শনিবার, এপ্রিল ২৭

নির্বাচিত দশ কবিতা : সুবীর সরকার

0

বিজ্ঞাপন বিরতি


শালি ধানের চিড়ার লোভে এই গঞ্জদেশে এসেছি
বিন্নি ধানের খই ছড়িয়ে পাখিদের ডেকে আনছি
আলপথ আর ঝাড় ঝোপে পড়ে থাকছে এন্টি এজিং
…………………………………………ক্রিম
পুরোন ছবিতে সেই কবেকার রোদ ও হাওয়া
মানুষের ঘুম কমে গেলে
মানুষের কান্না শুকিয়ে গেলে
পাখি আর বেড়ালের খুব খিদে পায়
মাঠে মাঠে নেমে আসে আস্ত একটা টাউন
…………………………………ক্লাব
নারীর চোখে ছায়া ঘনিয়ে এলে
আঙুল থেকে আংটি খসে গেলে
হাত থেকে হাতঘড়ি খুলে গেলে
পরিচালক মন দিয়ে চিত্রনাট্য লিখতে শুরু
…………………………………..করেন
কালো পোশাক পরে আমরা জন্মদিনের উৎসবে
………………………………….যাই
সমস্ত রাত জুড়ে নৌকোডুবির গল্প।
গল্পে পাশ ফেরা নদীর হাহাকার।
কপালে চুল উড়ে এলে
অনেকেই তুলি দিয়ে আঁকতে শুরু করেন
…………………………………ভুরু
দোয়েল ও কাকের সাথে আমাদের সখ্যতা নেই
কুপির আলো নিভে এলে।
উদ্বাস্তু কলোনিতে হরিণ ঢুকে পড়লে।
সাবানের ফেনা বিজ্ঞাপনে উড়ে এলে।
আমরা থাবা ও নখের আড়ালে লুকোচুরি
……………………খেলতে শুরু করি


দেশ


আগুনে জ্বলতে থাকা একটা দেশ,মহল্লার পর মহল্লা
আলপথ জুড়ে হেঁটে বেড়ানো কাঠবেড়ালি
কোথাও আত্মরক্ষা নেই,প্যারাসুট আছে
হেলানো হেলিকপ্টার দেখে হেসে ওঠে কেউ
……………………………………..কেউ
কফিশপে বিক্রি হচ্ছে কাফ সিরাপ
ব্যাগ ভর্তি বাজারে ঢুকে পড়ছে ডেটলের শিশি
শিস পড়ে থাকছে।
লবণগোলা জল পড়ে থাকছে।
শান্ত দুপুরে দেখি গদাধরের
…………………… মাগুর মাছ।
এদিকে অবসরের পর ব্যালেন্স হারাচ্ছেন
………………………………..সাঁতারু
বাতাস মৃদুমন্দ হলে শীত মাখে গঞ্জদেশের
………………………………উনুন


ক্যারাভান


শোক নেই। সমবেদনা নেই। নুতন ফড়িঙের মত মনে হয় জলাভূমির
……………… বাতাস।
আমার একটা রক্তচাপের অসুখ ছিল
অসুখ গোপন করে আমি শুধু হেসেছি
আচ্ছা,ফুলের কি সত্যি কোন গন্ধ হয়!
রাতের আকাশের নিচে হেরে যাওয়া মানুষেরা
…………………………….. হাসছেন
জঙ্গল পেরিয়ে জঙ্গলপথ।
নীল বাইসন জানে কোথায় লুকিয়ে থাকে
……………………………হরিণেরা
একা একা জেগে থাকে রঙচটা তাঁবু।
টুপি উড়ে যায়।
চশমা,ঘড়ি আর বল্লম নিয়ে মহামিছিলের
……………………. অংশ হতে থাকি
কিছুতেই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয় সেই প্রাচীন
…………………………….. সিন্দুক
অথচ মেঘ ঢুকে পড়ে রান্নাঘরে।
জল পড়ে ভিজে যায় লবণের কৌটো।
খুব ঝাল লঙ্কায় কামড় দিলে ময়নামতির চোখ
………………………জুড়ে কান্না নামে
আমরা মহড়া শুরু করি।
আমরা বাদ্যযন্ত্রের ভিড়ে ঢুকিয়ে দেই ছয় ছিদ্রের
…………………………………..বাঁশি।
সাঁকো আমাদের প্রিয় শব্দ।
সাইকেল থেকে নেমে আসবার পর পরই দেখি
………………………. সামনে জলাভূমির মহিষ
নিচু হই কিন্তু নত হই না।
ক্যারামের গুটি ছিটকে এলে আত্মগোপন করি
……………………………..বাদুড়ের ডানার
………………………………………ছায়ায়


ফাঁদ


খণ্ড মেঘের নিচে বেশ তো একটা জীবন আমাদের!
সম্পর্ক গোছাতে গিয়ে দেখি হিম ও হেমন্তের
……………………………ফাঁদ
তুমি মাঝ পথে থামিয়ে দিচ্ছ ধারা বিবরণী
স্বাক্ষর ভেসে যায়।
হলুদ আলোয় ভরে ওঠে শহরের
…………………… রাস্তাঘাট
তোমাকে কেমন অচেনা মনে হয়।
বিতর্ক থেকে দূরে চেয়ার পেতে
………………….. বসি।


হাসপাতাল


আর এই ছোট শহরের হাসপাতালের ভেতর আমি
……………………. একা একা ঘুরি
সূর্যাস্তে রহস্য থাকে।
আপেল ও আঙুরের পাশে তোমার সাজানো
…………………….. দাঁতের পাটি
তোমাকে দেখি না।
কি বোর্ডে তোমার আঙুল দেখি।
আর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে
………………… পেনসিল,লন্ঠন
………………………..
দাবার গুটি।


বাঁশি


এদিকে মহিষ খুঁজে নিচ্ছে কাদার আরাম
হিংসুটে মেঘ দেখে বাঁশি বাজাতে শুরু করি
ঘোর ফিরে আসে।
জ্বর ফিরে আসে।
শপিং মল ও হাইরাইজ জুড়ে অনলাইন
…………………….মার্কেট


ডায়েরি


বরফ খণ্ড কিংবা আলপিন লিখে বেশ তবে শুরু
………………………………….করে দাও
গোলকিপার ছুটে বেড়াচ্ছেন গোলপোস্টহীন মাঠে
সাইডলাইন ভালোবাসি।
ভালোবাসি হাডুডু ও তেতুঁল পাতা।
রেফারির লাল কার্ড উড়ে আসে ডায়েরির
…………………………… পাতায়


কান্না


আর জল স্তম্ভ পেরিয়ে যেতে চাওয়া সমুদ্র পাখি
আর দংশন সেরে ফিরে আসতে থাকা সাপ
এরপর শূন্য সিঁথির গল্প।
কান্নার ভেতর দিয়ে কেবলই তোমার কাছে
………………………………যাওয়া


হাডুডু খেলার মাঠ


শহরে ঘোড়ার গাড়ি ঢুকছে।
ভেঙে পড়ছে বিদ্যুতের খুঁটি।
তোমাকে অনাবশ্যক ভাবছি ইদানিং।
জরুরী খবর পৌঁছে দিতে দিতে লম্বা একটা
…………………… সময় কেটে গেল
বিকেলের রোদ পেরিয়ে
খুব বিষন্নতা নিয়ে
বেঁচে থাকার গল্প বলতে বলতে
তুমি বদলে ফেলছো হাডুডু খেলার
………………………..মাঠ


উৎসর্গ : শৌভিক বনিক


বীরপাড়া চৌপথি বেসিকালী আমাদের ছদ্মনাম
মাধব মোড়ে একদিন হরিণের শিঙে হাত
………………………….. রেখেছিলি তুই
সারারাত জুড়ে আমন ধানের গল্প
সাত ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একোয়া
………………………….হাতি
ঝাড় ও ঝোরার এই দেশে
বারবার হারিয়ে যায় আমাদের
…………………….. কালি গাই
শরীরে চাঁদ জড়িয়ে হাই তুলছে ডুয়ার্সের
…………………………. দুরন্ত চিতা
আর নটরাজ সার্কাসের রিংমাস্টারের সাথে
দেখা করেই আমি ছুটতে থাকি
………………… শৌভিকের দিকে
আমার ও শৌভিকের মাঝখানে একটা পেট্রোল
…………………………পাম্প আছে
দোয়েলের শিস আছে।
দেওয়ালে টিকটিকির ছায়া
……………………আছে।

 

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

সুবীর সরকার বাংলা কবিতার গুরুত্বপূর্ণ নাম। জন্ম ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারি। নয়ের দশকে লিখতে আসা এ কবি উত্তরের লোকজীবনের সাথে জড়িয়ে আছেন তীব্র ভাবে। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে কবিতা গদ্য সহ বিভিন্ন ধারায় অনায়াস যাতায়াত করেছেন। ভাষার প্রায় সব কাগজে নিয়মিত লেখালিখি করছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতাবই প্রকাশিত হয় কবিতা পাক্ষিক থেকে। গুরুত্বপূর্ণ কবিতা ও গদ্যের বইগুলো- ধানবাড়ি গানবাড়ি, মাহুত বন্ধু রে, নির্বাচিত কবিতা, বিবাহ বাজনা, নাচঘর, উত্তরজনপদবৃত্তান্ত, মাতব্বর বৃত্তান্ত, ভাঙা সেতুর গান। পেশায় শিক্ষক এ কবি ভালোবাসেন রবিশস্যের খামার বাড়ি, সাদা ঘোড়া আর যৌথ যাপনে চাঁদের আলোয় কবিতা আড্ডা, লোকগানের আমেজ। কবিতা পাক্ষিক সম্মান ইতিকথা সাহিত্য পুরস্কার শিতলগড় সাহিত্য সম্মান কবিতা করিডোর সম্মাননা তোর্ষা বিশেষ সাহিত্য সম্মাননা বিবৃতি সাহিত্য পুরস্কার সমিধ কবিতা সম্মাননা আলপনা স্মৃতি সম্মাননা সাহিত্যিক অমিয়ভূষণ স্মৃতি পুরস্কার।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।