সোমবার, এপ্রিল ২৯

নিকোলাই রুবৎসভের কবিতা : ভাষান্তর : শামসুদ্দোহা তৌহীদ

0
Nikolay Rubtsov copy

নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ

মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরের জীবন পেয়েছেন কবি নিকোলাই মিখাইলোভিচ রুবৎসভ (৩ জানুয়ারি, ১৯৩৬ — ১৯ জানুয়ারি, ১৯৭১)। দুর্ভাগ্য তাঁকে তাড়া করেছে সারা জীবন। শৈশবে মায়ের মৃত্যু ও পিতার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য তাঁর স্থান হয় শিশু আশ্রমে। পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার তাগিদে তাঁকে খনিতে, জাহাজে কাজ করতে হয়। সৈন্য বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয় কাব্যগ্রন্থ ‘ওয়েভস অ্যান্ড রকস’, আর এর পরপরই তিনি মস্কোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এর মাঝে তাঁর বিবাহ হয়। কিন্তু কবি নিকোলাই রুবৎসভ মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। সাংসারিক জীবনের টানাটানি, কর্জ— এসব কিছু মিলিয়ে তিনি সাইবেরিয়াতে পাড়ি জমান৷ ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য স্টার অভ ফিল্ডস’। এ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে উঠতি নারী কবি লুদমিলা দারবিনার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের দিনই নববধূ লুদমিলা দারবিনা তাঁকে হত্যা করে। মারা যাওয়ার কিছু দিন আগেই তিনি যেন ভবিষ্যৎ বাণী করে লিখেছেন, `I will die in Epiphany Frosts. I will die when the birches crack.’

তাঁর মৃত্যুর পরে বিশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সারা বিশ্বে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মূলত তাঁর মৃত্যুর পরে। অসম্ভব সুন্দর আর ছন্দময় কবিতার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


আমার চিলেকোঠার ঘরে


রাতের তারা জ্বলে
আমার চিলেকোঠার ঘরে।
বালতি হাতে জননী আমার
জল নিয়ে আসে
আহা! তার নিঝুম পদ-পাতে!

বাগানের লাল টুকটুকে ফুলগুলো সব
শুকিয়ে শুকিয়ে মরে।
নৌকা বাঁধা নদীর পারে
পচবে; আহা! গেল তবে!

উইলো গাছের ছায়া পড়ে
আমার বাড়ির গায়ে,
সে সরু ছায়া ফিতের মতো
তন্দ্রাতে লুটায়!
(আহা! তন্দ্রাতে লুটায়!)
আগামীকাল কাটবে আমার
উইলো গাছের ছায়ায়।
জানি, বড্ড ব্যস্ততায়!

ফুলগুলোতে জল দেবো গো
আর দুষবো নিজের ললাট।
আর যখন ফুটবে তারা
এর আগেই গড়ব নৌকা
আহা! বালাইষাট!!


কুপাভা ফুলের কাছে


পথ চলে গেছে কতদূরে!
কতখানি জুড়ে আছে মাঠ!
বয়ে যায় অশান্ত জলরাশি
আর থইথই বরফ-স্মৃতি!

উড়ে যায় সারসের পাল
অন্তহীন!
গায়ে মাখে রোদ্দুর
আহা! বসন্তকাল!

ডাকো বা নাই ডাকো
ডেকে ওঠে তারা
কূজন কূজন—
ঘন হয় সারসের পাল।

এখানে আবার সেই খেলা,
মাতোয়ারা কিশোর কিশোরীর দল
প্রেম জাগে!

ঝড় ওঠে
কালো হয় নদী
তীর ছুঁয়ে ফুটে আছে কতশত ফুলের কলি।

সেই একই ফুল
কিন্তু মেয়েরা ভিন,
তাদের বোলো না তুমি
কী ছিল আমাদের দিন!

খুনসুটি আর হুটোপুটি
করছে তারা,
আমি ডাকি তাদের
কোথা যাও, কন্যারা?
কোথা যাও?
তাকাও এই কুপাভা ফুলের দিকে।
কিন্তু কেউ কি শুনবে আমার সেই ডাক?


কাক


বসল কাক বেড়ার ওপর
তালাবদ্ধ সমস্ত গোলাঘর,

চলে গেল সব মালগাড়ির বহর
কাটে না এই আকালের প্রহর!
আজ বহু দিন ধরে।

কাকটি দিনমান উশখুশ করে
নেই শীতের আশ্রয় ;
নেই কোনো দানা!
বেচারা!


ফুলের তোড়া


বহুদূর পথ আমি সাইকেলে যাই
দূরের এক ঘাসের বনে থমকে দাঁড়াই,
ফুল তুলি,
আর ভাবি,
আমার মুখে ফুটবে বুলি,
যখন ফুলের তোড়া দেবো, আমি যাকে ভালোবাসি,
‘কারও সাথে বুঝি ছিলে
আমাদের আলাপের কথা ভুলে?
তুমি ধরো এই ফুল,
হবে না গো আর ভুল।
আমাকে মনে করিয়ে দেবে এই ফুল।’

ফুলগুলো তুলে নিয়ে
চলে যাবে দূরে।
আবার যখন কুয়াশায় সাদা হয় রাত,
তুমি হেঁটে যাবে,
ফিরেও তাকাবে না আর,
তোমার কঠিন মুখের দিকে চেয়ে পার করে দেবো রাত।
তবে তাই হোক।

বহুদূর পথ আমি সাইকেলে যাই
দূরের এক ঘাসের বনে থমকে দাঁড়াই,
একটাই আশা,
ফুলের তোড়া তুলে নাও,
আমার ভালোবাসা।


সোয়ালো পাখি


সোয়ালো পাখি করে রা—
বাসা থেকে পড়ল ছা,
চারপাশে হইচই
বাচ্চারা বলে, ‘পাখির ছা পড়ল কই?’

শাবলটি হাতে তুলি,
ছানার জন্য কবর খুড়ি।
মা পাখিটি উড়ে বেড়ায়
সুরে তার বিলাপ ছড়ায়।

সোয়ালো পাখি ভেসে চলে
বুকেতে তার দুঃখ চেপে,
‘ও পাখি, তুই করলি কী?
ছানাটি দেখে রাখতে পারিসনি!’

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ২৬ শে জুলাই, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ। বেড়ে ওঠা বরিশালে। পেশায় চিকিৎসক। ভালো লাগে জীবনানন্দ দাশ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, লিয়েফ তলস্তয়, রবার্ট ফ্রস্ট, সাদত হাসান মান্টো, হুমায়ুন আহমেদ প্রমুখ লেখকের লেখা।প্রকাশিত বই: ডিঙ্গো : রুভিম ফ্রেয়ারম্যান (অনুবাদ) রাশিয়ান কিশোর উপন্যাস।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।