মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০

বর্শায় গাঁথা মাছের চোখে নির্লিপ্ততা : তৌফিকা নাসরিন

0

কাজলরেখায় সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বেলে নিয়ত পুড়ে যাই। একুশ ইঞ্চি টিভিটাতে দিন-রাত তরঙ্গের খেলা। আকাশে গর্ত খুঁড়ে চাপা দেই নিজেকে। হাসনাহেনার গগন বিদারী চিত্‍কারে সেই আকাশ ভেঙে টুকরো টুকরো। ভাঙে অবসর। সিঁড়িঘরে এবার শিউলি লাগাই। ঘরে ফেরার কথা মনে পড়ে, টুকরো আকাশের ভিড়ে যে ঘর হারিয়ে গেছে অনেককাল আগেই।

 

*
শঙ্খের গায়ে দাগ কেটে কেটে বিগত জন্মের হিসাব রাখি। ফণিমনসার বুকে মৃত্যুপুরী, সেখানে আঙুল ছোঁয়ালে নদীতে চর জাগে আর চাঁদ নেমে আসে পায়ে। আমরা শ্মশানে চাঁদ পোড়াই। পোড়া গন্ধে তরল জ্যোত্‍স্না ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। সেই বাতাসে চোখ রেখে নেশাতুর হই। নেশা গাঢ় হলে সবাই হয়ে উঠি জাতিস্মর।

 

*
বৃদ্ধ কাছিমের খোলসের ভেতর পৃথিবীর সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত। কাছিমটা যখন উত্তর গোলার্ধে হেঁটে যেতে থাকে দক্ষিণে তখন শ্যাওড়া গাছের রাজত্ব। শ্যাওড়ার ডালে মাছরাঙাদের বসতি। মাছরাঙারা তখন স্বর্গের অতিথি। কিছুদূর যেতেই আপেল বাগানটার দেখা পাই আর দু-পকেট ভর্তি করে ফিরে আসি পৃথিবীতে।

 

*
পৃথিবীটা এখানটাতে বড্ড ছোটো। জানলার পাশে ফুটে থাকা নয়নতারার তীব্র গন্ধে মাথা ধরে। মাটিতে দাগ কেটে কাটাকুটি খেলার গল্পে তোর এঁকে দেওয়া বিশাল দাঁড়ি। বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধিতে ঘুরতে ঘুরতে সেই যে দুজনে সমুদ্রটা ছুঁয়ে ফেললাম সেদিন থেকেই জানি তোর-আমার ছায়া একটাই। জন্মান্ধের আলোয় ডুবে থাকি দুজনে তাই আর নিজেদের ছায়া ছেড়ে বের হওয়া হয়ে ওঠে না।

 

*
সাগরের পাশের বালিতে একটা মুখ আঁকি। ঠোঁটের কোণের হাসিটা এঁকে শেষ করতেই এক ফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়ল চোখে, হাসিটাতে। বৃষ্টির বেগ বাড়ছিল, সাথে সাথে হাসছিল চোখ দুটোও। তারপর চোখভর্তি বৃষ্টি আর একটুখানি হাসি নিয়ে মুখটা উঠে গেল আকাশে; পৃথিবীটাকে ভালোভাবে দেখবে বলে। দূর থেকে পৃথিবী বরাবরই সুন্দর!

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ফেনীতে।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।