মঙ্গলবার, মার্চ ১৯

ডিজিটাল জীবন : মুম রহমান

0

সমাজ মানেই কিছু সংঘবদ্ধ মানুষ এবং একটা আচার, রীতির সাধারণ এলাকা। সেই বিবেচনায় আজকের দিনে ভার্চুয়াল সমাজও তো একটা সমাজ। আভিধানিকভাবে ভার্চুয়াল (vertuall) শব্দটার অর্থ অলীক বা অবাস্তব হলেও, আজকের দিনে এসে তার মানে বদলে গেছে। বাস্তবের বাইরে, ইন্টারনেটের সামাজিক যোগাযোগের সূত্রে যে সমাজকে ভার্চুয়াল বলছি তা এখন অনেক বেশি করে আমাদের জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে উঠছে, বিশেষত কোভিড ১৯ মহামারীর পর। সত্যি কথা বলতে রিয়াল বা একচুয়াল সমাজের চেয়ে এই ভার্চুয়াল সমাজে আমরা ক্রমশ বেশি করে ঝুঁকে পড়ছি। বলার অপেক্ষা রাখে না এই অন্তর্জালের কথিত অলীক দুনিয়া মূলত প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তির একটা সুবিধা বা অসুবিধা হলো সে আশেপাশের অনেক কিছুকে খেয়ে ফেলে। প্রযুক্তি সামনের দিকে এগুতে থাকে, পেছনের সব কিছু খেয়ে ফেলে। সেই যে একটা বিখ্যাত গল্প ছিল ‘পথ জানা নাই’ শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা; সে গল্পের নায়কের মতো আমরাও যেন নতুন পথ কাটতে না-বসি। নতুন সব কিছু মেনে নেওয়ার আগে যাচাই বাছাই করতেই হয়। শিল্পী বাস্তব থেকে নেন, ইতিহাস থেকে নেন, জীবন থেকে নেন, কিন্তু যাচাই বাছাই করে নেন। আপনার ভার্চুয়াল আচরণে শৈল্পিক গুণাগুণের প্রকাশ করতে না-পারুন অন্তত অশৈল্পিক হবেন না।

একচুয়াল কিংবা ভার্চুয়াল যাই হোক না কেন, ফেসবুক যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সেহেতু সেখানে সামাজিক শিষ্টাচার রক্ষা করা উচিত। বলা বাহুল্য, আমেরিকা, ইউরোপের সমাজ আর বাংলাদেশের সমাজ এক নয়, কাজেই শিষ্টাচারেও তাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হবে। এখন অন্তর্জালের কল্যাণে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে নানা দেশের খানাপিনা, চালচলন সরাসরি আমার শোবার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। শোবার ঘরে যে প্রবেশ করে তার বিষয়ে তো সচেতন থাকা খুব জরুরি। তাই এই ফেসবুককে কতোটুকু, কীভাবে নেবো সেটা ভাবার সময়ও এসেছে।

আজকে আমাদের ফেসবুক ব্যবহারের ধরন নিয়ে বিবিধ অভিযোগ জমা হচ্ছে। কেউ কেউ এর যথার্থ ব্যবহার করতে পারেনি বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও আছে। ফেসবুকে আপনি শিল্প চর্চা করতে পারেন, ধর্মান্ধতা, বর্ণবাদ ছড়াতে পারেন আবার সচেতনতাও সৃষ্টি করতে পারেন। অতএব, আপনি কেন, কীভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন সেটা না-বুঝলে আজ না-হোক কাল মুশকিলেই পড়বেন, হয়তো বিপদেও পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, আপনি কে এবং আপনি কেন ফেসবুক চালান সেটা বুঝে নিন আগে। ঝামেলা এড়াতে ফেসবুক ব্যবহারের সাধারণ কিছু নিয়ম পালুন করুন, আমি এগুলোকে শিষ্টাচারই বলব:

 

১. ইংরেজিতে বলে ‘সেইফটি ফার্স্ট’ মানে ‘সবার আগে নিরাপত্তা’। এটাই প্রথমে মনে রাখুন। প্রেমিকার সাথে ডেটিংয়ের খবরটা বাড়ির লোক জেনে গেলে মুশকিল। আবার কবে, কটার সময় কোন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন সেটা জানানোও নিরাপদ নয়। কাজেই নিজের এবং অন্যের নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ইত্যাদি নিয়ে ভাবুন। আপনার ফেসবুক দেখেই যদি যে কেউ জেনে যায়, আপনি কোথায় আছেন, কার সাথে আছেন, কী করছেন তাহলে তো আপনাকে বিপদে ফেলা দুষ্টু লোকের জন্য কঠিন হবে না। আমি এক্ষেত্রে রিয়েল টাইম ফেসবুকিং করি না। মানে কক্সবাজার বেড়াতে গেছি, ছবি তুলি, হয়তো ছবিগুলো পোস্ট দেই সেখান থেকে ফেরার পর। সব কিছু নগদেই কেন করতে হবে। নগদ টাকা বহন করা যেমন বিপদ নগদ তথ্য প্রদান করাও তেমন বিপদ।

 

২. দ্বিতীয়ত মনে রাখুন, আপনি ফেসবুকে অনেকের সঙ্গেই সংযুক্ত, তারা সবাই এক ধরনের বন্ধু নয়। আত্মীয়, অফিসের সহকর্মী, স্কুলের বন্ধু, ব্যবসায়িক পার্টনার, অল্প পরিচিত কিংবা নেহাতই অপরিচিত লোকও আপনার ফেসবুকে আছে। কাজেই যেকোনো কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন, যা লিখছেন, বলছেন, দেখাচ্ছেন তা সবার জন্য উপযুক্ত কি না। যে সিনেমা প্রেমিকাকে নিয়ে দেখা যায় সে সিনেমা বাবা-মাকে নিয়ে দেখা যায় না। সব কিছুর অডিয়েন্স আলাদা। একই দোকানে মদ আর দুধ বিক্রি হয় না। হওয়া উচিতও না। আমার নিজের কথা যদি বলি, আমার ফেসবুকে আমি পারিবারিক লোকজন রাখি না। মানে মামা-খালা-চাচা এমনকি নিজের মাকেও না। মুরব্বিরা থাকলে আমি যা লিখতে চাই তার কৈফিয়ত জনে জনেও দিতে হতে পারে। আপনার ফেসবুক যদি গণ হয় তবে পোস্টের ধরণ-ধারণ নিয়ে নতুন করে ভাবুন। নইলে ঝামেলায় পড়বেন। আপনার ফেসবুক আপনার চাকরী দাতা, হবু আত্মীয়, উচ্চপদস্থ, অধনস্ত অনেকেই দেখছে। কাজেই ভাবিয়া ব্যবহার করুন ফেসবুক। সবচেয়ে সহজ হয়, মুখোমুখি আলাপের মতোই ফেসবুকের আলাপটিকেও প্রাসঙ্গিক রাখুন।

একই দোকানে মদ আর দুধ বিক্রি হয় না। হওয়া উচিতও না। আমার নিজের কথা যদি বলি, আমার ফেসবুকে আমি পারিবারিক লোকজন রাখি না। মানে মামা-খালা-চাচা এমনকি নিজের মাকেও না। মুরব্বিরা থাকলে আমি যা লিখতে চাই তার কৈফিয়ত জনে জনেও দিতে হতে পারে। আপনার ফেসবুক যদি গণ হয় তবে পোস্টের ধরণ-ধারণ নিয়ে নতুন করে ভাবুন। নইলে ঝামেলায় পড়বেন।

 

৩. কমেন্ট করার সময় রসিক হওয়া ভালো, তবে রসবোধ ব্যাপারটা কুমিল্লার রসমালাইয়ের মতো কিনতে পাওয়া যায় না। উহা দূর্লভ। আপনি যদি পরীক্ষিত রসিক না হন তবে খামাখা রস দেখাতে গিয়ে কষ সৃষ্টি করবেন না। আর অতি ফাজলামি, ইয়ার্কি করতে গিয়ে ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করা বা আক্রমণাত্মক হওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। মনে রাখুন, রসবোধ আর ভাঁড়ামির মধ্যে অনেক ফারাক।

 

৪. আপনার ভাষাই আপনার পরিচয়। আপনি কোন ভাষায়, কীভাবে কথা বলছেন তা আপনাকে চিনিয়ে দেয়। ভাষা ব্যবহারে সতর্ক হোন। দয়া করে ইংরেজি কিংবা বাংলা যে ভাষাতেই কমেন্ট করছেন তা নির্ভুলভাবে করুন। আপনার ভুল বানান এবং দুর্বল বাক্য গঠন আপনার ব্যক্তিত্বকে বরবাদ করে দেবে। বানান ভুলের ব্যাপারে এখন অনেক অভিজ্ঞ লোকও বিপদে পড়ে যায়। ঈদ না ইদ, নদী না নদি এইসব তর্ক বিতর্ক তো আছেই। কিন্তু এগুলোর চেয়ে বড়ো বানান ভুল হলো বাচ্চাকে বাচ্ছা বলা, নাইসকে নাইচ বলা। এইসব বানান ভুলে একটা জিনিস বোঝা যায় যে আপনার উচ্চারণগত সমস্যাও আছে। অনেক সময় জ্ঞান বিতরণ করতে গিয়ে আমরা মন্তব্য করতে গিয়ে সেখানেই ভুলভাল লিখে ফেলি। তারে পুরো ব্যাপারটাই গুরুত্ব হারায় গো।

 

৫. অন্যের বাড়িতে গিয়ে আত্মপ্রচার করবেন না। তেমনি অন্যের ব্যবসায়িক পেইজ বা গ্রুপে গিয়ে নিজের ফ্যানপেজ লাইক দিতে বলবেন না। একজন ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী তার দীর্ঘ সময়, অর্থ, মেধা ব্যয় করে একটা পেইজ বা গ্রুপ তৈরি করেছে, সেটাকে দাঁড় করিয়েছেন। রেডিমেড সেই পেইজের পোস্টে গিয়ে নিজের জুতা-জামা বিক্রেতা পরিচয় জাহির না করাই ভালো। মনের দুঃখে আবার নিজেই নিজের ছবি কিংবা পোস্টে লাইক দিয়ে বসে থাকবেন না। এতোটা আত্ম-বলদামি (বলদ=আমি) ভালো নয় জনাব।

 

৬. ব্যাবসা, খেলাধূলা, শিল্পসাহিত্য কিংবা অন্য কোনো পেজে অহেতুক ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে প্যাঁচাল পারবেন না, তাতে ক্যাঁচালই বাড়বে। বিশেষ করে ধর্ম আর রাজনীতি চর্চার জন্য ফেসবুক ব্যবহার করতে সতর্ক হোন। এই দুটো বিষয়েই মানুষের নিজস্ব মতামত আছে এবং এই দুটো দিকই যথেষ্ট সংবেদনশীল। কাজেই অন্যের মতকে অসম্মান করে কিছু লিখবেন না। আর খামাখা নিজেকে বিপদে ফেলতে চাইলে ফেসবুকে নাস্তিক, প্রতিবিপ্লবী সাজতেই পারেন। কিন্তু ওইসব করে নিজের ক্ষতি ছাড়া কিছু হয় না। জগতের বড়ো বড়ো মতবাদ এমনকি আজকের সেরা লেখা কিংবা প্রতিবাদও বাস্তব দুনিয়াতেই হয়। আজকের দিনে এসে ফেসবুকেও অনেক আন্দোলন হয়। কয়েক বছর আগের ‘মি টু’ আন্দোলন অনেকের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শক্তি অনেক। তবে সেই শক্তি দেখানোর মতো ক্ষমতা আপনার আছে কি না সেটাও ভেবে নিবেন। অহেতুক হুমকি ধামকিতে যাবেন না।

 

৭. একবার একটা নাটক দেখতে গেছি শিল্পকলায়। পাশের দর্শকবন্ধুকে দেখলাম ফেসবুক চালাচ্ছেন। কিছুই করছেন না, পড়ছেন না, দেখছেন না, কেবল প্রতিটি পোস্টে লাইক বাটন টিপে যাচ্ছেন। লোকটার সম্পর্কে আমার একটা বাজে ধারণাই হলো। শুনুন, গণহারে যেকোনো ছবি বা পোস্টে লাইক দেবেন না, তাতে আপনার লাইকের গুরুত্ব যেমন কমে, আপনার গুরুত্বও কমে। আমার এক বন্ধু আছে যে সবার লেখাতেই লিখে আসে ‘প্রিয় লেখক’ এই গণ-প্রিয়াকে আমি আরামে বাদ দিয়েছি ফেসবুক থেকে। মিথ্যাচার, চাটুকারিতার অন্যতম উপায় হিসাবে অনেকেই ফেসবুকে গণ লাইক আর মুখস্থ (গৎবাঁধা) কিছু মন্তব্য করেন। সেটা ধরা পড়ে যায় দ্রুতই।

 

৮. দিব্যি অন্যের স্ট্যাটাস কপি করে মেরে দেবেন না। মার্ক জুকারবার্গ সাহেব ছোটো বড়ো, ধনী গরীব সবার জন্য স্ট্যাটাস দিয়েছেন, আপনি আপনার নিজেরটা দিন। অন্য কারো স্ট্যাটাস পছন্দ হলে কৃতজ্ঞতা সহ শেয়ার করুন। বাংলাদেশের এক নামকরা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক দিব্যি আরেক কবির লেখা নিজের ওয়ালে দিয়ে দিলেন। প্রতিবাদ জানানোর পর উনি উল্টো বললেন, উহ, আপু এটা যে তোমার লেখা আমি বুঝিনি। আপনার বোঝার ক্ষমতা বাড়ান, নইলে আপনিই সমাজের উপর একটা বোঝা হয়ে উঠবেন।

 

৯. মার্ক জুকারবার্গ স্ট্যাটাস দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন বলেই, সারাদিন স্ট্যাটাস দিতে থাকবেন, তা কিন্তু ঠিক না। অনেকেই আছেন দিনে পাঁচটা দশটা করে স্ট্যাটাস, ছবি কিংবা কাব্য পোস্ট করতে থাকে। ভাইরে, মানুষকে আপনার লেখা বা ছবি হজম করার সময় দিন। আপনি সারাদিন ফেসবুক ভরে ফেললেন আর লোকজন দেখারই সময় পেল না তাহলে লাভটা কী হলো। রিসার্চ বলে ছয় ঘণ্টা পর পর স্ট্যাটাস বা নতুন পোস্ট দিলে বেশি মানুষের নজরে আসা যায়। নইলে একটার ভিড়ে আরেকটা হারিয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে পোস্ট করুন। আমি নিজে অবশ্য এ ক্ষেত্রে এখনও পরিণত হয়নি। আবেগের ঠেলায় কোনোদিন পনেরো বিশটা পোস্টও দিয়ে ফেলি। আবার পনেরো বিশদিন নিঁখোজ। আমার কথা আলাদা। আমি তো এমনি এমনি ফেসবুক ব্যবহার করি।

রিসার্চ বলে ছয় ঘণ্টা পর পর স্ট্যাটাস বা নতুন পোস্ট দিলে বেশি মানুষের নজরে আসা যায়। নইলে একটার ভিড়ে আরেকটা হারিয়ে যাবে। নির্দিষ্ট সময় বিরতি দিয়ে পোস্ট করুন। আমি নিজে অবশ্য এ ক্ষেত্রে এখনও পরিণত হয়নি।

 

১০. অন্যের বদনাম আর যেখানেই গান ফেসবুকে গাইবেন না। তাতে লোকে আপনাকে ভালো গায়ক মনে করবে না। ঈর্ষা, ঘৃণা, প্রতিশোধ ছড়ানোর জায়গা ফেসবুক না। সেই যে বাসের গায়ে লেখা থাকত, সে কথাটা মনে রাখবেন, ভদ্রতা বংশের পরিচয়। সেটা ফেসবুকের দুনিয়াতেই প্রযোজ্য। অহেতুক আক্রমণাত্মক হওয়া, অন্যকে ছোটো করার চেষ্টা করা- এই সবই নেহাত অভদ্রতা। তবে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে শিখুন। মিথ্যা প্রশংসা যেমন করবেন না, অন্যায়কেও এড়িয়ে যাবেন না। যা বলার যতটুকু বলার ঠিকঠাক বলুন। বাড়াবাড়ি ভালো নয়, ফেসবুকে কিংবা কারো বুকেই নয়।

 

১১. ফেসবুক আপনার দিনলিপি প্রকাশের জায়গা না। কোথায় বেড়াতে গেলেন, কী খেলেন, সকালের টয়লেট কেমন হলো, রাতের ঘুমের ব্যাঘাত হলো কি না, কার সাথে দেখা হলো, কে আপনাকে ছ্যাঁকা দিয়েছে—এই সকল ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলুন। আপনি যেমন বাস্তব জগতেও সমাজের সব স্থানে সবার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করেন না, ব্যক্তিগত বলে কিছু আড়াল রাখেন, ফেসবুকেও তাই করুন। ফেসবুককে দিনলিপি হিসাবে ব্যবহার করা ৫৯% লোকই অপছন্দ করে। আপনি প্রতিদিন কী করছেন, আপনার কাজ কর্ম, শরীর, মন বেলায় বেলায় কেমন আছে – সেটা সবাই পছন্দ করবে না। আর আপনে তো জয়া আহসান বা শাকিব খান না যে লোকে চোখ মেলে ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছে, আজ সকালে কি খেলেন দেখতে, দুপুরে কই গেলেন তা দেখতে।

 

১২. জোর করে মানুষের প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করবেন না। অন্যকে বিরক্ত করে কখনোই ভালো অবস্থানে যাওয়া যায় না। আপনার ছবি, কবিতা বা অন্য কোন পোস্ট গণহারে ৫০/১০০ জন লোককে ট্যাগ করবেন না। অপ্রাসঙ্গিক হলে তো করবেনই না। আমি নিজে বাংলাদেশের দুইজন অধ্যাপক কাম কবি কাম অনুবাদককে আমার ফেসবুক থেকে ত্যাগ করেছি তাদের ট্যাগের ঠেলায়।

 

১৩. অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না। ফেসবুকে বাণী চিরন্তনী মারা অনেকটাই নিজেকে জাহির করার সামিল। আপনি কতো জ্ঞানী এটা মানুষ শুনতে চায় না। জ্ঞান দেওয়ার অনেক জায়গাই আছে কিন্তু ফেসবুকে অন্যের কোটেশন মেরে সেই জায়গা ভরাট করলে জায়গার অপচয়। গবেষণা বলে, বাণী চিরন্তনীকে ৬০% মানুষই বোরিং মনে করে। খাওয়া দাওয়ার ছবিকে ৪০% লোক বোরিং মনে করে। তবে আমার মতো যদি ভোজন রসিক হন খাওয়ার ছবি দিন। কিন্তু তার জন্য তৈরিও থাকুন। অনেকেই এসে বলবে, লোকে খেতে পায় না, বিশ্বের কতো কতো মানুষ ক্ষুধার্ত আর আপনি এইসব খাওয়ার ছবি দিচ্ছেন।

 

১৪. সাম্প্রতিক বিশ্বে বিভিন্ন নেশার সাথে ফেসবুকও নেশা হিসাবে গণ্য হয়েছে। আপনি সিগারেট খান নাকি সিগারেট আপনাকে খায়, তেমনি খেয়াল রাখুন আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন নাকি ফেসবুক আপনাকে ব্যবহার করে!

আপনার আর্ট ওয়ার্ক, অভিনয়, আবৃত্তি, কবিতা, গল্প—যা খুশি ফেসবুকে দিতে পারেন। আপনাকে হয়তো কোনোদিন এ দেশের কোনো টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ডাকবে না, ডাকত না, কিন্তু ফেসবুক আপনার নিজের স্টেশন বা চ্যানেল হতে পারে।

 

১৫. আজকের দিনে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার না-থাকলে বহুলোকই বিখ্যাত হতে পারতো না। রূপি কৌর, নিকিতা গিল-এর মতো অনেক কবির জন্ম হয়েছে সোস্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। এটা তো অবশ্যই একটা মিডিয়া। তাই শিল্পী, সাহিত্যিকদের জন্য এই মিডিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আর্ট ওয়ার্ক, অভিনয়, আবৃত্তি, কবিতা, গল্প—যা খুশি ফেসবুকে দিতে পারেন। আপনাকে হয়তো কোনোদিন এ দেশের কোনো টিভি চ্যানেল, রেডিও স্টেশন ডাকবে না, ডাকত না, কিন্তু ফেসবুক আপনার নিজের স্টেশন বা চ্যানেল হতে পারে। সেটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ফায়দা অনেক। তবে হিরো আলম হতে যাবেন না। দিন শেষে রুচির পরিচয় দিতে পারাটাও বড়ো কথা। শস্তা জনপ্রিয়তা আর পরিশীলিত রুচির ফারাকটা অনেক।

ও ভালো কথা, এতো যে জ্ঞানের কথা কপচালাম, আমি নিজে কিন্তু এগুলো মানতে পারি না সদা। কিন্তু আমি অধম বলিয়া আপনি উত্তম কুমার বা কুমারী হইবেন না সেটা তো ঠিক নয়।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

মুম রহমান একজন লেখক। সার্বক্ষণিক এবং সর্বঅর্থে লেখক। যা করেন লেখালেখির জন্য করেন। গল্প, নাটক, কবিতা, অনুবাদ, বিজ্ঞাপণের চিত্রনাট্য, রেডিও-টিভি নাটক, সিনেমার চিত্রনাট্য, প্রেমপত্র-- সব কিছুকেই তিনি লেখালেখির অংশ মনে করেন। রান্নার রেসিপি থেকে চিন্তাশীল প্রবন্ধ সবখানেই তিনি লেখক।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।