিক যেহেতু এই জিনিস আমাকে পথ্য হিসেবে নিতে হয়, আমি যে এর মানের দিকেও খেয়াল রাখব সে কথা তো বলাই বাহুল্য।

একটা উপন্যাসের একটা অনুচ্ছেদ পড়ে সেই উপন্যাসের পৃথিবীর ভেতরে ডুবে যাওয়ার যে আনন্দ সে আনন্দই আমাকে আসলে জীবনের প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে। যিনি লিখেছেন তিনি মৃত হলে সে আনন্দ আরও বেড়ে যায় কারণ তখন শুধুই তার প্রতি শ্রদ্ধা কাজ করে, হিংসার আগুনটা আর আমাকে তখন স্পর্শ করে না।

সাহিত্যকে যেহেতু ওষুধ হিসেবে খাচ্ছি সে ওষুধের মান ভালো হতে হবে। তাতেই বোঝা যাবে এই ওষুধে কাজ হবে কি হবে না। একটা উপন্যাসের একটা অনুচ্ছেদ পড়ে সেই উপন্যাসের পৃথিবীর ভেতরে ডুবে যাওয়ার যে আনন্দ সে আনন্দই আমাকে আসলে জীবনের প্রতি আরও আগ্রহী করে তোলে। যিনি লিখেছেন তিনি মৃত হলে সে আনন্দ আরও বেড়ে যায় কারণ তখন শুধুই তার প্রতি শ্রদ্ধা কাজ করে, হিংসার আগুনটা আর আমাকে তখন স্পর্শ করে না। যতই বুড়ো হচ্ছি ততই আমার ধারণা হচ্ছে যে একদম পুরোনো সাহিত্য, যেগুলোর লেখকেরা মারা গেছেন ওগুলোই সব থেকে ভালো সাহিত্য। যদি লেখকগুলো মারা নাও যান তাদের অস্তিত্ব এতটাই ক্ষীণ যে তাদেরকে ভূতের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এ জন্যই সর্বসেরা লেখকদের রাস্তায় দেখলে আমরা ভূত দেখার মতোই চমকে উঠি। কিছু কিছু সাহসী মানুষ আবার এই ভূতেদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতেও এগিয়ে যান। আমি মাঝে মাঝে নিজেকে মনে করিয়ে দেই যে এই লেখকেরা মারা গেলে তাদের লেখাগুলো অন্য এক মাত্রা পাবে। যদিও সবসময় যে এমনটা হবে সে আশা করা ঠিক না।

আমার সাহিত্যের ডোজটি যদি আমার নিজের লিখতে হয় তখন আবার ব্যাপারটা একটু অন্য রকম। আমার মতো যারা আছেন তারা জানেন যে দিনে একটা উপন্যাসের আধা পৃষ্ঠা লিখতে পারা পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটা। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে আমি দিনে প্রায় দশ ঘণ্টা আমার রুমে আমার টেবিলে বসে কাটাই। এত দিনে আমার সমুদ্র লেখা হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু ভালো লেখা হিসেব করলে আমি দিনে আধপৃষ্ঠা করেই লিখতে পারি গড়ে। আমার বেশিরভাগ লেখা আমার নিজেরই ভালো লাগে না দেখে প্রকাশ হয় না। এর থেকে দুঃখের কথা পৃথিবীতে আর নেই সম্ভবত।

আমাকে ভুল বুঝবেন না। একজন ভালো লেখক, লেখালেখি যার জীবিকা, তিনি কখনোই নিজের প্রকাশিত লেখা নিয়ে গর্ববোধ করতে পারেন না। আর কয়টা বই লিখেছে সেটা দেখে নিজেকে বাহবা দেওয়া সে তো আরও দূরের কথা। সাহিত্য লেখকদের কখনোই দুনিয়া জয় করার ক্ষমতা দিয়ে দেয় না বরং কোনোমতে তার নিজের দিনগুলোকে গুছিয়ে লেখার ক্ষমতা দেয়। তাই যে দিনগুলোতে লেখালেখি করা হচ্ছে না সে দিনগুলো কাটানো বেশ কঠিন। আপনার পক্ষে যখন লেখালেখি করা সম্ভব হচ্ছে না তখন আপনার কাজ দাঁতে দাঁত চেপে কোনোমতে অন্য কারো লেখা সাহিত্য পড়ে দিনটা কাটিয়ে দেওয়া।

আমি যেদিন ভালো লিখতে পারি না সেদিন কী হয় বলি। প্রথমে আমার চোখের সামনে পুরো পৃথিবীটা বদলে বসবাসের অযোগ্য এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। যারা আমার আশপাশে থাকে তারা বুঝতে পারে যে আমি আজকে ভালো লিখতে পারিনি। কারণ আমি নিজেও আমার চোখে দেখা ওই পৃথিবীর মতো খিটখিটে হয়ে যাই। যেমন আমার কন্যা আমার চোখে মুখে হতাশা দেখেই বলে দিতে পারে যে আজকে আমি ভালো কিছু লিখিনি। আমি তার কাছ থেকে ব্যাপারটা লুকোতে চাই কিন্তু পারি না। ওই সময়গুলোতে জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য করাটাই আমার জন্য কঠিন হয়ে যায়। আমি কারো সাথে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি আর আমার এই অবস্থা সম্পর্কে যারা জানে তারাও সে সময়টাতে আমার সাথে কথা বলা বিরত থাকে। বেলা একটা থেকে তিনটার মধ্যে এক অদ্ভুত হতাশা আমাকে জড়িয়ে ধরে। যদিও এখন আমি নিজেকে এই সময়টাতে একটু ব্যস্ত রাখতে শিখেছি যাতে আমার হতাশার অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে না হয়।

ভ্রমণের কারণে, সাংসারিক কাজে, মিলিটারি সার্ভিসের কারণে (বহু আগের কথা), রাজনৈতিক কারণে (ইদানীং বেশি হচ্ছে) যদি এই লিখতে না পারার সমস্যাটা বেড়ে যায় তখন আমি টের পাই যে হতাশা আমার ভেতরে সিমেন্টের মতো জমে যাচ্ছে। আমার শরীর নাড়াতে সমস্যা হয়, জয়েন্টগুলোতে ব্যথা শুরু হয়, ঘাড় নাড়াতে পারি না, এমনকি ঘামের দুর্গন্ধটাও প্রকট হয়ে যায়। এই কষ্টের সময়টা আরও বাড়ে কারণ পৃথিবীতে আসলে এমন অনেক কিছুই করতে হয় যা আমাকে লেখালেখি থেকে বিরত রাখে। কখনো কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে বসে থাকতে হয়, কখনো স্কুলের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যেতে হয়, কখনো আত্মীয়দের সাথে খেতে যেতে হয়, কখনোবা কোনো শুভকাঙ্ক্ষী কী বলতে চাইছেন তা বুঝতে গিয়ে মগজ ঝোল করে ফেলতে হয়, আর ওই বোকাবাক্স তো আছেই। কিন্তু কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ থাকি বা বাজারে, নোটারি করাতে যাচ্ছি বা ভিসা করাতে আমার দুই চোখ ভরে ঘুম চলে আসে। যেই ঘুম আমি আমার প্রিয় রুমে শুয়ে ঘুমাতাম তাই আমি দিনেদুপুরে বাইরে কোথাও দিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাই।

সে ক্ষেত্রে এটাও বলা যায় যে আমার আসল ক্ষুধা আসলে সাহিত্যের জন্য না। আমার আসল ক্ষুধা একাকিত্বের। এমন একটা রুমের যে রুমে আমি আর আমার ভাবনারা একা থাকতে পারবে। যে রুমে বসে আমি ওই রাজনৈতিক মিটিং, ওই বাজার, ওই আত্মীয়দের সম্পর্কে গল্প বানাতে পারব, ওই মানুষগুলোকে নিজের মাথায় আরও মজাদার আরও চমকপ্রদ করে তুলতে পারব। কারণ আসল পৃথিবীকে থেকে এই লোকগুলোকে নিয়ে আমি গল্প ফাদলেও আমার কল্পনাতে তারা আরও সুন্দর আরও আকর্ষণীয়। সমস্যাটা তাহলে বুঝতেই পারছেন। ভালো লিখতে হলে আমাকে আগে দৈনন্দিন জীবনের প্রতি বিরক্ত হয়ে যেতে হয়। দৈনন্দিন জীবনের প্রতি বিরক্ত হওয়ার জন্য আমার আগে তাতে প্রবেশ করতে হয়। এ জন্যই আমার বাইরে কোলাহলের মধ্যে বের হতে হয়। অফিসরুমে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলে যেতে হয়, মিটিং করতে হয়। এইসব শেষে আমি যখন বন্ধুদের মাঝে, ভালোবাসার মানুষদের মধ্যে গিয়ে বসি আমার তখন আমি আবার হঠাৎ করে জীবনের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলি। আমার হতাশ লাগা শুরু হয়। আমার ভেতর থেকে একটা কণ্ঠস্বর বলে ওঠে টেবিলে গিয়ে লেখালেখি করার সময় চলে এসেছে।

এই কণ্ঠস্বর এর উত্তর বাকি লোকেরা কীভাবে দেয় আমি জানি না। তবে আমার মতো করে যারা উত্তরটা দেয় তারাই হয়তো লেখক হয়ে যায়। এবং আমার মনে হয় আমার মতো করে যারা সাড়া দেয় তারা পদ্যের দিকে না ঝুকে গদ্যেই ডুবে যাওয়া বেশি পছন্দ করে। তাই বুঝতেই পারছেন পথ্য হিসেবে যে সাহিত্য আমি পড়ি বা লিখি তার উপাদান খুব সাধারণ। জীবন, জীবনের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলা, আর কল্পনাশক্তি দিয়ে জীবনকে নতুন করে দেখা।

আপনাদেরকে এত সরল স্বীকারোক্তি দিচ্ছি দেখে আনন্দ আর অপরাধবোধ দুটোই কাজ করছে। এই দুইটি অনূভূতির কারণে আরেকটা উপলব্ধি আমার হচ্ছে যেটা আপনাদেরকে না বললেই নয়। আমার মতো লেখক যারা আছেন তাদের জন্য লেখালেখি হলো একটা আশ্রয়, জীবন থেকে একটা প্রতিকার। আমরা নিজেরাই বিষয় বেছে নিয়ে নিজেদের মতো করে লিখি যাতে করে আমাদের আকাশকুসুম কল্পনার কিছুটা হলেও সত্যি হয়। একটা উপন্যাসের জন্ম হয় ভাবনা থেকে, আবেগ, রাগ, আকাঙ্ক্ষা থেকে। ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা, শত্রুকে অপদস্ত করার আকাঙ্ক্ষা, কোনো কিছুর প্রশংসা করার আকাঙ্ক্ষা, কোনো বিষয়ে সবজান্তা ভাব নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, হারানো স্মৃতি মনে করে আনন্দিত পুলকিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, নিজের ভালোবাসা, শখ, রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, এই এতসব আকাঙ্ক্ষাই এক রহস্যময় পদ্ধতিতে আমাদের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তোলে। ফলে এই আকাঙ্ক্ষাগুলোয় আমাদের স্বপ্নে ঘুরপাক খায়। আসলে আমরা নই আমাদের স্বপ্নগুলোই আমাদেরকে জীবন দান করে। আমরা যখন লিখতে বসি আমাদের এই স্বপ্ন এই কল্পনা আমাদের আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাতাসের ভেসে আসা সুরের মতো আমাদের ঘিরে ধরে। আমরা ওই বাতাসের সামনে এক পথ হারানো নাবিকের মতো উদাস চোখে চেয়ে থাকি। কারণ আমরা তো ওই কল্পনার বাতাসের কাছে বন্দি।

একটা উপন্যাসের জন্ম হয় ভাবনা থেকে, আবেগ, রাগ, আকাঙ্ক্ষা থেকে। ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা, শত্রুকে অপদস্ত করার আকাঙ্ক্ষা, কোনো কিছুর প্রশংসা করার আকাঙ্ক্ষা, কোনো বিষয়ে সবজান্তা ভাব নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, হারানো স্মৃতি মনে করে আনন্দিত পুলকিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, নিজের ভালোবাসা, শখ, রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা, এই এতসব আকাঙ্ক্ষাই এক রহস্যময় পদ্ধতিতে আমাদের ব্যক্তিত্বকে গড়ে তোলে। ফলে এই আকাঙ্ক্ষাগুলোয় আমাদের স্বপ্নে ঘুরপাক খায়।

তবে এটা ঠিক যে ওই সময়গুলোতে আমরা চাইলে আমরা কোথায় আছি বা কোন দিকে যাচ্ছি তা বের করতে পারি। অন্তত যেসব লেখককে আমি শ্রদ্ধা করি তাদের মতো আমিও সেই বাতাসের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা সত্ত্বেও ঠিক কোন দিকে যাচ্ছি তা অনেকাংশেই নির্ধারণ করতে পারি। তাই যাত্রা শুরুর আগেই আমি মোটামুটি আমার গল্পের জাহাজ কোন দিকে আগাবে, কোন কোন বন্দরে থামবে সব ঠিক করে রাখি। কিন্তু যদি দমকা বাতাস এসে আমার গল্পের জাহাজকে অন্য কোথাও ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় আমি আর বাধা দেই না। কারণ আমি বুঝি গল্পের সার্থকতা তার স্বচ্ছন্দে এগিয়ে যাওয়াতে। একটু পরেই বাতাস কমে আসবে, সাগর শান্ত হয়ে যাবে এবং আমি আবার এই গল্পের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাব।

আধ্যাত্মিক যে অনুপ্রেরণার কথা আমি আমার উপন্যাস ‘স্নো’তে লিখেছি তেমন অনুপ্রেরণাই আমি লিখতে বসার আগে সবচেয়ে বেশি খুঁজি। কোলরিজ নিজেও ‘কুবলা খান’ লেখার সময়ে এই অনুপ্রেরণার কথা বলেছেন। কোলরিজ যেমন তার মাথায় কবিতা আসার অপেক্ষা করতেন, আমি নিজেও আমার মাথায় লেখা আসার অপেক্ষায় থাকি। আর সেই লেখা যদি সাজানো গল্প হয়ে, দৃশ্যে, চরিত্রে ভাগ হয়ে আসে তাহলে তো আর কথাই নাই। আমি ভাগ্যবান যে একটু অপেক্ষা করলেই আমার মাথায় এ রকম লেখা প্রায়ই আসে। তাই আমার মনে হয় যে উপন্যাস লেখার মানে হলো নিজের আকাঙ্ক্ষা, অনুপ্রেরণাকে মগজের ধূসর ধোঁয়াশার জঙ্গল থেকে বের করে আনা।

কারণ যখন অনুপ্রেরণার হাওয়া আপনার গল্পের পালে লাগবে দেখবেন দূর থেকে উড়ে আসা ভাবনারা আপনার কানে কানে সব উত্তর বলে দিচ্ছে। জীবন থেকে বাঁচতে আপনি কল্পনার দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেই কল্পনার অর্থ আপনি ধরতে পারবেন। সব থেকে বড়ো কথা আপনার উপন্যাস আপনার কল্পনাকে ভাসিয়ে তুলবে, সেটিকে জীবন দান করবে। আমরা যে কল্পনাদের হাত ধরে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাই সেই কল্পনারাই তো উপন্যাসকে ঠাসবুনন দিয়ে টিকিয়ে রাখে। আমরা যত লিখি তত কল্পনাগুলো আরও বড়ো হয়। উপন্যাসও তখন আরও শক্তিশালী হয়। হয়ে উঠে এক দ্বিতীয় পৃথিবী। আমরা যেহেতু এই পৃথিবী লেখার মাধ্যমে তৈরি করেছি তাই ওই পৃথিবীকে আমরা যত বেশি চিনব তত বেশি তা আমরা ধারণ করতে পারব। আমি যদি কোনো উপন্যাস লেখার মাঝামাঝিতে থাকি এবং আমার যদি মনে হয় যে আমি ভালো লিখছি তাহলে আমি খুব সহজে ওই উপন্যাসের কল্পনায় ঢুকে যেতে পারি। উপন্যাসের জগতে পড়তে পড়তে ঢুকে যাওয়া গেলেও তাকে সেই জগৎ উপভোগ করা যায় লিখতে লিখতে। একজন সত্যিকারের লেখক এমনভাবে তার উপন্যাস লেখেন যেন তিনি তার স্বপ্নের বর্ণনা দিচ্ছেন। তাই এই লেখা পাঠকের মধ্যে যে আনন্দ তৈরি করে সে আনন্দ লেখক নিজের মধ্যেও খুঁজে পান। আমি যদি এমন এক জগতের সামান্য একটা অংশও লিখতে পারব বলে মনে হয় আমি সাথে সাথে খাতাকলম নিয়ে আমার ডেস্কে বসে যাই যাতে করে এই দৈনন্দিন পৃথিবীতে সময় নষ্ট না করে আমি ওই স্বপ্নের পৃথিবীতে ঢুকে যেতে পারি। তাই বেশির ভাগ সময়েই আমার সেই স্বপ্নের পৃথিবী থেকে বের হওয়ার অর্থাৎ উপন্যাসটা শেষ করার কোনো ইচ্ছাই থাকে না। তাই পাঠকরা যখন বলেন যে ‘আপনার উপন্যাসটা আরও বড়ো করে লিখবেন!’ আমার তখন খুবই ভালো লাগবে। এবং গর্ব করে বলতে পারি আমি প্রকাশকের ‘আরেকটু ছোটো করেন’ এই কথা থেকে পাঠকের কথাটাই বেশি শুনি।

একটা মানুষের আনন্দ দুঃখের ওপর ভিত্তি করে শখের বসে লেখা কিছু লাইন কী করে হাজার মানুষকে আকর্ষণ করে? এই কথা জিজ্ঞেস করলে আমার পাঠকেরা হয়তো ‘মাই নেইম ইজ রেড’-এর শেকুর এর মতো বলবে সব কিছুর উত্তর খুঁজতে যাওয়াটাই একটা বোকামি। আমার উপন্যাসের ওরহান একটু বোকা। তার মতো করেই যদি বলতে যাই তাহলে আমার মনে হয় যে সাহিত্য লিখে লেখক নিজের মনোরোগ সারান তা পাঠকের কাছেও একধরনের ওষুধ। কারণ আমি যখন সবকিছু থেকে দূরে বসে আমার লেখাগুলো লিখছি আমি তখন পৃথিবীর, সমাজের অনেক ঊর্ধ্বে এক স্বর্গীয় অবস্থানে পৌঁছে গেছি। আমি প্রতিটি ঘর, গাড়ি, জাহাজ, দালানের মধ্যে উঁকি দিতে পারছি, কারণ আমার কাছে সবই কাচের তৈরি। আমার কাজ হলো নিজের স্বর্গীয় ক্ষমতা ব্যবহার সেইসব ঘরের গল্পগুলো শোনা, নিজের গল্পের নায়কদের সাথে ইস্তাম্বুলে বাসে করে ঘুরে বেড়ানো, এমন জায়গায় যাওয়া যে জায়গার আকর্ষণ আমার ভেতর থেকে এখনো হারিয়ে যায়নি। এবং এই পুরো প্রক্রিয়াতেই আমি হয়তো নিজেকে বদলে দিচ্ছি, নিজের গল্পের নায়ককে বদলে দিচ্ছি। কারণ আমাকে তখন কর্তব্যপরায়ণ এক নাগরিকের মতো আচরণ করতে হচ্ছে আমার প্রতিটা দায়িত্বজ্ঞানহীন লাইন আমাকে নতুন একটা জিনিস শেখাচ্ছে, একটা নতুন জিনিস ভাবাচ্ছে।

একজন ভালো লেখক এই পৃথিবীকে দেখেন একটা শিশুর চোখ দিয়ে, যে শিশুর কোনো দায়িত্ব নেই কোনো কাজ নেই, সে পৃথিবীতে যাই দেখে তাতেই মজা পায়। সে পৃথিবীর আইন কানুন বাস্তবতা সবকিছুকেই প্রশ্ন করে আর বদলে দিতে চায়। তবে লেখক এটাও খেয়াল রাখেন যে তার যাত্রায় যেন পাঠকেরা সঙ্গী হতে পারেন, তার কল্পনার ঘোড়া থেকে যেন তার পাঠকেরা ছিটকে পড়ে না যান। একজন ঔপন্যাসিক তার লেখায় যতই মজা করার চেষ্টা করুক না কেন তার ভেতরে একধরনের একনিষ্ঠতা থাকতে হবে। কারণ সে যেহেতু পৃথিবীকে, সমাজকে একদম খালি চোখে দেখতে পাচ্ছে সে জানে সে যদি তার পৃথিবীকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তাহলে পাঠকেরা তার উপন্যাসের মধ্যে হারিয়ে যাবে। তারা উপন্যাসটাই পড়বে গল্পটা আর খুঁজে পাবে না। ভালো উপন্যাস পড়ে পাঠকেরও যাতে মনে হয় যে ‘আরে আমিও এটাই বলতে যাচ্ছিলাম।’

যে দুনিয়া আমি তৈরি করি, যে কল্পনার জাহাজে হাওয়া লাগিয়ে আমি এগিয়ে যাই তার মূল তাড়না আসে এক শিশুসুলভ সরলতা থেকে। তবে এই শিশুসুলভ সরলতা কিন্তু আমাদের এই যান্ত্রিক জীবনে প্রায়ই হারিয়ে যায়। এই সমস্যা আমার ধারণা সব লেখকেরই হয়। প্রায়ই এমন হয় যে আমি উপন্যাস যেখানে থামিয়ে রেখে অন্য কাজে গিয়েছি ফিরে এসে আমি আর সেখান থেকে শুরু করতে পারছি না। তবে অন্য লেখকদের তুলনায় আমার একটা সুবিধা হলো আমি তখন আর সেখানে বসে না থেকে উপন্যাসের পুরোনো কোনো অংশ মেরামত করায় মনোযোগ দেই আবার। আগে থেকে মাথায় পুরো উপন্যাসের একটা নীল নকশা করা থাকলে এই সুবিধাটা পাওয়া যায়। শেষ শরতে আমি এমন একটা সমস্যায় পড়েছিলাম। রাজনৈতিক বিভিন্ন সমস্যা সামাল দিতে দিতে আমি লিখতে বসলেই আগাতে পারছিলাম না। তখন আমি একটা অদ্ভুত জিনিস আবিষ্কার করি। দাঁড়ান একটু ব্যখ্যা করি।

আমার বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয়েছিল এবং আমাকে নিয়ে যেসব রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছিল তাতে আমি হঠাৎ করে দেখলাম আমি যেমন জীবনযাপন করতে চাই তার থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব আমাকে নিতে হচ্ছে। এখন হয়তো হাসিমুখে বলছি কিন্তু আমার দৈনন্দিন জীবন এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই বেশ ভালোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল সে সময়ে। যার কারণে আমি নিজের ভেতরে সেই শিশুসুলভ সরলতার দেখা আর পাচ্ছিলাম না। তখন আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম এই বলে যে এই দিনগুলো এক দিন শেষ হবে এবং আমি পূর্ণ উদ্যমে আমার উপন্যাস লেখার কাজে ফেরত যেতে পারব। তিন বছর ধরে যে উপন্যাসের কাজ আমি করছি তা আমি তখন শেষ করতে পারব। আমি প্রতিদিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে যেতাম। পুরো ইস্তাম্বুল যখন ঘুমে বিভোর সেই সময়ে আমি ঘুম থেকে উঠে আমার অসমাপ্ত উপন্যাস নিয়ে বসতাম। এই কাজ করলে আমি আমার উপন্যাসের জগতে হারিয়ে যাওয়ার একটু সুযোগ পেতাম। লিখতে না পারলেও উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গা বেছে আমি নিজের মাথায় তা সাজাতাম। চরিত্রগুলো জীবিত হয়ে উঠত, কথা বলত। মজার বিষয় হচ্ছে যে উপন্যাস আমি তিন বছর ধরে চরিত্রগুলো সেই উপন্যাসের হলেও তারা এমন এমন কাজ করত বা কথা বলত আমি উপন্যাসে লিখিইনি। দেখে মনে হতো এরা অন্য কোনো উপন্যাসের অন্য কোনো চরিত্র। কয়েক দিন পরে আমি এই ঘটনাগুলোও একটা আলাদা নোটবুকে লিখে রাখা শুরু করি। কয়েক দিন লেখার পর দেখা যায় নতুন এক উপন্যাস তৈরি হচ্ছে যার নায়ক এক সদ্যমৃত শিল্পী। মজার বিষয় একবার লোকটাকে বুঝে ফেলার পর তার আঁকা ছবি নিয়ে তার থেকে আমি বেশি ভাবা শুরু করে দেই। এরপর হঠাৎ করে আমি বুঝতে পারি যে কী হয়েছে। আমি যেহেতু আমার শিশুসুলভ সরলতাকে নিজের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি না। আমি সেই সরলতাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়তো নিজের শৈশবে ফিরে গিয়েছি। যে শৈশবে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় বেড়ে ওঠার সময়ে আমার ইচ্ছা ছিল বড়ো হয়ে চিত্রশিল্পী হওয়ার (এই ইচ্ছার কথা আমার ‘ইস্তাম্বুল’ উপন্যাসেও আছে)।

আমার বিরুদ্বে মামলা যখন প্রত্যাহার করা হলো আমি সাথে সাথে মিউজিয়াম অব ইনোসেন্স নামক তিন বছর ধরে লিখতে থাকা সেই উপন্যাসে ফেরত গেলাম। যাই হোক এখন আমি সেই লিখতে না পারার দিনগুলোতে যেই কল্পনারা আমার মাথায় হানা দিত তাদেরকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখছি। শিশুসুলভ সরলতা ফিরে পেতে আমি আমার শৈশবে ফিরে যাচ্ছি। তাই বলা যায় এই পুরো অভিজ্ঞতাটিই আমাকে উপন্যাস লেখার মতো রহস্যময় শিল্পকে নিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস শিখিয়েছে।

তিনি বলেছেন যে একটি উপন্যাসের অন্তর্নিহিত অর্থ তার লেখার ধরন বা প্রেক্ষাপটে নয় বরং এই দুটোকে মিলিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। তার মানে উপন্যাসের আসল অর্থ নির্ভর করে পাঠক এই উপন্যাসকে কীভাবে পড়ছে তার ওপর। তাই আইজার ইমপাইল্ড অথর তত্ত্বের মাধ্যমে পাঠককেই উপন্যাসের অর্থ বের করার গুরুদায়িত্বটি দিয়ে গেছেন।

আমি সেটিকে বোঝানোর জন্য তাত্ত্বিক উলফগ্যাং আইজার-এর ইমপাইল্ড অথর নামক তত্ত্বটি একটু নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করব। আইজার, পাঠকমুখী চমৎকার এক সাহিত্যিক তত্ত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন যে একটি উপন্যাসের অন্তর্নিহিত অর্থ তার লেখার ধরন বা প্রেক্ষাপটে নয় বরং এই দুটোকে মিলিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। তার মানে উপন্যাসের আসল অর্থ নির্ভর করে পাঠক এই উপন্যাসকে কীভাবে পড়ছে তার ওপর। তাই আইজার ইমপাইল্ড অথর তত্ত্বের মাধ্যমে পাঠককেই উপন্যাসের অর্থ বের করার গুরুদায়িত্বটি দিয়ে গেছেন।

আমি আমার মামলার সময়ে যে উপন্যাস লিখছিলাম তা আমি শেষ করতে পারছিলাম না। কারণ ওই উপন্যাসের ইমপাইল্ড অথর আমি নই। অর্থাৎ যে আমি এই উপন্যাস শুরু করেছিল, যে আমি এই কল্পনাগুলো নিজের স্বপ্ন থেকে আলাদা করে কাগজে বন্দি করা শুরু করেছিল সেই আমি এখন আর আমি নেই। আমি এখন মামলায় ডুবে থাকা, গ্যাস বিল দেওয়া, টেলিফোনে কথা বলা, সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকা অন্য এক মানুষ। যেই লেখক আমার স্বপ্নকে লেখা শুরু করেছিল আমি সেই লেখক এখন আর নেই। যখন সবকিছু শেষ হলো আমি তখন ধীরে ধীরে আবার আমার উপন্যাসে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। আমার উপন্যাসের প্রেক্ষাপট গড়ে উঠেছে ১৯৭৫ থেকে বর্তমান সময়ে ইস্তাম্বুলের ধনী সমাজকে নিয়ে। যেটা পত্রপত্রিকায় অনেকেই ইস্তাম্বুল সোসাইটি ডাকে। এবং আমি খুবই আনন্দিত যে আমার উপন্যাসের কাজ আস্তে আস্তে এগোচ্ছে কারণ আমি আবার আমার আগের সেই লেখকসত্তাতে ফিরে যাচ্ছি। প্রায় ত্রিশ বছর লেগে গেল আমার বুঝতে যে আমার উপন্যাসগুলো আসলে একটাও আমার লেখা নয়, এগুলো লিখেছে আমার ভেতরের বিভিন্ন লেখক সত্তা। একটা উপন্যাস চিন্তা করা আসলে অতটা কঠিন না। আমি নিজেও বিশাল বিশাল উপন্যাস লেখার কথা ভাবি। কিন্তু ওই উপন্যাস লেখার জন্য ওই লেখকসত্তাকে বের করে আনা এবং তাকে জিইয়ে রাখাটাই হলো আসল।

যাই হোক অভিযোগ করে তো লাভ নেই। সাতটা বই যেহেতু লিখে ফেলেছি, তার মানে সঠিক বইয়ের জন্য সঠিক লেখকসত্তাকে বের করে আনার ক্ষমতা আমার আছে। যে উপন্যাস আমার লেখা শেষ সেই লেখকসত্তার আত্মাকেও আমি পেছনে ফেলে এসেছি যাতে আমার কাজে পুনরাবৃত্তির ছাপ না পড়ে। সাত উপন্যাসের সাত লেখকসত্তার কাঠামো আমার ব্যক্তিত্বের ভিত্তি করেই তৈরি। তারাও ইস্তাম্বুলকে ত্রিশ বছর ধরেই সেভাবেই দেখছে যেভাবে আমি দেখেছি। বাস্তব জীবনের নাড়িনক্ষত্র জানলেও বাস্তব জীবন যেহেতু তাদের সামাল দিতে হয়নি তাই তারাই পৃথিবীকে তুলে ধরতে পেরেছে এক শিশুসুলভ সরলতায়।

আমি আশা রাখি আমি আরও ত্রিশ বছর ধরে লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারব যাতে করে নিজের আত্মাকে আরও কিছু ব্যক্তিত্বের স্বাদ দেওয়া যায়।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র। কিন্তু আগ্রহ এবং প্যাশন সিনেমাকে কেন্দ্র করে। সিনেমা নির্মাতা হবার উদ্দেশ্যে সে একাধিক শর্টফিল্ম তৈরি করেছে। সিনেমা নির্মানের পাশাপাশি লেখালেখিতে আগ্রহী। প্রকাশিত অনুবাদের বই রিচার্ড ফাইনম্যানের লেখা ‘সিক্স ইজি পিসেস’।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।