শনিবার, এপ্রিল ২৭

টোকন ঠাকুরের ধারাবাহিক : জার্নি অব কাঁটা : পর্ব ১৩

0

শাহবাগ আজিজ মার্কেটে আড্ডায় পিএইচডি করেছি কয়েকটা, করিয়েছি অনেক। সাকুল্যে প্রায় পনেরো বছর ওখানে বিকাল-সন্ধ্যা-মধ্যরাত পার করেছি। কখনো সারা দিনই আজিজ মার্কেটে কাটিয়ে দিয়েছি। নব্বইয়ের দশকে আজিজ মার্কেটে প্রায় তিনশো বইয়ের ঘর গড়ে ওঠে, আর ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অনেক পরে আজিজীয় সভ্যতা শাহবাগে গড়ে ওঠে আমাদেরই তুমুল আড্ডার ভেতর দিয়ে। সেই জোনাকি-ওড়া সন্ধ্যার আজিজ মার্কেট আজ শুধু স্মৃতি। মার্কেট আছে, আমরা নেই, আড্ডা নেই। অবশ্য মার্কেট বললে যা বোঝা যায়, আজিজ মার্কেট তা ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনায় গড়ে ওঠা এই মার্কেটে কী ছিল তখন? তিনশো বইয়ের দোকান। লিটল ম্যাগাজিনকর্মীদের পদস্পর্শে ঝনঝন করছে মার্কেটের বারান্দা। গিটার হাতে গান তুলছে কজন। কেউ তার নতুন কাজের চিত্রনাট্য নিয়ে কম্পোজে দিচ্ছে কম্পোজের দোকানে, কেউ স্রেফ কবিতা কবিতা করেই স্বয়ং বিনয় মজুমদার হয়ে বসে আছে। আহমদ ছফা তাঁর টোল নিত্য খুলছেন, টোলের নাম, উত্থান পর্ব। হুমায়ুন আজাদ প্রত্যহ সন্ধ্যায় আসেন প্যাপিরাসে। আল মাহমুদ এসেছেন, শামসুর রাহমান এসেছেন। জয় গোস্বামী এসেছেন। বিখ্যাত কতজন এসেছেন, রবিন আহসান বলতে পারবে। শ্রাবণ-এ তালিকা থাকতে পারে। আজিজ মার্কেট মার্কেট বটে, কিন্তু এর সিঁড়িগুলো ছিল আকাশে ওঠার স্বপ্ন মাখা স্কুলের মতো। কিংবা আজিজ মার্কেট আমাদের এলদোরাদো ছিল। হয়তো বৃন্দাবন ছিল। বিরহ উদযাপনেও আজিজ সেরা ছিল। নেশা করার একটা ভদ্রজনোচিত স্বাধীন মার্কেট ছিল আজিজ মার্কেট। সত্য যে, আর দু-দশটা মার্কেট যেমন মার্কেট ঢাকায়, আজিজ তা ছিল না। একটা তথ্য দিই? সৈয়দ শরীফ আমাদের একজন বড়ো ভাই। তিনি তখন ভোরের কাগজে কাজ করেন। ওখানে কাজ করতেন আমাদের সময়ের এক উজ্জ্বল শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীও। সঞ্জীব’দাও আজিজ মার্কেটে অ্যাভেইলেবল। আমরা আড্ডা দিতাম। আমরা উল্লাসে ফেটে পড়তাম। বাইরের লোকেরা অনেকেই তাকিয়ে দেখত আমাদের ফেটে পড়া কার্পাস তুলোর জীবন। আমরা এক দুরন্ত সময় পার করছিলাম শাহবাগে, আজিজ মার্কেটে। আজকের বাংলাদেশের বিখ্যাত অনেক তরুণই আজিজ মার্কেটের সিড়িতে বসে বিড়ি টানতে টানতে টানতে টানতে টানতে টানতে বিখ্যাত হয়ে গেছে। সত্যি তাই? ধুর, তাই হয় নাকি? বিড়ি টেনে কেউ বিখ্যাত হয়? না, হয় না। তাহলে বললাম যে! এমনিই বললাম। তো শরীফ ভাই এক সন্ধ্যায় এলেন আজিজ মার্কেটে, সঙ্গে একজন জার্মান তরুণ কবি। পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেটা ২০০১ সালের কথা। সন্ধ্যা। ভরপুর জমে উঠেছে আজিজ মার্কেটের বইপাড়া। আমরা হয়তো বারান্দায় আড্ডা দিচ্ছি। প্রতিদিনই দুই তিনশো ক্রিয়েটিভ তরুণ একটা মার্কেটে এমন আড্ডা দিচ্ছে ছোটো ছোটো উপদলে ভাগ হয়ে, তাই দেখে জার্মান তরুণ কবি জিজ্ঞাসা করে, ‘ঢাকায় এরকম মার্কেট কতগুলো আছে যেখানে সন্ধ্যায় তরুণ কবিরা আড্ডা মারে? আর আড্ডা মার্কেটে কেন?’ কিন্তু ওই যে বললাম, পৃথিবীর যে সময়টা নব্বইয়ের দশক বা তার পরের দশকও, তখনকার আজিজ মার্কেটকে শুধু মার্কেট ভাবলে ভুল হবে। ও তো মার্কেট না গো! ও ছিল আমাদের হৃদয়ের রাজধানী, আমরা সবাই রাজা আমাদের সেই শাহবাগ-রাজত্বে। লিটল ম্যাগাজিন-কবিতা-চিত্রকলা-সিনেমা–উপন্যাস-দর্শন-রাজনীতি-নেশা-প্রামাকাঙ্ক্ষা-প্রেমহীনতার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত আমাদের সেই সময়। গগনডাঙার মাঠে জ্যোৎস্নারাতে যে ঘোড়াগুলো দৌড়ে বেড়ায় এখনো, সম্ভবত শাহবাগের নব্বইয়ের দশকের তরুণেরাই আজ সেই গগনডাঙার ঘোড়া; নিওলিথ সভ্যতার স্তব্ধতা ছুঁতে গেছে, ছুঁয়ে কি ওরা ফিরবে? কোথায় ফিরবে? শাহবাগে? মানুষ আর ফিরতে পারে না। মানুষ হারিয়ে যায় তবু পেছনে ফিরতে পারে না। সেই আজিজ মার্কেটের বইপাড়া আস্তে আস্তে টি-শার্ট বিক্রির ধাক্কায় হারিয়ে গেল বাংলার পোশাকি তারুণ্যের অতল গহ্বরে। আমাদের আড্ডায় আজিজ মার্কেট বিখ্যাত হয়, এটা সত্য। আমাদের আড্ডা, ঘোরাফেরা, তর্কবিতর্ক সব কিছুই তো শিল্প-সাহিত্যের চাষাবাদ নিয়ে। আমরাই বা কারা? এই প্রশ্নের উত্তর কিছু পেতে পারেন গুগুল সার্চিংয়ে। নব্বইয়ের দশক বা তার পরবর্তী নতুন শতকের অন্তত প্রথম দশক পর্যন্ত তো আজকের মতো নেট আসেনি। অর্থাৎ গুগল মামা আসেনি। কিন্তু ভূগোল মামা ছিলেন। ভূগোল মামা এখনো আছেন। তাই গুগলে না পেলেও ভূগোলে তাকালে উঠে আসবে নব্বইয়ের দশক বা একুশ শতকের প্রথম দশক। আমাদের নবতারুণ্যের উন্মাতাল আড্ডায় মার্কেট বিখ্যাত তখন, সেই খ্যাতিকে ক্যাশ করতে বড়ো পুঁজি এসে গেল। বইপাড়ার অনেক তরুণ ব্যবসায়ী ছিটকে পড়ল। কেউ কেউ শরণার্থি শিবিরে আশ্রয় নেবার মতো কাঁটাবন কনকর্ড এম্পোরিয়াম মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে ঢুকে পড়ল। কনকর্ড বইপাড়া গড়ে উঠতে শুরু করল। আমি দীর্ঘদিন নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা। তাই শাহবাগ যেমন আমার বাসা থেকে হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিট লাগে, কনকর্ড এম্পোরিয়ামে যেতে লাগে দুই মিনিট। এখন যেমন, সেই সময়েও ছিলাম এলিফ্যান্ট রোডেই। মধ্যে শংকর-জাফরাবাদ, ফরাশগঞ্জ, মগবাজার, হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট, হাতিরপুল ভূতের গলি, নর্থ সার্কুলার রোড হয়ে পুনরায় নিউ এলিফ্যান্ট রোডে, এই মুহূর্তে। তো কনকর্ডে বসে আড্ডা দিতাম। একজন তরুণের সঙ্গে আলাপ হলো কনকর্ডে। আলাপে বুঝলাম, আমি তাকে প্রথম চিনলাম বটে কিন্তু তিনি আমাকে চেনেন অনেক বেশি। মাথায় চুল ঝুটি করে বাঁধেন তিনি। একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিল তাঁর কাছে। কনকর্ড মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে ‘অনুপ্রাণন’ বইঘরটিতে বসতেন তিনি। অফিসিয়ালিই বসতেন। তাঁর সঙ্গে আমার আড্ডা হতো। একদিন কথায় কথায় বললেন, ‘তা কাঁটা বানাতে কত টাকা লাগবে?’


pp 13. 4

অকালপ্রয়াত ব্লগার-কবি বন্ধু কুহক মাহমুদ


‘দেড় কোটি।’

‘আমি দিচ্ছি।’

বললেন তিনি। আমি বললাম, ‘কীভাবে?’

সেই তরুণ বললেন, ‘পুরান ঢাকায় আমাদের বাড়ির জমি আছে। সেই জমির দলিল মর্টগেজ দেখিয়ে ব্যাংক লোন পাবেন।’

এইভাবেই একটা আড্ডা হচ্ছিল আমাদের। একদিন সেই যুবক পুনরায় নোটিশ করলেন আমাকে। ‘কই? কিছু তো কইলেন না?’

‘কী বলব?’

‘কবে ব্যাংকে যাইতে চান? কবে ব্যাংকের লোকজন নিয়ে আইবেন আমগো বাড়ি দেখাইতে?’

আমি তাঁকে বলি, ‘আপনি আমাকে কেন টাকা দেবেন? আর আমিই বা কেন নেব?’

জগতে কত আশ্চর্য রকমের মানুষ থাকে, তা আমরা কেউ জানি না। আমি ব্যাপারটা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। একদিন সেই তরুণ আমাকে বেশ কিছু কাগজপত্রের এক সেট ফটোকপি দিলেন। সেগুলো হচ্ছে পুরান ঢাকার তাদের সেই বাড়ির জমির দলিল। বললাম, ‘আমাকে কেন দেবেন এসব?’

‘আপনার কবিতা আমি পছন্দ করি। আপনাকেও পছন্দ করি। আপনার সিনেমাটা হওয়া দরকার। আমি ধরেন আর সাত মাস বেঁচে থাকব। সাত মাসে না মরলেও দশ এগারো মাসের বেশি বাঁচব না।’

সবই কেমন অবাক করা কথা। আমাকে সেই তরুণ বন্ধু বলতে থাকেন, ‘আমার বউ ছেলেমেয়ে আছে। ওদের জন্য যা করার করে দিচ্ছি। আমার ভাইটাও কিন্তু আমার মতো বয়সেই মারা গেছে। আমিও তাই মারা যাব। ডাক্তারি রিপোর্ট কি আপনি অস্বীকার করতে পারবেন?’


pp 13. 2

লতা মাহমুদ কাঁটার কস্টিউম ইনচার্জ


আমাকে তাঁদের বাড়ির জমির দলিলের ফটোকপি দিলেন তিনি, বললেন, ‘দলিলের ফটোকপি সেট দেখিয়ে ব্যাংকের লোকজন নিয়ে বাড়ি দেখাইতে আসেন। তখন দলিলের মূল কপি দেবো ব্যাংককে। ‘

আমি এসবের কিছুই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি মারা যাবেন কেন?’

‘আমার অসুখ আছে। এটা আমাদের পারিবারিক অসুখ।’

এই মুহূর্তে আমার সেই অসুখের নাম মনে নেই। সম্ভবত হার্টের সমস্যা জাতীয়। এবং আমি তার জমির দলিল নিয়ে কোনো ব্যাংকে যাইনি। দলিলের সেট ফটোকপি সেট এখনো আমার বাসায় আছে। তখন কেমন একটা অনুভূতি হতো আমার, এই ব্যাপারটা নিয়ে। দেড় কোটি টাকা কী চাটিখানি কথা! আমি হয়তো তাঁর টাকা এভাবে নিতে উৎসাহী ছিলাম না। এরপর আমি এলিফ্যান্ট রোড থেকে চলে যাই শংকর-জাফরাবাদ। ওখান থেকে ফরাসগঞ্জ। একদিন ফেসবুকে দেখি, সেই বন্ধু মারা গেছেন। আমার সব মনে পড়ল। তাহলে তাঁর সেই অসুখ নিয়ে বলা কথাটা মিথ্যে ছিল না? আমাকে দেড় কোটি টাকা দিতে চাইলেন। আমি সেটা নিতে চাইনি। এবার সেই বন্ধুর নাম বলি? ফেসবুকে এখনো তার আইডি আছে। সেই বন্ধুর নাম কুহক মাহমুদ। ব্লগার, কবি, আলোকচিত্রী। কুহকের অনেক বন্ধুই এখন আমার কমন বন্ধু হয়ে গেছে। কুহকের মৃত্যুর পর ওঁকে মনে পড়েছে। আমার প্রতি কী অকৃত্রিম এক ভালোবাসা ছিল তাঁর, অথচ আমি তাঁকে যতটা চিনতাম, তার চেয়ে বেশি চিনতেন তিনি আমাকে। আমার প্রতি কী গভীর আস্থা রেখেছেন বা রাখতেন কুহক মাহমুদ। কাঁটা নির্মাণযাত্রার এই সমাপ্তিলগ্নে এসে বন্ধু কুহককে মনে পড়ে গেল। খুব ভালো ছবি তুলতেন তিনি, কবিতা লিখতেন। কুহক ব্লগার ছিলেন। কুহকের মুখ আমি ভুলব না কোনো দিন। কাঁটা কখনো কুহক মাহমুদকে ভুলবে না।

কাঁটার কস্টিউম ইনচার্জ হলো প্রথমে দোলা, মৃত্তিকা দুহিতা দোলা; প্রায় পাঁচশো লোকের কস্টিউম, তাও আবার পিরিয়ড মেইনটেইন করে—সহজ কথা নয় মোটেও। উফ! কঠিন কাজ! মগবাজার ক্যাম্প থেকে শুরু হলো দোলার যাত্রা, নারিন্দা ক্যাম্পেও কিছু দিন কস্টিউমের দায়িত্বে ছিল দোলা। পরে আর কন্টিনিউ করতে পারেনি। কিন্তু কাঁটার প্রতি দোলার ভালোবাসা কমতি নেই একটুও। অবশ্য মুনশিগঞ্জের নদীপাড়ে ছোট্ট কিন্তু মজার একটি চরিত্রে অভিনয় করেছে দোলা। কাঁটাতে দর্শক তাকে দেখতে পাবে ১৯৭১ সালের একটি বউ চরিত্রে। দোলার পরেই কস্টিউমের দায়িত্বে চলে আসে লতা মাহমুদ। দোলা বা লতা দুজনেই কস্টিউমে প্রথম কাজ করছিল কোনো ছবিতে। নতুন কিন্তু কন্টিনিউটি বা সিকোয়েন্স অনুযায়ী পোশাকের হিসাব রাখার ব্যাপারে শিখে ফেলল দ্রুতই। লতা ওদের বাচ্চাকে নিয়েই কাঁটার সেটে চলে আসত। নারিন্দায় শুটিং সেট হওয়াতে লতার জন্য সুবিধা হলো, কারণ, ওদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ হলেও পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে ওদের বাসা। ওদের বাসায় গেছি একদিন নারিন্দা থেকে। কী মিষ্টি দিন তখন আমাদের। আমি তো শতভাগ পুরান ঢাকারই লোক তখন। আমি কেন, পুরো ব্যাকগ্রাউন্ড ইউনিট বা কাঁটা টিম নিয়েই তো তখন নারিন্দায় থাকি। নয় মাস ছিলাম।


pp 13. 1

মৃত্তিকা দুহিতা দোলা কাঁটাতে যুক্ত কস্টিউমে, অভিনয়েও


কাঁটা স্রেফ একটা মুক্তিযুদ্ধ আমাদের। যুদ্ধে জিততে হবে, সেটাই একমাত্র প্রত্যয়। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই আর। আমাদেরও ছিল না। লতারা এখন নারায়ণগঞ্জে ফিরে গেছে। কিন্তু সবসময় কাঁটার ফেসবুক পেইজে কী আপলোড হলো না হলো, সব খেয়াল রাখছে লতা, ফেসবুকে শেয়ার দিচ্ছে দর্শকদের জন্য। সত্যি, কাঁটাতে লতাকে পাওয়াটা ছিল আমাদের জন্য আনন্দের, সেই আনন্দ এখনো অটুট আছে। কাজেই কাঁটার কস্টিউম ইনচার্জ লতা মাহমুদকে আপনাদের সামনে পরিচয় করানোটা আমার কাজের মধ্যেই পড়ে। লতাকে অ্যাসিস্টেন্সি দিয়েছে ঝিনুক। ঝিনুক মূলত নাচের শিল্পী। ও নরসিংদী বাঁধনহারা থিয়েটারের একজন কর্মীও বটে। তখন সেলাই মেশিন বসানো হয়েছিল কাঁটা ক্যাম্পে। আরেকটা মেয়ে ছিল সেলাই মেশিন চালাত, ওর নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না আমার। মেয়েটি কাঁটার অভিনেত্রীদের ব্লাউজ বানাত বসে বসে। একদিন সেই মেয়েটা নাচ দেখাল। সেই নাচের নাম মডার্ণ ড্যান্স। নাচ দেখলাম—ডানা কাটা পরী। বাংলাদেশের সিনেমায় আইটেম গান যারা বানায়, তাদের লাগে এসব। অভিনেত্রী হতে খুব ব্যাকুলতা দেখাত মেয়েটি। ওর মা কাঁটাতে ‘নিজামের মা’ চরিত্রটি করেছেন। সেই মহিলাও নাকি রুপযৌবনের সময়ে এফডিসিতে এক্সট্রা শিল্পী ছিলেন। এখন যাত্রাবাড়ির একটি স্কুলে আয়া হিসেবে কাজ করেন। ভয়ংকর মহিলা কিন্তু। কাঁটার প্রপস ইনচার্জও একজন নয়, তিনজন। কাজী রাসেল, জ্যানেট অভী আর গাজী। তিন সময়ের আলোকে নির্মিত একটি ছবির পিরিওডিক্যাল প্রপস শতশত। সিন অনুযায়ী হিসেব রাখা বা শুটিংয়ের মুহূর্তে সেটাই হাজির রাখা—সেটে প্রপস ব্যবহার করা—সত্যিই, বিরাট এক বোঝা। নারিন্দায় একটি রুম ছিল আমাদের, প্রপস রুম ছিল সেইটা। কোনো গেস্ট এলে সেই রুমে নিয়ে যেতাম। অবাক হতেই হতো—এত প্রপস! ১৯৯০, ১৯৭১ ও ১৯৬৪—তিন সময়ের প্রপস। তিন সময়ের সেট। আগেই বলেছি, এলাহি কারবার।


pp 13. 7

সাংবাদিক দম্পতি অ্যামিলিয়া খানম ও ফখরুল ইসলাম হারুণ


কাঁটা ক্যাম্প থেকে টিম নিয়ে বেশ কবার গেছি বীথিকার বাসায়। বীথিকা আর্টিস্ট। খুব ভালো পেইটিং ও পুতুলশিল্প গড়ে থাকে। বীথিকার মেয়ে অভিনয় করেছে কাঁটায়। বীথিকার কাছে ঋণ আছে কাঁটার, অনেক। বীথিকার বাসায় গেছি, খাওয়া দাওয়া করছি। বীথিকা কাঁটার জন্য রাধাকৃষ্ণ বানিয়ে দিয়েছে। আরও নানানভাবে কাঁটা বা আমি বা আমাদের টিম শিল্পী বীথিকা জোতদারের কাছে ঋণী আছি। যেমন, সাংবাদিক অ্যামেলিয়া খানম অনেকবার আমাদের জন্য রান্না করেছেন, আমরা খেতে গেছি তার বাসায় টিম ধরে। এই সাংবাদিকের স্বামীর নাম ফখরুল ইসলাম হারুণ। তিনিও সাংবাদিক এবং কবিতার দারুণ পাঠক। হয়তো গোপনে তিনিও কবি, প্রেমিক। সরকারের সঙ্গে কাঁটার চুক্তিনামায় হারুণ ছিলেন গ্যারান্টার। তিনশো টাকা স্ট্যাম্পে সেই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। মিনিস্ট্রি বনাম আমি। মাঝখানে গ্যারান্টার ফখরুল ইসলাম হারুণ। অ্যামেলিয়া-হারুণ দম্পতির সঙ্গে আমার সম্পর্কটা অনেক বেশি ঘরোয়া। কাঁটাতেও এক দৃশ্যে তাদের দেখা যাবে বাচ্চাসহ গিয়েছেন মরণচাঁদের মিষ্টির দোকানে।


pp 13. 5

শহীদুল জহিরের জন্মদিনে পাঠক সমাবেশে ছোটো স্বপ্নাসহ টোকন ঠাকুর | ছবি হোসেইন আতাহার


মগবাজার কাঁটা ক্যাম্পে ছিলাম যখন, তখন একবার টিম নিয়ে চলে গেলাম শাহবাগে, পাঠক সমাবেশে। জনাব শহীদুল জহিরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে যাওয়া। শহীদুল জহিরকে নিয়ে ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বললেন কবি-সাহিত্যিকেরা। কাঁটা টিমের এক কনিষ্ঠা অভিনেত্রী, যার বয়স ১৩, সেও বক্তৃতা করল শহীদুল জহিরকে নিয়ে। কাঁটা ক্যাম্পে তার প্রশিক্ষণ হয়েছে, বয়স যতই হোক ১৩। কাঁটা টিম নিয়ে গেছি সিনেমা দেখতে, কাঁটা টিম নিয়ে গেছি একদিন চারুকলায়।

আমি বুঝতে পারি, মগবাজারের ক্যাম্প মনে হয় শেষ হয়ে আসছে। কারণ, আমরা নারিন্দায় আজিজ ব্যাপারীর বাড়িটা পেয়ে গেছি, ৩৬ ভূতের গলি। সেই বাড়ি আঁকানো হলো। শিল্পী হচ্ছেন দীপন’দা, কাঁটার আর্ট ডিরেক্টর। দীপন’দার বাসা স্বামীবাগ, নারিন্দা কাঁটা ক্যাম্পের অনতিদূরেই। চারুকলায় দীপন’দার সঙ্গে সময় আমার এভাবে কাটেনি, নারিন্দায় কাজের মাধ্যমে যেভাবে কাটল। খুব আনন্দমাখা দিন। খুব পরিশ্রমের দিন। খুব দায়দায়িত্বের দিন। শুটিং মানেই তটস্থ তঠস্থ দিন।


pp 13. 3

কাঁটার একটি দৃশ্যে সুবোধচন্দ্র দাস, স্ত্রী স্বপ্না রানী দাস ও সন্তান বিশ্বজিৎ


মগবাজারে আছি। ২০১৮ সাল। বইমেলা চলছে। আমি বইমেলায় যেতে পারব না, কারণ, আমি ভূতের গলিতে যাব। ভূতের গলির আশপাশেই থাকে শিবু কুমার শীল। একদিন মগবাজার কাঁটা ক্যাম্পে আসে শিবু। শহীদুল জহির, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, খোয়ারি, পুরান ঢাকা নিয়ে আড্ডা হয়। তখনো আমার জানা ছিল না, শিবু কাঁটার একজন অভিনেতা হয়ে যাবে পরবর্তীতে। ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও এখন আমার জন্য আনন্দদায়ক স্মৃতি। তাছাড়া শিবুর সঙ্গে আমার নিরন্তর একটা বোঝাপড়া জারি থাকে। মোটামুটি মগবাজার ক্যাম্পের দিন আমাদের শেষ। এখন নারিন্দা যাওয়ার পালা, ৩৬ ভূতের গলিতে যাওয়ার সময়। ৩৬ ভূতের গলিই তো কাঁটা ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র নিঃসঙ্গ আবদুল আজিজ ব্যাপারীর দোতলা বনেদী বাড়ি, বাড়িতে একটি উঠোন আছে। উঠোনে আছে একপাশে একটি পাতকুয়া, অন্যপাশে লাগানো আছে একটি তুলসীগাছ। আবদুল আজিজ ব্যাপারীর চরিত্রে কিছু দিন অভিনেতা তারিক আনাম খানকে নিয়ে রিহার্সেলও চলল। কিন্তু তারিক ভাইয়ের সঙ্গে ডেট মিলছিল না আমাদের। তারিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটা বোঝাপড়া আছে দীর্ঘদিনের। আমি নাট্যকেন্দ্র’র সদস্য। তারিক ভাই দলপ্রধান। অভিনেতা ঝুনা চৌধুরী, তৌকীর আহমেদ, মোশাররফ করিম, ‘ব্ল্যাকআউট’ এর অভিনেতা প্রয়াত তানভীর হাসানও নাট্যকেন্দ্র’র সদস্য। তারিক ভাইয়ের সঙ্গে মিলছে না যখন, তখন কে হবেন আজিজ ব্যাপারী—সেই ভাবনাকালীন সময়ে অভিনেতা এস এম মহসীন ভাই বলতেন, ‘আমাকে নাও। শোনো, এনএসডিতে যখন আমি বের হবো বের হবো তখন তারিক, জামিলরা ভর্তি হলো। ওখানে আমি তখন করতাম বড়ো ক্যারেক্টার, ওরা মনে করো সৈনিকের মতো দাঁড়ায়ে থাকা গৌণ চরিত্র করত প্রথম দিকে। অবশ্য তারিক বা জামিল দুজনেই প্রতিভাবান। পরে ঢাকায় এসে প্রমাণ করেছে। তুমি আমারে আজিজ ব্যাপারীর চরিত্রটা দিতে পারতে, পারতে না?’


pp13. 8

কাঁটা ক্যাম্প মগবাজারে অভিনেতা তারিক আনাম খান, পেছনে ছোটো সুবোধ


বললাম, ‘মহসীন ভাই, আপনার চরিত্র গুল্টু মিয়া মহল্লাবাসীদের লিডার ধরনের, খারাপ কী?’

রেলাইনের গা ঘেঁষে কাঁটা ক্যাম্প, মগবাজারে। চরিত্র নির্ধারণ হচ্ছে প্রতিদিন। কোনো চরিত্রেই ব্যাপকতর পরিচিত মুখ রাখব না কাঁটা প্রজেক্টে, এই ভাবনা আমাকে তাড়িত করেছে। কাজেই কাঁটা ছবির এক্কেবারে প্রধানতম একটা চরিত্র আবদুল আজিজ ব্যাপারীকে বাংলাদেশের দর্শক দেখামাত্রই চিনে ফেলুক, ‘আরে…অমুখ’—এই সাউন্ড আমি চাইনি। অবশ্য আমার ভাবনায় কিছু শর্ত ছিল, ব্যাপারীকে হতে হবে পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী কেউ। তার মুখের বচনে পুরান ঢাকা পাওয়া যেতে হবে শতভাগ। এইজন্য অনেক বড়ো বড়ো অভিনেতা ফেইস করেও কাউকে এই চরিত্রে ফিক্সড করতে পারিনি তখনো। অবশেষে পেলাম বটে, ঠিকঠাক অভিনয়ও করালাম, কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এইখানেই, যে ভাষা ভাষা করে আমি হন্যে ছিলাম, সেই ভাষা জানা অভিনেতা ছবির ডাবিং শুরু করার আগেই হারিয়ে গেলেন। কেউ হারিয়ে গেলে তাকে আর কীভাবে খুঁজে পাব? হারালে, কেউ কিছু দিন পরেই হয়তো ফিরে আসে। কেউ অনেকদিন পরে ফিরে আসে। কেউ আর কখনোই ফেরে না। সেই কখনোই না ফেরার দলে নাম লেখালেন আবদুল আজিজ ব্যাপারী। কাঁটাতে তার ডাবিং নেওয়া হলো না। হয়তো-বা একটা চ্যালেঞ্জ তিনি ছুড়ে দিয়ে গেলেন, আমাকে, কাঁটা টিমকে, ‘অভিনয় তো করাইলেন, অহন ডাবিং কারে দিয়া করাইবেন করান। ছবি দেখার পর মাইনসে কইব, ঠিক ওইছে, না অয়নাই!’


pp 13. 9

আবদুল আজিজ ব্যাপারীর বাড়ি। অ্যাক্রেলিকে এঁকেছেন কাঁটার আর্ট ডিরেক্টর মাহমুদুর রহমান দীপন


সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাঁটার ডাবিং প্রায় শেষ, এখন বসে আছি ডাবিং স্টুডিওতে। কবর থেকে তুলে এনে ডাবিং করানোর সিস্টেম থাকলে খুব ভালো হতো। এস এম মহসীন ও কায়েস চৌধুরীকে তুলে আনতাম। ডাবিং শেষে না হয় আবার বলতাম, ‘যান গা।’ না, সে সিস্টেম এখনো চালু হয়নি। দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে দেশে ফিরে কায়েস চৌধুরী প্রচুর প্যাকেজ নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্র বানিয়েছেন। তথ্যচিত্র বানিয়েছেন। নারীদের মতো দীর্ঘ তার কেশ। যখন শংকরে ছিলাম কিছুকাল, তখন নির্মাতা রাজীবুল হোসেনের অফিসে পরিচয় হয়েছিল কায়েস চৌধুরীর সঙ্গে। অবশ্য তখন কোনোভাবেই জানতাম না, এর পরের বছরেই আমি তাকে কাস্ট করব একদিন। মানুষ কত কিছুই জানে না কিংবা মানুষ জানে, আমি জানি না। আমার না জানার তালিকা নিয়েই একটি পর্ব জার্নি অব কাঁটা লিখব। একজন মানুষ যে কত কিছু না জেনেই বেঁচে থাকতে পারে বা বেঁচে থাকে, তার প্রমাণ আমি দেখাব। প্রমাণ তো আমিই, আমি নিজেকে দেখাব। দেখিয়ে বলব, ‘এই যে অসার মাল, এ অনেক কিছুই জানে না। আসেন এরে গালি দেই। আসেন এরে মাইর দেই। মাইর দিয়ে মাটিতে শুয়ায়ে ফেলি। শালা, জানিসনে ক্যান? দে মাইর, মাইর দে। মাইরের উপর ওষুধ নাই।’

আমি অনেকবার ঘুমের ভেতরে মেরেছি নিজেকে। অনেক দিন নিজেকে না খাইয়ে রেখে শাস্তি দিয়েছি, নির্ঘুম রেখেছি। অনেক অপমান করেছি। নির্জন কারাবাসে নিপতিত করেছি নিজেকে। নিজেকে কাঁচুমাচু হতে দেখেছি। নিজেকে পরাজিত হতে দেখার সিনেমা কি আমি বারংবার দেখিনি? নিজেকে ভেঙে পড়তে দেখিনি! ভাঙতে ভাঙতে আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। ঘুমের মধ্যে ফের ডুবে গেছি অতলান্তিক এক সমুদ্রে। সেই সমুদ্রের নাম স্বপ্ন। স্বপ্নে আমি সাঁতার কাটতে শুরু করি। সাঁতার কাটছি। আমি কি সন্তরণশীল কোনো মাছ? কয়েকটি পুঁটি মাছ ভাজার দৃশ্য আছে কাঁটায়। যা বলছিলাম, আমি নিজেকে মরে যেতে দেখেছি। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি, মরে যাচ্ছি। চারদিকে সব কিছু সচল, শুধু আমি নেই হয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন একটি চারাগাছ, পুঁজির থাবা সমস্ত জলাভূমিকে বালু বালু করে দিচ্ছে, মরুভূমি করে দিচ্ছে, চারদিকে বালু, আমার চারাগাছ-স্বপ্ন আমি কোথায় রোপণ করব? বুকের মধ্যে ছলকে ওঠা ভালোবাসাকে কোথায় বপন করব?


প ১২। 18

আজিজ ব্যাপারীর বাড়িতে কাঁটা টিমের একাংশ


কাঁটা স্ক্রিপ্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে তরুণ কবি মেহেরুবা নিশা, আমার ছাত্রী। নিশা বলছিল একদিন, ‘স্যার, আপনার সুবোধ-স্বপ্নারা ভীষণ রোমান্টিক।’

‘হুম।’

‘হুম না স্যার, সত্যিই। আমি তো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে পড়াই, কাঁটা অনুবাদ করতে করতে সুবোধ-স্বপ্নাদের কথা ভাবছি। ভাবতে ভাবতে অনুবাদ বন্ধ হয়ে গেছে।’

‘কও কী? তাইলে ভাইবো না। অনুবাদ চালায়ে যাও।’

মেহেরুবা নিশা এইবার যা বলল, তা আমি ভাবিনি। ‘স্যার, টিপ-সিন্দুর পরেই কলেজে যাচ্ছি কয়েকদিন ধরে। প্রিন্সিপাল স্যার বললেন, ব্যাপার কী? স্টুডেন্টরাও তাকাচ্ছিল খুব।

‘কেন এ সব করতে গেলে নিশা? এখন তো সমস্যা হতে পারে তোমার!’
মেহেরুবা নিশা কাঁটা অনুবাদ করতে বসে কী সব কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলল নিজের চাকরি-ফাকরিতে। বললাম, ‘এসব কেন করতেছ তুমি?’

নিশা বলল, ‘স্যার, স্ক্রিপ্টের স্বপ্না হইতে মন চায় তাই। মেহেরুবা নিশা জানাচ্ছে, সে নাকি স্বপ্না রানী দাস! কী অদ্ভুত, জগৎ বড়ো লীলাময়। দুই মাস পর নাকি নিশার স্বপ্না-তমিস্রা-ঘোর কেটেছে। যাক, বাঁচা গেল।

বলছিলাম যে, জগৎ বড়ো লীলাময়। নাকি লীলাময়ী? লীলার কথা বলতেই আমার মনে আসে অবলীলার কথা। অবলীলা কে? অবলীলার কথা আমার কেন মনে আসে? অবলীলার সঙ্গে আমার কোথায় দেখা হয়েছিল? অবলীলা কি কোনো প্রজাপতি ছিল বা আছে, আর আমি কি সেই সারা দুপুর বাগান জুড়ে দৌড়ে বেড়ানো চিরকালের কিশোর? অবলীলায় আমি ঝুঁকে পড়ি বিকেলের কুয়াশামাখা দিগন্তরেখার দিকে। অবলীলায় আমি ভেসে ভেসে যাই সেই সেরকম কোনো হাওয়ায়, যে হাওয়া হিরণ্ময়, যে হাওয়া হুহু করা ভালোবাসা। একদিন দেখি, ভালোবাসা পুঁজির অভাবে ও পরে পুঁজির প্রভাবে, পুঁজির প্রলোভনে অবলীলায় সেল করে দিচ্ছে নিজেকে। অবলীলা সেলসগার্ল না, কিন্তু নিজেই প্রোডাক্ট হয়ে, বিক্রি হয়ে হাতে হাতে চলে যাচ্ছে। তারপরও কেন অবলীলার কথা বলি বলো? কারণ, কথা। কথা যখন কথার সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল, কথা যখন কথার পাশে বসে ছিল, শুয়ে ছিল, কথা যখন কথার সঙ্গে জীবনযাপন-উদযাপন করছিল, তখনকার একটা কথা জার্নির কার্নিশে উকি দিচ্ছে এখনো— ‘তুমি হইও ফুল রে বন্ধু, আমি হব হাওয়া, দেশেবিদেশে ফিরব আমি হইয়া মাতেলা রে…হইয়া পাগেলা…’

কথা হবে, পরের পর্বে।


আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ২য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৩য় পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৪র্থ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৫ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৬ষ্ঠ পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৭ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৮ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ৯ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা ১০ম পর্ব
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১১
আরও পড়ুন : জার্নি অব কাঁটা পর্ব ১২


শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১ ডিসেম্বর, ১৯৭২, ঝিনাইদহ। বেড়ে ওঠা, বসবাস:  ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা ও ঢাকা। একাডেমিক (সর্বশেষ) পড়ালেখা: চারুকলা ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রন্থ প্রকাশনা: কবিতার বই কয়েকটি, গদ্যের বই কয়েকটি। সম্পাদিত গ্রন্থ: ২টি। ছবি নির্মাণ: ‘ব্ল্যাকআউট’ (২০০৬) আনরিলিজড। ‘রাজপুত্তুর’ (২০১৪), ‘কাঁটা’ (২০২৩) । পেশা: আর্ট-কালচার চষে বেড়ানো।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।