সোমবার, এপ্রিল ২৯

‘বিদ্যাসাগর’ : মোশতাক আহমদ

0

পদার্থ বিজ্ঞানের নানা জটিল বিষয় নিয়ে মাথা গুঁজে নিভৃত হোস্টেল জীবন কাটালেও, কবিতার মতো অপদার্থ বিদ্যাচর্চার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুণ কবি সুব্রতর খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল।

জগন্নাথ হলের একটি সিঙ্গেল রুমের অধিকারী সুব্রত পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু ঢাকা শহরে সে এখনো নিজেকে খুঁজে পায় না। রুমের জানালা পথে ফিরে যায় কৈশোরের শহরে। কবিতা আসে, কবিতার ভূত সহজে তাকে ছাড়ে না, দীর্ঘ কবিতা লিখিয়ে নেয়। আজ লিখেছে—

`আমি আবার ফিরবো, ফিরে আসবো
আমার এই পুরোনো শহরে,
আমার আবাল্য স্মৃতির পাহাড়,
নদী আর সমুদ্রের মিথুনলগ্নতায়
…খুচরো খেলাধুলোর রঙিন মার্বেলের
মসৃণ শরীরে লেগে থাকে
অবুঝ স্বপ্নের মতো কাদাবালি…’

নিজের লেখা প্রথম কবিতাটি সে চট্টগ্রাম থেকে ডাকে ছেড়ে দিয়েছিল সমকালের ঠিকানায়। এত বড়ো কবিতার জায়গা সমকালে হবে কি না সেটা ভাবে নাই। সিকান্দার আবু জাফর ছাপলে ছাপুন, না ছাপলে না ছাপুন—এমন একটা ভাবনা থেকে কবিতাটি পাঠিয়েছিল। কয়েকদিন পর ইত্তেফাকে সমকাল কবিতা সংখ্যার একটা আলোচনা ছাপা হলো। সেখানে কার কার কবিতা ছাপা হয়েছে কৌতূহল বশে দেখতে গিয়ে সুব্রত নিজের নাম আবিষ্কার করে ফেলল। গায়ে কাঁপুনি নিয়ে নিউ মার্কেটের নিচ তলায় সিগনেটের বইয়ের দোকানে গিয়ে হাজির হলো। মাত্র চার কপি পত্রিকা এসেছিল। শেষ হয়ে গেছে। সুব্রতকে সমকালে চিঠি লিখে পত্রিকার কপি আনাতে হলো।

ঢাকায় এসে সুব্রত কবিতা লেখার পাশাপাশি ইউসিসের কিছু অনুবাদ কাজ করতে শুরু করেছিল। এতে কলমটা গতিশীল থাকে, পকেটও ইউসিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরগুলোর মতো ঠান্ডা থাকে, মতান্তরে পকেট গরম হয়।

সুব্রত সেদিন রাতে মেকানিকসের একটা জটিল তত্ত্ব নিয়ে মগ্ন ছিল। পুকুর থেকে আনমনে ব্যাঙ ডাকার শব্দ আসছে। এমন সময় দরোজায় টোকা। দরোজা খুলতেই এক তরুণ হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল—

`আমার নাম হাসান। তুমি তো সুব্রত তাই না?’

সুব্রত থতমত খেয়ে ভাবছে যাকে চেনে না তাকে তুমি বলবে কীভাবে? আপনিই বা বলে কী করে, যেহেতু আগন্তুকের মুখে বন্ধুসুলভ হাসি আর তুমি সম্বোধন তাকে খুব কাছে নিয়ে এসেছে। সুব্রত আপনি বা তুমি কিছুই না বলে ভাববাচ্যের ধূসর সম্বোধনে দাঁড়িয়ে রইল। আগন্তুক বলল, `তোমার একটা কবিতা পূর্বমেঘে পড়লাম। তুমি তো মিয়া এলিয়টের ওয়েস্টল্যান্ড থিকা মাইরা দিছো!’

কখনো চা খেতে খেতে, কখনো আড্ডা দিতে দিতে, কয়েকদিনের অভিন্ন মনোযোগে গোটা কবিতাটি লেখা হয়ে যায়। প্রাচীন এক শহরের বিষণ্ণ বিকেলে ক্ষয়ের পাণ্ডুলিপি যেনবা কবিতাটি। হাসান প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইল না কবিতাটি সুব্রতর মৌলিক সৃষ্টি। তারপর সবকিছু শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ‘তুমি তো মিয়া বিরাট কবি!’

সুব্রত আকাশ থেকে পড়ল। এলিয়টের নামও সে শোনে নাই, ওয়েস্টল্যান্ড তো পরের কথা। পূর্বমেঘে প্রকাশিত ‘হলুদ বিকেলের গান’ কবিতাটি সে লিখেছিল চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি অফিসের ভিক্টোরিয় যুগের স্থাপত্যের পাশের এক মাদ্রাজি রেস্তোরাঁয় বসে বসে। কখনো চা খেতে খেতে, কখনো আড্ডা দিতে দিতে, কয়েকদিনের অভিন্ন মনোযোগে গোটা কবিতাটি লেখা হয়ে যায়। প্রাচীন এক শহরের বিষণ্ণ বিকেলে ক্ষয়ের পাণ্ডুলিপি যেনবা কবিতাটি। হাসান প্রথমে বিশ্বাসই করতে চাইল না কবিতাটি সুব্রতর মৌলিক সৃষ্টি। তারপর সবকিছু শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ‘তুমি তো মিয়া বিরাট কবি!’ সুব্রতর বুকশেলফে চকিত দৃষ্টি হেনে বলল, ‘কী কী পড়তেছ দেখি—মহাভারতের কথা, ডেকামেরন, দস্যু বাহরাম, অবাঞ্ছিত, সঞ্চয়িতা, নাহ বিলাতি কবিতার নামগন্ধ নাই! আচ্ছা, আরেকদিন এসে আড্ডা দিব।’

হাসান চলে গেল। সুব্রত ভাবল, টি এস এলিয়টের কবিতা তাকে পড়তেই হবে। কী আছে সেখানে জানা দরকার।

কয়েকদিন পরে রাতে ত্রিমূর্তির আগমন। হাসান, নির্মল আর মামুন। হাসান এসেই বলল—

‘টাকা দাও তো দেখি!’

‘কীসের টাকা?’ সুব্রত বলল।

‘আমরা ক্ষুধার্ত হে, ভাত খাব! এজন্যে টাকা চাইছি। দয়া হইলে দাও! নাহলে না খেয়ে থাকি। এই আমি শুইলাম, বলেই সুব্রতর রুমের কোনায় লম্বা করে গুটিয়ে রাখা পাটিটা মেঝেতে বিছিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল হাসান।’

‘করো কী করো কী! এই নাও টাকা। ভাত খেয়ে আসোগে।’ সুব্রত রাশভারি কিন্তু গোবেচারা ধরনের মানুষ। হাসানের কার্যকলাপে রীতিমত বিব্রত।

‘বাহ। তুমি তো দেখছি আমাদের বিদ্যাসাগর!’ মামুন বলল।

‘কেন, বিদ্যাসাগর হতে যাব কেন আবার?’ সুব্রত বিস্মিত।

‘বিদ্যাসাগর মাইকেলকে টাকা দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে রক্ষা করেছিলেন। তুমিও ঠিক তেমনি।’ এবারে নির্মল মুখ খুলল।

‘মাইকেলের নামে অনেক কুৎসা আছে, অপপ্রচার আছে। আমাদের নামেও শুনতে পার হয়তো। কিন্তু এসব কথায় বিশ্বাস যেও না বন্ধু।’

‘তুমিও চলো আমাদের সাথে।’ হাসান বলল।

‘আমি হলের ক্যান্টিনে খেয়েছি। এত রাতে আবার ভাত খাব কী?’ সুব্রত বলল।

‘তুমি চা খাবা চলো, তারপর এসে আবার পড়তে বসবা!’

খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মাইকেলের চিঠি থেকে মামুন অভিনয় করে শোনাতে লাগল, আমি যে লোকের কাছে আমার প্রার্থনা জানিয়ে চিঠি লিখেছি, প্রাচীন ভারতীয় ঋষির প্রজ্ঞা ও মণীষা তাঁর, কর্মোদ্যমে তিনি একজন ইংরেজের মতো প্রবল, তাঁর হৃদয় বাঙালী মায়ের মতো কোমল। আমি ঠিকই বলেছিলাম। হাসান আর নির্মল হাসতে লাগল।

ওরা সুব্রতকে জোর করেই নিয়ে গেল চানখাঁর পুলের পপুলার হোটেলে। খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মাইকেলের চিঠি থেকে মামুন অভিনয় করে শোনাতে লাগল, আমি যে লোকের কাছে আমার প্রার্থনা জানিয়ে চিঠি লিখেছি, প্রাচীন ভারতীয় ঋষির প্রজ্ঞা ও মণীষা তাঁর, কর্মোদ্যমে তিনি একজন ইংরেজের মতো প্রবল, তাঁর হৃদয় বাঙালী মায়ের মতো কোমল। আমি ঠিকই বলেছিলাম। হাসান আর নির্মল হাসতে লাগল। নির্মল আবৃত্তি করল :

‘বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু !’

সুব্রত কুণ্ঠিত হয়ে এক পাশে বসে চা খেতে খেতে ওদের উপহাস আর হৈ-হল্লাময় অভিনয় দেখতে লাগল। এই আলটপকা বিদ্যাসাগর উপাধি তাকে স্বস্তি দিচ্ছে না মোটেও।

হোটেল থেকে ফিরে এসে হাসান আর নির্মল সেই পাটিতেই শুয়ে পড়ল। সুব্রত বুঝতে পারল, ওরা আসলেই উদ্বাস্তু ও ভবঘুরে টাইপের কবি। এই দুই কবির ছাত্রত্ব নেই এ কথাও ইতোমধ্যে জানা হয়ে গেছে তার। সেদিন ওরা তাকে আর বেশি বিরক্ত করল না। কিন্তু আস্তে আস্তে এই আকস্মিক অত্যাচারের ঘটনা বাড়তেই লাগল।

একদিন সুব্রত বড়ুয়া আর বিপ্রদাস বড়ুয়া দৈনিক পাকিস্তান থেকে লেখক সম্মানী আনতে গেছেন। সেখানে হাসানের সাথে দেখা। হাসানও সম্মানীর টাকা তুলতে এসেছে। প্রত্যেকেই সাথে নতুন লেখা নিয়ে এসেছে। আহসান হাবীবের টেবিলে গিয়ে জমা দিতে হবে। আহসান হাবীব সেগুলো দেখে বিভিন্ন ফাইলে রেখে দেবেন। আজ তাঁর রুমে ঢুকতেই আহসান হাবীব সুব্রতকে বললেন, ‘সুব্রত, তোমার গল্পের হাত ভালো। আমাকে গল্পই দিও। কবিতার জন্য তো হাসানেরাই আছে।’ বিপ্রদাসকে বললেন, ‘বিদ্যাসাগরের জীবন নিয়ে তুমি একটা লেখা দাও। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে একটা বিশেষ সংখ্যা করা হবে।’

হাসান আর সুব্রতর মধ্যে চোরা দৃষ্টি বিনিময় হয়ে গেল। হাসান দুষ্টুমির হাসি হাসছে।

আহসান হাবীবের রুমে আলাপ আলোচনা শেষে সবাই নিচে নামলেন। সবার পকেটেই সম্মানির দশটা করে টাকা। হাসান বলল, ‘সুব্রত, সব সময় তোমাদের কাছ থেকেই খাই। আজ আমি তোমাদেরকে চা খাওয়াব।’

সুব্রত বলল, ‘ঠিক আছে, চলো চা খাওয়া যাক।’

হাসান সবাইকে চমকে দিয়ে সাকুরায় নিয়ে এলো। সুব্রত আর বিপ্রদাস তো বিব্রত। সাকুরায় কেন? এখানে বিদেশি মদ পাওয়া যায় বলে ওরা জানে। সুব্রত বলল, ‘আমরা তো এসব খাই না হাসান। চায়ের দোকানে চল।’ হাসান মৃদু হেসে বলল, ‘অপেক্ষা করো।’ তারপর কাউন্টারে অর্ডার দিতে গেল।

সুব্রত ভাবল, হাসান চা-টা কিছু খাওয়াবে না। ওদের টাকা দিয়ে বিলেতি মদ খাবে বলে এখানে নিয়ে এসেছে। সুব্রতর মনে পড়ল একদিন হাসান আর নির্মল ইংলিশ রোডে যাওয়ার সময় সুব্রতকে দেখে দুজন মিলে দুই হাত ধরে সে কী টানাটানি করেছিল। হাসান বলছিল, ‘তুমি বিদ্যাসাগরের মতো টুলো পণ্ডিতের বেশেই থাকবে? আধুনিক হতে হবে না?’ ওদের হাত ছাড়িয়ে ঊর্ধশ্বাসে দৌড়ে পালিয়ে শেষে রক্ষা পেয়েছিল ছোটোখাটো গড়নের সুব্রত।

আজ অগত্যা নাছোড়বান্দা হাসানের অত্যাচার মেনে নিতেই হলো। হাসান যে অপ্রতিরোধ্য তা ওরা ভালোই জানে। হাসান খেতে চাইলে ওরা ওদের সাধ্যমত খরচ দেবে। সুব্রত আর বিপ্রদাস দুজনেই পকেটে হাত দিয়ে ভাবল, কিন্তু ত্রিশ টাকায় কী আর একজনের জন্যে বিদেশি মদও হবে? শেষে একটা বেইজ্জতি না হয়ে যায়!

হাসান টেবিলে ফিরে এসে বলল, বিপদে ফেলে দিলাম তোমাদেরকে, তাই না? হা হা হা! তারপর মজা করে বলল, মাইকেল বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন—‘আমি বিলক্ষণ বুঝিতে পারিতেছি যে এ হতভাগার বিষয়ে হস্তনিক্ষেপ করিয়া, আপনি এক বিষম বিপদজালে পড়িয়াছেন! কিন্তু কি করি! আমার আর একটা বন্ধু নাই যে তাহার শরণ লইয়া আপনাকে মুক্ত করি।’

কিছুক্ষণ পর সবার উৎকণ্ঠা দূর করে টেবিলে এসে পৌঁছল তিন পিস কেক আর তিন পেয়ালা চা। চা খেতে খেতে সুব্রত দেখল, পকেটে টাকা থাকলে হাসান কত উদার হাতে খরচ করতে পারে। আজ হাসান ওদেরকে একটা আভিজাত্যময় অভিজ্ঞতার অংশীদার করল। আজকের জন্য হাসানই যেন ওদের ‘বিদ্যাসাগর’!

………………

গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু গল্পের ‘বিদ্যাসাগর’ নামকরণ আমাকে পূর্ব বার্লিন থেকে লেখা হাসানের জীবনের বিধুরতম একটা চিঠির কথা মনে করিয়ে দিল। কয়েক বছর পরের কথা। পূর্ব বার্লিনের চ্যারিটে হাসপাতালের ডাক্তারগণ যখন হাসানকে জবাব দিয়ে দিলেন, তখন অনেক আশাভঙ্গের বেদনা বুকে নিয়ে দেশে ফিরে আসার আগে হাসান তার আকৈশোর বন্ধু মাহফুজকে তার আশ্রয় হবার জন্য অনুনয় করে লিখেছিলেন, যাতে তিনি কবিতা লিখে যেতে পারেন আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন। দীর্ঘ সেই চিঠিতে অনেক কথার মাঝে হাসান লিখেছিলেন, দেশে ফেরার আগে আমি একজন Messiah চাইছি। Perfect একজন মমতা। সেই মমতার দিকে তাকাতে তাকাতে আমি শুধু তোমাকেই দেখলুম- তাই তোমার কাছে এই সমর্পণের চিঠি, আমার কলঙ্ক আর লজ্জার কাব্য।

… আমি ভিক্ষা চাইছি তোমার কাছে। তুমি আমার জীবনের বাকি অংশগুলি তোমার হাতে তুলে নাও। আমার নিরাপত্তা আমার বসবাস। তুমি কি তোমার করতলের সামান্য জায়গাও আমার জন্য ছেড়ে দিতে পারো না?

তুমি আমার একালের বিদ্যাসাগর, মাহফুজ। আমি মাইকেল মধুসূদন দত্ত নই অবশ্য। কিন্তু তার মতো দুর্ভাগা।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ৪ জানুয়ারি ১৯৬৮। মূলত কবি। আটটি কবিতার বই ছাড়াও লিখেছেন ছোটোগল্প, প্রবন্ধ, স্মৃতিপাঠের বই। পেশাগত জীবনে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন। প্রকাশিত কবিতার বই : সড়ক নম্বর দুঃখ বাড়ি নম্বর কষ্ট, আমার আনন্দ বাক্যে, পঁচিশ বছর বয়স, মেঘপুরাণ, ভেবেছিলাম চড়ুইভাতি, বুকপকেটে পাথরকুচি, ডুবোজাহাজের ডানা, অন্ধ ঝরোকায় সখার শিথানে । গল্পের বই : স্বপ্ন মায়া কিংবা মতিভ্রমের গল্প।প্রবন্ধ : তিন ভুবনের যাত্রী । স্মৃতিপাঠ : অক্ষরবন্দি জীবন। স্বনির্বাচিত কবিতা (প্রকাশিতব্য) : পদ্যাবধি । স্মৃতিকথা (প্রকাশিতব্য): গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গল্প : পাবলিক হেলথের প্রথম পাঠ । ডকুফিকশন (প্রকাশিতব্য) : ঝিনুক নীরবে সহো

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।