রবিবার, এপ্রিল ২৮

আফগান কবি এলাহা সাহেলের কবিতা : ভাষান্তর : কায়েস সৈয়দ

0

এলাহা সাহেল ১৯৮৪ সালে আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হেরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্সি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং তার লেখা বেশ কিছু সংকলনে প্রকাশিত হয়— ‘হাক্ বা তামামে দুরুঘ-হা আস্ত’ (মিথ্যের অধিকার আছে পথের) ২০০৫, ‘ইনজা চাহারশানবে আস্ত’ (এখানে বুধবার)’ ২০১০ এবং হেরাতি নারী ও পুরুষ উভয় কবিদের কবিতা সম্বলিত একটি বড়ো সংকলন ‘কোজাহা হানুয এসতাদা-আন্দ’ (এখন তারা কোথায় দাঁড়াবে?) ২০০৮। তার প্রথম কবিতার বই ‘খোশবাখতি রাঙ-এ যারদি হারাদ’ (সুখ হলো হলুদ রঙ) প্রকাশিত হয় হেরাতে ২০১০ সালে, যেখানে তিনি তার স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি হেরাতের যুব সাহিত্য সংঘের একজন সক্রিয় সদস্য এবং আফগানিস্তানে মানবাধিকার, বিশেষ করে নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে একজন স্পষ্টবাদী উকিল ও সংগঠক।

এলাহা সাহেলের কবিতার কৌতুকপূর্ণতা কেবলমাত্র তিনি যে বিষয়গুলো গ্রহণ করেন তার গাম্ভীর্যকে উচ্চারণ করে, প্রায়শই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা বা সমস্যাগুলোকে কয়েকটি শব্দে, একটি একক চিত্রে ঘনীভূত করে প্রকাশ করে। তিনি প্রায়শই তাৎপর্যপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে ছোটো কবিতাসহ বিভিন্ন শৈলী এবং এক্সপেরিমেন্টের ব্যবহার করে থাকেন (যার কয়েকটি উদাহরণ এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে)। এলাহার লেখায় খুব কমই ক্লাসিক্যাল-ফর্মের কবিতা দেখতে পাওয়া যায়। বরং পৃষ্ঠার নিচে ভাসমান একক অক্ষর বা ছোটো বাক্যাংশগুলোকে একটি বৃত্তে নাচতে দেখার সম্ভাবনা বেশি।


পাপপূর্ণ স্কার্ট


পাপপূর্ণ স্কার্ট পরা মেয়েগুলো
এখনও রাতের কথা ভাবে
কুমারীর মতো

আর নিচ থেকে
তাদের ছাতাগুলো
সন্ধান করে একটি স্বচ্ছ বিশুদ্ধ ফোঁটা

মেঘের স্কার্ট পরা পর্বত
সতীত্বের তৃষ্ণা মেটায়
ফোঁটায় ফোঁটায়

আর কী করে ছড়িয়ে পড়বে হাসির শব্দ
এই নোংরা শতাব্দী জুড়ে?

এমন একটি জায়গা যেখানে
পর্বতও পা পর্যন্ত সেলাই করা স্কার্ট পরে

শেষ অবলম্বন
শব্দ দিয়ে খোদাই করা সমাধিপাথর—
খাজা আনসার ধার্মিকের বিশ্রামঘর


আমার কানের দুলের গান


এটি তোমাদের জন্য যারা ক্রমাগত
………………কাঁপো
………………ঘোরো
………………দোলো
তোমরা যারা পাতলা ফ্রেমে
হৃদয়ে সবুজ—

আমি আমার কাঁধে
তোমাদের জন্য একটি জায়গা মজুদ করেছি
যেখানে তোমরা থাকতে পারো
কোথায়— আরে!
তোমরা প্রতিটি বাতাসে নাচতে পারো
প্রতিটি সুরে নড়তে পারো
এখানে আমার কাঁধে
আর অন্যদের জন্য গাইতে পারো গান
সুখ হলো হলুদ রং—
………….জ্বলজ্বল করে
………….পাক খায়
যদিওবা রাত হয়
যদিওবা নীরব হয়
আর একটি দুশ্চিন্তার বাতি থাকে প্রজ্জ্বলিত


বসন্তের দাগভর্তি আতুরাশ্রমের সারি


বসন্তের দাগভর্তি আতুরাশ্রমের সারি আমাদের রাস্তার নিচে
গতি
ডাকে—
এই
মানুষ গড়তে এই পাথরগুলো
চুরি করেছে কে?

সে কি বাড়িতে ফেরেনি?

পথিকের কি খবর— সে কি বাড়িতে ফেরেনি?
সে যে আসেনি বিপদ কি তাকে গ্রাস করেছে?
হেলমান্দ আর হারি-রুদের মধ্যে কী ঘটেছে—
একটি উন্মুক্ত পথ…একজন তালিব…রক্ত
আর সে বাড়ি ফেরেনি


একটি ক্যানভাস


খাঁচাবন্দী মুখ, কাঁপতে থাকা পাখি
চিনে ফেলে পেঁচা, এর অশুভ দৃষ্টি ঝরে
মানুষের তুলি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায়


প্রতিবাদ


আমার আঙুল টেবিলে টোকা দেয়
সাত হাজার সাতশো সাতাত্তর বার—
…………………..প্রতিবাদের চিহ্ন আমার

এটা অন্যায়
কারণ ছাড়াই
প্রতি বৃহস্পতিবার কালো মেঘের আবহাওয়া আসে
আর সবাই চুপ করে থাকে

 

***

যখন আমার নিজের আঙুল ৭,৭৭৭ বছরের আক্ষেপ নিয়ে
কাঁধের ধূলা দূর করে
আমরা বলতে পারি না
তা বৃষ্টির দোষ
তা এর কাছে ফিরে আসে
এই টেবিলের কাঠ আমরা নির্বাচন করিনি
আমার আঙুল প্রতিবেশীর স্ত্রীর
অস্তিত্বহীনতার ব্যবস্থা করেনি
এটা অন্যায়

 

***

যে রাত শুক্রবারে পরিণত হয়
মৃত প্রান্তে এসে খুঁজে পায় সমস্ত বৃষ্টির পথ
আর আমি পাঁচ আঙুল দিয়ে নির্দেশ করি পাঁচটি পথ
তারা সব ভিজে আর অপেক্ষা করে
হয়তো প্রতিবেশীর স্ত্রীর অস্তিত্বহীনতা
একই জিনিস দিয়ে তৈরি
যেভাবে আমার চিৎকার তৈরি করে তাদের পথ
………………………………..আকাশমুখী

 

***

আর তা চলতে থাকে
চলছে
তো চলছে…
আমরা কিভাবে ফিরতে পারি
প্রথম বৃষ্টিতে?

 

***

প্রতিবেশীর বাচ্চা যখন শিখতে শুরু করে
য তে যুদ্ধক্ষেত্র
জ তে জিহাদ
বারুদের মধ্য দিয়ে আমরা কিভাবে
শ্বাস নিতে সক্ষম হবো?

 

***

আর তা চলতে থাকে
চলছে
তো চলছে…

 

***

সাত দিনের সময়ে
আমি আমার হাতের তালুর এলোমেলো রেখাতে
এমন একটি চিহ্ন খুঁজেছি
যাদের শিকড় স্পর্শ করেছে আনন্দের উৎস
কোনও চিহ্ন নেই

আমরা কি করতে পারি?
আমাদের দিন কেটে যায় রাত থেকে
আর আমরা অন্ধকারে বোনা
প্রত্যেকে অন্ধের মতো হাতড়ে ফিরি কারো হাত

শেষ হয়নি গল্প…
অস্তিত্বহীনতা চলতে থাকে
চলছে
…………তো চলছে…
আর আমার অস্তিত্ব থাকুক বা না থাকুক
তা শেষ হয় না
শেষ হয়নি এখনো


তথ্যসূত্র :
LOAD POEMS LIKE GUNS
Women’s Poetry from Heart, Afghanistan
FARZANA MARIE
Holy Cow! Press

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৭ মে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে। বেড়ে উঠেছেন বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। প্রকাশিত ভাষান্তরিত বইসমূহ : ‘পাবলো পিকাসোর কবিতা’ (২০১৯), চার্লস বুকোস্কির অপ্রকাশিত কবিতা : ‘সোজা তোমার কবরে যাও’ (২০২১), জঁ ককতোর বাছাই কবিতা : ‘যুদ্ধ বিদ্যালয়’ (২০২১), ‘আফগানিস্তানের কবিতা’ (২০২২), মাও সেতুঙের কবিতা সংগ্রহ : ‘আকাশে আলো আনে মোরগের ডাক’ (২০২২)। এছাড়াও বেশ কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।