শুক্রবার, এপ্রিল ১৯

বীজতলার টান : রাজীব তন্তুবায়

0

Eid Motifহঠাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল সত্যবানের। বাইরে তখন প্রচণ্ড বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘের কী গর্জন! যেন তল মাটি উপর করবার জোগাড়!

বিছানাতেই আধশোয়া হয়ে উঠে বসল সত্যবান। ঘরের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাথা শিথানে নামিয়ে রাখা টর্চটা হাতড়ে নিয়ে দেখে ঘড়িতে তখন পৌঁনে তিনটা। ভোর হতে অনেক দেরি। পাশেই দড়ির খাটে অঘোরে ঘুমাচ্ছে দেবুর মা। ডেকে তুলবে নাকি তাকে? না, থাক। সারাদিন তো শুধু সংসারের কাজ নিয়েই থাকে। ঘুমোক বেচারী। কথাটা ভেবেই পাশ ফিরে আবার শুয়ে পড়ল সত্যবান।

এ বছর এতো বৃষ্টি! শালা বাপের জন্মে এমন মেঘ দেখিনি—চুপচাপ শুয়ে শুয়ে সত্যবান এমনটাই ভাবছিল। মনের মধ্যে চিন্তাও কম হচ্ছিল না। সকালেই কয়াবাইদের বড়ো খেতটায় লাঙল দিয়ে কাদা করার কথা। তারপর চারা পোঁতা। বহু কষ্টে কামিন জোগাড় করেছে পাঁচটা। আজকাল কামিনদের যা দেমাগ। কাজ করাতে গেলে যেন পায়ে ধরে সাধতে হয়। তার উপর কত বাহানা। কাজ নিয়ে কোনো কথা বলা চলবে না। ঘড়িতে দুপুর তিনটা বাজতে না বাজতেই উঠে যাবে খেত ছেড়ে। নগদ টাকা ছাড়াও চাল মুড়ি তো আছেই।

বহু কষ্টে কামিন জোগাড় করেছে পাঁচটা। আজকাল কামিনদের যা দেমাগ। কাজ করাতে গেলে যেন পায়ে ধরে সাধতে হয়। তার উপর কত বাহানা। কাজ নিয়ে কোনো কথা বলা চলবে না। ঘড়িতে দুপুর তিনটা বাজতে না বাজতেই উঠে যাবে খেত ছেড়ে। নগদ টাকা ছাড়াও চাল মুড়ি তো আছেই।

তা যা নেয় নিক, পাওয়া তো গেছে। যেভাবেই হোক কাজটা একবার হাসিল করতে পারলেই হয়। সারা বছরের ভাতের জোগাড়। এ কী কম বড়ো কথা!

ঘুম ধরে না সত্যবানের। পঞ্চাশ পেরিয়ে ষাটের ঘরে পা দিয়েছে। এ বয়সে এমন কত কত মেঘ, কত কত বর্ষা মাথার উপর দিয়ে পার করে দিয়েছে তার কি কোনো ইয়াত্তা আছে? অথচ আজ যেন বুকটা কেমন ঢুই ঢুই করছে। করগেটের চালে বৃষ্টির আওজটা একটু বেশিই কানে লাগছে তার। কাল সকালে যদি বৃষ্টি না থামে? তাহলে?

লখাই মোড়ল বলেছে সকালেই ওর গরুর হালটা নিয়ে গিয়ে সত্যবানের খেতেইনামাবে প্রথমে। কয়াবাইদের খেতটা চেনে লখাই। এর আগেও দু’একবার হাল বেয়েছে ওই খেতে। কিন্তু এবার আর কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। সোজা মুখের উপর বলেছিল, ‘না হে কাকা, আমার গরুগুলা খোঁড়াচ্ছে এখন। তুমি তো জানো, বিঘা বারো জমি একনাগাড়ে বাঁয়েছি উয়াদের। আর পারে? এখনও আমার একটা খেত বাকি আছে। তুমি অন্য ব্যবস্থা করগে যাও। আমি পারব নাই।’

‘পারব নাই বল না খুড়া।’ হাত জোড়টা ধরে অনুরোধ করেছিল সত্যবান, ‘তুমি না কাদা কইরে দিলে আর চাষ করা যাবেক নাই জমিটাতে। অন্য ব্যবস্থা করার থাকলে তুমাকে এত করে বলথম নাই খুড়া।’

বীজতলা তৈরি করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে গিয়েছে সত্যবান। ঠিক সময়েই বীজধান ছড়িয়ে ছিল তলা খেতে। কিন্তু তার পরদিন থেকে এতো বৃষ্টি যে বেশ কিছুদিন ধরে জলের তলায় ডুবে রয়েছিল খেত-বাদ। পঁচে গেল বীজধান। আর তলা বেরোল না। পরে যখন আবার শিবুর দোকান থেকে বীজধান কিনে এনে তলা তৈরি করল, তখন সবার থেকে অল্প পিছিয়ে গেল সত্যবান। ততদিনে চারপাশের সমস্ত খেতে চারা পুঁতে দিয়েছে সবাই। সত্যবানের খেতটা মাঝে পড়ে গেছে। ট্রাক্টর পেরোনোর রাস্তা নেই আর। নইলে তো কালিপদর ট্রাক্টর দিয়ে দিব্যি কাদা করানো যেত। কিছুদিন আগে মাটি উগালেও দিয়েছে কালিপদ। সেদিকে কালিপদ কাজের ছেলে। কথায় খেলাপ করে না। তাই তো চাষের দিনে খুব ডাক পড়ে তার ট্রাক্টরের। বাকি খেতগুলো কালিপদই তো কাদা করে দিয়েছে। কিন্তু এখন লাঙল ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই লখাইকে এতো সাধাসাধি করা।

সমস্ত কিছু জেনে লখাই বলেছিল, ‘সবই ত বুইঝলম কাকা, কিন্তু হালটাই বা পার করব কন পথে? লোকের গাছি মাড়ে দিলে লোক বাখান করবেক নাই?’

‘সে আমি বুঝেলিব খুড়া। তুমি শুধু ইবারের মতন কাদাটা করে দাও।’ বলেই লুঙ্গির কচড় থেকে একটা কড়কড়ে পাঁচশ টাকার নোট বের করে হাতে গুঁজে দিয়েছিল সত্যবান। ‘বাকি যা লাগবেক হিসাব করে কাল লিবে।’

ইতস্তত করলেও আর অনুরোধ ফেরাতে পারেনি লখাই। কথা পাকা করে সত্যবান সেই পথেই ছুটেছিল বাউরি পাড়ায় কামিনের খোঁজে। যে করেই হোক জমিটা তাকে লাগাতেই হবে।

কিন্তু যা বৃষ্টি হচ্ছে যদি না থামে, লখাই হাল জুড়বে তো?

লখাই যদিবা আসে, কামিনরা যদি না আসে ভিজে ভিজে? ভাবতে ভাবতে আবার পাশ ফিরল সত্যবান। বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা ছটফটানি ভাব। টুকরো টুকরো খেতগুলোতে কোনো রকমে চরা পোঁতা হয়ে গেছে।

লখাই যদিবা আসে, কামিনরা যদি না আসে ভিজে ভিজে? ভাবতে ভাবতে আবার পাশ ফিরল সত্যবান। বুকের ভিতরে কেমন যেন একটা ছটফটানি ভাব। টুকরো টুকরো খেতগুলোতে কোনো রকমে চরা পোঁতা হয়ে গেছে। এইবার কয়াবাইদের বড়ো খেতটা একবার লাগাতে পারলেই হলো।

সারাদিন ধরে অত বড়ো খেতটার কোদাল দিয়ে আল ঝুড়েছে নিজে। তারপর দুপুরে ভাত খাবার পর একবার লাঙলের তো একবার কামিনের খোঁজ করেই কেটেছে সারাবেলা। নিজের লাঙল-গরু আর লোকবল না থাকলে এমনই যে হয়, তা বেশ ভালো করেই জানে সত্যবান। পরের ভরসায় কি আর চাষ হয়? কিন্তু উপায় নেই। জমিগুলো তো আর ফেলে রাখা যায় না।

গরু পোষার ইচ্ছা যে নেই তা নয়। কিন্তু এই বয়সে আর পেরে ওঠে না সত্যবান। নইলে আগে যখন বাবা বেঁচে ছিল, তখন তো বরাবরই এক জোড়া গরু থাকত বাড়িতে। মোটে বিঘা তিনেক জমি। দুই বাপ বেটা মিলে তড়িঘড়ি নিজেদের চাষটা করে নিত। তারপর অন্যের জমিতে লাঙল ভাড়া দিয়ে বেশ ভালোই কাঁচা টাকা রোজগার করত চাষের মরসুমে। একবার লাঙলের টাকাতেই দেবুর মায়ের জন্য এক জোড়া কানের দুল করিয়ে দিয়েছিল মধু সেকরার দোকানে। সে দুল পেয়ে খুশিতে একেবারে গলে গিয়েছিল দেবুর মা। স্বামীর প্রতি সোহাগ ও খাতির দুটোই ভর বর্ষার দ্বারকেশ্বরের মতোই ফুলে উঠেছিল দুকুল ছাপিয়ে। গরুগুলোরও কদর বেড়ে গিয়েছিল খুব। দুবেলা যত্ন-আত্তির শেষ ছিল না দেবুর মায়ের। ওদের জন্যই তো সোনা উঠেছিল গায়ে।

তারপর দেবু যখন তিন বছরের, নিউমোনিয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছিল বেচারা। হাতের সম্বল বলতে তখন কিছুই ছিল না সত্যবানের। দেবুর মায়েই তখন কানের দুল জোড়াটা তুলে দিয়েছিল সত্যবানের হাতে। সেটা বেঁচেই তো বাঁকুড়ায় জিতেন ব্যানার্জীর নার্সিংহোমে ভর্তি করেছিল দেবুকে। কাচুমাচু করে সত্যবান বলছিল, ‘চিন্তা করিস না দেবুর মা, টাকা জমলে আবার একজোড়া কানের করাই দিব।’

‘কানের লিয়ে কী হবেক? দেবু আমার ফিরে আসেছে এটাই ঢের।’ হেসে হেসে বলেছিল দেবুর মা।

না, আজও আর টাকা জমল না সত্যবানের। মাঝে মাঝে যখন একা একা নদীর পাড়ে গিয়ে বসে। যখন দেখে বালির বুক চিরে ঝিরঝির করে জলধারা বয়ে চলেছে, আর অস্তমিত সুর্যের আলো পড়ে ঝিকমিক করছে; কিংবা লম্বা গলাওয়ালা চুটকিধারী বক ছপাৎ করে একটা চুনো মাছ নিয়ে সানন্দে উড়ে যাচ্ছে বাসার দিকে; কিংবা দুপুরের ভাতঘুম শেষে চন্দনা পাখিটা আদুরে ঠোঁট দিয়ে তার সঙ্গীর পালকগুলো ঘষে ঘষে পরিষ্কার করে দিচ্ছে, তখন অনেক কথা মনে পড়ে সত্যবানের। কানের দুলের কথাটাও মনে পড়ে। তখন আক্ষেপের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে দূরে, অনেক দূরে। অসহায়ত্বের হাসি ফুটে উঠে নির্বিকার ভঙ্গিতে। সেদিন আর নেই। সময়টা যে কীভাবে পেরিয়ে গেল বুঝতেই পারেনি সত্যবান।

তবে গ্রামেগঞ্জে এখন অনেক ট্রাক্টর। বড়ো ট্রাক্টর, হ্যান্ড ট্রাক্টর। ইদানিং আর বেশ একটা লাঙ্গল ভাড়া নেয় না কেউ। সত্যবান আর গরুর ঝামেলা রাখতে চায় না। আজকাল গরু পোষা কি কম ঝামেলার? খড়, ঘাস, খৈল, কুড়ো আরও কত কী। সারাবছর কে জোগান দেবে অত? শুধুমাত্র তিনবিঘা জমির জন্য কি তা পোষায়?

তবে গ্রামেগঞ্জে এখন অনেক ট্রাক্টর। বড়ো ট্রাক্টর, হ্যান্ড ট্রাক্টর। ইদানিং আর বেশ একটা লাঙ্গল ভাড়া নেয় না কেউ। সত্যবান আর গরুর ঝামেলা রাখতে চায় না। আজকাল গরু পোষা কি কম ঝামেলার? খড়, ঘাস, খৈল, কুড়ো আরও কত কী। সারাবছর কে জোগান দেবে অত? শুধুমাত্র তিনবিঘা জমির জন্য কি তা পোষায়? তাই কষ্ট হলেও ট্রাক্টর দিয়েই চালিয়ে নেয় চাষটা।

বাইরে বৃষ্টি তখন উত্তাল। যেন হাজার হাজার পদাতিক সৈন্য দল বেঁধে যুদ্ধ ক্ষেত্রের দিকে ছুটে চলেছে সত্যবানের করগেটের উপর দিয়ে। সেই সঙ্গে মেঘের গর্জন সেনাপতির হুঙ্কার হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। সত্যবান দু’হাত দিয়ে কান চাপা দিয়ে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকে বিছানায়। চোখে মুখে কেমন একটা মায়াময় ঘোর ঘোর ভাব। যেন অন্য জগতের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে তাকে। গা ভাসিয়ে দিচ্ছে সত্যবান।

দেবুর মা তখন জেগে উঠল হঠাৎ করে। অবাক হয়ে সত্যবান কে নাড়িয়ে বলল, ‘কী হইল, এত কাঁইপছ কেনে? জ্বর টর আইল নকি?’ অন্ধকারেই সত্যবানের বুকে, কপালে হাত ঠেকিয়ে গা টা গরম কিনা দেখতে লাগল।

‘না, না, কিছু হয় নাই। আমি ঠিকই আছি। ঘুমা ঘুমা, অনেক রাইত আছে।’

 

 

*** **
সকালে বৃষ্টিটা থেমেছে ঠিকই। কিন্তু মেঘ তখনও কাটেনি ভালো করে। তারই ফাঁকে চড়া রোদ সাঁতার কাটতে নেমেছে সত্যবানের কাদা প্যাঁচপ্যাঁচে উঠোনে।

কাদা হবেই না বা কেন? গেল বোশেখে চার গাড়ি পুকুর কাটা মাটি এনে ভরাট করতে গেছে উঠোনটাকে। এমনি এমনি দিচ্ছে যখন নে নিয়ে নে। তখন কি আর জানত যে ওরা এঁটেল মাটিটা এনে ফেলে দেবে। এখন বৃষ্টি হলে তো ভড়কে গিয়ে কাদা হবেই। যদিও দেবুর মা সদর দুয়ার থেকে বারান্দা অব্দি কতকগুলো ইঁট এনে দিয়েছে, তাই রক্ষে।

এক বোঝা সদ্য তোলা বীজতলা মাথায় নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরল সত্যবান। খালি পায়ে কাদা মাড়িয়ে পচক পচক শব্দ তুলে এগিয়ে গেল উঠোনের পেয়ারা গাছটার দিকে। তারপর ধপাস করে বীজ বোঝাটা মাটিতে ফেলে দিল পেয়ারা তলায়। জমে থাকা জলকাদা ছিটকে পড়ল এদিক সেদিক। ছোটো ছোটো ব্যাঙের বাচ্চাগুলো পালাতে শুরু করল দিকা দিকি। এতোক্ষণ যারা লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল স্যাঁতসেঁতে উঠোনে। ওসবে খেয়াল নেই সত্যবানের। সে শুধু বোঝাটা নামিয়ে চোখ বন্ধ করে মুখটা উপর দিকে তুলে ঘাড়টা ঘুরিয়ে নিল বারকয়েক। তারপর একটু টলতে টলতে খোলা বারান্দায় গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে মেঝেতে ছড়িয়ে দিল পা দুটো। যে মেঝেতে রোজ যতন করে গোবরের ছঁচ দেয় দেবুর মা। ঘাড়টাকে আরাম দেওয়ার জন্য মুখটাকে একটুখানি তুলে মাথাটা দেয়ালে ঠেসিয়ে ধীরে ধীরে দম নিতে লাগল সত্যবান।

গোটা গায়ে কাদা। হাঁটু অব্দি গুটানো ময়লা লুঙ্গিটা চোরকাঁটায় ভর্তি। ওসবে ভ্রুক্ষেপ নেই সত্যবানের। শ্রাবণ মাসের ভ্যাপসা গরম। দরদর করে ঘাম ঝরছে গা থেকে। মাথায় বাঁধা রংচটা গামছাটা খুলে খালি গা টা মুছে নিল। তারপর সেটা একপাশে নামিয়ে রেখে হাঁক পাড়ল, ‘কৈ গো দেবুর মা, এক ঘটি জল দাও দিকি।

গোটা গায়ে কাদা। হাঁটু অব্দি গুটানো ময়লা লুঙ্গিটা চোরকাঁটায় ভর্তি। ওসবে ভ্রুক্ষেপ নেই সত্যবানের। শ্রাবণ মাসের ভ্যাপসা গরম। দরদর করে ঘাম ঝরছে গা থেকে। মাথায় বাঁধা রংচটা গামছাটা খুলে খালি গা টা মুছে নিল। তারপর সেটা একপাশে নামিয়ে রেখে হাঁক পাড়ল, ‘কৈ গো দেবুর মা, এক ঘটি জল দাও দিকি। সকালে মানুষটা সেই যে বেইরাইছে, কারু একটা খবর লিয়ার অবসর নাই!’

‘অ, তুমি আইসেছ?’ ভিতর থেকে কথাটা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা পেতলের ঘটিতে জল নিয়ে বেরিয়ে এলো দেবুর মা। সত্যবান ঘটিটা হাতে নিতে দেয়াল থেকে সরে সামনের দিকে ঝুঁকল একটুখানি। ভিজা পিঠে দেয়ালের চ্যাকলা উঠে চিটিয়ে গেল গোটাকয়েক। হাতটা পিছনে নিয়ে গিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করল সত্যবান। তবুও রয়েই গেল একটা দুটো। ভকুর মা কাছে গিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে ছাড়িয়ে দিল সবকটা। সত্যবান তখন এক দমে পুরো জলটা শেষ করে একটা জোরালো ঢেঁকুর তুলে বলল, ‘দেবু কী কইচ্ছে গো?’

‘কী আর কইরবেক, শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাইটছে। উয়ার আর কাজটাই কি?’ শুকনো মুখে বলল দেবুর মা, ‘তুমার লাগ্যে মুড়ি বাড়ব?’

শেষের কথাটা বোধহয় কানে গেল না সত্যবানের। মাথা নেড়ে আপন খেয়ালই বলতে লাগল ‘ছেলাটা যে কী কইরবেক ভগবান জানে। গেঞ্জি কলে বেশ কাজে মন বসে ছিল গো। এই শালার করোনা আসে সব গেল।’

‘সে আর কী কইরবে? উয়ার ত আর একা লয়, গটা দ্যাশের লোকের। লখাই খেতটা কাদা কইল্ল?’

‘হঁ, সকালেই কাদা কইরে দিয়েছে। উয়ার কথার দাম আছে বইলতে হবেক।’

‘তা থাইকবেক নাই? আগে, যখন আমাদে ঘরে হাল ছিল, তখন তুমরাও ত উয়াদের কত খেত বাঁয়ে দিয়েছ, মনে নাই?’

‘তা মনে থাইকবেক নাই! সেদিন কি আর আছে গো? তখন নিজের মতো করে চাষ কইরথম। মনে জোর ছিল কত। এখন সব পর ভরসায়। শালা কি দিনটাই আইল!’ বলেই মুখ তুলে তাকাল আকাশের দিকে। যেখানে একদল শাঁকচিল কর্কশ সুরে ডাকতে ডাকতে উড়ে চলেছে ডানা মেলে। কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে সেই দিকেই তাকিয়ে রইল সত্যবান।

‘হ্যাঁ গো, কামিনগুলা সব আইসেছে?’ ভ্রু উঠে যাওয়া চোখজোড়া ছোটো ছোটো করে বলল দেবুর মা।

‘হঁ, আইসেছে বা। বিচ তুইলছে। ইবার লাগাবেক খেতটা।’ চোখ নামাল সত্যবান।

‘এই বিচ বোঝাটা তবে কুথা থাক্যে আনলে?’

‘উগুলা বিকলা বাউরির ডুমুর তলের খেতটা থাক্যে তুইল্লম। আগেই বলা ছিল উয়াকে। আমাদের বিচটায় কুইলাবেক নাই ইবছর। দমে পাতলা বেরাইছে। ’

‘ভালোই কইরেছ। ভাবছিলম খেতকে খাবার লিয়ে যাতে হবেক নকি? কখন ভোর ভোর উঠে বেইরাই গেলে, কিছু বইলেও যাও নাই। বলি, মুড়ি বাড়ব কি?’

‘উটা আবার শুধাতে হবেক নকি? শালা আচ্ছা মিয়া লোক ত! বিচ বোঝাটা লিয়ে ঘরকে তোর মুখটা দেখতে আইলম কি তবে?’ একটুখানি খেঁকুরে গলায় বলে উঠল সত্যবান। এই হচ্ছে সত্যবানের মুদ্রাদোষ। কথায় মাঝে কখন যে মেজাজ হারিয়ে ফেলে তা নিজেই জানে না। দেবুর মা ভালো করেই জানে তা। তাই আর মিছেমিছি কথা না বাড়িয়ে ভিতরে চলে গেল সে।

এদিকে ওদিক তাকাতে তাকাতে সামনে বীজ বোঝাটা নজরে পড়ল সত্যবানের। তারপর ছেলের নাম ধরে হাঁক পাড়ল, ‘দেবু… দেবু…’

কোনো সাড়াশব্দ নেই। সত্যবান একটুখানি অপেক্ষা করে আবার নাম ধরে ডাকতে লাগল, ‘কথাটা শুনতে পাস নাই ন কি রে?’

‘কী হল্য?’ বিরক্ত গলার জবাব এলো ভিতর থেকে।

‘হে বাপ, বিচ বোঝাটা একটু কয়াবাইদের খেতে পৌঁছায় দিবি? আমার শরীরটার জুত লাইগছে নাই মনে হচ্ছে।’

‘লাইরব।’ ভিতর থেকেই বলল দেবু।

‘তা পারবি কেনে? কইলকাতার হাওয়া লাগাই বাবু হঁয়ে গেছু। বুড়া বাপটা আজীবন একাই খাইটে খাইটে মরুক। চাষ হোক আর নাই হোক, তোর কি? খাবার সময় থালা ভত্তি ভাত ত পাঁয়ে যাস। মইরলে পর খাবি দুহাতে।’ রাগ দেখিয়ে বলে উঠল সত্যবান।

‘তা পারবি কেনে? কইলকাতার হাওয়া লাগাই বাবু হঁয়ে গেছু। বুড়া বাপটা আজীবন একাই খাইটে খাইটে মরুক। চাষ হোক আর নাই হোক, তোর কি? খাবার সময় থালা ভত্তি ভাত ত পাঁয়ে যাস। মইরলে পর খাবি দুহাতে।’ রাগ দেখিয়ে বলে উঠল সত্যবান।

‘আমি উসব লাইরব। কতবার বইলেছি জমিগুলান লোককে ভাগে দিয়ে দাও। তা নাই নিজেই চাষ কইরবেক! তুমি খাইটে মইরবে নাই ত কে মইরবেক? আমি লাইরব অত চাষ-টাস কইরতে।’ সুর চড়াল দেবু।

‘জমির মায়া তরা কি বুঝবি রে বাপ? বুইঝলে ইকথা বলথিস নাই। ভাগে দিলে কি আর জমিগুলান জমি থাকে?’

‘সে নাই থাকুক, অত গাধার খাটুনি তো খাইটতে হবেক নাই। ফটিক কাকুদের অত জমি, তাও বাউরি দিকে ভাগে দিয়ে দিয়েছে। আর আমাদে জমিগুলাই শুধু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?’

কথাটা শুনে হালকা হেসে উঠল সত্যবান। তারপর ঘাড় নেড়ে বলল, ‘পরের হাতে রতনের কি যতন হয় রে বাপ?’

‘সে তুমি যতই আমাকে বলো। আমার দ্বারা উসব চাষবাস হবেক নাই।’

‘চাষ না কইরলে কি কইরে খাবি রে বাপ? পরের দুয়ারে কদিন খাটবি? যতটুকু জমি আছে উটাই ভালো করে চাষ করলে মাড়েভাতে খাইয়েও ত বাঁচে থাকবি।’

‘অমন বাঁচে থাকার কী দাম? তুমি বেশি চেঁচাও না দেখি। আমার নিজের ভাবনা আমি নিজে ভাবব। তুমাকে অত ভাবতে হবেক নাই।’ খচখচ করে বলল দেবু।

‘বঠে রে বাপ, বঠে! গেছলি তবাইরে কাজ কইরতে। দু’দিন লকডাউন হতে না হতে বেকার হয়ে ঘরে বসে গেলি ত। আমার কি? আমি আর কদ্দিন? নিজেই ভোগ করবি তখন।’ বলতে বলতে উঠে পড়ল সত্যবান।

আর কোনো জবাব এলো না ভেতর থেকে। দেবুর মা মুড়ি-পান্তাভাত বেড়ে দিল বারান্দায়। সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা ও সরষের তেল দিয়ে চটকানো চ্যাং মাছ ভাজা। কাল সন্ধ্যায় সামনের ডোবা থেকে গোটাকয়েক উঠে এসেছিল তাদের উঠোনে। বর্ষা কালে বৃষ্টি হলে প্রায়ই উঠে আসে উজানে। তুলসি তলায় প্রদীপ দিতে এসে দেখে ছিল দেবুর মা।সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ নামিয়ে, তড়িঘড়ি প্রণাম সেরে টর্চটা নিয়ে এসে ধরেছিল মাছগুলো।

হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসল সত্যবান। পাশেই তালপাতার পাখা নিয়ে হাওয়া করতে বসল দেবুর মা। গজগজ করে উঠল সত্যবান, ‘আমাকে বাতাস করতে হবেক নাই। তোর ওই বাবু ছেলাটাকে বাতাস করগে যা। শালা ব্যাটা ছেলা না হয়ে বিটি ছেলা হলে কবে বিহা দিয়ে দিতম। কোনো ঝামেলা থাইকত নাই।

হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসল সত্যবান। পাশেই তালপাতার পাখা নিয়ে হাওয়া করতে বসল দেবুর মা। গজগজ করে উঠল সত্যবান, ‘আমাকে বাতাস করতে হবেক নাই। তোর ওই বাবু ছেলাটাকে বাতাস করগে যা। শালা ব্যাটা ছেলা না হয়ে বিটি ছেলা হলে কবে বিহা দিয়ে দিতম। কোনো ঝামেলা থাইকত নাই। এখন ঘরে বসাই বসাই খাওয়া বাবুকে। ’

‘তুমি মিছামিছি আমাকে রাগ দেখাচ্ছ।’ পাখা না থামিয়েই বলল দেবুর মা। ‘আমার কী দোষ?’

‘তোর কী দোষ? তুইয়েই ত আদর দিয়ে দিয়ে বাঁদর করেছু। যে ছেলা বাপের কষ্ট বুঝে নাই, সে আবার ছেলা ন কি?’ খাবার ভর্তি মুখ নেড়ে নেড়ে বলল সত্যবান।

‘সে আমি কী করব? বড়ো হয়েছে। নিজের ভালোমন্দ নিজেই বুঝবেক। তবে দেবু ত খারাপ কিছু বলে নাই। এই বয়সে তুমার আর অত খাটার কী দরকার? জমিগুলা ভাগে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবেক?’

‘উল্টাপাল্টা বলে তাতাস না আমাকে। যেটা বুঝুস নাই, সেটা লিয়ে কথা বাড়াস না।’ একটুখানি গর্জে উঠল সত্যবান। চমকে উঠল দেবুর মা। ‘যতদিন চলতে পারব, ততদিন নিজেই চাষ করব। দরকার নাই তোদের কাউকে।’ বলেই রাগে রাগে খাবারগুলো চিবোতে লাগল সত্যবান। চুপ করে গেল দেবুর মা। কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিল বাইরের দিকে। যেখানে পটপটে রোদের তেজ বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত।

কিছুক্ষণ চুপচাপ খাওয়ার পর উঠে পড়ল সত্যবান। ‘সব খালে নাই যে?’ নরম গলায় শুধালো দেবুর মা। ‘না, আর খাওয়া যাবেক নাই।’ বলেই সামনের দিকে ঝুঁকে নেমে এলো বারান্দা থেকে। ‘দিন দিন সবকিছু পরের হাতেই চলে যাচ্ছে। চাষটাও যেটুকু নিজে স্বাধীনভাবে কইরথম, সেটুকও ইবার যাতে বসেছে।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলে হাত ধুতে গেল সত্যবান। ফিরে এসে আবার বসল বারান্দায়। কোঁচড় থেকে খৈনির ডিবাটা বের করে বাঁহাতের চেটোয় ঢেলে নিল একটুখানি। এক টুকরো কাঁচা চুন মিশিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ ঘসে, তালি দিয়ে ঝেড়ে পুরে নিল ঠোঁটের নিচে। বাইরে থেকে ফুলে উঠল থোতনাটা। তারপর উঠে পড়ল আবার।

সামনেই পড়েছিল গামছাটা। সেটাকে মাথায় বিড়ার মতো করে বেঁধে এগিয়ে গেল বীজ বোঝাটার দিকে। বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে ছিল দেবুর মা। অত বড়ো বোঝাটা একাই তুলছে দেখে বলল, ‘দাঁড়াও যাচ্ছি। মাথায় তুলে দিচ্ছি।’

‘না, না, তোদের কাউকে কিছু করতে হবেক নাই। আমি একাই পারব।’ ভারী গলায় বলে উঠল সত্যবান। কিছুটা এগিয়ে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল দেবুর মা। সত্যবান বোঝাটা দুহাতে ধরে জাঙের উপর ভর দিয়ে কোমর বাঁকিয়ে তুলে নিল মাথায়। বোঝাতে জমে থাকা জল ঝরঝর করে ঝরে পড়তে লাগল সারা গা বেয়ে। সেই অবস্থায় দু’পা এগিয়ে গেল সামনের দিকে। তারপর হঠাৎ থমকে দাঁড়াল উঠোনে। চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা পুরাতন দৃশ্যপট। কাঁধে লাঙল নিয়ে হেঁটে চলেছে বাবা। সামনে দৌড়াচ্ছে ছোটো ছোটো দুটি গরু। পিছনে পিছনে ছোট্ট সত্যবান এগিয়ে চলেছে সরু আলপথ দিয়ে। মাথায় একটা মই আর শিকল। ক্ষয়ে গেছে শিকলটা। স্পষ্ট যেন দেখতে পাচ্ছে সত্যবান।

আচমকা একটা দমকা হাওয়া চোখে মুখে লাগতেই চমকে উঠল সে। গায়ের লোমগুলো তখন খাড়া হয়ে গেছে। জোরে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে ছেড়ে দিল সত্যবান। তারপর আপন মনে কত কি বলতে বলতে বেরিয়ে গেল বীজ বোঝাটা নিয়ে।

দক্ষিণ কোণায় মেঘটা তখন আরও ঘোর করে এসেছে। বাতাস বইছে শন শন করে। বোধহয় আবার বৃষ্টি হবে। আবারও ভেসে যাবে মাঠ-ঘাট, সত্যবানের জমিও।

আলচাঁছা মাটিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তাটা। মাথার বীজ বোঝাটা এই টলে যায় যায়। কোনোমতে সামলে নেয় সত্যবান। চারিদিকে সদ্য পোঁতা কচি কচি ধান। হলদে সবুজ। কেঁপে কেঁপে দুলছে হাওয়ায়। কোমর তাদের সোজা হয়নি ভালো করে। তবুও যেন কাত হয়েই তাকিয়ে আছে সত্যবানের দিকে। যেন বলতে চাইছে ‘আর একটু, আর একটু’। সেই ভরসাতেই এগিয়ে চলছে সত্যবান।

সরু আলপথ দিয়ে টলমল করে হাঁটছে সত্যবান। আলচাঁছা মাটিতে পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তাটা। মাথার বীজ বোঝাটা এই টলে যায় যায়। কোনোমতে সামলে নেয় সত্যবান। চারিদিকে সদ্য পোঁতা কচি কচি ধান। হলদে সবুজ। কেঁপে কেঁপে দুলছে হাওয়ায়। কোমর তাদের সোজা হয়নি ভালো করে। তবুও যেন কাত হয়েই তাকিয়ে আছে সত্যবানের দিকে। যেন বলতে চাইছে ‘আর একটু, আর একটু’। সেই ভরসাতেই এগিয়ে চলছে সত্যবান। ওই তো কিছুটা দূরে কামিনগুলো নুয়ে নুয়ে চারা পুঁতছে কয়াবাইদের খেতে। আর যেন তর সইছে না সত্যবানের। তাড়াহুড়ো করে লম্বা লম্বা পা ফেলতে যায় আলের উপর। আবারও টলে উঠে পা দুটো। আর সামলাতে পারে না। হুস করে পিছলে পড়ে পাশের খেতে। একটা হাঁটু ভাঁজ হয়ে ভড়ভড় করে ঢুকে যায় নরম কাদায়। থপাস করে বসে পড়ে কাদাজলে। আশ্চর্যজনকভাবে বীজ বোঝাটা মাথায় তেমনি চাপা। ঘাড় স্থির হয়ে গেছে সত্যবানের। এই অবস্থায় কী করা উচিত খুঁজে পায় না সে। অথচ উঠতেও বল পায় না গায়ে। মাটিতে গেঁথে যাওয়া হাতখানা থরথর করে কাঁপতে থাকে।

হঠাৎ যেন হালকা হতে শুরু করে মাথাটা। কে যেন পিছন থেকে বীজ বোঝাটা তুলে নেবার চেষ্টা করে। দেখতে পায় না সত্যবান। ঘাড় ঘোরাবার উপায় নেই। তারপর যখন পুরোপুরি মাথাটা হালকা হয়ে যায়, তখন দেখে দেবু দাঁড়িয়ে। বীজ বোঝাটা মাথায় নিয়ে একটা হাত বাড়িয়ে বলছে, ‘লাউ ধর। উঠ আস্তে আস্তে।’

মেঘের ফাঁকে বেরিয়ে আসা রোদের মতো চওড়া হাসি ফুটে উঠে সত্যবানের মুখে। হাতটা ধরে ছেলেটার। তারপর মাথা দুলিয়ে বলে, ‘তুই চ। আমি একাই উঠে যাব।’

সুরু আলপথ দিয়ে থপ থপ করে এগিয়ে চলল দেবু। মাটিতে ভর দিয়ে কোনোমতে উঠল সত্যবান। দেখতে পেল, যেখানটায় পড়ে গিয়েছিল খেতটার উপর, সেখানে কয়েক গাছি চারাধান উপড়ে গেছে আপনাআপনি। ঘোলা জলে ভেসে উঠেছে শিকড় গুলো। যেন পায়ের আঙুল ধরে টানছে তাকে। দেখে বড়ো মায়া হলো সত্যবানের। এই শিকড়েই তো ইতিহাস লেখা আছে তার পূর্বপুরুষের।ভা বতে ভাবতে আবার বসে পড়ল সেখানে। পরম যত্নে একটি একটি করে সবকটা গাছি আবার সেখানেই পুঁতে দিল সত্যবান। মনটা ভীষণ হালকা লাগছে এখন। কতদিন আগে যে এতোটা হালকা লেগেছিল মনে নেই তার।

আবার আলে উঠে দাঁড়াল সত্যবান। দেবু তখন কিছুটা এগিয়ে গেছে।

না, দেবু তো নয়। এ তো তার বাবা! খেটে খাওয়া ঋজু শরীর নিয়ে নির্দ্বিধায় হেঁটে চলেছে বীজ বোঝা নিয়ে। কোটরে ঢুকে যাওয়া বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে স্পষ্ট যেন দেখতে পাচ্ছে সত্যবান। বীজের গায়ে লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু জল যেন এক একটি হীরের টুকরো। মেঘের ফাঁক থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসা ঝলমলে রোদে ঝিলিক দিচ্ছে একসাথে। মাথায় নিয়ে হাঁটছে দেবু, না বাবা? দেখতে দেখতে চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসে তার। দক্ষিণ দিকের মেঘ যে তখন কখন সরে গেছে অনেকখানি, খেয়ালই করেনি সত্যবান।

শেয়ার করুন

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৮৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ইন্দপুর গ্রামে। পেশায় শিক্ষক হলেও সাহিত্যচর্চায় অনুগত প্রাণ। মূলত গল্পকার। সমসাময়িক পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করে আসছেন এযাবৎ। নেশা: বইপড়া, ভ্রমণ।

error: আপনার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় ।